স্টেডিয়ামের প্রচলন সেই প্রাচীনকাল থেকেই বিদ্যমান। খেলার উপভোগ্যতা, উত্তেজনা ও আরামদায়কতা অনেকাংশেই নির্ভর করে একটি উপযুক্ত স্টেডিয়ামের উপর। কোন জাতি কতটা গুরুত্ব দিয়ে স্টেডিয়াম তৈরি করেছে তা দেখেই বলা যায় তারা খেলাধুলার প্রতি ঠিক কতটা রুচিবান। এখানে জুন, ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।
১. রাঙ্গরাডো মে ডে স্টেডিয়াম (উত্তর কোরিয়া)
দর্শক ধারণক্ষমতা: ১ লক্ষ ১৪ হাজার।
উত্তর কোরিয়ার পিয়ংইয়ং শহরে এটি অবস্থিত। ১৯৮৯ সালে এটি নির্মিত হয়। প্রাতিষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয় এর ধারণক্ষমতা ১ লক্ষ ৫০ হাজার। পরবর্তী সময়ে স্টেডিয়ামে কিছু সংস্কার করা হয়, ফলে এর আসন সংখ্যা কমে আসে। আসন সংখ্যা কমে আসলেও এর ধারণক্ষমতা দেড় লক্ষ বলেই প্রচার করতে থাকে কর্তৃপক্ষ। এরপর ভিন্ন একটি দেশের একদল স্টেডিয়াম বিশেষজ্ঞ এর আসন সংখ্যা পরীক্ষা করে দেখেন। তাদের বিশেষ পর্যবেক্ষণে বেরিয়ে আসে এর আসন সংখ্যা আসলে দেড় লক্ষের চেয়ে বেশ কম, ১ লক্ষ ১৪ হাজার। এই সংখ্যাটিই এখন সার্বজনীনভাবে গৃহীত। যদিও ডেইলি মিরর সহ অন্যান্য ওয়েবসাইটে এই সংখ্যাটা এখনও দেড় লক্ষই দেখাচ্ছে। তবে ধারণক্ষমতা কমে যাবার পরেও এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। অন্য কোনো স্টেডিয়াম এর চেয়ে বেশি দর্শক ধারণ করতে পারে না। এটি এতোই বড় যে এর ভেতরে দুটি কার্ডিফ মিলেনিয়াম স্টেডিয়াম বসিয়ে দেয়া যাবে।
রাঙ্গরাডো মে ডে’তে মূলত ফুটবল খেলা হয়। এর পাশাপাশি বিভিন্ন বড় বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্টও এখানে অনুষ্ঠিত হয়।
২. মিশিগান স্টেডিয়াম (যুক্তরাষ্ট্র)
দর্শক ধারণক্ষমতা: ১ লক্ষ ৭ হাজার ৬০১।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্টেডিয়াম। কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্টেডিয়ামের মাঝে এটি সবার সেরা। ডাকনাম ‘দ্য বিগ হাউজ’। ১৯২৭ সালে এটি প্রস্তুত হয়। মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলাই এখানে অনুষ্ঠিত হয়। তবে মাঝে মাঝে বাইরের খেলাও অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। যেমন ২০১৪ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদের খেলার ভেন্যু ছিল এই মাঠ। ঐ খেলায় পুরো স্টেডিয়াম দর্শকে দর্শকারণ্য হয়ে গিয়েছিল। উপস্থিত দর্শকের পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ৯ হাজার ৩১৮ জন।
৩. বিভার স্টেডিয়াম (যুক্তরাষ্ট্র)
দর্শক ধারণক্ষমতা: ১ লক্ষ ৬ হাজার ৫৭২।
