Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কেমন হতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ স্কোয়াড?

বিশ্বকাপের সাথে প্রোটিয়াদের অদৃশ্য একটা দা-কুমড়ো সম্পর্ক রয়েছে। দলটির বিশ্বকাপ ইতিহাস দেখলে অন্তত এমনটা মনে হতেই পারে। এর মূল কারণ কিন্তু প্রোটিয়াদের বিশ্বকাপ জিততে না পারা নয়!

বিশ্বকাপ তো ইংল্যান্ড কিংবা নিউ জিল্যান্ডের মতো পরাশক্তিরাও জিততে পারেনি। কিন্তু তাদেরকে কখনোই চোকার্স বা দুর্ভাগা দল বলা হয়নি। প্রোটিয়াদের বিশ্বকাপ ইতিহাস নিয়ে এত চর্চার মূল কারণ তাদের বাদ পড়ার ধরন; সাতটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে পাঁচবারই তারা বাদ পড়েছে দুর্ভাগ্য কিংবা নিজেদের কিছু হাস্যকর ভুলের খেসারত দিয়ে।

এত কিছুর পরও প্রতি বিশ্বকাপের আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা আবারও এক বুক আশা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কারণ ইংরেজিতে তো একটা কথাই আছে, ‘Dreams are more powerful than facts, hope always triumphs over experience.’ এবারের বিশ্বকাপ নিয়েও দক্ষিণ আফ্রিকা সমর্থকরা আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। এবারে প্রোটিয়াদের স্বপ্নপূরণের সারথী হওয়ার সুযোগ কারা পাবে? কাদের নিয়ে গঠিত হবে দক্ষিণ আফ্রিকার চূড়ান্ত স্কোয়াড? বিভিন্ন সমীকরণ মিলিয়ে সেই চূড়ান্ত স্কোয়াড কেমন হতে পারে, সেই ব্যাপারেই একটা ধারণা নেওয়া যাক।

টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান

একটা দলের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতায় উদ্বোধনী জুটির একটা বড় ভূমিকা থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকা দল সেই দিক থেকে ভাগ্যবান, কুইন্টন ডি কক ও হাশিম আমলার উদ্বোধনী জুটি দীর্ঘদিন ধরে তাদের দারুণ সেবা দিয়ে আসছে। যদিও বিশ্রাম দেওয়ার কারণে পাকিস্তানের বিপক্ষে ডি কক এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানদে সিরিজে হাশিম আমলা খেলেননি, ফলে এই দুইটি সিরিজে এই জুটিকে ইনিংস সূচনা করতে দেখা যায়নি। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে বিশ্বকাপে আমলা আর ডি ককের জুটিকেই দক্ষিণ আফ্রিকা উদ্বোধনী জুটি হিসেবে বেছে নেবে। 

প্রোটিয়াদের আস্থার অনেকটা জুড়ে থাকবে এই জুটি; Image Source: Dhaka Tribune

ডি কক ও আমলার বিশ্রামের সুবাদে ২০১৯ সালে টানা নয় ওয়ানডেতে ওপেনার হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন রেজা হেনড্রিকস। কিন্তু সেই ৯ ম্যাচে তার গড় ছিল মাত্র ২৪.৩৮ রান। এ কারণে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে হেনড্রিকসকে বাদ দিয়ে ওপেনার হিসেবে এইডেন মার্করামকে সুযোগ দেওয়া হয়। সেই সুযোগটা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন তিনি, ৬৭ রানে অপরাজিত থেকে সেই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ও মার্করাম। তাছাড়া ঘরোয়া লিগে তার সাম্প্রতিক ফর্মও বেশ ভালো। তাই সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে তিনিই বিশ্বকাপের টিকিট পাবেন। 

টপ অর্ডারের তিন ও চার নাম্বার ব্যাটসম্যান হিসেবে অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস ও র‍্যাসি ভ্যান ডার ডুসেনের জায়গা নিশ্চিত। ডু প্লেসিসকে নিয়ে তো নতুন করে আর বলার কিছু নেই, অধিনায়ক হওয়ার সাথে তিনি বর্তমান প্রোটিয়া দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। অন্যদিকে, ঘরোয়া লিগে দারুণ রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও ওয়ানডে দলে কিছুতেই সুযোগ পাচ্ছিলেন না ভ্যান ডার ডুসেন। অবশেষে ৩০ বছর বয়সে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক ঘটে তার। নিজের জাত চেনাতে অবশ্য খুব বেশি সময় তিনি নেননি। নয়টি ওয়ানডে খেলে চার ফিফটিতে ৩৫৩ রান করেছেন, গড় ৮৮.২৫! দারুণ এই পারফর্মেন্সে তার বিশ্বকাপ খেলাটাও একপ্রকার নিশ্চিত। 

ডু প্লেসিস কি পারবেন রি দল নিয়ে নতুন ইতিহাস গড়তে; Image Source: Guyana Chronicle

মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান

পাঁচ ও ছয় নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রোটিয়াদের দুই পুরনো যোদ্ধা জেপি ডুমিনি ও ডেভিড মিলারই সুযোগ পাবেন। ইনজুরির কারণে এ বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ পুরোটাই মিস করেছেন ডুমিনি, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম তিন ওয়ানডেতেও ছিলেন মাঠের বাইরে। তবে চতুর্থ ওয়ানডেতে ফিরে এসেই ২১ বলে ৩১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এবারের বিশ্বকাপ খেলেই দীর্ঘ ১৪ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানবেন তিনি। 

ডুমিনি কি পারবেন শেষটা কি রাঙিয়ে দিতে? Image Source: Crictracker

অন্যদিকে সম্ভাবনার বিশাল এক আলোকচ্ছটা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখা ডেভিড মিলার এখনো প্রোটিয়া মিডল-অর্ডারে বড় একটা আস্থার জায়গায় আছেন। তাকে নিয়ে যে রকম বিশাল স্বপ্ন দেখা হয়েছিল, তার সবটা পূরণ করতে না পারলেও নিজের দিনে মিলার একাই খেলা বের করতে আনতে সক্ষম। এমন একজন প্রকৃত ম্যাচ উইনার তো প্রোটিয়াদের বিশ্বকাপ দলে অবশ্যই থাকবেন।

এই দুইজন ছাড়াও মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে হেনরিখ ক্লাসেনের ১৫ সদস্যের দলে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া ডি কক ছাড়া আরেকজন ব্যাকআপ উইকেটরক্ষক দলে নিতে চাইলেও ক্লাসেনের নামটাই আসবে।   

অলরাউন্ডার

একটা সময়ে প্রোটিয়া দলে কোয়ালিটি অলরাউন্ডারের ছড়াছড়ি দেখা যেত। জ্যাক ক্যালিস, ল্যান্স ক্লুজনার, শন পোলক – এমন দুর্দান্ত তিন অলরাউন্ডার একসাথে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলেছেন। আজ সেই দলে একজন ভালো অলরাউন্ডারের অভাব বড্ড বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে, ক্যালিসের অবসরের পর সেভাবে আর কোনো অলরাউন্ডারই নিজের জাত চেনাতে পারেনি। সেদিক থেকে মন্দের ভালো আন্দিলে পেখুয়ায়ো, ২০১৬ সালে অভিষেক হওয়ার পর দলের নিয়মিত সদস্য হয়ে গেছেন। ডানহাতি এই পেসারের বলে বেশ ভ্যারিয়েশন আছে, আর সাত নম্বরে নেমে দলের বিপদে ধরে খেলার সক্ষমতাও আছে। সব মিলিয়ে সাত নম্বর পজিশনে পেখুয়ায়োর খেলা এক প্রকার নিশ্চিত। 

অলরাউন্ডার হিসেবে এবার পেখুয়ায়োই প্রোটিয়াদের মূল ভরসা; Image Source: ICC Cricket

এই পজিশনের জন্য আরেকজন খেলোয়াড় লড়তে পারতেন, ক্রিস মরিস। ঘরোয়া লিগে দারুণ পারফর্ম করে জাতীয় দলে এলেও এই হার্ডহিটার অলরাউন্ডার কখনোই নিজের সেরাটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দিতে পারেননি। ২০১৯ সালে একটি ওয়ানডে ম্যাচেও তিনি প্রোটিয়াদের হয়ে জায়গা পাননি, ফলে তার বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আরেক অলরাউন্ডার উইয়ান মুল্ডার এ বছর দলে সুযোগ পেলেও বাজে পারফর্মেন্সের কারণে তিনিও যে বিশ্বকাপের টিকিট পাচ্ছেন না, সেটাও একপ্রকার নিশ্চিত। বরং এদের সবাইকে টপকে আরেক অলরাউন্ডার হিসেবে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের জায়গা পাওয়াটা অনেকখানি নিশ্চিত।

পেসার

গতির ঝড় তুলতে গত তিন আসরের মতো এবারও প্রোটিয়া দলে থাকছেন ডেল স্টেইন। তবে ২০১৬ সাল থেকে ইনজুরিতে জর্জরিত হয়ে যখন তিনি বারবার মাঠের বাইরে যাচ্ছিলেন, তখন অনেকেই তার বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু একজন প্রকৃত যোদ্ধা যে কখনো হাল ছাড়েন না, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ স্টেইন; ৩৫ বছর বয়সেও ইনজুরির বাধা পার করে বিশ্বকাপ খেলার জন্য নিজেকে উপযোগী করেছেন। সর্বকালের অন্যতম সেরা এই পেসার ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে চলে এসেছেন, শেষটা রাঙিয়ে দেওয়ার জন্য নিজের সেরাটা ঢেলে দেবেন তিনি, তা বলাই বাহুল্য। 

