Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

টেস্ট ক্রিকেট থেকে কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের একসাথে বিদায়

২০১৯ সাল, পোর্ট এলিজাবেথ স্টেডিয়াম। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে দ্বিতীয় টেস্টে মাঠে নামলো দক্ষিণ আফ্রিকা। ঠিক আগের টেস্টেই কুশল পেরেরার অনবদ্য এক অপরাজিত ১৫৩ রানের ইনিংসের সামনে কেশাগ্র ব্যবধানে পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে তাদেরকে। এই ম্যাচে কোনোক্রমেই হারলে চলবে না, এমন চিন্তা নিয়েই মাঠে নামার কথা ছিল তাদের। অথচ সেদিন কি আদৌ ঘুণাক্ষরেও কেউ ভাবতে পেরেছিলেন, দুই মহীরূহের ক্যারিয়ারে এপিটাফ লেখা হয়ে যাবে সেদিনই? 

হাশিম আমলা এবং ডেল স্টেইন একই দিনে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানান; Image Credit: REUTERS

ডেল স্টেইন এবং হাশিম আমলার টেস্ট ক্যারিয়ারটা শুরু হয়েছিল পিঠেপিঠি সময়ে, ২০০৪ সালেই। আমলার অভিষেক ভারতের বিপক্ষে কলকাতায়, টেস্টটা শুরু হয়েছিল নভেম্বরের ২৮ তারিখে। আর ডেল স্টেইনের অভিষেক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পোর্ট এলিজাবেথে, সেই টেস্ট শুরু হয়েছিল ডিসেম্বরের ১৭ তারিখে। কী আশ্চর্য এক কাকতাল, ক্যারিয়ারের শেষটাও স্টেইন লিখলেন সেই পোর্ট এলিজাবেথ স্টেডিয়ামেই! 

দুই কিংবদন্তির একসাথে বিদায় নেওয়ার শেষ ঘটনা সেবারই। ২০১৯ সালেরই আগস্টে মাত্র চারদিনের মাথায়ই দুজন ঘোষণা দিয়ে দেন, আর সাদা পোশাক গায়ে তুলছেন না তারা। চলুন আজ এক নজর দেখে নেওয়া যাক একাধিক কিংবদন্তির একই ম্যাচে অবসর নেওয়ার ঘটনাগুলো।

গ্যারি সোবার্স এবং রোহান কানহাই – বনাম ইংল্যান্ড, পোর্ট অব স্পেন, ১৯৭৪

সোবার্স এবং কানহাই ১৯৭৪ সালে যখন ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর ঘোষণা দেন তখন তাদের নামের পাশে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বকালের সেরার তকমা লেগে ছিল। তারা দুজন তখন পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বকালের সেরা রান সংগ্রাহক ছিলেন। গ্যারি সোবার্স ৯৩ ম্যাচে ৫৭.৭৮ ব্যাটিং গড়ে ৮,০৩২ রান করেছিলেন। যা শুধুমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ নয়, বিশ্ব ক্রিকেটেও তখন তার চেয়ে বেশি টেস্ট রান কোনো ব্যাটসম্যানের ছিল না। তার খেলা অপরাজিত ৩৬৫ রানের ইনিংসটিও সেরা ব্যক্তিগত ইনিংস হিসাবে টিকে ছিল বহু বছর। ব্যাটসম্যান সোবার্সের মতো বোলার সোবার্সও ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরাদের একজন। তিনি অবসর নেওয়ার সময় টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের মধ্যে তারচেয়ে বেশি উইকেট ছিল শুধুমাত্র ল্যান্স গিবসের।      

গ্যারি সোবার্স ; Image Credit: Adrian Murrell

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট রানের দিক দিয়ে সোবার্সের পরেই ছিলেন রোহান কানহাই। তিনি ৭৯ ম্যাচে ৬,২২৭ রান করেছিলেন। সোবার্স এবং কানহাইয়ের জুটিটাও বেশ জমতো। এই দুই কিংবদন্তি নিজেদের মধ্যে ছ’বার শতরানের জুটি গড়েছিলেন। সেসময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনো জুটি এর চেয়ে বেশি শতরানের জুটি গড়তে পারেনি। তারা দুজন বিদায়টা একসময় জানালেও তাদের অভিষেক ঘটেছিল তিন বছর আগে-পরে। সোবার্সের অভিষেক ঘটেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৫৪ সালের ৩০শে মার্চ। শেষ টেস্টও খেলেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০শে মার্চ। মাঝখানে কেটে গেছে ২০ বছর। কানহাইয়ের অভিষেক ঘটেছিল ১৯৫৭ সালে। তার অভিষেকের সাথেও ৩০ তারিখ জুড়ে আছে। তারিখ এক হলেও মাস ছিল ভিন্ন। তার অভিষেক ঘটে ৩০ মে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

