অ্যালিস্টার কুক ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেক টেস্ট ম্যাচ খেলেন ২০০৬ সালের পহেলা মার্চ। অভিষেকের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৫৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বকালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসাবে নিজের নাম লিখিয়েছেন কয়েক বছর আগে। বর্তমানে তার রান সংখ্যা ১২,১৪৫!
২০০৬ সালের ১১ই মে থেকে এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের হয়ে কোনো টেস্ট মিস করেননি কুক। এখনও পর্যন্ত একটানা ১৫৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন তিনি। একটানা সবচেয়ে বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলার বিশ্ব রেকর্ডটিও তার দখলে। কুক তার ক্যারিয়ারের ১৪৯ ম্যাচে ইনিংস উদ্বোধন করেছেন। ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ইনিংস উদ্বোধন করলেই প্রথম ওপেনার হিসাবে ১৫০ ম্যাচে ইনিংস উদ্বোধনের কীর্তি গড়বেন। টেস্ট ক্রিকেটে ওপেনার হিসাবেও সবচেয়ে বেশি রানের মালিক অ্যালিস্টার কুক। ২৬৯ বার ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ৩০টি শতক এবং ৫৪টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৪৫.১৬ ব্যাটিং গড়ে ১১,৫১৮ রান করেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক সুনীল গাভাস্কার। তিনি ৯,৬০৭ রান করেছেন ওপেনিংয়ে নেমে।
অ্যালিস্টার কুক গত এক যুগ ধরে ইংল্যান্ড টেস্ট দলের ওপেনিংয়ে প্রথম ভরসা। ইনিংসের শুরুতে একপ্রান্ত আগলে রেখে প্রতিপক্ষের বোলারদের মোকাবেলা করেন তিনি। কিন্তু অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর গত ছয় বছরে এখনও কোনো নির্ভরযোগ্য টেস্ট ওপেনারের সন্ধান পায়নি ইংল্যান্ড। অ্যালিস্টার কুক এখন পর্যন্ত তার টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৫জন ওপেনারের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করেছেন। আসন্ন ভারত সিরিজেও দ্বিতীয় ওপেনার হিসাবে কে খেলবেন, তা এখনও নিশ্চিত হয়নি। প্রতিনিয়ত ভিন্ন ভিন্ন সঙ্গীদের সাথে মানিয়ে নিয়ে কুক ঠিকই নিজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
অ্যালিস্টার কুকের সাথে ইনিংস গোড়াপত্তন করতে নামা ক্রিকেটারদের সম্পর্কে জেনে আসা যাক।
১. অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস–অ্যালিস্টার কুক
অ্যালিস্টার কুক তার অভিষেকের পর থেকে প্রায় ছয় বছর স্ট্রাউসের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করেছেন। স্ট্রাউস অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ইংল্যান্ডকে টেস্ট ক্রিকেটে ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের নিয়ে ভাবতে হয়নি।
এই দুই বাঁহাতি ওপেনার ১১৭ বার ইনিংস উদ্বোধন করে ৪০.৯৬ গড়ে ৪,৭১১ রান করেছেন। তারা ১২বার শতরানের এবং ১৮ বার অর্ধশত রানের জুটি গড়েছিলেন।
২. নিক কম্পটন–অ্যালিস্টার কুক
নিক কম্পটনের সাথে ১৭বার ইনিংস উদ্বোধন করেছেন অ্যালিস্টার কুক। এই দুই ব্যাটসম্যান ইংল্যান্ডকে বেশ কয়েকবার শুভসূচনা এনে দিয়েছেন। ৫৭.৯৩ গড়ে তারা ৯২৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তিনবার শতক এবং তিনবার অর্ধশত রানের জুটি গড়েছিলেন তারা। অ্যালিস্টার কুক উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান যোগ করেছেন কম্পটনের সাথে। ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ বাঁচানো ২৩১ রানের জুটি গড়েছিলেন তারা।
