Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

১৬ বছর পর বিশ্বকাপে কি আবার চমক দেখাবে সেনেগাল?

বিশ্বকাপের আগে সাধারণত বিশ্বকাপ ট্রফি পুরো পৃথিবী ঘুরে বেড়ায়। পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে সেবারে সে সোনালি ট্রফি পৌঁছেছে আফ্রিকার ছোট্ট একটি দেশ সেনেগালে। বিশ্বকাপ ট্রফির আগমনে জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে দেশটি। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাক সল। ট্রফিটির খুব কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। তার পাশেই ছিলেন সেনেগালের প্রধান কোচ আলি সিসে।

হুট করে প্রেসিডেন্ট ম্যাক সল আলি সিসেইকে প্রশ্ন করলেন, ‘‘এই ট্রফিটা জিততে কি আমাদের অনেক বেশি সময় লাগবে?” উত্তরে আলি সিসেই কী বলেছিলেন তা অজানা। তবে ম্যাক সল ফুটবলের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে হয়তো খুব একটা জানেন না বলেই ঐ অদ্ভুত প্রশ্ন করেছিলেন। জার্মানি, আর্জেন্টিনা, স্পেন, ব্রাজিল, ফ্রান্স অথবা বেলজিয়াম, পর্তুগাল ও ইংল্যান্ডকে টপকে সেনেগালের বিশ্বকাপ শিরোপা জেতা এখনও খুব অসম্ভব পর্যায়েরই চিন্তাভাবনা। কিন্তু একটি কাজ এ পুঁচকে দলটি খুব ভালো পারে। মুহূর্তের মধ্যে এ দলটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে নাকানি-চুবানি খাওয়ানোর ক্ষমতা রাখে। যেটা তারা করেছিলো তাদের অভিষেক বিশ্বকাপেই।

২০০২ সালের সেই চমক জাগানো সেনেগাল দল; Source: Getty Image

২০০২ বিশ্বকাপ। সে বিশ্বকাপে ফ্রান্স গেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নের তকমা গায়ে মেখে। জিদান, অঁরি, থুরাম, ভিয়েরা, ট্রেজেগে, বার্থেজের মতো তারকা ফুটবলারের মেলা ফ্রান্সে। সে বিশ্বকাপে কোনো সন্দেহ ছাড়া তারা অন্যতম ফেভারিট। অপরদিকে, সেনেগাল নামক দলটি একদম আনকোরা। নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে তারা। আর তাদের কাছেই কিনা হেরে গেল বিশ্বসেরা ফ্রান্স! সেনেগালের বিপক্ষে ঐ হারের ফলে সেবার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে শেষ হয়ে গিয়েছিল ফ্রান্সের বিশ্বকাপ মিশন। অপরদিকে, চমক জাগানো দল সেনেগাল গ্রুপ পর্বে ডেনমার্ক এবং উরুগুয়ের সাথে ড্র করে পৌঁছেছিলো শেষ ১৬-তে। ইব্রাহিমোভিচ ও লারসনের সুইডেনকে হারিয়ে সেনেগাল পৌঁছে গিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালেও। কিন্তু তুরস্কের কাছে হেরে কোয়ার্টার ফাইনালেই শেষ হয় তাদের রূপকথার প্রথম বিশ্বকাপ।

ফ্রান্সের বিপক্ষে একমাত্র গোল দিয়েছিলেন পাপা দীপ; Source: Goal.com

কিন্তু তারপর থেকে যেন সেনেগাল পিছিয়ে যেতে থাকে। সেবারের পর ১৬ বছর কেটে গেছে, অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে আরও ৩টি বিশ্বকাপ, কিন্তু মূলমঞ্চে স্থান করে নিতে পারেনি তারা। ২০১০ বিশ্বকাপ তাদের মহাদেশেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বকাপ, কিন্তু তারা ছিল দর্শকের ভূমিকায়। আসলে ২০০২ বিশ্বকাপের পর সেনেগালের অবনতির পেছনে যুক্তিগত কারণ আছে। নিজেদের সেরাটা তুলে ধরতে ভালো কোনো খেলোয়াড়ের আগমন হয়নি সে সময়ে। বিশেষ করে ২০০৭ থেকে ২০১১ এর সময়গুলো কেটেছে ভুলে যাবার মতো। কিন্তু সেনেগাল আবার ফিরেছে বিশ্বকাপ মঞ্চে।

