
ক্রিকেট মানে খেলার চেয়েও বেশি কিছু। ক্রিকেট মানে উত্তেজনা, রোমাঞ্চ। ক্রিকেটের বৃত্তাকার মাঠে কতকিছুই না ঘটে যায়। টেলিভিশনের ক্যামেরায় তার সবটা চোখের সামনে আসে না। তবে কিছুটা টের পাওয়া যায় মাঠে বসে খেলা দেখলে। আবার মাঠে বসে খেলা দেখলেও চোখ এড়িয়ে যায় অনেক কিছু। সেসব চোখ এড়িয়ে যাওয়া দৃশ্যকে ক্যামেরায় বন্দী করা আলোকচিত্রীদের কাজ। এই আয়োজন তেমন কিছু ছবি নিয়ে। শুধু তা-ই নয়, ব্যাট-বলের লড়াইয়ের বাইরে কিছু ক্রিকেটের কিছু ইতিহাস, কিছু দুঃখ, বেদনার গল্পও হয়তো উঠে আসতে পারে এসব অদেখা ছবিতে।
বিদায় শচীন…

ড্রেসিংরুম থেকে বের হচ্ছেন শচীন টেন্ডুলকার। পাশের গ্যালারিতে সমর্থকদের ভিড়; Source: sfwallpaper
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে শেষবারের মতো ব্যাট করতে নামছেন শচীন টেন্ডুলকার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সেদিন তার জন্য কেঁদেছিল সবাই। কিংবদন্তির ২২ গজের প্রস্থানে সম্মান পেয়েছিলেন সত্যিকারের ‘ব্যাটিং ইশ্বর’ হয়ে।
অনিল কুম্বলের ১০ এ ১০

বিশ্বরেকর্ডের উদযাপনে অনীল কুম্বলে; Source: itimes
একে তো প্রতিপক্ষে পাকিস্তান, সঙ্গে আবার বিশ্বরেকর্ড। ভারতের কিংবদন্তি স্পিনার অনিল কুম্বলের উদযাপন তাই বিশেষ কিছু। সেদিন এক ইনিংসের সবকটি উইকেট নিজের দখলে নিয়েছিলেন ভারতের সাবেক এই কোচ, যে রেকর্ড এখনও অক্ষুণ্ণ।
গলের সুনামি

সুনামির পর লণ্ডভণ্ড গল স্টেডিয়াম; Source: apisrilankan
পৃথিবীর অন্যতম সেরা ক্রিকেট স্টেডিয়ামগুলোর একটি শ্রীলঙ্কার গল স্টেডিয়াম। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ সুনামির তাণ্ডবে স্টেডিয়ামের সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিলো। যদিও পরবর্তীতে স্টেডিয়াম তার হারানো রূপ ফিরে পেয়েছে।
যুবরাজের ৬ ছক্কা

চলছে ছক্কার উৎসব; Source: DNA India
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছয় বলে ছয় ছক্কার প্রথম রেকর্ড গড়েন ভারতীয় ব্যাটসম্যান যুবরাজ সিং। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের স্ট্রুয়ার্ট ব্রডের এক ওভারের সবকটি বলে ছক্কা হাঁকান যুবরাজ। এই ঘটনার একটু আগেই এন্ড্রু ফ্লিনটফের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়েছিলো। অনেকে বলেন, ব্যাটে যুবরাজ প্রতিশোধ নিয়েছিলেন সেদিন।
ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়

গ্যালারি থেকে সোজা মাঠের মধ্যে সমর্থকরা; Source: netiap
মাইকেল হোল্ডিংকে ফেরালেন জিমি অমরনাথ। নিজেদের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ জিতলো ভারত। সঙ্গে সঙ্গে গ্যালারি থেকে ভারতীয় সমর্থকরা উঠে এল উইকেটের উপর। সেদিন এমনই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিলো। ১৯৮৩ সালের ঘটনা।
‘দাদা’র প্রতিশোধ

সৌরভ গাঙ্গুলির ‘দাদাগিরি’। Source: khelnama
ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের ফাইনালে লর্ডসে ইংল্যান্ডকে হারায় ভারত। ৩২৬ রানের পাহাড় ঠেলে জয় তুলে নিয়েছিলো সেদিন সৌরভ গাঙ্গুলীর দল। উদযাপন করতে গিয়ে নিজের জার্সি খুলে নাড়াতে থাকেন ‘দাদা’ সৌরভ। মূলত এটা ছিলো অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফকে জবাব দেওয়া। ওই ঘটনার ঠিক সাত মাস আগে ওয়াংখেড়েতে ভারতকে হারিয়ে এভাবেই জার্সি খুলে উদযাপন করেছিলেন ইংলিশ অলরাউন্ডার ফ্লিনটফ।
মৌমাছির আক্রমণ