সোবার্স ও কানহাইয়ের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের শেষটা সুখকর ছিল না। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে থেকে শেষ ম্যাচ খেলতে নেমে ২৬ রানে পরাজিত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সোবার্স দুই ইনিংসে যথাক্রমে ০ ও ২০ রান করেন। কানহাই খেলেন ২ ও ৭ রানের ইনিংস। টনি গ্রেগ ম্যাচে ১৩ উইকেট শিকার করে শেষবেলায় সোবার্স ও কানহাইকে জয় নিয়ে ফিরে যেতে দেননি।

অধিনায়ক রোহান কানহাই এবং দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারের বিদায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য বড় ধাক্কা ছিল। তবে সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে বেশি সময় লাগেনি তাদের। ভারতের বিপক্ষে পরের সিরিজে অভিষেক ঘটেছিল ভিভ রিচার্ডস এবং গর্ডন গ্রীনিজের। ক্যারিয়ার শেষে তারা দুজনই ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

গ্রেগ চ্যাপেল, ডেনিস লিলি এবং রড মার্শ বনাম পাকিস্তান, সিডনি, ১৯৮৪

অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত তিন ক্রিকেটার গ্রেগ চ্যাপেল, ডেনিস লিলি এবং রড মার্শ ১৯৭০ ও ৮০’র দশকে ক্রিকেট বিশ্বে রাজত্ব করেছেন। তাদের সাফল্যমণ্ডিত ক্যারিয়ারের বদৌলতে অস্ট্রেলিয়াও ক্রিকেটে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিল। তবে তাদের একসাথে বিদায় জানানোর ফলে বড় ধাক্কা খায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। তাদের বিদায়ের পর টানা চার সিরিজে পরাজিত হয় অস্ট্রেলিয়া এবং পরবর্তী আট সিরিজের একটিতেও জয় পায়নি, যার মধ্যে দুটি অ্যাশেজও ছিল, যেখানে তারা থাকাকালে অস্ট্রেলিয়া শেষ অ্যাশেজ জয়ের পাশাপাশি শেষ দশ সিরিজের মধ্যে মাত্র দুটিতে পরাজিত হয়।

রড মার্শ, গ্রেগ চ্যাপেল এবং ডেনিস লিলি ; Image Credit: Getty Images

তাদের বিদায়ের ফলে অস্ট্রেলিয়া দলে বড় শূন্যস্থান তৈরি হয়েছিল। কারণ তারা তিনজনই ছিলেন ভিন্ন তিন ফরম্যাটে বিশ্বসেরা। গ্রেগ চ্যাপেল ৮৭ ম্যাচে ৫৩.৮৬ ব্যাটিং গড়ে ৭,১১০ রান করেছিলেন, যা অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। অধিনায়ক হিসেবেও অস্ট্রেলিয়ার সেরা অধিনায়ক ছিলেন গ্রেগ। সফলতার দিক দিয়ে তিনি শুধুমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েডের পেছনে ছিলেন। পেসার ডেনিস লিলি ৭০ টেস্টে ৩৫৫ উইকেট শিকার করেছিলেন, যা তৎকালীন বিশ্ব রেকর্ড ছিল। উইকেটরক্ষক মার্শও বিশ্ব রেকর্ডের অধিকারী ছিলেন। তার ৩৫৫টি ডিসমিসাল সে সময়কার সর্বোচ্চ ডিসমিসালের বিশ্ব রেকর্ড ছিল।

সিডনিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের শেষ টেস্ট ম্যাচও স্মরণীয় করে রেখেছিলেন এই তিন কিংবদন্তি। নিজের অভিষেক টেস্টে শতক হাঁকানো গ্রেগ চ্যাপেল নিজের শেষ টেস্ট ইনিংসেও শতক হাঁকিয়ে ১৮২ রানের ইনিংস খেলেন। ৪০০ বলের এই ম্যারাথন ইনিংসের মধ্য দিয়ে তিনি ডন ব্রাডম্যানের ৬,৯৯৬ রান টপকে অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা রান সংগ্রাহক হিসাবে ক্যারিয়ার শেষ করেন। ডেনিস লিলি দুই ইনিংসে চারটি করে মোট আট উইকেট শিকার করে টেস্ট ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে ৩৫০ উইকেটের মাইলফলক অতিক্রম করেন এবং রড মার্শ মাঠে নামার সাথে সাথেই বিশ্বরেকর্ড গড়েন। তিনি অ্যালান নটের ৯৫ ম্যাচকে টপকে উইকেটরক্ষক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ৯৬ ম্যাচ খেলেন। সেই সাথে ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচটি ক্যাচসহ ম্যাচে মোট ছয়টি ক্যাচ লুফে নিয়ে প্রথম উইকেটরক্ষক হিসেবে ৩৫০ এর অধিক ডিসমিসালের রেকর্ড গড়েন। 

ডেনিস লিলি; Image Credit: Adrian Murrell

গ্রেগ চ্যাপেল, ডেনিস লিলি এবং রড মার্শের টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল প্রায় একইসময়ে। গ্রেগ ও লিলির ১৯৭০ সালে এবং মার্শের ‘৭১ সালে। তারা একযুগেরও বেশি দলে দাপটের সাথে খেলে যান। নিজেদের শেষ টেস্টেও পাকিস্তানকে দশ উইকেটে পরাজিত করতে বড় ভূমিকা পালন করেন তারা। 

ভিভ রিচার্ডস, মালকম মার্শাল এবং জেফ ডুজন বনাম ইংল্যান্ড, দ্য ওভাল, ১৯৯১ সাল

গত শতকের আশির দশকে অপরাজেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের তিন বিভাগে সেরা তিন পারফর্মার ছিলেন রিচার্ডস, মার্শাল এবং ডুজন।১৯৭৪ সালে অভিষেক ঘটা রিচার্ডস ১২১ টেস্টে ৫০.২৩ ব্যাটিং গড়ে ৮,৫৪০ রান করেন। মার্শাল ৮১ টেস্টে ২০.৯৪ বোলিং গড়ে ৩৭৬ উইকেট শিকার করেন। ডুজন ব্যাট হাতে ৩,৩২২ রান সংগ্রহ করেছেন। উইকেটরক্ষক হিসেবে তার ডিসমিসাল সংখ্যা ২৭২। তিনজনই রেকর্ডের পাতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সবার উপরে ছিলেন। বিশ্বরেকর্ডের তালিকায় রিচার্ডসের চেয়ে রান বেশি ছিল শুধুমাত্র সুনীল গাভাস্কার এবং অ্যালান বোর্ডারের। উইকেটের দিক দিয়ে মার্শালের চেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেছেন স্যার রিচার্ড হ্যাডলি এবং ইয়ান বোথাম। উইকেটরক্ষকদের মধ্যে ডুজনের চেয়ে বেশি ডিসমিসাল ছিল শুধুমাত্র রড মার্শের।

জেফ ডুজন এবং মালকম মার্শাল ; Image Credit: Getty Images

অস্ট্রেলিয়ার তিন তারকার মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের তিন তারকা নিজেদের শেষ টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি। ভিভ রিচার্ডস দুই ইনিংসে যথাক্রমে ২ এবং ৬০ রান করেন। ডুজন ০ এবং ৫ রান। মার্শালের ঝুলিতে জমা পড়েছিল মাত্র দুই উইকেট। তাদের এমন অবস্থায় ওয়েস্ট ইন্ডিজও সুবিধা করতে পারেনি। সাত বছর পর টেস্টে ফলো-অনে পড়ে পাঁচ উইকেটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। এতে করে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ২-২ এ অমীমাংসিত থেকে শেষ হয়।

