![](https://archive.roar.media/wp-content/uploads/2017/09/Feature-Image-New-copy-5.jpg)
ক্রিকেট এক অনিশ্চয়তার খেলা। ক্রিকেটের ২২ গজের মাঠে আজ যে রাজা, কাল সে ফকির হবে না- এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। একদিন যে ক্রিকেটারের খেলা দেখার জন্য দর্শকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতো, যার ব্যাট থেকে আসা একটি চার বা ছক্কা অথবা যার বল থেকে আসা একটি ইয়র্ককার উইকেট ছত্রখান দৃশ্য দেখে গ্যালারি থেকে দর্শকরা তীব্র উল্লাসে ফেটে পড়তো, সেই ক্রিকেটারই কোনো একদিন দর্শকের দুয়োধ্বনি শুনবেন না, সে কথা নিশ্চিত করে কোনো ক্রিকেটারই বলতে পারবেন না। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন অনেক ক্রিকেটারই আছেন, যারা নিজেদের সময়ে একাই বোলিং বা ব্যাটিং হাতে বিপক্ষ দলকে নিমেষেই হারিয়ে দিতেন। এসব তারকা ক্রিকেটারদের নিয়ে তাই দর্শকদের উচ্ছ্বাসও কম ছিল না। তাই অনেক সময় দেখা গেছে কোনো তারকা ক্রিকেটার অবসর নিয়ে নিয়েছেন বটে, কিন্তু দলের দুঃসময়ে ভক্তদের আকুল আবেদনে দেশের হয়ে খেলার জন্য পুনরায় অবসর ভেঙে ফিরে এসেছেন। তাদের কেউ কেউ সফল হয়েছেন, আবার কারো কপালে জুটেছে ব্যর্থতার কালিমা। আজ তেমনি কিছু তারকা ক্রিকেটারের গল্প শোনাবো, যারা অবসর থেকে ফিরে এসে ২২ গজের মাঠে সফল হতে পারেননি।
জর্জ হেডলি
ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দলের একজন সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন জর্জ হেডলি। ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তাকে ধরা হতো প্রতিপক্ষের ত্রাস হিসেবে। ক্যারিয়ারে খেলেছেন মাত্র ২২ টেস্ট, তাতে ৬০.৮৩ গড়ে রান করেছেন ২,১৯০। ১৯২৯-৩০ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ টেস্টের সিরিজে ৩টি সেঞ্চুরি এবং ১টি ডাবল সেঞ্চুরিসহ সব মিলিয়ে মোট ৭০৩ রান করেন। আর তখন থেকেই তার সতীর্থরা তাকে ডাকতে শুরু করেন ‘ব্ল্যাক ব্রাডম্যান’ নামে। অবসর নেয়ার ৬ বছর পর ১৯৫৪ সালে ৪৫ বছর বয়সে আবার জাতীয় দলের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন এই ক্যারিবীয়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রত্যাবর্তনের সেই টেস্টে ইংল্যান্ডের বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিন বোলার টনি লকের দুরন্ত ফ্লাইটের কাছে তাকে নতি স্বীকার করতে হয়। টনির বলে বোল্ড হওয়ার আগে করেছেন মাত্র ১৬ রান। সেটিই ছিল হেডলির শেষ টেস্ট।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/09/hedly-701x494.jpg)
জর্জ হেডলির অবসর থেকে ফেরা টেস্ট ম্যাচে ইংল্যান্ডের বোলার টনি লকের স্পিনের কাছে হার স্বীকার করতে হয় মাত্র ১৬ রানে; Source: sportskeeda.com
মার্টিন ক্রো
নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে ‘মার্টিন ক্রো’ এক অবিস্মরণীয় নাম। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের সেরা দশ ব্যাটসম্যানের মধ্যে তার নাম চলে আসবে সর্বাগ্রে, সে কথা বলা যায় নিঃসন্দেহে। ১৯৯৪ সালে ক্রিকেট থেকে বিদায়ের আগে ৭৭ টেস্টে করেছেন ৫,৪৪৪ রান, যার মধ্যে সেঞ্চুরি ছিল ১৭টি। আর ১৪৩ টি ওয়ানডে খেলে ৪টি শতকসহ করেছেন ৪,৭০৪ রান। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন এই ক্রিকেটার। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ২০১১ সালে ঘোষণা দেন, তিনি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে খেলবেন। তখন তার বয়স ৪৯ বছর। কিন্তু খুব একটা সুখকর হয়নি তার এই প্রত্যাবর্তন। ইনিংসে মাত্র তিন বল পর্যন্ত টিকেছিলেন তিনি।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/09/crow-701x444.jpg)
নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মার্টিন ক্রোর প্রত্যাগমন ম্যাচ আশাহত করেছে তার সমর্থকদের; Source: sportskeeda.com
সনাৎ জয়াসুরিয়া
একসময় ২২ গজের পিচে বিপক্ষের বোলারদের ওপর তান্ডব চালানো ব্যাটসম্যান সনাৎ জয়াসুরিয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০ হাজারেরও বেশি রান এবং ৪০০ উইকেটের অধিকারী। তার এই ক্রিকেট ক্যারিয়ারে হঠাৎই ঘোষণা দেন, তিনি আবার ক্রিকেট মাঠে ফিরে আসবেন। তখন তার বয়স ৪১ বছর এবং তিনি তখন তার দেশের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার ক্রীড়ামন্ত্রীর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে জয়াসুরিয়াকে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একদিনের সীমিত ওভারের প্রথম ম্যাচে খেলার জন্য নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু সে ম্যাচে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। ব্রেসনানের বলে মাত্র ২ রান করে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে ক্রিকেটকে চিরতরে বিদায় জানান একদা বোলারদের ত্রাস সনাৎ জয়াসুরিয়া।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/09/sanath-701x444.jpg)
অবসর থেকে ফিরে এসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একদিনের সীমিত ওভারের ম্যাচে ব্যর্থ হয়ে ক্রিকেটকে পুনরায় বিদায় জানান সনাৎ জয়াসুরিয়া; Source: sportskeeda.com
ফ্রেড ট্রুম্যান
