Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দিমুথ করুনারত্নকে আটকানো যায়নি

কোনো ওপেনার ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে দলের শেষ ব্যাটসম্যান হিসাবে অপরাজিত থাকলে, তাকে ক্রিকেটের পরিভাষায় ‘ক্যারি দ্য ব্যাট থ্রু দ্য ইনিংস’ বা ‘আদ্যোপান্ত ব্যাটিং’ বলে।
ক্রিকেট বিশ্বে নিয়মিত ব্যাট ‘ক্যারি’ করার ঘটনা দেখা যায় না। এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে ৫৫ বার ওপেনাররা ব্যাট ক্যারি করেছেন। সবচেয়ে বেশি তিনবার ব্যাট ক্যারি করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডেসমন্ড হেইন্স এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ডেন এলগার।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গল টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাট ‘ক্যারি’ করেন দিমুথ করুনারত্নে; Image Source: Associated Press

টেস্ট ক্রিকেটে সর্বশেষ ওপেনার হিসাবে ব্যাট ক্যারি করার কীর্তি গড়েছেন শ্রীলঙ্কার ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে। প্রায় ১৯ বছর পর কোনো শ্রীলঙ্কান ওপেনার ব্যাট ক্যারি করেন।
তার আগে শ্রীলঙ্কার মাত্র তিন ওপেনার এই কীর্তি গড়েছেন। শ্রীলঙ্কার হয়ে ব্যাট ‘ক্যারি’ করা ওপেনারদের নিয়েই আজকের লেখা।

সিদাথ ওয়েতিমুনি

শ্রীলঙ্কার প্রথম ওপেনার হিসাবে ব্যাট ‘ক্যারি’ করেন সিদাথ ওয়েতিমুনি। ১৯৮৩ সালের ৪ই মার্চ ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে এই কীর্তি গড়েন তিনি। ওয়েতিমুনি টেস্ট ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার হয়ে প্রথম শতকও হাঁকান।

ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো শ্রীলঙ্কা। টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৩৪৪ রান সংগ্রহ করেছিলো। জবাবে শ্রীলঙ্কার হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন সিদাথ ওয়েতিমুনি এবং তার বড় ভাই মিথরা ওয়েতিমুনি। মিথরা ওয়েতিমুনির এটি অভিষেক ম্যাচ ছিলো। দুই ভাই উদ্বোধন উইকেট জুটিতে ৪৯ রান যোগ করার পর মিথরা ওয়েতিমুনি সাজঘরে ফেরেন।

প্রথম শ্রীলঙ্কান ওপেনার হিসাবে ব্যাট ‘ক্যারি’ করেছেন সিদাথ ওয়েতিমুনি; Image Source: Getty Images

মিথরা ওয়েতিমুনি সাজঘরে ফিরে গেলেও একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন সিদাথ ওয়েতিমুনি। কিন্তু তাকে যোগ্য সমর্থন দেওয়ার মতো কেউই ছিলেন না। চতুর্থ উইকেট জুটিতে রঞ্জন মাদুগালে এবং সিদাথ ওয়েতিমুনি ৪৮ রান যোগ করার পর মাদুগালে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। এরপর শ্রীলঙ্কার আর কোনো ব্যাটসম্যান উইকেটে থিতু হতে পারেননি। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে সিদাথ ওয়েতিমুনি আদ্যোপান্ত ব্যাটিং করে ৬৩ রানে অপরাজিত থাকেন। তার অর্ধশতকের পরেও বরাবর ২০০ রানে পিছিয়ে থেকে ফলো-অনে পড়ে শ্রীলঙ্কা। ফলো-অনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১৭৫ রানে সবক’টি উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। যার ফলে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে ইনিংস ও ২৫ রানের বড় ব্যবধানে পরাজিত হয় সফরকারীরা।

মারভান আতাপাত্তু

সিদাথ ওয়েতিমুনি ব্যাট ‘ক্যারি’ করার পর ১৬বছর পর দ্বিতীয় শ্রীলঙ্কান ওপেনার হিসাবে ব্যাট ‘ক্যারি’ করেন মারভান আতাপাত্তু।
১৯৯৯ সালের ১৮ নভেম্বর, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়েতে সিরিজের প্রথম টেস্টে টসে জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক সনাৎ জয়াসুরিয়া।

টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে ২৮৬ রান সংগ্রহ করে। জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৬ রান করেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। জবাবে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ৮৫ রান যোগ করেন অধিনায়ক জয়াসুরিয়া এবং আতাপাত্তু। জয়াসুরিয়া ৪৯ রান করে ফিরে গেলেও রানের চাকা সচল রেখেছিলেন আতাপাত্তু।
জয়াসুরিয়ার ৪৯ রানের ইনিংসটি শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ ছিলো।

মারভান আতাপাত্তু; Image Source: Cricket.com.au

 

জয়াসুরিয়া সাজঘরে ফেরার পর রাসেল আর্নল্ড, জয়াবর্ধনে এবং অভিষিক্ত তিলাকারত্নে দিলশান দ্রুত ফিরে যান। তখনও অবিচল ছিলেন আতাপাত্তু। রমেশ কালুবিতরানা এবং ডি সারামের সাথে জুটি বেঁধে প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার স্কোরবোর্ডে ৪২৮ রান যোগ করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। ৪২৮ রানের মধ্যে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২১৬ রান।

মারভান আতাপাত্তু আদ্যোপান্ত ব্যাটিং করে ৪৩৭ বলে ২৪টি চারের মারে ২১৬ রানে অপরাজিত থাকেন। জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে তিন উইকেটে ১৩৬ রান সংগ্রহ করলে বুলাওয়ে টেস্ট নিষ্প্রাণ ড্র হয়।
মারভান আতাপাত্তু তার দুর্দান্ত ইনিংসের সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন।