ওপেনিং উইকেট জুটিতে কুকের সাথে বেশ ভালোভাবেই জমছিল কম্পটনের। কিন্তু তিনি খুব একটা ধারাবাহিক ছিলেন না। ইংল্যান্ডের হয়ে ১৮বার ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে দুইটি শতক থাকা সত্ত্বেও তার মোট রান ৪৯৮। ওপেনিংয়ে তিনি ৩১.১২ ব্যাটিং গড়ে রান করেছেন। প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে না পারার কারণে দল থেকে বাদ পড়েন কম্পটন।
৩. অ্যালেক্স হেইলস–অ্যালিস্টার কুক
সীমাবদ্ধ ওভারের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের নিয়মিত ওপেনার অ্যালেক্স হেইলস সাদা পোশাকে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। ওপেনিংয়ে ২১ ইনিংসে একটি শতকও নেই তার। পাঁচটি অর্ধশতকের সাহায্যে ২৭.২৮ ব্যাটিং গড়ে ৫৭৩ রান করেছেন। অ্যালিস্টার কুকের সাথে ২০বার ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ৩৪.২০ গড়ে ৬৮৪ রান করেছেন। তারা দুজন সর্বোচ্চ ১২৬ রানের জুটি গড়েছিলেন। তাদের মধ্যে এটিই একমাত্র শত রানের জুটি।
৪. মাইকেল ভন–অ্যালিস্টার কুক
ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভনের সাথেও ইনিংস গোড়াপত্তন করেছিলেন অ্যালিস্টার কুক। ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে ভনের সাথে ১২বার ইনিংস উদ্বোধন করেছিলেন তিনি। অভিজ্ঞ ভনের সাথে ১২ ইনিংসের মধ্যে দুবার শত রানের এবং তিনবার অর্ধশত রানের জুটি গড়ে ৪৪.০০ গড়ে ৫২৮ রান যোগ করেছেন কুক।
৫. মাইকেল কারবেরি–অ্যালিস্টার কুক
২০১৩-১৪ মৌসুমে ইংল্যান্ডের দুঃস্বপ্নের অ্যাশেজ সিরিজে চার-পাঁচবার ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দলে টিকে থাকার জন্য তা যথেষ্ট ছিলো না। সিরিজে ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি বল খেলেছিলেন তিনি। ২০১০ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটা মাইকেল কারবেরি ছয় ম্যাচে ২৮.৭৫ ব্যাটিং গড়ে ৩৪৫ রান করেছেন। এরপর ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে জয়ী হওয়ার পর আর দলে ফেরা হয়নি কারবেরির। মাইকেল কারবেরি এবং অ্যালিস্টার কুক ১২বার ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ৩২.২৫ গড়ে ৩৮৭ রান সংগ্রহ করেছেন। এই দুজন উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে চারবার অর্ধশত রানের জুটি গড়েছিলেন।
৬. জো রুট–অ্যালিস্টার কুক
ইংল্যান্ডের বর্তমান টেস্ট অধিনায়ক জো রুট ২০১৩ সালে ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কুকের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করেছিলেন। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ১৮০ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেছিলেন। এই সিরিজের পর থেকে জো রুট আবারও মিডল অর্ডারে ব্যাট করা শুরু করেন। অ্যালিস্টার কুক এবং জো রুট ১১বার ইনিংস উদ্বোধন করে মাত্র ২৬.৬৩ গড়ে ২৯৩ রান সংগ্রহ করেছেন। কুকের সাথে উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে দলকে শুভসূচনা এনে দিতে না পারলেও এখন পর্যন্ত ১১বার ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ৪১.৭০ ব্যাটিং গড়ে ৪১৭ রান করেছেন জো রুট।
৭. স্যাম রবসন–অ্যালিস্টার কুক
