Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

টুর্নামেন্ট সেরা উইলিয়ামসন: যোগ্য ব্যক্তি নাকি সান্ত্বনা পুরস্কার!

ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের এগারোটি ফাইনাল ম্যাচের মধ্যে গুটিকয়েক ম্যাচ ছাড়া অন্যান্য ম্যাচগুলোর সমাপ্তি ঘটেছিল একতরফাভাবে। তবে এবারের ইংল্যান্ড বনাম নিউ জিল্যান্ডের ম্যাচটিতে ছিল টানটান উত্তেজনা। শ্বাসরুদ্ধকর এবং নাটকীয়তায় ভরপুর এই ফাইনালে নির্ধারিত ওভার শেষে দুই দলের রান সংখ্যা সমান হলে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। সেখানেও দুই দল সমান ১৫ রান করলে জয়ী নির্ধারণ করা হয় বাউন্ডারির সংখ্যা দিয়ে। নিউ জিল্যান্ডের চেয়ে ইংল্যান্ড বেশি বাউন্ডারি হাঁকানোর কারণে তাদেরকে জয়ী ঘোষণা করা হয়।

ক্রিকেট বিশ্বকাপে তো বটে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও এমন নাটকীয় ম্যাচের খোঁজ পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাবে। ম্যাচের শেষ সেকেন্ড পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে চ্যাম্পিয়ন দলের জন্য। চ্যাম্পিয়ন দলের জন্য যেমন শেষ বল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল, তেমনই টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটারের জন্যও শেষপর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। অফিসিয়ালভাবে ঘোষণা আসার আগপর্যন্ত বেশ কয়েকজন টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান, ভারতের রোহিত শর্মা, অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক এবং নিউ জিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন। তারা সবাই-ই পুরো আসরে ধারাবাহিকভাবে সফল হয়েছিলেন।

ফাইনালে না হেরেও পরাজিত নিউ জিল্যান্ড; Image Source: Getty Images

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার দেওয়ার সময় সাকিব আল হাসান এবং রোহিত শর্মাদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করে টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় নিউ জিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে। তিনি গড়পড়তা একটি দলকে অসাধারণ নেতৃত্বগুণে প্রায় শিরোপাই জিতিয়ে দিচ্ছিলেন। ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে পরাজিত না হয়েও রানার্স আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তার দলকে। কেন উইলিয়ামসন ব্যাট হাতে দলের ৩০ শতাংশের বেশি রান একাই করেছেন। ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি, লকি ফার্গুসেনদের সময়ানুযায়ী ব্যবহার করার পাশাপাশি কলিন ডা গ্রান্ডহোম, জিমি নিশাম এবং মিচেল স্যান্টনারদের থেকে সবটুকু আদায় করে নিয়েছেন তিনি।

অনেকেই কেন উইলিয়ামসনকে টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার পর বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়ার পরেও তাকে টুর্নামেন্ট সেরা নির্বাচন করার কারণ হিসেবে দেখছেন, নিউ জিল্যান্ড সমানে-সমানে লড়াই করে রানার্স আপ তাই তাকে সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে এই অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে। অথচ সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি তিনিই। নিউ জিল্যান্ডের সাফল্যের মূল কাণ্ডারি উইলিয়ামসন। একাই দলের ব্যাটিং লাইনআপ সামাল দিয়েছেন তিনি। তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী সাকিব আল হাসান দলকে তিন ম্যাচ জেতাতে পেরেছেন, সেখানে কেন উইলিয়ামসন জিতালেন সাত ম্যাচ এবং শিরোপা এনে দিতে না পারলেও ফাইনাল ম্যাচ হারেনি তার দল।