পেনসিলভানিয়া স্টেট কলেজে এটি অবস্থিত। ২০০১ সালে সংস্কার করার আগে এর দর্শক ধারণক্ষমতা ছিল ১২ হাজারের সামান্য বেশি। সংস্কারের পরে বর্ধিত আকারে এর ধারণক্ষমতা দাঁড়ায় এক লক্ষ ৬ হাজারের উপরে। এটি হয়ে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্টেডিয়াম। সংস্কারের পর এতে রেস্ট রুম, উন্নত ওয়াশরুম, নতুন স্কোরবোর্ড, স্ক্রিনে স্বল্প সময়ে রিপ্লে দেখানোর ক্ষমতা, ৬০টি স্কাইবক্স ইত্যাদি যুক্ত হয়। ২০০২ সালে এখানে সবচেয়ে বেশি দর্শক সমাগম হয়েছিল। ১৪ই সেপ্টেম্বরের একটি খেলায় সেখান ১ লক্ষ ১০ হাজার ৭৫৩ জন দর্শক ছিল।
৪. ওহায়ো স্টেডিয়াম (যুক্তরাষ্ট্র)
দর্শক ধারণক্ষমতা: ১ লক্ষ ৪ হাজার ৯৪৪।
ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে এটি অবস্থিত। তৈরি করা হয় ১৯২২ সালে। ঐ বছরের ৭ অক্টোবর এর মাঝে প্রথম খেলা অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে এতে ৬৬ হাজার পরিমাণ দর্শক স্থান দেবার ক্ষমতা ছিল। বছরে বছরে সংস্কার ও উন্নয়ন করতে করতে এর দর্শন ধারণ ক্ষমতা এসে দাঁড়ায় এক লক্ষের উপরে। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত একটি ম্যাচে এখানে ১ লক্ষ ১০ হাজারেরও বেশি দর্শক সমাগম হয়েছিল।
৫. কায়েল ফিল্ড (যুক্তরাষ্ট্র)
দর্শক ধারণক্ষমতা: ১ লক্ষ ২ হাজার ৭৩৩।
টেক্সাস এ এন্ড এম ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে এটি অবস্থিত। ১৯০৪ সালে এটি ছিল কলেজের ছেলেমেয়েদের খেলার জন্য সাধারণ একটি মাঠ। ১৯২৭ সালে এটি স্টেডিয়ামে পরিণত হয় এবং এরপর থেকে ধীরে ধীরে এর পরিসর বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে এর দর্শক ধারণক্ষমতা এসে দাঁড়ায় ১ লক্ষ ২ হাজারের উপরে। বিশ্বের সেরা কিছু স্টেডিয়ামের মাঝে এটি একটি। এর শুরুর দিকের ছবি আর বর্তমানের ছবি তুলনা করে দেখলে অবাক হতে হয়। কত পরিবর্তন হয়ে গেছে এই মাঠটিতে!
৬. নিল্যান্ড স্টেডিয়াম (যুক্তরাষ্ট্র)
দর্শক ধারণক্ষমতা: ১ লক্ষ ২ হাজার ৪৫৫।
যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি রাজ্যে অবস্থিত। ১৯২১ সালে প্রথম এর নির্মাণ শুরু করা হয়। এটি মূলত ‘টেনেসি ভলান্টিয়ার্স ফুটবল টিম’-এর মাঠ। তবে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টও এখানে অনুষ্ঠিত হয়। বিখ্যাত ফুটবল কোচ রবার্ট নিল্যান্ড-এর নামানুসারে এই স্টেডিয়ামের নাম রাখা হয়। ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে ২০১০ সালে এর দর্শক ধারণক্ষমতা এসে দাঁড়ায় ১ লক্ষ ২ হাজারের উপরে। ২০০৪ সালের একটি ইভেন্টে এখানে ১ লক্ষ ৯ হাজার দর্শকের সমাগম হয়েছিল।
৭. টাইগার স্টেডিয়াম (যুক্তরাষ্ট্র)
দর্শক ধারণক্ষমতা: ১ লক্ষ ২ হাজার ৩২১।
ডেথ ভ্যালি নামে এটি সমধিক পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটডোর স্টেডিয়াম এটি। ১৯২৪ সালে মাত্র ১২ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতা নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও আজ বেসবল খেলার স্টেডিয়ামের মাঝে এটিই সবচেয়ে জনপ্রিয়। বলা হয়ে থাকে যে এখানে বসে খেলা দেখলে তা অন্যান্য স্টেডিয়ামের চেয়ে অনেক বেশি উপভোগ্য হতে বাধ্য!