বিশ্বকাপ নিশ্চিত হবার পর সেনেগালের উদযাপন; Source: Getty Image

এবার বিশ্বকাপে স্থান পাওয়া নিয়ে নিজেদের একরকম ভাগ্যবান ভাবতে পারে সেনেগাল। বাছাইপর্বে সেনেগাল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ২-১ গোলে হেরে যায়, কিন্তু ম্যাচ শেষে রেফারি জোসেফ ল্যাম্পটিপ এর ভুল রেফারিং এর দায়ে ফিফা তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরে আদালত, মামলার পরে দুই পক্ষের সম্মতিতে পুনরায় ম্যাচ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুনর্জীবন পাবার মতো সুযোগ আর হাতছাড়া করেনি সেনেগাল। পুনরায় অনুষ্ঠিত ম্যাচে ঠিকই জয় ছিনিয়ে নেয় তারা। ২০০২ বিশ্বকাপে চমক জাগানো সেই টিমের দলনেতা এখন দলের প্রধান কোচ। সেই দলের কোনো সদস্য বর্তমান দলে হয়তো নেই যারা প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলার সম্মান অর্জন করেছিল। তবে দীর্ঘ ১৬ বছর বিরতি শেষে আবারো রাশিয়া বিশ্বকাপে জায়গা করে নেবার পর কোচ সিসেইয়ের সেই সোনালি সময়ের কথা অবশ্যই মনে পড়বে!

আলি সিসেই, বর্তমান সেনেগাল কোচ; Source: Getty Image

২০০২ সালের সে দলটি তেমন শক্তপোক্ত ছিল না, তাদেরকে ঈশ্বরের আশীর্বাদ বললেই বেশি মানানসই হবে। তবে রাশিয়া বিশ্বকাপে যে সেনেগাল এবার যাচ্ছে: শক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও অভিজ্ঞতায় নতুন এ দলটি বেশ এগিয়ে। দলের অধিকাংশ খেলোয়াড় নিয়মিত খেলেন ইউরোপীয় ক্লাবে। তবে জাতীয় দলে সবাই অনেকদিন ধরে নিয়মিত খেলে আসছেন বলে তাদের সবার ভেতর বোঝাপড়াটাও চমৎকার। দলটির খেলোয়াড়দের গড় বয়স ছাব্বিশ থেকে সাতাশের মধ্যে। তাই বলাই বাহুল্য, তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার এক অপূর্ব সমন্বয় এবারের সেনেগাল। যার কারণে যথাযথ একটি দল নিয়ে এবার বড় দলগুলোর বিপক্ষে ত্রাস ছড়াতেই পারে লায়ন্স অফ তিরাঙ্গা খ্যাত দলটি।

সেনেগাল দলের গোলরক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন আবদোলাই দিয়ালো, আলফ্রেড গোমিস, খাদিম দিয়াই। তবে আলি সিসেইয়ের দলে প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক থাকার সম্ভাবনা বেশি খাদিম দিয়াইয়ের। গিনির হরোয়া এসি দলে খেলেন ৩৩ বছর বয়সী এ গোলরক্ষক। হয়ত কোনো নামজাদা খেলোয়াড় নন তিনি। তবে সেনেগালের হয়ে তার পারফর্মেন্স বরাবরই প্রশংসনীয়।

প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক হিসেবে খাদিম দিয়াই বেশি এগিয়ে আছেন; Source: AFP

আলি সিসেই এর ৪-৩-৩ ফর্মেশনে রক্ষণভাগের অন্যতম ভরসা কলিদু কোলিবালি। যাকে বলা হয় ছয় ফুট পাঁচ ইঞ্চির উচ্চতার প্রাচীর। খেলেন ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিতে। দুর্দান্ত গতি ও দারুণ শারীরিক শক্তির কারণে দারুণ পরিচিত ২৬ বছর বয়সী এ ডিফেন্ডার। তাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত আরেক সেন্ট্রাল-ব্যাক ডিফেন্ডার ক্বারা এমবদজি। কোলিবালির মতো অতটা পরিচিত না হলেও আন্ডারলেখটের এ ডিফেন্ডার যথেষ্ট অভিজ্ঞতার প্রমাণ রেখেছেন ক্লাব ও দেশের হয়ে। এছাড়াও ফুল-ব্যাকের দায়িত্বে থাকবেন লামিন গাসামা ও ইউসুফ সাবালি। হয়তো অপরিচিত খেলোয়াড় হবার কারণে তেমন শক্তিশালী মনে হচ্ছে না সেনেগাল রক্ষণকে। কিন্তু এ রক্ষণই যেকোনো বড় টিমের আক্রমণ রুখে দেবার মতো ক্ষমতা বহন করে।