তার নেতৃত্বে নিউ জিল্যান্ড ফাইনাল খেলে; Image Source: Getty Images

ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকভাবে রান করার পাশাপাশি চৌকস নেতৃত্বগুণের কারণে এখন পর্যন্ত দুজন ক্রিকেটার বিশ্বকাপে টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডের অধিনায়ক মার্টিন ক্রো অসাধারণভাবে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দুর্দান্ত ছিলেন। তার দল সেমিফাইনালে বাদ পড়ে গেলেও তিনি টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন। ফাইনালে না উঠেও এরপর শুধুমাত্র ল্যান্স ক্লুজনার টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন। শিরোপা না জিতেও টুর্নামেন্ট সেরার তালিকায় মার্টিন ক্রো, ল্যান্স ক্লুজনার, কেন উইলিয়ামসনের সাথে শচীন টেন্ডুলকারের নামও রয়েছে।

বিশ্বকাপে কেন উইলিয়ামসনের ব্যাটিং পারফরমেন্স 

কেন উইলিয়ামসন নয় ইনিংসে দুটি শতক এবং দুটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৮২.৫৭ ব্যাটিং গড়ে ৫৭৮ রান সংগ্রহ করেছেন, যা নিউ জিল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ এবং সবমিলিয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ। তিনি প্রায় একাই নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ সামাল দিয়েছিলেন। তিনি এই বিশ্বকাপে দুই ইনিংসে বল করেছেন, দুই ইনিংসে একটি করে মোট দুটি উইকেট শিকার করেছেন তিনি।

টেন্ডুলকারের কাছ থেকে টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড নিচ্ছেন উইলিয়ামসন; Image Source: Getty Images

উইলিয়ামসন নিউ জিল্যান্ডের মোট রানের ৩০ শতাংশের বেশি একাই করেছিলেন। ব্ল্যাক ক্যাপসদের হয়ে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান করা রস টেইলর ৩৮.৮৮ ব্যাটিং গড়ে ৩৫০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাদের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামা মার্টিন গাপটিল, কলিন মুনরো এবং হেনরি নিকোলাস পুরো আসর জুড়েই ব্যর্থ ছিলেন। দুয়েকটি ইনিংস বাদ দিলে তাদের বলার মতো কীর্তি তেমন কিছুই নেই। গাপটিল দশ ইনিংস ব্যাট করে ২০.৬৬ ব্যাটিং গড়ে ১৮৬ রান করেছেন, যার মধ্যে এক ইনিংসেই করেছেন অপরাজিত ৭৩ রান। মিডল-অর্ডারে খেলা টম লাথামও রানের দেখা পাননি। এমন একটি ভঙ্গুর ব্যাটিং লাইনআপকে একাই টেনে নিয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসন।

৪০ রান বনাম বাংলাদেশ

রস টেইলর এবং কেন উইলিয়ামসন ছাড়া রানের মুখ দেখেননি আর কোনো কিউই ব্যাটসম্যান; Image Source: Getty Images

বাংলাদেশের দেওয়া ২৪৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৫৫ রানের মধ্যে দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল এবং কলিন মুনরোর উইকেট হারায় নিউ জিল্যান্ড। দুই ওপেনারকে ফেরানোর পর কেন উইলিয়ামসনকেও ফেরানোর সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের কাছে। মুশফিকুর রহিমের ভুলে নিশ্চিত রান আউট থেকে বেঁচে যাওয়া উইলিয়ামসন তৃতীয় উইকেট জুটিতে রস টেইলরের সাথে ১০৫ রান যোগ করে দলকে জয়ের পথেই রেখেছিলেন। তিনি ৭২ বলে একটি চারের মারে ৪০ রানের ইনিংস খেলে আউট হন। তার বিদায়ের পর বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরলেও শেষপর্যন্ত জয়ের দেখা পায়নি। নিউ জিল্যান্ড দুই উইকেটের জয় পায়।

অপরাজিত ৭৯ রান বনাম আফগানিস্তান

দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ছেন উইলিয়ামসন; Image Source: Getty Images

