Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মেজর লিগ সকার মাতানো ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তিরা

জন্মভূমি ইংল্যান্ডসহ প্রায় গোটা বিশ্বেই ফুটবল নামে পরিচিত হলেও, যুক্তরাষ্ট্রে খেলাটি পরিচিত সকার নামে। বাস্কেটবল, রাগবি কিংবা বেসবলের তুলনায় সকারের জনপ্রিয়তা একেবারেই না থাকলেও দৃশ্যপটে পরিবর্তন আসতে শুরু করে ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপের পর। কারণ, ১৯৯৫ সালে গঠিত হয় মেজর লিগ সকার এবং পরের বছর থেকেই ক্লাব পর্যায়ের সর্বোচ্চ এই আসর যুক্তরাষ্ট্রের মাঠে গড়ায়। কিন্তু মাত্র ১০ দল নিয়ে লিগের শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি, দর্শকশূন্যতায় প্রথমবারে লোকসান গুনতে হয়েছিলো মেজর সকার লিগ কর্তৃপক্ষকে। মেজর লিগ সকার বা এমএলএসের দর্শক জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে বড় রকমের পরিবর্তন আসে, যখন এই লিগে সময়ের জনপ্রিয় কিংবদন্তি ফুটবলাররা যোগ দিতে শুরু করেন। ২০০৭ সালে এমএলএসে প্রথম সবচেয়ে বড় তারকা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ইংলিশ কিংবদন্তি ডেভিড বেকহ্যাম। পরবর্তীতে এমএলএসের মাঠ মাতিয়েছেন ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে থাকা অঁরি, কাকা, জেরার্ড, পিরলোদের মতো তারকা ছাড়াও আরও ফুটবল বিশ্বের অনেক কিংবদন্তি। বলতে দ্বিধা নেই, এমএলএসের জনপ্রিয়তা বাড়াতে ক্যারিয়ারের পড়ন্ত সময়ের তারকা খেলোয়াড়েরা বড় ভূমিকা রেখেছেন, এবং অনেকে এখনও রেখে চলেছেন।

ডেভিড বেকহ্যাম

এমএলএসের ‘ডেসিগনেটেড প্লেয়ার রুল‘-এর আওতায় লিগে যোগ দেওয়া প্রথম খেলোয়াড় ছিলেন ইংলিশ খেলোয়াড় বেকহ্যাম, এবং শেষ পর্যন্ত এই নিয়মের ডাকনাম হয়ে গিয়েছে ‘দ্য বেকহ্যাম রুল’। ২০০৭ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সিতে যোগ দেওয়ার পর খেলেছেন ২০১২ সাল পর্যন্ত।  গ্যালাক্সির হয়ে দুইটি লিগ শিরোপাজয়ী এই খেলোয়াড় লিগে ৯৮টি ম্যাচে গোল করেছিলেন ১৮টি এবং অ্যাসিস্ট ছিল ৪০টি।

এমএলএসের প্রথম ভিনদেশী মহাতারকা; Source: goal.com

নামের সুবিচার হয়তো এই পরিসংখ্যানে আপনি পাবেন না, কিন্তু লিগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে বেকহ্যামের বড় ভূমিকা ছিল। গ্যালাক্সিতে বেকহ্যামকে মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে নয়, বরং এমএলএস তথা যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির নতুন ধারা তৈরির পথিকৃৎ হিসেবে বিচার করা হয়। গ্যালাক্সিতে তার বাৎসরিক মূল বেতন ছিল ৬.৫ মিলিয়ন ডলার, এবং ক্লাবটির লভ্যাংশের একটি অংশও তাকে দেওয়া হত। ফোর্বসের তথ্য অনুসারে, এমএলএস থেকে বেকহ্যাম আয় করেছিলেন প্রায় ২৫৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার।

থিয়েরি অঁরি

আর্সেনাল ও ফরাসি কিংবদন্তি ২০১০ সালে যোগ দিয়েছিলেন নিউ ইয়র্ক রেড বুলসে, খেলেছেন টানা পাঁচ বছর। প্রথম মৌসুম বাদে বাকি মৌসুমগুলোতে অঁরি ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে, গোল ও অ্যাসিস্টের মাধ্যমে দলকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সামনে থেকে। তিনবার এমএলএসের সেরা একাদশে জায়গা করে নিলেও লিগ শিরোপা জেতা হয়নি একবারও।