সিডনিতে জন্ম নেওয়া স্যাম রবসন অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। তার মা নটিংহ্যামশায়ারের বাসিন্দা হওয়ার দরুন ইংল্যান্ডকে নিজের স্থায়ী ঠিকানা হিসাবে বেছে নেন রবসন। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে রবসনের। নিজের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচেই সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। কিন্তু এরপর আর নিজেকে সেভাবে প্রমাণ করতে পারেননি রবসন। অফ স্ট্যাম্পের বাহিরের বলে তার দুর্বলতা ছিলো চোখে পড়ার মতো। টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১ ইনিংসে চারবার বোল্ড আউট এবং পাঁচবার স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। ২০১৪ মৌসুম শেষ হওয়ার পর তাকে আর ইংল্যান্ড দলে দেখা যায়নি। স্যাম রবসন সাতটি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৩০.৫৪ ব্যাটিং গড়ে ৩৩৬ রান করেছেন। অ্যালিস্টার কুকের সাথে জুটি বেঁধে ১১ ইনিংসে ৩২.২৭ গড়ে ৩৫৫ রান সংগ্রহ করেছেন। এই দুজন দুবার অর্ধশত রানের জুটি গড়েছেন।
৮. জোনাথন ট্রট–অ্যালিস্টার কুক
ক্যারিয়ারের শুরুতে ওয়ান ডাউনে কিংবা মিডল অর্ডারে ব্যাট করতেন ট্রট। কিন্তু ২০১৫ সালে মানসিক বিষাদ কাটিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অ্যালিস্টার কুকের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করেন তিনি। ওপেনার হিসাবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি তার সময়কার ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ট্রট।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঐ সিরিজের ছয় ইনিংসে তিনবার শূন্য রানে এবং দুবার দশ রানের নিচে রান করে সাজঘরে ফিরেছিলেন। নিজের পারফরমেন্সে এতই হতাশ ছিলেন যে, সিরিজে শেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন ট্রট। জোনাথান ট্রট তার ক্যারিয়ারে আটবার ওপেনিংয়ে ব্যাট করে ১৯.৩৭ ব্যাটিং গড়ে ১৫৫ রান করেছেন। তিনি অ্যালিস্টার কুকের সাথে ২৮.১২ গড়ে ২২৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। যার মধ্যে এক ইনিংসেই এসেছিলো ১২৫ রান।
৯. অ্যাডাম লিথ-অ্যালিস্টার কুক
২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে অভিষেক ঘটে অ্যাডাম লিথের। নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই ১০৭ রানের ইনিংস খেলে অ্যাশেজ সিরিজের জন্য ডাক পান তিনি।
কিন্তু অ্যাশেজে লিথ ছিলেন চূড়ান্ত ব্যর্থ। অ্যাশেজে পাঁচ ম্যাচে ১২.৭৭ ব্যাটিং গড়ে মাত্র ১১৫ রান করার পর দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। লিথ ইংল্যান্ডের হয়ে সাতটি টেস্ট ম্যাচ খেলে ২০.৩৮ ব্যাটিং গড়ে মাত্র ২৬৫ রান করেছিলেন।
ইনিংসের শুরুতে অ্যালিস্টার কুককেও সঙ্গ দিতে পারেননি। তার সাথে ১৩ ইনিংসে জুটি বেঁধে ৩০.৯২ গড়ে ৪০২ রান যোগ করেছিলেন। পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি গড়েছেন মাত্র একবার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭৭ রানের জুটিই লিথ এবং কুক জুটির মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
১০. মঈন আলী–অ্যালিস্টার কুক