প্রথম দুই ম্যাচে যথাক্রমে শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশকে হারানোর পর নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হয় নিউ জিল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ৬৬ রান যোগ করে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলো। কিন্তু সেখান থেকে লকি ফার্গুসেন এবং জিমি নিশামের বোলিং তোপের মুখে পড়ে মাত্র ১৭২ রানে গুটিয়ে যায় তারা। ফার্গুসেন চারটি এবং নিশাম পাঁচ উইকেট শিকার করেছিলেন। আফগানিস্তানের দেওয়া অল্প রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই গাপটিল সাজঘরে ফিরে গেলে ব্যাট করতে আসেন কেন উইলিয়ামসন। তিনি প্রথমে কলিন মুনরোর সাথে ৪১ রান এবং তৃতীয় উইকেট জুটিতে রস টেইলরের সাথে ৮৯ রান যোগ করে দলকে জয়ের পথে রাখেন। শেষপর্যন্ত ৯৯ বলে নয়টি চারের মারে অপরাজিত ৭৯ রানের ইনিংস খেলে দলকে সাত উইকেটের জয় এনে দেন।

অপরাজিত ১০৬ রান বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা

দুর্দান্ত এক শতক হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন উইলিয়ামসন; Image Source: Getty Images

শেষ চারে ওঠার লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের বিকল্প ছিলো না। অন্যদিকে প্রথম তিন ম্যাচে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জয়ের পর নিউ জিল্যান্ডের জন্য এই ম্যাচের ফলাফলও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বৃষ্টি বিঘ্নিত ৪৯ ওভারের এই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকা ছয় উইকেটে ২৪১ রান সংগ্রহ করেছিল। জবাবে ১২ রানের মাথায় কলিন মুনরোর উইকেট হারানোর পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন। তিনি দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে গাপটিলের সাথে ৬০ রান যোগ করে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন। গাপটিল ৩৫ রান এবং রস টেইলর ও টম লাথাম এক, এক রান করে ফিরে গেলে বিপর্যয়ে পড়ে নিউ জিল্যান্ড। সেখান থেকে দলকে জয়ের পথে রাখেন উইলিয়ামসন। তিনি নিশাম, গ্রান্ডহোম এবং স্যান্টনারকে নিয়ে দলকে চার উইকেটের জয় এনে দিয়েছিলেন। ২১৬ মিনিট ক্রিজে থেকে ১৩৮ বলে নয়টি চার এবং একটি ছয়ের মারে অপরাজিত ১০৬ রানের ইনিংস খেলে জয়ের নায়ক ছিলেন তিনিই।

১৪৮ রান বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দলের বিপর্যয়ের মুখে ১৪৮ রানের ইনিংস খেলেছেন উইলিয়ামসন; Image Source: Getty Images

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে আবারও শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে নিউ জিল্যান্ড। দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল এবং কলিন মুনরো কোনো রান যোগ না করে প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান। সেখান থেকে দলকে লড়াইয়ে ফেরান কেন উইলিয়ামসন এবং রস টেইলর। তারা তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৬০ রান যোগ করেছিলেন। টেইলর ৬৯ রান করে ফিরে গেলেও ৪৭ তম ওভার পর্যন্ত ব্যাট করেছিলেন উইলিয়ামসন। তিনি যখন আউট হন তখন দলীয় সংগ্রহ ছিল পাঁচ উইকেটে ২৫১ রান, যার মধ্যে তিনি একাই করেছিলেন ১৪৮ রান। ১৫৪ বলে ১৪টি চার এবং একটি ছয়ের মারে এই ইনিংস খেলেছিলেন। শেষপর্যন্ত নিউ জিল্যান্ড নির্ধারিত ওভারে আট উইকেটে ২৯১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ক্রিস গেইল (৮৭), শিমরন হেটমায়ার (৫৪) এবং কার্লোস ব্রাথওয়েটের অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ের উপর ভর করে জবাবটা ভালোই দিচ্ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু উইলিয়ামসনের চৌকস নেতৃত্বে শেষপর্যন্ত হার মানতে হয় উইন্ডিজকে। জয় থেকে মাত্র পাঁচ রান দূরে থাকতে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০১ রান করা ব্রাথওয়েট আউট হয়ে গেলে নিউজিল্যান্ডের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।

