বল টেম্পারিংয়ের সাথে জড়িত থাকার কারণে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এক বছরের জন্য ডেভিড ওয়ার্নার এবং স্টিভেন স্মিথকে ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে। তাই ২০১৮-১৯ মৌসুমের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে তাদের বাদ পড়াটা একপ্রকার নিশ্চিতই ছিল। সেই সাথে ক্যামেরুন ব্যানক্রফটও নয় মাসের নিষেধাজ্ঞার কারণে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা পাননি। কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা হারানোর মধ্য দিয়ে স্টিভ স্মিথ এবং ডেভিড ওয়ার্নারের ২০১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গিয়েছে।
কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা করে নেওয়া ক্রিকেটারদের সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের নির্বাচক ট্রেভর হনস বলেন, “তিন ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়াকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য তালিকাটি বেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ।” তালিকাবদ্ধ অধিকাংশ ক্রিকেটারই গত ছয় মাসে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সীমিত ওভারের ম্যাচ খেলেছেন। বিশ্বকাপকে সামনে রেখেই অস্ট্রেলিয়া দল সাজাচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
স্টিভেন স্মিথ এবং ডেভিড ওয়ার্নারের নিষেধাজ্ঞার পর অস্ট্রেলিয়ার ৪৬তম ক্রিকেটার হিসেবে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পাওয়া টিম পেইনের পাশাপাশি শন মার্শ, কেন রিচার্ডসন, জাই রিচার্ডসন, অ্যালেক্স ক্যারি, অ্যান্ড্রু টাই ও মার্কস স্টইনিস অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নিজেদের নাম লেখান। এর মধ্যে শন মার্শ এবং টিম পেইন ব্যতীত বাকি পাঁচজন প্রথমবারের মতো ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা করে নেন।
চুক্তিবদ্ধ ২০ ক্রিকেটারের হলেন অ্যাস্টন আগার, অ্যালেক্স ক্যারি, প্যাট কামিন্স, অ্যারোন ফিঞ্চ, পিটার হ্যান্ডসকম্ব, জশ হ্যাজলেউড, ট্রাভিস হেড, উসমান খাঁজা, নাথান লায়ন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, শন মার্শ, মিচেল মার্শ, টিম পেইন, ম্যাথু রেনশ্, জাই রিচার্ডসন, কেন রিচার্ডসন, বিলি স্ট্যানলেক, মিচেল স্টার্ক, মার্কস স্টইনিস ও অ্যান্ড্রু টাই।
অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দলের উইকেটরক্ষক এবং অধিনায়ক টিম পেইন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসাবে না-ও খেলতে পারেন। তার বিকল্প হিসাবে অ্যালেক্স ক্যারি প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা করে নিয়েছেন। এছাড়া কেন এবং জাই রিচার্ডসন, অ্যান্ড্রু টাই ও মার্কস স্টইনিস নতুন মুখ হিসাবে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা করে নিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় চুক্তির বিশজনের তালিকায় ছয়জন ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার এবং অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে শক্তিশালী রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলসের চারজন ক্রিকেটার আছেন। এছাড়া কুইন্সল্যান্ড, সাউথ অস্ট্রেলিয়া এবং ভিক্টোরিয়া থেকে তিনজন করে ক্রিকেটার আছে। তাসমানিয়ার একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে আছেন অধিনায়ক টিম পেইন।
স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার এবং ক্যামেরুন ব্যানক্রফটের পাশাপাশি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়েছেন জ্যাকসন বার্ড, হিল্টন কার্টরাইট, ম্যাথু ওয়েড, জেমস প্যাটিনসন এবং অ্যাডাম জাম্পা। বাদ পড়া ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নামটি হলো অ্যাডাম জাম্পার। বর্তমানে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আইসিসি র্যাংকিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ স্পিনার তিনি।
অ্যাডাম জাম্পা অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। এখন পর্যন্ত ১৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৭ উইকেট এবং ৩১টি ওয়ানডেতে ৪২ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটাদের মধ্যে মাত্র দুজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার রেখেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। অভিজ্ঞ স্পিনার নাথান লায়নের পাশাপাশি অ্যাস্টন আগার কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা করে নিয়েছেন।
ইনজুরির কারণে কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়েছেন নাথান কুল্টার-নাইল এবং জেমস প্যাটিনসন। প্যাটিনসন অবশ্য আগামী অ্যাশেজে দলে ফেরার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। এই দুই পেসারের পাশাপাশি জ্যাকসন বার্ড এবং সদ্য সমাপ্ত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের শেষ টেস্টে অভিষেক ঘটা চাদ সেয়ার্সও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের তালিকায় জায়গা পাননি।