মৌমাছি, মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি! Source: WordPress
নয়াদিল্লীর ফিরোজ শাহ কোটলায় এভাবেই মৌমাছির হাত থেকে বাঁচতে মাঠের উপর শুয়ে পড়েছিলো সব ক্রিকেটাররা। বাদ যাননি আম্পায়ারও। খেলা হচ্ছিলো অস্ট্রেলিয়া ও স্বাগতিক ভারতের মধ্যে।
রেকর্ড গড়ার দিনে রেকর্ড ভাঙার ‘রেকর্ড’

রোমাঞ্চকর এক ম্যাচের ইতিহাস। Source: espncricinfo
৪৩৪ রান তুলে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। জিততে হলে প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকাকেও গড়তে হবে নতুন বিশ্বরেকর্ড। তা-ই হলো! এক উইকেট আর একটি ওভার হাতে রেখেই জিতে গিয়েছিলো প্রোটিয়ারা!
সত্যিকারের ‘টি ব্রেক’

‘টি ব্রেক’ এর সময় মাঠে চা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে; Source: espncricinfo
এখনকার দিনে টি ব্রেকে কী খায় ক্রিকেটাররা? অন্তত চা তো পান করে না! হ্যাঁ, ক্রিকেটে টি-ব্রেক শব্দের ব্যবহার যখন শুরু হয়, ক্রিকেটাররা তখন বিরতিতে সত্যিই চা পান করতো। ইংল্যান্ডে ১৯৩৮ সালের একটি ছবিতে সে গল্পটার প্রমাণও দিচ্ছে।
২০০ বছরের শ্রেষ্ঠ সেলফি

একটি পরিপূর্ণ সেলফি; Source: beebom
সেবার ক্রিকেটের মক্কা খ্যাত লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান হয়েছিল। ২২ জন ক্রিকেট কিংবদন্তিকে দুই দলে বিভক্ত করে একটি প্রদর্শনী ম্যাচ আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে সেই ২২ জনের একটি সেলফি। উল্লেখ্য, একটি দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন, অপরটির ভারতীয় ব্যাটিং ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকার।
ডেভিড শেফার্ডের খোঁড়ানো, লাফানো ও ঝাঁপানো

ডেভিড শেফার্ড; Source: cricketcountry
আম্পায়ার ডেভিড শেফার্ডের আইকনিক সংকেত ছিল খোঁড়ানো, লাফানো ও ঝাঁপ দেওয়া। তাতে দর্শক, ক্রিকেটাররা আমোদিত হতো, বিনোদিত হতো। হয়তো শেফার্ড নিজেও আমোদিত হতেন। এই দৃশ্যটি নেলসনে। ১১১ রানের সংকেত দিতে শুরুতে খোঁড়ানোর ভান করেন তিনি, এরপর একটা লাফ দেন, তারপর সামনের দিকে ছোট্ট ঝাঁপ দিয়ে বুঝিয়ে দেন।
ক্লাইভ লয়েডের ট্রফি

বিশ্বকাপের ট্রফি নেওয়ার পর; Source: googleplus
১৯৭৫ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের পর উইন্ডিজ কিংবদন্তি ক্লাইভ লয়েড। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিলো তারা।
বন্ধু তোমার জন্য…

ফিল হিউজ, দেখতে পারছো? Source: reddit
ক্রিকেট ট্র্যাজেডির অন্যতম অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ফিল হিউজে প্রস্থান। ব্যাট করতে গিয়ে মাথায় বল লেগে মৃত্যুবরণ করেছিলেন তিনি। সেই শোক কাটতে না কাটতেই মাঠে নামতে হয় অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলকে। সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন সেই ম্যাচে স্টিভেন স্মিথ। আর দেশের ৪০৮তম টেস্ট ক্রিকেটারকে অকালে হারানোর কষ্টে সেঞ্চুরিটা তাকে এভাবেই উৎসর্গ করেছিলেন অজি দলের বর্তমান এই অধিনায়ক।
ট্রেভরের আন্ডারআর্ম