লিমিটেড ওভারের ক্রিকেটে মঈন আলীকে প্রায়শই ইনিংস উদ্বোধন করতে দেখা যায়। কিন্তু সাদা পোশাকে তিনি ব্যাট করেন মিডল অর্ডারে। ইংল্যান্ড টেস্ট দলে মিডল অর্ডারে জায়গা খালি না থাকার কারণে বেশিরভাগ ম্যাচেই লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করেছেন। টেস্ট দলে তার মূল দায়িত্ব বোলিং। অ্যাশেজে অ্যাডাম লিথের হতাশাজনক পারফরমেন্সের পর সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে অ্যালিস্টার কুকের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করেন মঈন আলী।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে কুকের সাথে ১১৬ রানের জুটি গড়ে ভালোই শুরু করেছিলেন। কিন্তু এরপর আর খুব একটা সুবিধে করতে পারেননি। সিরিজে আরও চারবার কুকের সাথে জুটি বেঁধে মাত্র ৬৭ রান যোগ করেছিলেন মঈন আলী। আরব আমিরাতে ছয়বার ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ১৪.০০ ব্যাটিং গড়ে ৮৪ রান করেছিলেন মঈন আলী। কুকের সাথে উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে পাঁচ ইনিংসে ৩৬.৬০ গড়ে ১৮৩ রান যোগ করেছিলেন।
১১. বেন ডাকেট–অ্যালিস্টার কুক
২০১৬ সালে অ্যালেক্স হেইলস বাংলাদেশে আসতে অস্বীকৃতি জানালে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বেন ডাকেটকে অ্যালিস্টার কুকের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করার জন্য নির্বাচন করে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ওপেনিংয়ে নেমে ২৩.০০ ব্যাটিং গড়ে ৯২ রান করেন। বাংলাদেশের মাটিতে তার স্পিনের বিপক্ষে দুর্বলতা ছিলো লক্ষণীয়। এরপর ভারত সিরিজেও স্পিনারদের বিপক্ষে তার টেকনিক ছিলো আনাড়ি। ভারতের বিপক্ষে দুটি টেস্ট খেলার পর বর্তমানে দলের বাইরে আছেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই টেস্টে অ্যালিস্টার কুকের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করে ৩৮.৫০ গড়ে ১৫৪ রান যোগ করেছিলেন বেন ডাকেট।
১২. হাসিব হামেদ–অ্যালিস্টার কুক
২০১৬ সালের ৯ই নভেম্বর, হাসিব হামেদ নিজের অভিষেক টেস্ট ম্যাচ খেলেন ভারতের বিপক্ষে। ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজের পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলো অ্যালিস্টার কুক এবার দীর্ঘদিনের সঙ্গী পেলেন।
১৯ বছর বয়সী হাসিব হামেদ তার খেলা প্রতি ইনিংসেই আশ্বিন, জাদেজাদের আত্মবিশ্বাসের সাথে মোকাবেলা করেছিলেন। সিরিজে ৪৩.৮০ ব্যাটিং গড়ে ২১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তার ব্যাটিং স্টাইল ছিলো গত শতকের টেস্ট ব্যাটসম্যানদের মতো। চার-ছক্কার যুগে এসেও তিনি বলের পর বল রক্ষণাত্মকভাবে মোকাবেলা করেছেন। ছয় ইনিংসে তিনি মোট ৬৪০ বল মোকাবেলা করেছিলেন।
ভারত সিরিজে তার সেরা ইনিংস ছিলো মোহালিতে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে অপরাজিত ৫৯ রানের। ইনজুরির কারণে সেদিন আট নাম্বারে ব্যাট করতে নেমে ১৫৬ বল মোকাবেলা করা ৫৯ রান করেন তিনি। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ ইনিংসেও ম্যাচ বাঁচানোর লক্ষ্যে কুকের সাথে ৫০.২ ওভার ব্যাট করে ৭৫ রান যোগ করেছিলেন। তিনি ১৪৪ বল খেলে ২৫ রান করেছিলেন। তার ক্যারিয়ারে ঐ ইনজুরিই কাল হয়ে দাঁড়ালো। ইনজুরি কাটিয়ে ফেরার পর এখনও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
হাসিব হামেদ এবং অ্যালিস্টার কুক পাঁচ ইনিংসে জুটি বেঁধে ৬৭.৬০ গড়ে ৩৩৮ রান সংগ্রহ করেছেন। এই দুই ওপেনার পাঁচ ইনিংসে ১৩৬.৪ ওভার ক্রিজে ছিলেন। বর্তমানে মাত্র ২১ বছর বয়সী হাসিব হামেদ অভিষেক টেস্ট সিরিজে বিরাট কোহলি সহ বেশ কয়েকজন কিংবদন্তি ক্রিকেটারের নজর কেড়েছেন। তরুণ এই ওপেনার সময়ের সাথে আরও পরিণত হয়ে দলে ফিরবেন। এই সুযোগ এবং সম্ভাবনা দুটিই তারমধ্যে আছে।