ভিভ রিচার্ডস ; Image Credit: Getty Images

সমসাময়িক তিন কিংবদন্তির বিদায়ের পরেও খুব একটা সমস্যায় পড়েনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের জায়গা তরুণ ক্রিকেটাররা ভালোভাবে পূরণ করে। এতে করে ১৯৭৮ সাল থেকে শুরু হওয়া তাদের টেস্ট সিরিজে অপরাজিত থাকার রেকর্ড বলবৎ থাকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। তারপর থেকে অবশ্য ক্রমান্বয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট উল্টো পথে হাঁটা শুরু করে।

শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং জাস্টিন লাঙ্গার বনাম ইংল্যান্ড, সিডনি, ২০০৭

১৪৫ টেস্টে ২৫.৪১ বোলিং গড়ে ৭০৮ উইকেট। ১২৪ টেস্টে ২১.৬৪ বোলিং গড়ে ৫৬৩ উইকেট। ১০৫ টেস্টে ৪৫.২৭ ব্যাটিং গড়ে ৭,৬৯৬ রান। যথাক্রমে শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং জাস্টিন লাঙ্গার। শেন ওয়ার্ন টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক, ম্যাকগ্রা পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেছেন এবং লাঙ্গার অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সফল ওপেনার। তারা তিনজনই একসাথে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন। ক্রিকেটের ইতিহাসে এটিই প্রথম ঘটনা যেখানে শতাধিক ম্যাচ খেলা তিন ক্রিকেটার একইসাথে বিদায় জানিয়েছেন। তাদের বিদায়ী আয়োজন ছিল জমকালো। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাশেজের শেষ টেস্টে দশ উইকেটের জয়। তাদের শেষ অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়া অ্যাশেজ জিতেছিল ৫-০ ব্যবধানে।

তিন কিংবদন্তি ; Image Credit: Hamish Blair

সিডনিতে গ্লেন ম্যাকগ্রা দুই ইনিংসে তিনটি করে মোট ছয় উইকেট। শেন ওয়ার্ন বল হাতে দুই উইকেট শিকার করলেও ব্যাট হাতে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন। তিনি মাত্র ৬৫ বলে ৭১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে ১০২ রানের লিড এনে দেন। জাস্টিন লাঙ্গার প্রথম ইনিংসে ২৬ রান করে ফিরে গেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ২০ রানের ইনিংস খেলে দলের দশ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন।

এই তিন কিংবদন্তি ক্রিকেটার ক্যারিয়ারও শুরু করেছিলেন প্রায় একইসময়ে। শেন ওয়ার্ন ১৯৯২ সালে এবং ম্যাকগ্রা ও লাঙ্গার ১৯৯৩ সালে। তারা একইসাথে দলের মূলস্তম্ভ হয়ে প্রায় ১৫ বছর আধিপত্য বিস্তার করে খেলে যান। তারা তিনজনই খেলেছেন এমন শেষ ১৬টি টেস্ট সিরিজের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া মাত্র একবার পরাজিত হয়। তাদের হারা একমাত্র ঐ সিরিজটি ছিল ২০০৫ সালের ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ। কিন্তু তাদের বিদায়ের পর আটটি সিরিজের মধ্যে তিনটিতে পরাজিত হয় অস্ট্রেলিয়া। 

ইউনিস খান এবং মিসবাহ উল হক বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ডোমিনিকা, ২০১৭

উপমহাদেশের অন্যতম পরাশক্তি পাকিস্তানের অবসর নেওয়া শেষ দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটার ইউনিস খান এবং মিসবাহ উল হক। তারা টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন একই সময়ে। ইউনিস খান ছিলেন টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান এবং মিসবাহ সবচেয়ে সফল অধিনায়ক। ইউনিস খান ১১৮টি টেস্টে ৫২.০৫ ব্যাটিং গড়ে ১০,০৯৯ রান সংগ্রহ করেছেন। পাকিস্তানের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি দশ হাজার রানের ক্লাবে যোগদান করেছেন।

দুজনের প্রায় একইসময়ে অভিষেক ঘটলেও মিসবাহ উল হক খেলেছেন ৭৫টি টেস্ট। ক্যারিয়ারের শুরুতে দলে নিয়মিত সুযোগ না পাওয়া এই ব্যাটসম্যান ক্যারিয়ার শেষ করেন পাকিস্তানের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক হিসেবে। ব্যাট হাতে ৪৬.৬২ গড়ে ৫,২২২ রান সংগ্রহ করা মিসবাহ দলকে ৫৬ ম্যাচে নেতৃত্ব ২৬ ম্যাচে জয় এনে দেন, যা পাকিস্তানের অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (১৪) ম্যাচ জেতানো ইমরানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। 