৪১ রান বনাম পাকিস্তান

শুরুটা ভালো হলেও ৪১ রানে থেমে যায় উইলিয়ামসনের ইনিংস; Image Source: Getty Images

নিউ জিল্যান্ড আসরে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ পায় পাকিস্তানের কাছে। এই ম্যাচেও ইনিংসের শুরুতেই ব্যাট হাতে নামতে হয় উইলিয়ামসনকে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে গাপটিল আউট হয়ে গেলে ব্যাটিংয়ে নামেন উইলিয়ামসন। তিনি একপাশ আগলে রাখলেও অন্য প্রান্তে একের পর এক উইকেটের পতন ঘটছিল। মাত্র ৪৬ রানে চার উইকেট হারানোর পর নিশামকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তবে তিনিও এই ম্যাচে ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। দলীয় ৮৩ এবং ব্যক্তিগত ৪১ রানে ৫ম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর জিমি নিশামের অপরাজিত ৯৭ রান এবং গ্রান্ডহোমের ৬৪ রানের উপর ভর করে ছয় উইকেটে ২৩৭ রান সংগ্রহ করেছিল নিউ জিল্যান্ড। ২৩৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান পাঁচ বল এবং ছয় উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নেয়।

৪০ রান বনাম অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ইনিংস বড় করতে পারেননি উইলিয়ামসন; Image Source: Getty Images

টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৯২ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে অস্ট্রেলিয়া। এরপর উসমান খাঁজার ৮৮ রান এবং অ্যালেক্স ক্যারির ৭১ রানের উপর ভর করে নয় উইকেটে ২৪৩ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে উইকেট না হারালেও নিউ জিল্যান্ডের রান তোলার গতি ছিল মন্থর। নিকোলস এবং গাপটিল উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ২৯ রান যোগ করতে খেলেছিলেন ৯.২ ওভার। নিকোলসের বিদায়ের পর ব্যাট করতে নেমে রানের গতি সচল রাখার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন উইলিয়ামসন। মিচেল স্টার্কের বোলিং তোপের মুখে পড়ার আগে ৫১ বলে দুটি চার এবং একটি ছয়ের মারে ৪০ রান করেছিলেন তিনি। তার বিদায়ের পর মাত্র ১৫৭ রানে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ৮৬ রানে পরাজিত হয় নিউ জিল্যান্ড।

২৭ রান বনাম ইংল্যান্ড

গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ২৭ রান করেন উইলিয়ামসন; Image Source: Getty Images

টানা দুই পরাজয়ের পর গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামে নিউ জিল্যান্ড। এই ম্যাচের আগেই নিউ জিল্যান্ডের সেমিফাইনাল খেলা প্রায় নিশ্চিত ছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডের জন্য ম্যাচটি ছিল বাঁচা-মরার লড়াই। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে জনি বেয়ারস্টো এবং জেসন রয়ের ব্যাটে চড়ে উড়ন্ত সূচনা পেয়েছিল ইংল্যান্ড। তবে শেষদিকে বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ম্যাচে ফিরেছিল নিউ জিল্যান্ড। ততক্ষণে ইংল্যান্ড নির্ধারিত ওভারে আট উইকেটে ৩০৫ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে আবারও প্রথম উইকেট হারায় নিউ জিল্যান্ড। নিজের খেলা প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরে গিয়েছিলেন হেনরি নিকোলাস। এই ম্যাচে উইলিয়ামসনও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তিনি রান আউটের ফাঁদে পড়ে ৪০ বলে ২৭ রান করে সাজঘরে ফিরেছিলেন। শেষপর্যন্ত নিউ জিল্যান্ড ১৮৬ রানে অল আউট হয়ে ১১৯ রানের বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়।

