
অনেক বছর আগের কথা। ঠিক ৬৬ বছর আগের, ১৯৫৩ সালের।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে বিশ্ব তখন নতুন আশার জাল বুনতে শুরু করেছে একটু একটু করে। চারিদিকে নতুনের আবাহনের এক জোয়ার লেগেছিলো যেন। সময়টা তখন ইতিহাস গড়ার, ইতিহাস ভাঙার।
ওয়াটসন-ক্রিক মিলে মানব ডিএনএর রহস্যের জাল ছিঁড়তে সক্ষম হয়েছিলেন, এভারেস্টের চূড়ায় মানুষ প্রথমবার তার পা রেখেছিলো সে বছরই। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথও ব্রিটিশ সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন সে বছরের মাঝামাঝি।
কেবল ক্রিকেটীয় দৃষ্টিতে দেখলে, দীর্ঘ ১৯ বছর পর অ্যাশেজ জিতেছিলো ইংল্যান্ডে। নানা ঘটনার ঘনঘটায় আর ব্যাটে-বলের সমান দ্বৈরথের কারণে ২০০৩ সালে যে অ্যাশেজকে ‘তখন অব্দি সেরা’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলো ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত উইজডেন।
প্রথম টেস্ট
রানী এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেকের পরে মাসও পেরোয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতিটাই তো তেমন করে শুকোয়নি। সে সময়টাতে অস্ট্রেলিয়া এলো ক্রিকেটের আদিভূমে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের সময়টায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র এক টেস্ট হারের রেকর্ড নিয়ে।

ততদিনে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ক্যারিয়ার গত হয়েছে, স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন লিন্ডসে হ্যাসেট। ট্রেন্টব্রিজের ১ম টেস্টে টস জিতেছিলো অস্ট্রেলিয়া। আর ডব্লিউ জি গ্রেস তো শিখিয়েই গিয়েছিলেন,
‘টসে জিতে ব্যাটিং নাও। যদি মনে কোনো দ্বিধা থাকে, তাহলে একটু ভাবতে পারো, তারপর ব্যাটিং নাও। এরপরও যদি দ্বিধা থাকে, তাহলে কোনো সতীর্থের সঙ্গে আলোচনা করতে পারো। তারপরও ব্যাটিংই নাও।’
অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন পুরো সিরিজজুড়ে সেটাই করেছিলেন।
স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের কাছ থেকে যার কাঁধে নেতৃত্বভার বর্তেছিলো, সেই লিন্ডসে হ্যাসেটের সেঞ্চুরির পরও প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাঁড়িয়েছিলো কেবল ২৪৯। অবশ্য লিন্ডওয়ালের বোলিং তোপে সে রান হয়েছিলো পর্বতসম, অস্ট্রেলিয়া লিড পেয়েছিলো ১০৫ রানের।
সে ম্যাচে অ্যালেক বেডসার যেন নেমেছিলেন সাতের ঘরের নামতা পড়ে, প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও সাত উইকেট তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে থামিয়ে দিয়েছিলেন ১২৩ রানে। তিনদিনের মাঝেই অস্ট্রেলিয়ার দুই আর ইংল্যান্ডের এক ইনিংস ব্যাটিং করা শেষ, চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ডের টার্গেট ২২৯।