ইংল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা ফাস্ট বোলার হিসেবে যার নাম প্রথম দিকে আসবে, তিনি ফ্রেড ট্রুম্যান। টেস্টে প্রথম বোলার হিসেবে ৩০০ উইকেটের গন্ডি পার হন এই বোলার। ৬৭ টেস্ট খেলে নেন ৩০৭টি উইকেট, যা তাকে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা পেসার হিসেবে পরিণত করে। ১৯৬৮ সালে ট্রুম্যান শেষ করেন তার বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ার। কিন্তু ১৯৭২ সালে ৪১ বছর বয়সে আবার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ফিরে আসেন তিনি। কিন্তু খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি তার সে যাত্রা। মাত্র ৭টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে উইকেট নেন ৬টি, কিন্তু তার জন্য ব্যাটসম্যানদের প্রচুর মারও খেতে হয় তাকে।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/09/fred-701x494.jpg)
টেস্টে প্রথম বোলার হিসেবে ৩০০ উইকেট নেয়া ফ্রেড ট্রুম্যানের প্রত্যাবর্তন খুব সুখকর হয়নি; Source: sportskeeda.com
ওয়ালি হ্যামন্ড
ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে একজন সফল অলরাউন্ডার হিসেবে পরিচিত ওয়ালি হ্যামন্ড। ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন হ্যামন্ডের টেস্ট অভিষেক ঘটেছিল ১৯২৭ সালে। জোহানসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে সেই টেস্টে ব্যাট হাতে করেছিলেন ৫১ রান। কিন্তু বল হাতে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। তার ডানহাতি মিডিয়াম পেসে দক্ষিণ আফ্রিকার ৫ জন ব্যাটসম্যানকে ধরাশায়ী করেন মাত্র ৩৬ রানে। প্রথম শ্রেণিতে ব্রিটিশ হ্যামন্ডের এমনই কিছু রেকর্ড রয়েছে, যা বোধ করি কোনোদিনই কারো পক্ষে ভাঙা সম্ভব না। জীবনে ৮৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৫৮.৪৫ গড়ে ৭,২৪৯ রান করার পাশাপাশি ৮৩টি উইকেট লাভ করেছেন। তারপর আবার অবসর নেয়ার ৫ বছর পর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ফিরে আসেন। ১৯৫১ সালে গ্লুচেস্টারশায়ারের হয়ে খেলা প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ফিরে এসে করেন মাত্র ৭ রান।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/09/harmond-701x494.jpg)
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ইংলিশ ক্রিকেটার ওয়ালি হ্যামন্ডের অবসর থেকে ফেরার পর তার পারফরমেন্স ভক্তদের হতাশ করে; Source: sportskeeda.com
এন্ডি কামিন্স
১৯৯০ সালে বার্বাডোজের এই খেলোয়াড় ওয়েস্ট ইন্ডিজের জাতীয় দলের হয়ে একদিনের সীমিত ওভারের ম্যাচে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার হিসেবে দলে জায়গা পান। এর আগে ৫টি টেস্ট খেললেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। ৭৬টি ওয়ানডে খেলে ৯১টি উইকেট শিকার করা কামিন্স ১৯৯৫-৯৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সুযোগ পেলেও খুব একটা সুবিধা না করায় দল থেকে বাদ পড়ে যান। এরপর তিনি কানাডায় স্থায়ী নিবাস গড়েন। ২০০৭ সালে ৪০ বছর বয়সে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে কানাডার জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পান। কিন্তু কানাডার হয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছুই করে দেখাতে পারেননি তিনি।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/09/andi-701x415.jpg)
এন্ডি কামিন্স, ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন এই বোলার কানাডার হয়ে ব্যর্থ প্রত্যাগমন; Source: Skysports.com
মাইকেল ক্লার্ক
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/09/clerk-701x444.jpg)
অবসর থেকে ফিরে এসে টি-২০ তে মাত্র ৬ রান করেন প্রাক্তন অজি অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক; Source: sportskeeda.com
২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দেয়া মাইকেল ক্লার্ক ৫ম বারের মতো দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে একদিনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। ঐ বছরের সেপ্টেম্বরেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বাজে হার এবং নিজের ব্যর্থ পারফরম্যান্সের পর টেস্ট ক্রিকেটকেও বিদায় বলে দেন এই ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়ার এই দুর্দান্ত ডানহাতি ব্যাটসম্যান ১০৮টি টেস্ট খেলে ৫০.৭৯ গড়ে প্রায় সাড়ে আট হাজারের মতো রান করেন, আর ২৪৫টি একদিনের ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করে ৪৪.৫৮ গড়ে প্রায় আট হাজারের মতো রান করেন। টি টুয়েন্টি ক্রিকেটেও তিনি বেশ সফল। কিন্তু প্রায় এক যুগ ধরে যে ক্রিকেটকে ধ্যান-জ্ঞান মেনে এসেছেন, চাইলেও সেটা থেকে দূরে থাকা তো সম্ভব না। আর তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও মাইকেল ক্লার্ক অবসর ভেঙে ফিরে আসেন টি-২০ ক্রিকেটের মাধ্যমে, খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ান টি-২০ ক্রিকেট লীগ বিগ ব্যাশে। সেই ফিরে আসা অবশ্য খুব একটা সুখকর হয়নি। ব্যাট করতে নেমে মাত্র ছ’রান করে আউট হন প্রাক্তন এই অজি অধিনায়ক।