কৌলিবালি, সেনেগালের রক্ষণের ভরসা; Source: Goal.com

সেনেগালের মধ্যমাঠের প্রায় সবাই প্রিমিয়ার লিগের নিয়মিত খেলোয়াড়। যেমন- সেনেগালের অন্যতম জনপ্রিয় খেলোয়াড় চেইখো কোয়েত খেলেন ওয়েস্ট হ্যামে। মধ্যমাঠ যেন গড়ে উঠবে তাকেই কেন্দ্র করে। কোয়েতকে বলের যোগান দিতে সহায়তা করবেন এভারটনের ইদ্রিস গানা। এছাড়াও মাঠে থাকতে পারেন পাপা অলিনে দিয়াও। স্টেড রেঁনের হয়ে এবার নাম কুড়িয়েছেন ইসমাইলি সার। তিনিও হতে পারেন আলি সিসেই এর ট্রাম্পকার্ড।

চেইখো কয়েত; Source: Daily Mirror

সেনেগালের সবথেকে বড় তারকা খেলোয়াড় অবশ্যই সাদিও মানে। লিভারপুলে গোল করার পরিমাণের তালিকায় হয়ত মোহাম্মদ সালাহর নিচেই থাকবেন তিনি। কিন্তু মৌসুমজুড়ে তার পারফর্মেন্স তুলে ধরে তিনিও কম যান না। অসামান্য গতি আছে তার, আছে দূরপাল্লার শট করে গোলরক্ষককে বোকা বানানোর ক্ষমতা। মধ্যমাঠ থেকে যদি ঠিকমতো বলের যোগান পান, তাকে ঠেকানো কষ্ট হবে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের। সেনেগাল দলে সাদিও মানে খেলেন লেফট উইং পজিশনে। রাইট উইং পজিশনে খেলবেন দিয়াফ্রো সাখো। ফর্মে থাকলে তিনিও মানে’র থেকে কম যান না। এছাড়াও একই পজিশনে আছেন স্টোক সিটির দিউফ। স্ট্রাইকার পজিশনে আলি সিসেই কাকে সুযোগ করে দেবেন তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। তুরিনোর হয়ে নিয়াং এ বছর তেমন জ্বলে উঠতে পারেননি, কিন্তু মোনাকোর হয়ে বেশ ভালো একটা বছর কেটেছে কেইটা বালদের জন্য। হয়তো নিয়মিত খেলোয়াড় নিয়াংকে বদলে কোচ কেইটা বালদেকে সুযোগ করেই দিতে পারেন।

সাদিও মানে, সেনেগালের সবথেকে বড় ভরসার নাম ; Source: Getty Image

কিছুটা ভালোমানের দল থাকলেও অভ্যন্তর কিছু সমস্যা এখনও আছে সেনেগাল দলে। অভাব আছে একজন সেট পিস টেকারের, মধ্যমাঠ থেকেও অনেক সময় আক্রমণ গড়ে দেবার ব্যর্থতা খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু সব ছাপিয়ে সেনেগাল কাঁপছে ফুটবল জ্বরে। দীর্ঘ ১৬ বছর পর বিশ্বকাপে খেলাটা তাদের জন্য ভিন্নরকম সম্মানের। ১৯ জুন পোল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলবে সেনেগাল।

বিশ্বকাপ সবসময় চমকে দিতে ভালোবাসে। হয়তো রাশিয়া বিশ্বকাপে চমকে দেবার দায়িত্ব আবারও বর্তেছে সেনেগালের কাঁধে।

ফিচার ইমেজ: Sportinfo.az

Related Articles