কিছুদিন আগেই ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ আলবিয়নের সাথে গোল করে রেড ডেভিলদের জার্সি গায়ে নিজের ১৫০তম ম্যাচ রাঙিয়ে রেখেছিলেন মার্কাস রাশফোর্ড। ২-১ গোলে সেই ম্যাচ জিতে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ সলশায়ের করে ফেলেছেন একটি রেকর্ড। কোনো কোচের অধীনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড টানা প্রথম সাত ম্যাচ জিততে পারেনি কখনোই। আর এই সলশায়েরের অধীনে পল পগবার পাশাপাশি চমক দেখিয়েছেন মার্কাস রাশফোর্ডও। সাত ম্যাচে চার গোলের পাশাপাশি করেছেন একটি অ্যাসিস্টও। রেড ডেভিলদের হয়ে ১৫০ ম্যাচে তাঁর গোলসংখ্যা ৪১টি। ২০১৬ সালে লুই ভ্যান গালের অধীনে লাল জার্সি পড়ে অভিষেক হওয়ার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে যাচ্ছেন তিনি।
মাত্র ২১ বছরেই ১৫০ ম্যাচ মাইলফলক ছুঁলেন, সামনে পড়ে আছে অফুরন্ত সময়। রাশফোর্ড কি পারবেন ভবিষ্যৎ তারকা হতে? তা সময়ই বলে দিবে। তবে ১৫০ ম্যাচের পর অন্যান্য বিশ্বমানের তারকাদের সাথে পরিসংখ্যানে রাশফোর্ড এগিয়ে আছেন বেশ। তাই তাঁকে নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করাটাও অহেতুক নয়। চলুন দেখে আসি, অন্যান্য খেলোয়াড়দের ক্যারিয়ারে ১৫০ খেলার পরের পরিসংখ্যান।
অ্যালান শিয়েরার
বয়স – ২১, গোলসংখ্যা – ৩৫
প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ধরে রাখা অ্যালান শিয়েরারের শুরুটা ছিলো ধীরগতির। ১৯৯২ সালে এপ্রিলে সাউদাম্পটনের হয়ে কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের বিপক্ষে নিজের ক্যারিয়ারের ১৫০তম ম্যাচ খেলতে নামেন তিনি। ১৫০ ম্যাচশেষে শিয়েরারের গোলসংখ্যা ছিল ৩৫। তবে সেবার সাউদাম্পটনকে প্রথম বিভাগে ধরে রাখতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ২১ বছর বয়সী শিয়েরার।
পরবর্তীতে ব্ল্যাকবার্ন হয়ে নিউক্যাসল ইউনাইটেডে যোগদানের পর নিজেকে ভয়ঙ্কর এক গোল শিকারিতে পরিণত করেন। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে অ্যালান শিয়েরার করেছেন রেকর্ডসংখ্যক ২৬০টি গোল।
থিয়েরি অঁরি
বয়স – ২১, গোলসংখ্যা – ২৮
দুর্দান্ত স্কোরার হিসেবে সুপরিচিত হলেও ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের পরিসংখ্যান দেখলে আপনি বুঝতেই পারবেন না, এটি থিয়েরি অঁরি’র ক্যারিয়ার। আর্সেনালের হয়ে মাত্র ২১ বছর বয়সেই ক্যারিয়ারের ১৫০ ম্যাচ খেলে ফেলেন তিনি। তবে তখনো তাঁর নামের পাশে মাত্র ২৮টি গোল।