কিন্তু ওই যে, ইংল্যান্ডের আবহাওয়ার মতিগতি বোঝা দায়! বেরসিক বৃষ্টিতে চতুর্থ দিনে খেলাই হলো না, পঞ্চম দিনে খেলা শুরু হতে হতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল। তখন তো আর এখনকার মতো অত্যাধুনিক ফ্ল্যাডলাইট ছিল না, লাঞ্চের পরে যে কয়েক ওভার খেলা হলো, তাতে ম্যাচের ফলও এলো না।
১ উইকেট খরচায় ১২০ রানেই ইংল্যান্ডকে থামতে হলো। অ্যালেক বেডসারের ম্যাচে ১৪ উইকেট, কিংবা হ্যাসেটের সেঞ্চুরি, সবকিছু আক্ষরিক অর্থেই জলে ভেসে গেলো।
দ্বিতীয় টেস্ট
সিরিজে লিন্ডসে হ্যাসেটের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, ডেভিডসন আর হার্ভের ফিফটিতে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাঁড়িয়েছিলো ৩৪৬। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডও জবাব দিয়েছিলো সমানে সমান, প্রায় পৌঁনে দুইদিন ব্যাট করে রান তুলেছিলো ৩৭২। হ্যাসেটের শতকের প্রত্যুত্তরে ইংরেজ কাপ্তান হাটন করেছিলেন ১৪৫।
অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরি হয়েছিলো একটি। তবে এবারে আর হ্যাসেট নন, সেঞ্চুরি এসেছিলো কীথ মিলারের ব্যাটে। সাথে আর্থার মরিসের ৮৯ রানে ভর করে ইংল্যান্ডের সামনে ক্যাঙারুরা ছুঁড়েছিলো ৩৪৩ রানের লক্ষ্যমাত্রা, একটু কঠিনই। চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলের মরে আসা আলোতে ২০ রানে ৩ উইকেট হারানোর কারণে, ইংল্যান্ডের জন্যে যা হয়ে গেল অসম্ভব। সে টেস্টে প্রেসবক্সে উপস্থিত থাকা, বিখ্যাত সাংবাদিক জন আরলট জানাচ্ছেন, সাংবাদিকদের মাঝে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিলো, খেলা মধ্যাহ্নবিরতির আগেই শেষ হবে, নাকি ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা আরেকটুখানি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবেন! তবে কারও অনুমানেই ইংল্যান্ড গোটা একদিন ব্যাট করে ম্যাচ বাঁচিয়ে ফেলবে, এমন কিছু আসেনি।
পঞ্চম দিন সকাল সকাল ডেনিস কম্পটনও ফিরে গেলে সে অনুমান অনেকটাই সত্য হবার পথে। কেননা, পরের ব্যাটসম্যান ছিলেন ট্রেভর বেইলি, তখন অব্দি অজিদের বিরুদ্ধে তার সর্বোচ্চ ইনিংসটাই ছিল ১৫ রানের, গড় ৮। পাঁচ মিনিটও ক্রিজে টেকেন কি না, তার নেই নিশ্চয়তা… সেখানে খেলা বাকি পাঁচ ঘণ্টার!
সেদিন যেন কি হলো! ট্রেভর বেইলি টিকলেন ২৫৭ মিনিট, রান করলেন ৭১। আগে থেকেই ক্রিজে থাকা ওয়াটসন তুলে নিলেন সেঞ্চুরি, ৩৪৬ মিনিট ব্যাট করে। মাঝে তো ওয়াটসন জয়ের জন্যেও ছুটতে চেয়েছিলেন। ২০০৩ সালে উইজডেনকে সাক্ষাৎকার দেবার সময় ওয়াটসন জানান, ট্রেভর বেইলির উত্তর ছিল,
‘Trevor just turned his back on me and walked away.’