১৩. কিটন জেনিংস–অ্যালিস্টার কুক
ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে হাসিব হামেদ ইনজুরিতে পড়লে শেষ দুই টেস্টের জন্য দলে ডাক পান কিটন জিনিংস। ঐ মৌসুমে কাউন্টিতে সবচেয়ে বেশি রান করার ফলে এবং বেন ডাকেট অফ ফর্মে থাকার কারণে দ্রুতই টেস্ট দলে জায়গা করে নেন জেনিংস। মুম্বাইতে অভিষেক ম্যাচে কিটন জেনিংস ১১২ রানের ইনিংস খেলেন। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম বলে শূন্য রানে ফিরে যান তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচে চেন্নাইতে ৫৪ রানের ইনিংস খেলে সিরিজ শেষ করেন জেনিংস। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও দলে ছিলেন জেনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চার ম্যাচে ১৫.৮৭ ব্যাটিং গড়ে মাত্র ১২৭ রান করার দল থেকে বাদ পড়েন তিনি।
অ্যালিস্টার কুকের সাথে ১৩বার ইনিংস উদ্বাধন করতে নেমে ৩৫.১৫ গড়ে ৪৫৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন জেনিংস। সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচে অ্যালিস্টার কুকের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করেছিলেন কুক। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে শতক হাঁকানো জেনিংস খুব সম্ভবত আসন্ন ভারত সিরিজেও কুকের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করবেন।
১৪. মার্ক স্টোনম্যান–অ্যালিস্টার কুক
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে কিটন জেনিংসের অফ ফর্মের কারণে অ্যালিস্টার কুকের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করার সুযোগ পান মার্ক স্টোনম্যান। অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের অবসরের পর ১২তম ব্যাটসম্যান হিসাবে কুকের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করে তিনি। ৩১ বছর বয়সী স্টোনম্যান নিজের অভিষেক টেস্ট ম্যাচ খেলেন ২০১৭ সালের ১৭ই আগস্ট। ২০১৭ সালে তিনি টানা পঞ্চম মৌসুমে সহস্রাধিক রান পূর্ণ করেন স্টোনম্যান। অভিষেকের পর থেকে ১১টি টেস্ট ম্যাচ খেলেও তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করতে পারেননি তিনি। ওপেনিংয়ে নেমে ২৭.৬৮ ব্যাটিং গড়ে ৫২৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। অ্যালিস্টার কুকের সাথে ২০ ইনিংসে মাত্র ১৮.৭৫ গড়ে ৩৭৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন মার্ক স্টোনম্যান।
১৫. কেভিন পিটারসেন–অ্যালিস্টার কুক
ইংল্যান্ডের টপ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান কেভিন পিটারসেনের সাথেও একবার ইনিংস উদ্বোধন করেছিলেন অ্যালিস্টার কুক। ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লিডস টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে দ্রুত রান তোলার তাগিদে কুকের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করেন ঐ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৪৯ রানের ইনিংস খেলা কেভিন পিটারসেন। ওপেনিংয়ে নেমে তিনি আট বলে ১২ রানের ইনিংস খেলেন। কুক এবং পিটারসেন জুটির স্থায়িত্ব ছিলো ১৯ বলের। এই ১৯ বলে তারা ২১ রান যোগ করেছিলেন। এরপর আর কখনো পিটারসেনের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করেননি অ্যালিস্টার কুক।
ফিচার ইমেজ- Getty Images