বিগ ব্যাশে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করা দুই টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান ডি’আর্চি শর্ট এবং ক্রিস লিনও চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার তালিকায় জায়গা পাননি। কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা না পেলেও লিমিটেড ওভারের ক্রিকেটে ঠিকই দলে জায়গা করে নিবেন তারা।
আগামী মৌসুমে বেশ কিছু সীমিত ওভারের ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া। সেদিক বিবেচনা করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া মাত্র একজন স্পেশালিষ্ট টেস্ট ওপেনারকে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রেখেছেন। একমাত্র টেস্ট ওপেনার হিসাবে ম্যাট রেনশ্ তালিকায় রয়েছেন।
নতুন পাঁচ মুখ
১. অ্যান্ড্রু টাই
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার ৩১ বছর বয়সী অভিজ্ঞ পেসার অ্যান্ড্রু টাই প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা করে নিয়েছেন। ২০১৬ সালের ২৯শে জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন টাই। ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে চলতি বছরের ১৪ই জানুয়ারি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এখন পর্যন্ত চারটি ওয়ানডেতে আট উইকেট এবং ১২টি টি-টোয়েন্টিতে ১৬ উইকেট শিকাত করেছেন অ্যান্ড্রু টাই। লিমিটেড ওভারের ক্রিকেটের জন্য তাকে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রেখেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।
২. অ্যালেক্স ক্যারি
অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের অধিনায়ক টিম পেইনের পাশাপাশি অ্যালেক্স ক্যারিকে দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসাবে তালিকায় রেখেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। বিশেষ করে রঙিন পোশাকে দেখা যাবে তাকে। বছরের শুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ক্যারির। একমাত্র ওয়ানডে ম্যাচে ২৭ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এছাড়া নিউজিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের সবকটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
ঘরোয়া ক্রিকেটে অসাধারণ পারফরমেন্স করার ফলে তিনি দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে দলে জায়গা করে নেন। অ্যালেক্স ক্যারি এখন পর্যন্ত ১৩টি ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৪৬৪ রান করেছেন। সর্বমোট ১৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৪৭.০০ ব্যাটিং গড়ে ৪৭০ রান করেছেন তিনি।
৩. জাই রিচার্ডসন
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার ২১ বছর বয়সী পেসার জাই রিচার্ডসনকে সবধরনের ক্রিকেটের কথা ভেবে দলে রেখেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। গত মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার জেতা জাই রিচার্ডসন ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একটি ওয়ানডে এবং দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াডে ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একটি ওয়ানডেতে দুই উইকেট এবং দুটি টি-টোয়েন্টিতে দুই উইকেট শিকার করেছেন। এছাড়া নয়টি লিস্ট-এ ম্যাচে ১৫ উইকেট শিকার করেছেন তরুণ এই পেসার।
৪. মার্কস স্টইনিস
মার্কস স্টইনিস লিমিটেড ওভারের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার নিয়মিত মুখ। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটলেও প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। স্টইনিস এখন পর্যন্ত ১৩টি ওয়ানডেতে একটি শতক এবং চারটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৬২.৮৮ ব্যাটিং গড়ে ৫৬৬ রান করেছেন। এবং বল হাতে শিকার করেছেন সাত উইকেট। আসন্ন বিশ্বকাপকে সামনে রেখে প্রথমবারের মতো তাকে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রেখেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।
৫. কেন রিচার্ডসন
শেফিল্ড শিল্ডে দুর্দান্ত বোলিং করার সুবাদে কেন রিচার্ডসনকে দলে রেখেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটলেও প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা করে নিয়েছেন কেন রিচার্ডসন। প্রায় পাঁচ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১৫টি ওয়ানডেতে ২১ উইকেট এবং আটটি টি-টোয়েন্টিতে ৯ উইকেট শিকার করেছেন কেন রিচার্ডসন।
চুক্তি থেকে বাদ পড়া ক্রিকেটারদের তালিকা: স্টিভেন স্মিথ, ক্যামেরুন ব্যানক্রফট, ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যাডাম জাম্পা, ম্যাথু ওয়েড, হিল্টন কার্টরাইট, জ্যাকসন বার্ড এবং জেমস প্যাটিনসন
চুক্তিতে জায়গা পাওয়া ক্রিকেটারদের তালিকা: অ্যালেক্স ক্যারি, শন মার্শ, টিম পেইন, জাই রিচার্ডসন, কেন রিচার্ডসন, মার্কস স্টইনিস, অ্যান্ড্রু টাই।
ফিচার ইমেজ: Cricket Australia