দু’জনের ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তায় সামান্য আঁচড়ও ফেলতে পারেননি অজি বোলাররা। একবার তো মাঠে পানিপানের বিরতিও নেননি অজি কাপ্তান লিন্ডসে হ্যাসেট, পাছে সময় নষ্ট হয় এই ভয়ে।
দিনের খেলা যখন শেষ হয়, ইংল্যান্ড তখন ৬১ রান দূরে, অস্ট্রেলিয়া তিন উইকেট। পাঁচদিনে মাঠে উপস্থিত ১,৩৭,৯১৫ জন দর্শককে ইতিহাসের অংশ করা ম্যাচের ফল ড্র।
সিরিজে তখনও সমতা।
তৃতীয় টেস্ট
আবারও প্রথম ইনিংসে এক অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি, আবারও অ্যালেক বেডসারের পাঁচ উইকেট, আবারও দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং বিপর্যয়, আবারও বৃষ্টি। আবারও ম্যাচের ফল, ড্র।
নিল হার্ভের ১২২ রানে ভর করে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে তুলেছিলো ৩১৮। জবাবে লেন হাটনের হাফ সেঞ্চুরি, ডেনিস কম্পটন আর গডফ্রে ইভান্সের দু’টি চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংসে ইংল্যান্ড তুলেছিলো ২৭৬।

ততক্ষণে অবশ্য ম্যাচের ফল নিয়ে যাবতীয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান ঘটেছিলো। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস যতক্ষণে শেষ হয়েছিলো, ততক্ষণে ম্যাচের চৌদ্দ সেশনের খেলা শেষ। বাকি এক সেশনে ফল আশা করা বোকামি।
তবে অ্যালেক বেডসার, জিম লেকার আর জ্যাক ওয়ার্ডলি মিলে পরের কিছুক্ষণ যা করলেন, তাতে মাঠে উপস্থিত হাজার বিশেক দর্শকদের মাঝে জাগিয়ে গেলেন আক্ষেপ। তিনে মিলে ১৮ ওভার বল করে উইকেট তুলে নিয়েছিলেন আটটি, অস্ট্রেলিয়া রান তুলেছিলো ৩৫।
‘ইশ, আরেকটু!’ আক্ষেপে পুড়ে বাড়ির পথ ধরেছিলেন ইংরেজ দর্শকেরা।
চতুর্থ টেস্ট
সিরিজে প্রথমবারের মতো টস জিতেছিলো ইংল্যান্ড। আর টস জয় মানেই তো ব্যাটিং!
অবশ্য তার ব্যাটসম্যানরা তার সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে তেমন জোরালো কোনো যুক্তি রাখতে পারেননি, ম্যাচের স্কোরকার্ড তাই বলে। ইংল্যান্ড গুটিয়ে গিয়েছিলো ১৬৬ রানে, সর্বোচ্চ ৫৫ রান করেছিলেন টম গ্রাভিনি।
নিল হার্ভে আর গ্রায়েম হোলের ব্যাটে অস্ট্রেলিয়া লিড পেয়েছিলো ৯৯ রানের।
দ্বিতীয় ইনিংসে বেশ ভালোই জবাব দিয়েছিলেন বিল এডরিচ, ডেনিস কম্পটনরা। অবশ্য প্রথম ইনিংসের ঘাটতিটুকু পুষিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ছুঁড়ে দিতে পেরেছিলেন কেবল ১৭৫ রানের লক্ষ্য।

তবে কাজের কাজটা ঠিকই করে নিয়েছিলেন ফাঁকতালে। সময়ক্ষেপণের কৌশলটা ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ভালোই জানা ছিল!
সে ম্যাচের একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করতেই হচ্ছে। চতুর্থ দিন লাঞ্চের আগে বাকি ছিল মিনিট দুয়েক। মেঘাচ্ছন্ন আকাশের নিচে বলটা হয় আসলেই দেখা যাচ্ছিলো না, নতুবা ট্রেভর বেইলির আরও এক ওভার খেলতে ইচ্ছে জাগছিলো না। অপর প্রান্তের জিম লেকারকে ডেকে যেই বলতে যাবেন, ‘চলো, আম্পায়ারকে বলি, বল দেখা যাচ্ছে না’, অমনি সূয্যিমামা উঠলো হেসে। তবুও আম্পায়ারের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে যতক্ষণে ট্রেভর বেইলি ফিরে আসলেন, ততক্ষণে দুই মিনিট পেরিয়ে গিয়েছে। অগত্যা, লাঞ্চ!