২০১৫ বিশ্বকাপের সেই দুঃসহ শেষ ওভারের স্মৃতি ভোলার মোক্ষম সুযোগ এবার স্টেইনের সামনে; Image Source: Cricketaddictor

তবে এবারের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার পেস ব্যাটারির মূল ভরসা অবশ্য স্টেইন নন। এবার পেস আক্রমণের মূল নেতৃত্বভার থাকবে ২৩ বছর বয়সী কাগিসো রাবাদার কাছে। ২০১৫ সালে অভিষেকের পর থেকে টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি, তিন ফরম্যাটেই সমান উজ্জ্বল এই পেসার। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা এই পেসার কেমন পারফর্ম করেন, তার ওপর প্রোটিয়াদের বিশ্বকাপ-ভাগ্য অনেকখানি নির্ভর করছে।   

তৃতীয় পেসার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম পছন্দ লুঙ্গি এনগিডি, ২০১৯ সালে ৫ ওয়ানডে খেলে ১৭.১৩ গড়ে নিয়েছেন ৮ উইকেট। কিন্তু হুট করে ইনজুরিতে পড়ায় তার বিশ্বকাপ ভাগ্য হয়ে গেছে অনিশ্চিত। যদি বিশ্বকাপ শুরুর আগেই ইনজুরি থেকে ফিরে আসতে পারেন, তাহলে এনগিডি ১৫ সদস্যের দলে তো বটেই, মূল একাদশে সুযোগ পাবেন। আর সেটা না হলে ১৫ সদস্যের দলে বিউরিন হেনড্রিকস অথবা জুনিয়র ডালাকে ডাকা হবে। আর সেক্ষেত্রে মূল একাদশে সুযোগ পাওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে যাবেন তরুণ পেসার অ্যানরিখ নর্জ।

স্পিনার

বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে দুইজনের জায়গা নিশ্চিত। এই বিশ্বকাপ খেলেই অবসরে যাওয়ার ঘোষণা ইতিমধ্যে দিয়ে দিয়েছেন ইমরান তাহির। আট বছর আগে এমন এক বিশ্বকাপের মঞ্চেই অভিষেক ঘটেছিলো এই লেগ স্পিনারের আর সেই বিশ্বকাপ খেলেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন তিনি। ৪০ বছর বয়সে এখনো তিনি যে ফর্মে আছেন তাতে বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের মূল একাদশেও তিনি থাকবেন তা বলাই যায়। 

ডুমিনি, স্টেইনের মতো তাহিরও বিশ্বকাপ খেলে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন; Image Source: espncricinfo.com

আর তাহিরের ব্যাকআপ হিসেবে দলে থাকবেন বাঁহাতি চায়নাম্যান স্পিনার তাবরাইজ শামসি। তাহিরের বিশ্রামের বদৌলতে যে কয়টা ম্যাচে শামসি সুযোগ পেয়েছেন সেসব ম্যাচে অবশ্য ভালোই খেলেছেন। সেদিক থেকে প্রোটিয়াদের স্পিন অ্যাটাক বেশ শক্তিশালী বলা চলে।

অবতরণিকা

এবার প্রোটিয়াদের সম্ভাব্য স্কোয়াড নিয়ে বিশ্লেষণ করে একটা ব্যাপার নিশ্চিত, গত দুই বিশ্বকাপের তুলনায় এবারের স্কোয়াড শক্তিমত্তার দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে। এবারের সম্ভাব্য সেমিফাইনালিস্ট হওয়ার দৌঁড়েও ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ডের তুলনায় বেশ পিছিয়েই রয়েছে তারা। বিশেষ করে বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র এক বছর আগে কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই এবি ডি ভিলিয়ার্সের মতো একজন সেরা ব্যাটসম্যানের অবসরে যাওয়া দলের ব্যাটিংশক্তিকে অনেক বেশি দুর্বল করে দিয়েছে।

তবে এখনই আশা ছেড়ে দেওয়ার কোনো কারণ নেই। ব্রাজিলের ১৯৯৪ বিশ্বকাপের স্কোয়াড ১৯৮২ বিশ্বকাপের স্কোয়াডের তুলনায় পিছিয়ে থাকলেও ২৪ বছর পর সেলেসাওদের বিশ্বজয় কিন্তু সেই দলের হাত ধরেই হয়েছিলো। ঠিক সেভাবেই আমলা, স্টেইন, ডু প্লেসিসদের মতো অভিজ্ঞ সেনানীদের সাথে ডি কক, ডুসেন, রাবাদারা যদি নিজেদের সেরাটা দিতে পারেন, তবে কে জানে, হয়তো এই দল নিয়েই বিশ্বকাপে নিজেদের অতীত দুঃস্মৃতি ভুলে নতুন ইতিহাস গড়বে দক্ষিণ আফ্রিকা!

This article is in Bangla language. The world cup is knocking at the door, the teams will announce their full list of players soon enough. Who will be there in the South African squad? This article is on that.

Featured Image: espncricinfo.com

Related Articles