Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রাশিয়া বিশ্বকাপ প্রথম অঘটনের শিকার জার্মানি, হোচট খেয়েছে ব্রাজিলও

এবারের বিশ্বকাপে সবথেকে বড় অঘটন? আর্জেন্টিনা হোঁচট খেয়েছে, কিন্ত হারেনি। কিন্ত গতকালের ম্যাচে মেক্সিকোর বিপরীতে শিরোপা প্রত্যাশী জার্মানি তো হেরেই বসলো। মেক্সিকো মুখোমুখি হয়েছিলো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানির, ব্রাজিল বনাম সুইজারল্যান্ডের ম্যাচ উত্তাপ ছড়াচ্ছিলো অনেক আগে থেকেই। কোস্টা রিকা বনাম সার্বিয়ার খেলাও ছিলো গ্রুপ ‘ই’ এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, যাতে একমাত্র গোল করে জয় তুলে নিয়েছে সার্বিয়া।

কোস্টা রিকা বনাম সার্বিয়া 

গ্রুপ ‘ই’ এর কোস্টারিকা বনাম সার্বিয়া ম্যাচে হাতে-কলমে ফেবারিট সার্বিয়াই ছিলো। যাদের মধ্যমাঠে আছে নেমানিয়া ম্যাটিচ, মিলিঙ্কোভিচ স্যাভিচ, লুকা মিলিজোভিচ এবং রক্ষণে আলেক্সজান্ডার কোলারভ ও ইভানোভিচের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা। আর কোস্টা রিকার একমাত্র ভরসা বলতে কেইলর নাভাস। কিন্ত কোস্টা রিকাকে এত নিম্নসারির দল হিসেবে গ্রহণ করলে চলবে না। গত বিশ্বকাপে উরুগুয়ে, ইতালির মতো দলকে হারিয়ে এবং ইংল্যান্ডের মতো দলের সাথে ড্র করে স্বপ্নের মতো বিশ্বকাপ শুরু করেছিলো নাভাসের দল। আর সে যাত্রা বজায় রেখে দলটি এবার রাশিয়া বিশ্বকাপেও দারুণ আত্মবিশ্বাসী।

গ্রুপ স্টেজে প্রথম ম্যাচে ফেভারিট টিম হিসেবেই জিতেছে সার্বিয়া; Images Source: BBC

সেই আত্মবিশ্বাসই এগিয়ে রেখেছিলো কোস্টা রিকাকে। প্রথম থেকে কিছুটা এলোমেলো সার্বিয়ার সামনে বেশ ভালোই খেলছিলো কোস্টা রিকা। কিন্ত পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে সময় লাগলো না। ভালো খেলার লাগাম স্থানান্তরিত হলো সার্বিয়ার হাতে। এবং এজন্য দায়ী সার্জিও মিলিঙ্কোভিচ স্যাভিচের। তিনি একাই ঘুরিয়ে দিতে লাগলেন সার্বিয়ার আক্রমণ। মধ্যমাঠ থেকে প্রতিপক্ষের ডিবক্স, সবখানেই যেন তার বিচরণ। আর কোস্টা রিকার আক্রমণ যেন মাঝমাঠ থেকে নষ্ট করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন নেমানিয়া ম্যাটিচ। তবে প্রথমার্ধে বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছিলো সার্বিয়া। নাভাসকে দুবার একা পেয়েও গোল করতে পারেননি সার্বিয়ান স্ট্রাইকার মিত্রোভিচ। স্যাভিচের একটি ওভারহেড কিকও ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন নাভাস। তবে সার্বিয়ার একমাত্র গোলের প্রত্যক্ষ অবদান মিত্রোভিচেরই।

কোলারভের দুর্দান্ত ফ্রি কিক ঠেকানো অসম্ভব ছিলো নাভাসের জন্য; Images Source: Daily Mail