রেড বুলসের জার্সিতে ফ্রেঞ্চ কিংবদন্তি অঁরি; Source: thetrentonline.com

অরির গোলের জাদুর ছোঁয়ার দেখা পেয়েছিলো আমেরিকার দর্শকরাও। ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে এসেও এই লিগে ১২২ ম্যাচে এই কিংবদন্তি ৫১টি গোল এবং ৪২টি অ্যাসিস্ট করেছিলেন তিনি। রেড বুলসের হয়ে ২০১৩ সালে জেতা ‘সাপোর্টার্স শিল্ড’ অঁরির যুক্তরাষ্ট্র অধ্যায়ে একমাত্র শিরোপা।

কাকা

মেজর লিগ সকার ইতিহাসের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া খেলোয়াড় ছিলেন কাকা, তার পারিশ্রমিক ছিল ৭.২ মিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সালে অরলান্ডো সিটির হয়ে সকার লিগ ক্যারিয়ার শুরু করা কাকা লিগ ও ক্লাবটির জনপ্রিয়তায় নতুন মাত্রা এনে দিয়েছিলেন। টানা তিন মৌসুমে ক্লাবটির হয়ে ব্রাজিলিয়ান এই কিংবদন্তির গোল ও অ্যাসিস্ট সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২৪ ও ২২ টি।

এমএলএসের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া খেলোয়াড়; Source: espn.in

বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী এই খেলোয়াড় যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে কোনো লিগ শিরোপা জিততে পারেননি। তবে মাঝমাঠের এই কিংবদন্তির পায়ের জাদু যে দ্য লায়নরা দারুণ উপভোগ করেছিলেন, তা বলাই বাহুল্য।

ডেভিড ভিয়া

স্প্যানিশ এই গোলমেশিন সম্প্রতি তার এমএলএস ক্লাব নিউ ইয়র্ক সিটি এফসি’কে বিদায় জানিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন জাপানের লিগে, সেখানে তার সহ-খেলোয়াড় হিসেবে আছেন আরেক স্প্যানিশ আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা।

সামনে থেকে ভিয়া ক্লাবটিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দারুণ দক্ষতায়; Source: sbisoccer.com

ক্লাবটির হয়ে ভিয়ার পার্ফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। ১২৪ ম্যাচে তিনি গোল করেছেন ৮০টি, এবং সেই সাথে ২৬টি অ্যাসিস্টও রয়েছে। বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা মেজর লিগ সকারের ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’ ছিলেন ২০১৬ সালে, এবং দুইবার জায়গা করে নিয়েছিলেন লিগের সেরা একাদশে। ২০১৫ সালে লিগে ক্লাবটির যাত্রা শুরুর সময় থেকেই ভিয়া ছিলেন তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড়, পালন করেছিলেন অধিনায়কের দায়িত্বও।

আন্দ্রে পিরলো

ইতালিয়ান এই কিংবদন্তি নিউ ইয়র্ক সিটি এফসি’তে যোগ দিয়েছিলেন স্প্যানিশ স্ট্রাইকার ডেভিড ভিয়ার সাথে। মেজর লিগ সকার ইতিহাসের অন্যতম বড় নাম হলেও, উল্লেখিত অন্য কিংবদন্তিদের তুলনায় পিরলো এই লিগে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি।

মেজর লীগে তেমন আলো ছড়াতে পারেননি এই কিংবদন্তি; Source: espn.in

তিন মৌসুমে ক্লাবটির হয়ে পিরলো ৬১ টি ম্যাচ খেলেছিলেন, মাঝমাঠের এই কিংবদন্তি এই সময়ে করেছেন মাত্র ১ টি গোল এবং ১৮ টি অ্যাসিস্ট। বয়স বিবেচনায় পিরলোর এই পরিসংখ্যান একেবারে সাদামাটা বলা চলে না। অবশ্য পিরলো নিজেই স্বীকার করেছিলেন যে, এই লিগে তার মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে। সিরি আ’র মতো রক্ষণাত্মক লিগে খেলে আসা ইতালিয়ান কিংবদন্তি তার সকার লিগের অভিজ্ঞতা বর্ণনায় বলেছিলেন,

‘এখানে প্রচুর দৌঁড়াতে হয়, খুবই শারীরিক ব্যাপার। আমার মনে খেলার চেয়ে শারীরিক পরিশ্রমের ব্যাপারটিই বেশি ছিল।’