সতীর্থের কাঁধে ছড়ে ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছেন মিসবাহ এবং ইউনিস ; Image Credit: MARK RALSTON

মিসবাহ অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে দুজন একসাথে ক্যারিয়ারের শেষ এবং সেরা সময় কাটান। মিসবাহর নেতৃত্ব দেওয়া ৫৬ ম্যাচের মধ্যে ৫৩টিতেই দলে ছিলেন ইউনিস। এই দুজন যথাক্রমে ৪২ বছর এবং ৩৯ বছর বয়স পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেট খেলেছেন। তাদের বিদায়ের পর টেস্ট ক্রিকেটে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না পাকিস্তান। সাতটি টেস্ট সিরিজের মধ্যে মাত্র দুটিতে জয় পেয়েছে তারা। ম্যাচের হিসেবে ১৬ ম্যাচের মধ্যে ১০ পরাজয়ের বিপরীতে মাত্র চার জয় পেয়েছে দলটি।

রাহুল দ্রাবিড় এবং ভিভিএস লক্ষ্মণ বনাম অস্ট্রেলিয়া, অ্যাডেলেড, ২০১২

১৯৯৬ সালের ২০ জুন। লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল রাহুল দ্রাবিড়ের। এর পাঁচ মাস পরে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরের মাঠে অভিষেক ঘটে ভিভিএস লক্ষ্মণের। দুজনের ক্যারিয়ারের শুরুটা একই মৌসুমে। বিদায় জানিয়েছিলেন একই সময়ে। মাঝখানে ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নাম মোটা অক্ষরে লিখে গেছেন। শচীনের পর টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন তারা। রানের দিক দিয়ে দ্রাবিড় দ্বিতীয় স্থানে এবং লক্ষ্মণ চতুর্থ।

ভিভিএস লক্ষ্মণ এবং রাহুল দ্রাবিড় ; Image Credit: Hamish Blair

ভারতীয় ক্রিকেটের মোড় ঘোরাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন তারা। ২০০১ সালে কলকাতা টেস্টে অপরাজেয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাদের ৩৭৬ রানের জুটি ক্রিকেটে ভারতের নতুন অবস্থান তৈরি করে। তাদের এই জুটিতে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচে ফিরে এসে জয় তুলে নেয় ভারত। ভারতীয় ক্রিকেটে তারাই একমাত্র জুটি, যারা দুবার তিন শতাধিক রানের জুটি গড়েন।

দ্রাবিড় ও লক্ষ্মণের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের শেষটা অবশ্য সুখকর ছিল না। যে অস্ট্রেলিয়া বিপক্ষে জুটি গড়ে তারা এত নাম কুড়িয়েছেন, তাদের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট সিরিজ খেলেছিলেন তারা। চার ম্যাচে দ্রাবিড় ২৪.২৫ গড়ে ১৯৪ রান এবং লক্ষ্মণ ১৯.৩৭ গড়ে ১৫৫ রান করেন। ভারত সিরিজ হারে ৪-০ ব্যবধানে।

দলের হয়ে ৭৫-এর অধিক টেস্ট খেলা দুজন ক্রিকেটারের একসাথে বিদায় জানানোর আরও কিছু ঘটনা:

  • ইয়ান বোথাম এবং অ্যালান লাম্ব, বনাম পাকিস্তান, লর্ডস ১৯৯২
  • গ্রাহাম গুচ এবং মাইক গ্যাটিং, বনাম অস্ট্রেলিয়া, পার্থ, ১৯৯৫
  • শন পোলক এবং হার্শেল গিবস, বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ডারবান, ২০০৮
  • এবি ডি ভিলিয়ার্স এবং মরনে মরকেল, বনাম অস্ট্রেলিয়া, জোহানসবার্গ, ২০১৮
  • ডেল স্টেইন এবং হাশিম আমলা, বনাম শ্রীলঙ্কা, পোর্ট এলিজাবেথ, ২০১৯

This article is in Bangla language. It is about the some legends cricketer. who left test cricket together. For references, please check the hyperlinks inside the article.

Featured Image: Getty Images

Related Articles