৫৬ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে ফাউলের শিকার হন মিত্রোভিচ। আর তাতেই দারুণ ফ্রি কিক শটে গোল করেন সার্বিয়ান ক্যাপ্টেন আলেক্সজান্ডার কোলারভ। প্রথমার্ধে কয়েকটি শট ঠেকিয়ে দেওয়া নাভাসেরও সাধ্য ছিলো না কোলারভের ফ্রি ফিক আটকে দেওয়া। এরপর কোস্টারিকা চেয়েছে বল ধরে রেখে টানা আক্রমণের, কিন্ত কখনোই আক্রমণের তুলির শেষ আচঁড় দিতে পারেনি কেউ। যদিও ৭৫ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা প্রায় পেয়েই গিয়েছিলো সার্বিয়া। ডুসান তাদিচের শট নাভাস দারুণভাবে রুখে দেন, রুখে দেবার পরও কস্টিচের গোল দেবার দারুণ সুযোগ ছিলো। কিন্ত সহজ সুযোগকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেননি কস্টিচ। তাই নাভাস শেষপর্যন্ত চেষ্টা করে গেলেও কাগজে কলমে এগিয়ে থাকা সার্বিয়ান শক্তির কাছে হেরে যায় কোস্টা রিকা।

প্রথম ম্যাচ হেরে যাবার পর দ্বিতীয় ম্যাচ কোস্টা রিকাকে খেলতে হবে ব্রাজিলের বিপক্ষে। সেখানে জিততে না নিতে পারলে হয়তো এবার গ্রুপপর্বেই শেষ হয়ে যাবে কোস্টারিকার বিশ্বকাপ মিশন।

জার্মানি বনাম মেক্সিকো

ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে খেলতে এসে গতবার স্পেন বিদায় হয়েছিলো গ্রুপপর্ব থেকেই। এবার জার্মানি বিশ্বকাপে এসেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। এবং যথারীতি জার্মান দলকে স্পেন ভূতে পেয়ে বসলো! কারণ রাশিয়া বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জার্মানি মেক্সিকোর বিপক্ষে ০-১ গোলে হেরেছে।

মেক্সিকো সবসময় গতিময় ফুটবলে অভ্যস্ত, জার্মানিও তা-ই। কিন্ত গতকালের ম্যাচে মেক্সিকো যেন পণ করে এসেছিলো গতিময় ফুটবলটা শুধু তারাই খেলবে। মেক্সিকোর গতিময় ফুটবলের সামনে প্রথম থেকেই খাবি খেতে হয়েছে জার্মানির। পাশাপাশি মেক্সিকোর গতির তোড়ে জার্মানিও ভুল করেছে বারবার। জার্মানদের একাদশে জোশুয়া খিমিচ আস্থার একটি স্থান তৈরি করে নিয়েছিলেন, তার উপর ভরসা ছিলো অগাধ। কিন্ত লুঝনিকি স্টেডিয়ামে তিনিই যেন ডানপাশে মেক্সিকোর আক্রমণের জায়গা করে দিচ্ছিলেন। তাই ১১ মিনিটে মেক্সিকোর জোড়ালো আক্রমণ নয়ার ঠেকিয়েছেন ৩ বার। লায়ুন আর হার্নান্দেজ আরও কিছু সুযোগ মিস না করলে প্রথম ২০ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো মেক্সিকো।

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে একদমই হতাশ করেছে জার্মানি; Image Source: Twitter 

যতসময় পার হতে থাকলো, মেক্সিকোর আক্রমণ যেন আরও ভয়াল রূপ নিতে লাগলো। কিন্ত গতির ঝড় তুলেও বরবার হতাশ করেছে মেক্সিকো। ৩৫ মিনিটে বোয়েটেং এর ভুলে মেক্সিকোকে এগিয়ে দেন হারভিং লোজানো। বোয়েটেংকে টপকে হাভিয়ে হার্নান্দেজের বাড়ানোর বল পেয়ে যান লোজানো। ডিবক্সে জার্মান ডিফেন্ডারের স্লাইড ট্যাকল উপেক্ষা করে লোজানোর নিচু শট ঠেকানো সম্ভব হয়নি ম্যানুয়েল নয়ারের। গোল খেয়ে কিছুটা হুশ ফিরেছিলো জার্মানদের। টনি ক্রুস প্রায় গোল পেয়েই গিয়েছিলেন যদি না দুর্দান্ত এক সেভ করে না বসতেন গিয়েমো ওর্চোয়া।