যাই হোক, ২০১৭ সালে মেজর লিগ সকারকে বিদায় জানান পিরলো।

দিদিয়ের দ্রগবা

মেজর লিগ সকারে কানাডার ক্লাবও অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। আইভরি কোস্টের কিংবদন্তি স্ট্রাইকার দ্রগবা এমএলএসের কানাডিয়ান ক্লাব মন্ট্রিয়াল ইম্প্যাক্টে যোগ দিয়েছিলেন ২০১৫ সালে। এখানে দ্রগবা মাত্র দুই মৌসুম খেলেই বিদায় নিয়েছিলেন, তবে এই সময়ে দ্রগবা যে দলের হয়ে লিগ কাঁপিয়ে গিয়েছিলেন, সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। মাত্র ৩৯ ম্যাচ খেলেই দ্রগবা করেছিলেন ২২ গোল!

স্বভাবসুলভ স্ট্রাইকার দ্রগবার দেখাই মিলেছিল যুক্তরাষ্ট্রে; Source: espn.in

তাছাড়া মন্ট্রিয়ালের হয়ে লিগের প্রথম ম্যাচে নেমেই হ্যাটট্রিক করেন দ্রগবা, সেই সাথে বনে যান লিগ ইতিহাসে প্রথম ম্যাচে নেমেই হ্যাটট্রিক করা প্রথম খেলোয়াড়।

ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড

২০১৫ সালে নিউ ইয়র্ক সিটি এফসি’র এমএলএসের যাত্রা শুরুর মৌসুমের প্রথম দিকেই ইংলিশ তারকা ল্যাম্পার্ডের যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। নিউ ইয়র্ক সিটি ক্লাবের মূল মালিক আসলে ম্যানচেস্টার সিটি, ইংলিশ ক্লাবটি ২০১৪-১৫ মৌসুম শেষ না হলে ল্যাম্পার্ডকে ছাড়বে না। এই নিয়ে বেশ জলঘোলা হওয়ার পর মৌসুমের মধ্যভাগে নিউ ইয়র্ক সিটিতে যোগ দেন ল্যাম্পার্ড। আর প্রথম মৌসুমে মাত্র ১০টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি, গোল করেছিলেন ৩টি। তবে আশ্চর্যের বিষয়, এত কম ম্যাচ খেলেই তিনি অলস্টার দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন সে বছর।

অল্প সময়ে ল্যাম্পার্ড সমর্থকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন; Source: espn.in

পরের মৌসুমে ল্যাম্পার্ড অবশ্য ভক্তদের মন জয় করে নিয়েছিলেন তার পারফরম্যান্স দিয়েই, এমএলএসের প্লে-অফে তার দল জায়গা করে নেয় এই মৌসুমে। এই মৌসুম শেষেই অবশ্য এই কিংবদন্তি ফুটবলকে বিদায় জানান।

মেজর লিগ সকারে বর্তমান তারকাদের মধ্যে যারা এখনও মাঠ মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম রুনি, ইব্রাহিমোভিচ, শোয়েনস্টাইগারের মতো কিংবদন্তিরা। ডিসি ইউনাইটেডে হয়ে ইংলিশ তারকা রুনি রীতিমতো গোলের ঝড় তুলে জিতে নিয়েছেন ভক্তদের মন। প্রথম মৌসুমেই এখন পর্যন্ত ২০ ম্যাচ খেলে তার গোল সংখ্যা ১২টি ও অ্যাসিস্ট সংখ্যা ৭টি!

এমএলএসে প্রথম ম্যাচ থেকেই গোল উৎসবে মেতেছেন ইব্রা; Source: foxnews.com

পিছিয়ে নেই রুনির সাবেক ইউনাইটেড সতীর্থ সুইডিশ কিংবদন্তি ইব্রাহিমোভিচও। এই বছরের মার্চেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন এলএ গ্যালাক্সিতে। ক্লাবটির হয়ে এখন পর্যন্ত ২৭ ম্যাচে তার গোল সংখ্যা ২২। ক্যারিয়ারের শেষ সময়ের দিকে ক্রমেই তারকাদের অন্যতম গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে এমএলএস, যা লিগটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি আমেরিকায়ও ফুটবলের জনপ্রিয়তায় বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

This article is in Bangla language. It's about football legends who played in Major League Soccer of USA and helped to enhance the popularity of football and the league throughout the USA. Necessary references have been hyperlinked.

Feature Image: si.com

Related Articles