তবে এই দুর্দশার পেছনে যথার্থ কারণও ছিলো। মোনাকো কিংবা জুভেন্টাসে থাকাকালীন সময়ে প্রথাগত স্ট্রাইকার ছিলেন না তিনি। বেশিরভাগ সময়ে উইং কিংবা উইংব্যাক পজিশনেই খেলতেন। কিন্তু আর্সেনালে যোগ দেওয়ার পর আর্সেন ওয়েঙ্গার অঁরিকে পরিণত করেন একজন সুদক্ষ ও ভয়ঙ্কর স্ট্রাইকার হিসেবে। মাত্র ২১ বছর বয়সেই ফ্রান্সের হয়ে অঁরি জয় করেছিলেন বিশ্বকাপ শিরোপা।
তবে শুরুর দিকের এই অভাব ক্যারিয়ারে পরে ঠিকই পুষিয়ে দেন তিনি। অবসরের আগে তাঁর নামের পাশে ছিলো ৩২৯টি গোল।
হ্যারি কেইন
বয়স – ২২, গোলসংখ্যা – ৫৩
শারীরিক সমস্যার জন্য ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে দলে থিতু হতে পারেননি হ্যারি কেইন। সেই সময় ধারে যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়িয়েছিলেন এ ক্লাব হতে ও ক্লাবে। তাই ক্যারিয়ারে ১৫০ ম্যাচ খেলতে কেইনের সময় লেগেছে ২২ বছর।
২০১৩-১৪ মৌসুমে এসে টটেনহাম দলে সুযোগ পেয়ে নিজের জাত চেনান তিনি। তারপর থেকেই দলে নিয়মিত মুখ ছিলেন হ্যারি কেইন। সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই টানা ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে শুরু করেন এই ইংল্যান্ড অধিনায়ক। ১৫০ ম্যাচ শেষে তাই গোলের হাফসেঞ্চুরিও হয়ে গিয়েছিলো তাঁর। সেই সময় কেইনের নামের পাশে ছিলো ৪৩টি গোল। কিন্তু বর্তমানে আরো শাণিত হয়েছেন তিনি। অনেকের মতে, এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকারও হ্যারি কেইন।
ওয়েইন রুনি
বয়স – ২০, গোলসংখ্যা – ৪৫
২০০২ সালে এভারটনের হয়ে আর্সেনালের বিপক্ষে এক দুর্দান্ত গোলের মাধ্যমে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন ওয়েইন রুনি। অবশ্য তার আগে থেকেই এভারটনের মূল দলের নিয়মিত মুখ ছিলেন তিনি।
তবে প্রথম ক্লাব এভারটনের হয়ে নয়, বরং ‘রেড ডেভিল’দের জার্সি গায়ে রুনি খেলেছিলেন ক্যারিয়ারের ১৫০তম ম্যাচ। তাও আবার মাত্র ২০ বছর বয়সেই। ততদিনে করে ফেলেছেন ৪৫টি গোলও। এভারটনের হয়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কল্যাণে মাত্র দুই বছরের মাথায় রুনিকে ওল্ড ট্রাফোর্ডে নিয়ে আসেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। নিজের যোগ্যতা দিয়ে সেই বয়সেই ফার্গির আস্থাভাজন হয়ে উঠেন তিনি। তাই মাত্র ২০ বছরেই ১৫০ ম্যাচ খেলার সৌভাগ্য হয় তাঁর।
লিওনেল মেসি
বয়স – ২১, গোলসংখ্যা – ৭৪
২০০৪-০৫ মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে অভিষেক হওয়ার পর ২০০৯ সালের এপ্রিলের মধ্যেই কাতালানদের হয়ে ১৫০ ম্যাচ খেলার মাইলফলক অর্জন করেন লিওনেল মেসি। বায়ার্ন মিউনিখের সাথে সেই ম্যাচ খেলতে নামার আগেই মেসির নামের পাশে বিস্ময়জাগানিয়া এক সংখ্যা, ৭৪ গোল!