সেদিন ইংল্যান্ডের ব্যাটিং যারা দেখেছিলেন, তাদের প্রত্যেকের চোখেমুখে বিরক্তি ফুটে উঠেছিলো স্পষ্ট। এতটা নেতিবাচক ক্রিকেট খেলা ক্রিকেটের চেতনাবিরোধী কি না, সে প্রশ্নও উঠেছিলো বেশ জোরেশোরে। ইংলিশ দৈনিক ডেইলি মিরর তো সংবাদই ছাপিয়েছিলো এই শিরোনামে,
‘How can England have been so bad?’
সময়ক্ষেপণের নানা কৌশলে আর অতি রক্ষণাত্মক ব্যাটিংয়ে ট্রেভর বেইলি উইকেটে টিকে ছিলেন ২৬২ মিনিট, রান করেছিলেন ৩৮। অবশ্য প্রথম ইনিংসে যে দল ৯৬ ওভার খেলে ১৪২ রান তুলেছিলো, তাদের জন্য এ মোটেই স্বভাববিরূদ্ধ নয়।
যা স্বভাববিরূদ্ধ, সেটা হলো তৎকালীন সময়ে অস্ট্রেলিয়ার জন্য শেষদিন বিকেলে ৩৩ ওভারে ১৭৫ রান তাড়া করা। আর্থার মরিস আর নিল হার্ভে রীতিমতো ‘টর্নেডো’ বইয়ে দিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু খেলাশেষে তা ব্যর্থ চেষ্টাই রয়ে গেল, ১৪৭ রানেই অস্ট্রেলিয়াকে থামতে হলো।
সিরিজে ফল আসবে কি না, তার জন্যে শেষ ম্যাচ অব্দি অপেক্ষা করতে হলো।
পঞ্চম টেস্ট
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, ওই সিরিজের আগে হওয়া তিনটি অ্যাশেজের ফলাফল ছিলো, ৩-০, ৪-০, ৪-১। শেষ টেস্টে পৌঁছানোর আগেই অস্ট্রেলিয়া নিশ্চিত করেছিলো, অ্যাশেজটা ওই তাসমান সাগরপাড়েই থাকছে।
সেবারই চার ম্যাচ হয়ে যাবার পরও সিরিজে রয়ে গেল আশ্চর্য সমতা। হাইপ তৈরি করবার এ সুযোগটা অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমগুলোও বেশ লুফে নিয়েছিলো। তাই সিরিজের শেষ ম্যাচের আগে বিখ্যাত ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ শিরোনাম করেছিলো, ‘The test to end all tests’।
দর্শকেরাও এমন ম্যাচের আবেদন অগ্রাহ্য করতে পারেননি। ম্যাচের শেষ দিন ঘণ্টাখানেকের খেলা দেখতেও মাঠে হাজার পঁচিশেক দর্শক উপস্থিতি তো তারই প্রমাণ। অবশ্য দর্শক হবে না-ই বা কেন? এমন রোমাঞ্চকর উত্তেজনায় ঠাসা অ্যাশেজ যে দেখা গেলো বছর বিশেক পরে!
পেন্ডুলামের মতো দোল খাওয়া সিরিজে যেন ফল আসে, সে জন্যেই ওভালের বুকে হওয়া সেই ম্যাচটা বানানো হয়েছিলো ৬ দিনের। সিরিজের ধারা মেনে আবারও টস জিতে হ্যাসেট নিয়েছিলেন ব্যাটিং করবার সিদ্ধান্ত, পরবর্তীকালে যে সিদ্ধান্তের সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের ট্রেভর বেইলিই তো বলছেন,
‘যদি হ্যাসেট আমাদের আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে জুয়াটা খেলতেন, হয়তো ইংল্যান্ড নয়, ম্যাচে জয়ী দলের নাম হতো অস্ট্রেলিয়া!’