ট্রেভর বেলিসের আন্ডারআর্ম বোলিং; Source: WordPress
শেষ বলে জিততে হলে নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ৬ রান। মজাটা নিতে তাই ভুল করেননি অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ক্রিকেটার ট্রেভর চ্যাপেল। অবশ্য এই ‘অপমান’ এর পরিকল্পনাকারী ছিলেন অধিনায়ক ও তার ভাই গ্রেগ চ্যাপেল। তার বুদ্ধিতেই শেষ বলে ব্রায়ান ম্যাককেইনকে আন্ডারআর্ম বল করেন ট্রেভর চ্যাপেল। মেমবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ১৯৮১ সালের ঘটনা।
ওহ ব্র্যাডম্যান!

মাত্র চার রানের আক্ষেপ; Source: independent
ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। সাথে বিশ্বরেকর্ডের দরজার ঠিক আগমুহূর্তে। ব্যাট হাতে মাত্র চার রান তুলতে পারলেই ক্যারিয়ার জুড়ে স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের গড় হবে ১০০! কিন্তু দূর্ভাগ্য এই কিংবদন্তির। পারলেন না। শূন্য রানে আউট হলেন। তার ক্যারিয়ার থামলো ৯৯.৯৪ গড় রানে।
ক্ষ্যাপা জাভেদ

ক্রিকেট মানে না বাধা! Source: lockerdome
পাকিস্তানি কিংবদন্তি ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াঁদাদ ব্যাট হাতে তেড়েফুঁড়ে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ডেনিস লিলির দিকে। যদিও দোষটা লিলিরই বেশি ছিল। মিয়াঁদাদ রান নিতে গেলে লিলি তাকে বাধা দেন। এতে দুজনের মধ্যে ছোটখাট ধাক্কাধাক্কি হয়। ক্রিকেটের মাঠে এ তো অহরহ ঘটনা। কিন্তু লিলি মিয়াঁদাদকে লাথি মেরে বসলেন! ব্যস, ক্ষেপে গিয়ে ব্যাট হাতে চড়াও হতে গেলেন জাভেদ। শেষপর্যন্ত মার খেতে হয়নি ডেনিস লিলিকে। সে যাত্রা লিলি বেঁচে গিয়েছিলেন আম্পায়ারের জন্য।
বোলার একজন, ব্যাটসম্যান চারজন!

এমন দৃশ্য কে কবে দেখেছে? Source: espncricinfo
উইকেটে থাকা দুই উইন্ডিজ ব্যাটসম্যান শিবনারায়ণ চন্দরপল ও রিডলি জ্যাকব দুজনেই ব্যাট করতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন। দুজনেরই রানার প্রয়োজন হয়। প্যাড-হেলমেট পরে ব্যাট হাতে ‘রানার’ হতে মাঠে নেমে পড়েন মারলন স্যামুয়েলস ও ওভেল হিন্ডস। যদিও ‘চার’ ব্যাটসম্যানের সেই দল মিলে কেবল ৭ রান তুলতে পেরেছিলো।
বিশ্বকাপের হ্যাটট্রিক

অপ্রতিরোধ্য সেই অস্ট্রেলিয়া; Source: dailymail
২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়া দল। উদযাপনের মাত্রাটা ছাড়িয়ে গিয়েছিলো নতুন রেকর্ডের কারণে। ওই আসরের মধ্যে দিয়ে ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭- টানা তিনটি বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া।
ক্রিস গেইলের ‘বাউ’

ভিলিয়ার্সের বিশ্বরেকর্ডে মুগ্ধ ক্রিস গেইল; Source: dailytelegraph
উইন্ডিজের বিপক্ষে ৩১ বলে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন এবি ডি ভিলিয়ার্স। ওয়ানডেতে সবচেয়ে কম বলে সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন এই প্রোটিয়া ক্রিকেটার। ফিল্ডিংয়ে প্রতিপক্ষ দলের আরেক ব্যাটিং দৈত্য ক্রিস গেইল সেদিন ভিলিয়ার্সের ব্যাটিং দেখে মাঠেই প্রশংসা করেন। তাতেও বোধ হয় তার মনের স্বাদ মিটছিলো না। ভিলিয়ার্সকে মাঝ মাঠে মাথা নত করে সম্মান জানালেন!
ফিচার ইমেজ- Express Tribune