৬৭ রান বনাম ভারত

সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ৬৭ রানের ইনিংস খেলার পথে উইলিয়ামসনের একটি শট; Image Source: Getty Images

সেমিফাইনালে নিউ জিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ছিল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ভারত। শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বেশ সাবধানী ব্যাটিং করেছিলেন দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল এবং হেনরি নিকোলাস। তারা উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ৩.৩ ওভার ব্যাটিং করে মাত্র এক রান যোগ করেছিলেন। রানের জন্য রীতিমত সংগ্রাম করা গাপটিল ১৪ বলে এক রান করে বুমরাহর বলে কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরলে ক্রিজে আসেন উইলিয়ামসন। তিনি নিজের উইকেট বাঁচিয়ে রেখে রানের চাকা ধীরগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সঙ্গী হিসেবে পেয়ে গেলেন রস টেইলরকে। উইলিয়ামসনের ৯৫ বলে ৬৭ রান এবং টেইলরের ৯০ বলে ৭০ রানের উপর ভর করে নিউ জিল্যান্ড নির্ধারিত ওভার শেষে আট উইকেটে ২৩৯ রান যোগ করে। বৃষ্টির কারণে ম্যাচ রিজার্ভ ডে-তে গড়ায়। একদিনের ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় নিউ জিল্যান্ড। ম্যাট হেনরি এবং ট্রেন্ট বোল্টের অসাধারণ বোলিংয়ে মাত্র ২৪ রানে চার উইকেট হারিয়ে বসে ভারত। শেষদিকে রবীন্দ্র জাদেজা এবং ধোনির ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ে ফিরলেও শেষ হাসি হাসতে পারেনি। জয় থেকে ১৮ রান দূরে থাকতে থেমে যায় ভারতের ইনিংস।

৩০ রান বনাম ইংল্যান্ড

ফাইনালে ৩০ রান করে সাজঘরে ফিরে যান উইলিয়ামসন; Image Source: Getty Images

লর্ডসে স্বপ্নের ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি নিউ জিল্যান্ড। টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা নিউ জিল্যান্ড টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ফাইনালে ব্ল্যাক ক্যাপসদের ওপেনাররা ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। পুরো আসরে অফ ফর্মে থাকা গাপটিল দুটি চার এবং একটি ছয় হাঁকিয়ে নিজের ইনিংস শুরু করেছিলেন। তবে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি, ১৮ বলে ১৯ রান করে সাজঘরে ফিরেছিলেন। তিনে ব্যাট করতে নামা কেন উইলিয়ামসন আবারও দলের হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে নিকোলাসের সাথে ৭৪ রান যোগ করার পর প্লাঙ্কেটের বলে বাটলারের হাতে ধরা পড়েন। আউট হওয়ার আগে ৩০ রান করেছিলেন তিনি। নিকোলাসের ৫৫ রান এবং লাথামের ৪৭ রানের উপর ভর করে নিউ জিল্যান্ড আট উইকেটে ২৪১ রান সংগ্রহ করেছিল। জবাবে ইংল্যান্ডও ২৪১ রানে থেমে যায়। ম্যাচ সুপার ওভারে গড়ানোর পরেও ম্যাচ অমীমাংসিত ছিল। শেষপর্যন্ত বাউন্ডারি বেশি হাঁকানোর কারণে ইংল্যান্ডকে জয়ী ঘোষণা করা হয়, যার ফলে ফাইনালে না হেরেও নিউ জিল্যান্ড পরাজিত দল। নিউ জিল্যান্ড শিরোপা না জিতলেও পুরো আসরে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি দলকে অসাধারণভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার সুবাদে টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড জেতেন কেন উইলিয়ামসন।

This article is in Bangla language. It is about the Kane Williamson World cup performance. For references please check the hyperlinks inside the article.

Featured Image: Getty Images

Related Articles