বেইলির দাবিকে অস্বীকার করবার উপায়টাই বা কোথায়! উইকেটে প্রথম দিনে যেমন সুইং পাওয়া গিয়েছিলো, সময় গড়ানোর সাথে সাথে তেমনই টার্ন আদায় করে নিয়েছিলেন জিম লেকার আর লক।
প্রথম ইনিংসে তাই অস্ট্রেলিয়ার হন্তারক হয়েছিলেন সে সিরিজকে নিজের করে নেয়া পেসার অ্যালেক বেডসার আর সে সিরিজে প্রথমবার মাঠে নামা ফ্রেড ট্রুম্যান। দ্বিতীয় ইনিংসে স্পিনের মায়াজালে অস্ট্রেলিয়াকে বেঁধে ফেলেছিলেন টনি লক আর জিম লেকার।
প্রথম ইনিংসে অজিরা ২৭৫ রান তুললেও লিড নিয়েছিলো ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে অজিদের অবস্থা তো আরও করুণ। লেকার আর লক মিলে ৯ উইকেট তুলে নিয়ে ক্যাঙারুদের থামিয়ে দিয়েছিলেন ১৬২ রানেই, থ্রি লায়ন্সদের সামনে টার্গেট দাঁড়িয়েছিলো ১৩২ রান।

শেষ দিনে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৯৪ রান, অস্ট্রেলিয়ার ৯ উইকেট। ওভারপ্রতি ২.৩৫ করে রান তুলে ইংল্যান্ডই সে লক্ষ্যে পৌঁছালো আগে। ডেনিস কম্পটন লিন্ডসওয়ালকে চার মেরে দলকে লক্ষ্যে ভেড়াচ্ছেন, সে ম্যাচের এই দৃশ্যটা বিবিসির টেস্ট ম্যাচ প্রোমোশনাল ভিডিও হয়ে গিয়েছিলো বহুদিনের জন্য।
ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা তখন আনন্দে উদ্বাহু। তখন তো আর বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ছিলো না, অ্যাশেজকেই মানা হতো শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যার প্রমাণ ম্যাচের আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি এক্সপ্রেসের বক্তব্য,
‘The most thrilling Test in 20 years to decide world cricket supremacy.’

পাদটীকা
ওই অ্যাশেজের গুরুত্ব কি কেবল ইংল্যান্ডের জয়েই সীমাবদ্ধ?
না। খেলাটা যখন বিনোদনেরই অন্য নাম, তখন সেই সিরিজ বিনোদনের সবটুকু নিয়েই হাজির হয়েছিলো। নখ কামড়ানো উত্তেজনা, ম্যাচ ড্র করার জন্যেও হাজার রকমের কলাকৌশল আর ছল-চাতুরির প্রয়োগে সিরিজটা হয়ে উঠেছিলো উপভোগ্য। বিগত ২০ বছর ধরে যেখানে অ্যাশেজ মানেই ছিল একঘেয়েমির আরেক নাম, ‘অ্যাশেজ অস্ট্রেলিয়াই জিতবে’ এমনটাই যে হয়ে উঠেছিলো নিয়তি।
সেবার ইংল্যান্ডের রানীর রাজ্যাভিষেকের কারণে ব্রিটিশ পরিবারগুলোতে টেলিভিশন কেনার হিড়িক পড়েছিলো। প্রত্যক্ষ উদ্দেশ্য রানীর সিংহাসনে আরোহণের অনুষ্ঠান দেখা হলেও, পরোক্ষে লাভটা হয়েছিলো ক্রিকেটের। ২ মে রানী ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে বসতি গড়ার দিন দশেক পরেই শুরু হয়েছিলো ওই জমজমাট সিরিজ। টিভি পর্দায় অমন উপভোগ্য সিরিজ দেখে ক্রিকেটের প্রেমে মজেছিলেন অনেক দর্শকই। ক্রিকেটের আবেদন তাই বেড়ে গিয়েছিলো হুট করেই।
ইংল্যান্ডের জয়টা ছাপিয়ে জয়টা তাই ক্রিকেটেরই হয়েছিলো।