১৫০ ম্যাচ খেলেই ততদিনে তিনি জয় করেছেন দুইটি লা লিগা শিরোপাসহ একটি চ্যাম্পিয়নস লিগও। ২০০৯ সালে জেতেন ট্রেবলও। তারই সাথে সাথে ব্যক্তিগত সাফল্য ধরা দিতে শুরু করে সে বছর থেকেই। সেবার প্রথমবারের মতো ব্যালন ডি’অর জেতেন এই ফুটবল জিনিয়াস, পরে যা জিতেছেন আরো চারবার।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
বয়স – ২০, গোলসংখ্যা – ২৫
২০০৫ সালে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের বিপক্ষে মাঠে নেমে ক্যারিয়ারে ১৫০তম ম্যাচ খেলার মাইলফলক স্পর্শ করেন পর্তুগিজ সেনসেশন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। মাত্র ২০ বছর বয়সেই ১৫০ ম্যাচ খেলার সৌভাগ্য অর্জন করেন তিনি। সেই সময় ওয়েইন রুনির সাথে রোনালদোও ছিলেন ফার্গির প্রথম পছন্দ।
কিন্তু একজন গোলমেশিন হিসেবে সুখ্যাতি পাওয়া রোনালদো সেই সময়ে বেশ পিছিয়ে ছিলেন। ১৫০ ম্যাচ শেষে তাঁর নামের পাশে ছিল মোটে ২৫ গোল। মূলত রোনালদো জ্বলে উঠতে শুরু করেন ২০০৫-০৬ মৌসুম দিয়ে। সেই মৌসুমেও রেড ডেভিলদের হয়ে করেন ১২টি গোল। এর দুই বছর পর জিতে নেন প্রথম ব্যালন ডি’অর শিরোপা, যা এখন পাঁচটিতে রুপ নিয়েছে। ইংল্যান্ড, স্পেন জয় করে রোনালদো এখন নিজের রাজত্ব স্থাপন করেছেন ইতালিতেও।
সার্জিও আগুয়েরো
বয়স – ২০, গোলসংখ্যা – ২৭
বর্তমানে প্রিমিয়ার লিগের সেরা কয়েকজন স্ট্রাইকারদের মধ্যে একজন আগুয়েরো। তবে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আগুয়েরো জানান দিয়েছিলেন নিজের প্রতিভার কথা। আর্জেন্টিনার ক্লাব ইন্দিপেন্দিয়েন্তেতে ক্যারিয়ার শুরু করলেও ক্যারিয়ারের ১৫০তম ম্যাচ খেলেন স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে। ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে মাত্র ২০ বছর বয়সেই এই মাইলফলক অর্জন করেন আগুয়েরো।
তবে এই কয়েক ম্যাচেই ৫৭ গোল করে বড় বড় ক্লাবগুলোর দৃষ্টি কেড়েছিলেন এই আর্জেন্টাইন। আর সেই সময়ে উঠতি ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি কিনে নেয় তাঁকে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ছাড়ার আগেই ক্লাবের হয়ে আগুয়েরো করেন ১০২ গোল। বর্তমানে ৩০ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার ম্যানচেস্টার সিটির ইতিহাসেও সর্বোচ্চ গোলদাতা। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোলদাতার তালিকায়ও আগুয়েরোর স্থান ৮ নাম্বারে। ২৬০ গোল করা অ্যালান শিয়েরারকে পেছনে ফেলতে না পারলেও ২০৮ গোল করা রুনিকে পেছনে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে ১৫৩ গোল করা আগুয়েরোর।
যবনিকা
বর্তমানে বিশ্বের বাঘা বাঘা কিছু গোলমেশিনদের সাথে রাশফোর্ডের তুলনায় দেখা যায়, অন্যদের তুলনায় মোটেও পিছিয়ে নেই রাশফোর্ড। বরং গোলসংখ্যায় পেছনে ফেলেছেন রোনালদো, অঁরি এবং শিয়েরারদের মতো খেলোয়াড়দের। বিশ্বসেরা হওয়ার সবকিছুই রয়েছে এই তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের মাঝে। কলি হয়ে ফুটে উঠতে শুরু করা রাশফোর্ড পরিপূর্ণ ফুল হয়ে ওঠার আগে হঠাৎই ঝরে না পড়লে হয়তো উজ্জ্বল এক ভবিষ্যৎই অপেক্ষা করছে তার জন্য।