৮. ব্রায়ান্ট-ড্যানি স্টেডিয়াম (যুক্তরাষ্ট্র)
দর্শক ধারণক্ষমতা: ১ লক্ষ ১ হাজার ৮২১।
ইউনিভার্সিটি অব আলাবামার ফুটবল টিমের স্টেডিয়াম এটি। ১৯২৯ সালে এটি তৈরি করা হয় এবং তখন এর নাম ছিল ড্যানি স্টেডিয়াম। ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ড্যানির নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৫ সালে এই নামের পাশে ‘ব্রায়ান্ট’ নামটিকে যুক্ত করা হয়। দীর্ঘকালীন কোচ পল বিয়ার ব্রায়ান্টকে সম্মান দেখিয়েই এই স্টেডিয়ামের পুনঃনামকরণ করা হয়। শুরুর দিকে এখানে ১৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা ছিল। সংস্কার ও উন্নয়নের ফলে এক লক্ষ এক হাজারেরও বেশি দর্শক সেখানে খেলা উপভোগ করতে পারে।
৯. ড্যারেক কে রয়াল-টেক্সাস মেমোরিয়াল স্টেডিয়াম (যুক্তরাষ্ট্র)
দর্শক ধারণক্ষমতা: ১ লক্ষ ১১৯।
ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের ফুটবল টিমের হোম স্টেডিয়াম। ১৯২৪ সাল থেকে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শুরুর দিকে এর দর্শক ধারণক্ষমতা ছিল মাত্র ২৭ হাজার। পরবর্তী সময়ে কয়েক ধাপে এটি বেড়ে দাঁড়ায় এক লক্ষেরও উপরে। ভবিষ্যতে দক্ষিণ দিক সহ আরও কয়েকটি অবস্থানে এর ধারণক্ষমতা বাড়ানো হবে।
১০. মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (অস্ট্রেলিয়া)
দর্শক ধারণক্ষমতা: ১ লক্ষ।
১৯৩৮ সালের নভেম্বরে এটি স্থাপিত হয়। এটি অনেকের কাছে ‘দ্য জি’ নামেও পরিচিত। ১৯৫৬ সালের সামার অলিম্পিকের প্রধান স্টেডিয়াম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল এটি। ২০০৬ সালের কমনওয়েলথ গেমস সহ দুটি বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয় এখানে। অস্ট্রেলিয়াতে এটিই সবচেয়ে বৃহৎ স্টেডিয়াম। পাশাপাশি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মাঝেও সবচেয়ে বড় এটি। উপরে বৃহৎ যতগুলো স্টেডিয়ামের উল্লেখ আছে তাদের কোনোটিই ক্রিকেট স্টেডিয়াম নয়। এটিই একমাত্র ক্রিকেট স্টেডিয়াম যা বিশ্বের সেরা ১০টি স্টেডিয়ামের মাঝে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে।
এর ধারণক্ষমতা সম্পর্কে কোনো কোনো সূত্র বলছে ১ লক্ষ ২৪ জন আর কোনো কোনো সূত্র বলছে ১ লক্ষ ১৮ জন। তবে কোনোটিই ১ লক্ষের নীচে নয়। এই স্টেডিয়ামের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ১ লক্ষ উল্লেখ করা আছে। তাই অফিসিয়াল তথ্যকেই এখানে গ্রহণ করা হলো।
সংক্ষেপে আরও কিছু বড় স্টেডিয়াম
১১. ক্যাম্প ন্যু (বার্সেলোনা, স্পেন); ধারণক্ষমতা- ৯৯ হাজার ৩৫৪
১২. সকার সিটি (জোহানেসবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকা); ধারণক্ষমতা- ৯৪ হাজার ৭৩৬
১৩. লস এঞ্জেলেস মেমোরিয়াল কলিসিয়াম (যুক্তরাষ্ট্র); ধারণক্ষমতা- ৯৩ হাজার ৬০৭
১৪. স্ট্যানফোর্ড স্টেডিয়াম (যুক্তরাষ্ট্র); ধারণক্ষমতা- ৯২ হাজার ৭৪৬
১৫. রোজ বল (ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র); ধারণক্ষমতা- ৯২ হাজার ৫৪২
১৬. কটন বল (টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র); ধারণক্ষমতা- ৯২ হাজার ১০০
১৭. ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম (লন্ডন যুক্তরাজ্য); ধারণক্ষমতা- ৯০ হাজার
১৮. বেন হিল গ্রিফিন স্টেডিয়াম (ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র); ধারণক্ষমতা- ৮৮ হাজার ৫৪৮
১৯. গেলোরা বুং কারনো স্টেডিয়াম (জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া); ধারণক্ষমতা- ৮৮ হাজার ৩০৬
২০. জর্ডান-হেয়ার স্টেডিয়াম (আলাবামা, যুক্তরাষ্ট্র); ধারণক্ষমতা- ৮৭ হাজার ৪৫১
এদের সবগুলোকে নিয়ে একটা চার্ট তৈরি করলে অনেকটা এরকম দাঁড়াবে। চার্টটি ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসের সৌজন্যে প্রাপ্ত।