রাসেল আর্নল্ড

মারভান আতাপাত্তু ব্যাট ‘ক্যারি’ করার এক ম্যাচ পরেই ব্যাট ‘ক্যারি’ করেন রাসেল আর্নল্ড। হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঐ সিরিজের তৃতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাট ‘ক্যারি’ করেন তিনি।

১৯৯৯ সালের ৪ই ডিসেম্বর, হারারেতে সিরিজের তৃতীয় টেস্টেও টসে জিতে জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় শ্রীলঙ্কা।
ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ে ২১৮ রান সংগ্রহ করে। জবাবে নিয়মিত ওপেনার জয়াসুরিয়া একাদশে থাকা সত্ত্বেও আতাপাত্তুর সাথে শ্রীলঙ্কার হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করেন রাসেল আর্নল্ড। ওপেনিংয়ে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে তা যথাযথভাবে কাজে লাগান তিনি।

রাসেল আর্নল্ড; Image Source: Image Source: AFP

রাসেল আর্নল্ড একপ্রান্ত আগলে রেখে সাবলীলভাবে ব্যাট করলেও আর কোনো শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তিনি ব্যাট ‘ক্যারি’ করে অপরাজিত ১০৪ রানের ইনিংস খেলেন। ২৪৩ বলে ১৪টি চারের মারে তার দুর্দান্ত ইনিংসটি সাজানো ছিলো। তার ইনিংসের উপর ভর করে প্রথম ইনিংসে ১৩ রানের লিড পায় শ্রীলঙ্কা। দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন ডি সারাম এবং দিলশান খেলেন ৩৭ রানের ইনিংস।

প্রথম ইনিংসে ইনিংস উদ্বোধন করে ব্যাট ‘ক্যারি’ করলেও ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে তিন নাম্বারে ব্যাট করেন রাসেল আর্নল্ড। তিন নাম্বারে ব্যাট করতে নেমে ১৩ বলে অপরাজিত ১৪ রান করার পর ম্যাচ ড্র ঘোষণা করা হয়। প্রথম ইনিংসে অনবদ্য শতক হাঁকানোর পর অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের সাথে যৌথভাবে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন রাসেল আর্নল্ড।

দিমুথ করুনারত্নে

রাসেল আর্নল্ড ব্যাট ‘ক্যারি’ করার প্রায় ১৯ বছর পর কোনো শ্রীলঙ্কান ওপেনার হিসাবে দিমুথ করুনারত্নে ব্যাট ‘ক্যারি’ করেন। এই শতকে তিনিই প্রথম শ্রীলঙ্কান ওপেনার হিসাবে এই কীর্তি গড়েন। সদ্যসমাপ্ত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গল টেস্টের প্রথম ইনিংসে তিনি অপরাজিত ১৫৮ রান করেন।

১২ই জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গল টেস্ট শুরু হওয়ার আগে প্রথম ইনিংসে করুনারত্নের ব্যাটিং গড় নিয়ে বিশ্লেষকরা আলোচনা-সমালোচনা করছিলেন। এই টেস্টের আগে করুনারত্নের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং গড় ছিলো ৩০.০৬ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং গড় ছিলো ৩৯.৮৩।
লাল চকচকে নতুন বলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিধ্বংসী পেসার ডেইল স্টেইন, ফিল্যান্ডার এবং রাবাদার বল মোকাবেলা করা করুনারত্নের প্রধান পরীক্ষা ছিলো। শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লাকমাল টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলে ম্যাচের শুরুতেই স্টেইন, রাবাদাদের সম্মুখীন হন তিনি।

প্রায় ১৯ বছর পর কোনো শ্রীলঙ্কান ওপেনার হিসাবে টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাট ‘ক্যারি’ করেন দিমুথ করুনারত্নে ; Image Source: Getty Images

গুনাতিলাকাকে সাথে নিয়ে উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ৪৪ রান যোগ করে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের ভালোভাবেই সামাল দেন করুনারত্নে।
২৬ রান করে গুনাতিলাকা সাজঘরে ফিরে গেলে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে শ্রীলংকা। রাবাদের পেস এবং শামসির ঘূর্ণি বলের সামনে স্কোরবোর্ডে ১৭৬ রান তুলতেই আট উইকেট হারিয়ে বসে শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে সাথে নিয়ে ১১১ রান যোগ করে প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কাকে ২৮৭ রানের সংগ্রহ এনে দেন করুনারত্নে।

দিমুথ করুনারত্নে ২২২ বলে ১৩টি চার এবং একটি ছয়ের মারে ১৫৮* রানের ইনিংস খেলেন। তার একক লড়াইয়ে ২৮৭ রান সংগ্রহ করার পর দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১২৬ রানে গুটিয়ে দেয় শ্রীলঙ্কা। প্রথম ইনিংসে আদ্যোপান্ত ব্যাটিং করার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন করুনারত্নে। দ্বিতীয় ইনিংসে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসাবে যখন সাজঘরে ফেরেন তখন দলীয় সংগ্রহ ছিলো ৯২ রান। যার মধ্যে করুনারত্নে একাই করেছেন ৬০ রান। তার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর দিলরুয়ান পেরেরা এবং হেরাথের ঘূর্ণি বোলিংয়ে মাত্র ৭৩ রানে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ২৭৮ রানের বড় ব্যবধানে পরাজিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।

ফিচার ইমেজ- AFP

Related Articles