দুর্দান্ত গোলের পর লোজানো; Image Source: Getty Images

সাধারণত কোনো বড় দলের বিপক্ষে গোল পেয়ে গেলে মেক্সিকোর মতো মধ্যমমানের দল রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতে বেশি আগ্রহী হয়। কিন্ত গতকাল দেখা মিললো ভিন্ন এক মেক্সিকোর। একটিমাত্র গোলে লিড নেবার পরও জার্মানির সাথে সমান কাতারে আক্রমণ চালিয়ে গেছে মেক্সিকো। তবে অদ্ভুতভাবে একটি আক্রমণও গোলে পরিণত করতে পারেননি হাভিয়ে হার্নান্দেজরা। জার্মানির সকল আক্রমণ মেক্সিকো রুখে দিয়েছে দুর্দান্তভাবে। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণ জার্মানি চালিয়ে রাখলেও কাউন্টার অ্যাটাকে সবসময় এগিয়ে ছিলো মেক্সিকো, যেখানে জার্মানিকে সকল ফুটবলবোদ্ধা কাউন্টার অ্যাটাকের জন্য এগিয়ে রাখে।

দুর্দান্ত একটি জয়ের পর আবেগপ্রবন হয়ে পড়েছিলেন মেক্সিকোর খেলোয়াড়রা; Image Source : Di Marzio

আগে থেকে করে রাখা পরিকল্পনা সবসময় সফল হয় না, কারণ বাস্তব মাঝেমাঝে ভিন্ন কথা বলে। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে জার্মানরা। মাঠে তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কিছুই হয়নি। মেক্সিকোর বিপক্ষে মধ্যমাঠে কোনো প্রাণ ছিলো না। টনি ক্রুস বলের যোগান ও দূরপাল্লার শট নিলেও সামি খেদিরা ছিলেন চূড়ান্ত ব্যর্থ। ড্রাক্সলার, মুলাররাও নিজেদের সেরাটা দিতে পারেননি। সেখানে মেক্সিকো ছিলো প্রত্যাশার থেকেও দুর্দান্ত। প্রথম ম্যাচেই বড় ধাক্কা গেল জার্মানদের জন্য। আসন্ন সুইডেন ম্যাচে জার্মানি ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না সেটাই এখন মুখ্য বিষয়।

ব্রাজিল বনাম সুইজারল্যান্ড

একটু নাটকীয় ভাষায় বলতে গেলে কথা রাখেনি আর্জন্টিনা, কথা রাখেনি জার্মানিও। আজ কথা রাখলো না ব্রাজিলও। একদম সোজা কথায় তিতের ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া দলটি বিশ্বকাপ জিততে রাশিয়া এসেছে। কিন্ত প্রথমেই যে ধাক্কা! সুইজারল্যান্ডের সাথে বিশ্বকাপ প্রথম ম্যাচেই হতাশার ড্র নিয়ে ফিরতে হয়েছে সেলেসাওদের।

অথচ ম্যাচ শুরু পর ভিন্ন বার্তা দিচ্ছিল তিতের দল। শুরু থেকে ব্রাজিল যদিও সেই নান্দনিক ফুটবল খেলেনি, কিন্ত সুইসদের চেপে ধরেছিলো ভালোভাবেই। ব্রাজিলের কোনঠাসা আক্রমণ বুঝে তাই প্রথম থেকে রক্ষণ জোরদার করে সুইসরা, কিন্তু তারপরও ব্রাজিল ভয় ছড়াচ্ছিল বারংবার। পাউলিনহো বেশ ভালো একটা সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেনন, কিন্ত তাকে পরাস্ত করেন ইয়ান সমার। এরপর আর ব্রাজিল সুইসদের রক্ষণ ভেদ করতে এগিয়ে যেতে পারেনি। তাই কৌতিনহো নিলেন ভিন্ন পন্থা। ২৫ গজ দূর থেকে দারুণ একটি শটে এনে গোল এনে দিলেন ব্রাজিলকে। উল্লাসের শুরু যেন এখানেই, আবার শেষ এখানেই। কারণ এরপর থেকে ব্রাজিল ছন্নছাড়া রূপে আবির্ভূত হয়।

ডি বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত একটি শটে গোল করে ব্রাজিলকে লিড এনে দিয়েছিলেন কৌতিনহো; Image Source: Fifa.com

প্রথমার্ধ থেকেই নেইমার তার ছায়ার বৃত্তে ঘোরাফেরা করছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধে তাকে আরো এলোমেলো লাগতে লাগলো। তবে দ্বিতীয়ার্ধে যেমন ম্যাচে ফিরেছে সুইজারল্যান্ড, তেমনই বিবর্ণ রূপ ধারণ করেছে ব্রাজিল। সুইসদের করা একমাত্র গোল হয়েছে ব্রাজিলের ডিফেন্সের কারণে। কর্নার কিকে যখন স্টিফেন জুবের লাফিয়ে হেডে গোল করেন, তখন তিনি ছিলেন একদমই আনমার্কড অবস্থায়। অথচ তার পেছনে দুজন খেলোয়াড় অযথাই দাঁড়িয়েছিল জুবেরকে একা ফেলে।

Image Source : Fifa.com

ক্যাসেমিরো, পাউলিনহো ও কৌতিনহোদের নিয়ে করা ব্রাজিল মধ্যমাঠও জ্বলে উঠতে পারেননি। বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে ব্রাজিলের মধ্যমাঠ বানানো হলেও তাদের সামনে জেমাইলি, বেহরামি, শাকিরিদের নিয়ে বানানো মধ্যমাঠই যেন বেশি উজ্জ্বল লাগছিলো। রাইটব্যাকে দানিলোকে মাঠে খুঁজেই পাওয়া যায়নি, তার পজিশনকে সাপোর্ট দিতে উইলিয়ানকে মাঝে মাঝেই নিচে নেমে খেলতে হয়েছে। তাই ব্রাজিলের ডানপাশ দিয়ে তেমন আক্রমণ হয়নি বললেই চলে। নেইমারকে কড়া পাহারায় রেখেছিলেন লিচস্টেইনার। স্ট্রাইকার পজিশনে জেসুসও ছিলেন আড়ষ্ট। তাই হতাশার এ ম্যাচে দারুণ শুরু করার পর এরূপ ব্যর্থতা যেমন অপ্রত্যাশিত, তেমনি শঙ্কাজনক।

স্টিফেন জুবের, ব্রাজিলকে রুখে দেবার নায়ক; Image Source: Fifa.com

ব্রাজিলের নিভে যাওয়ার মুহূর্তটিতে সেফেরোভিচ ও শাকিরি ছিলেন অনেকটাই উজ্জ্বল। কিন্ত সে সময়ে সিলভা ও মিরান্ডা তাদের রুখে দিতে ব্যর্থ হননি। শেষ মুহূর্তে ফিরমিনোর একটা চেষ্টাও আটকে যায় সমারের হাতে। আর ফার্নান্দিনহোর মিসের জন্য তিনি হয়তো দুষতে পারেন ভাগ্যকে। তবে পুরো ব্রাজিলের হতাশার দিনে সুইসরা প্রশংসার দাবীদার। বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের অন্যতম দাবীদার দলকে ৯০ মিনিট থামিয়ে রাখা সোজা কথা নয়! তিতের হাতে সময় এখনো আছে, হয়ত দলের নিভে যাওয়া আলোটাকে আবার জ্বালিয়ে দেবেন। তবে সাজানো গোছানো এই দারুণ সুইসদের দলটি হয়ত প্রত্যাশার থেকে বেশি কিছু করার ক্ষমতা রাখে।

Feature Image: FIFA.com

Related Articles