বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পরিচয় এখন ক্রিকেট। সময়ের সাথে সারাদেশে ক্রিকেটের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় চোখ রাখলে এটুকু বলা অত্যুক্তি হবে না। সম্প্রতি এমনটাও বলা হয় ধর্ম, রাজনীতির বিভেদ ভুলে গোটা দেশকে এক মঞ্চে হাজির করতে পারে ক্রিকেট। খেলাধুলার আর কোনো ডিসিপ্লিনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিরাট সাফল্য নেই বলে বাঙালির গৌরব, আশা-ভরসার কেন্দ্রস্থল শুধুই ক্রিকেট।
ক্রিকেটকে ভালোবাসা, সমর্থন করার এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। কারণ, তাদের অকুন্ঠ সমর্থনই ২২ গজে টাইগারদের লড়াইয়ের বড় প্রেরণা।
সমর্থক হিসেবে সবাই সব ম্যাচেই বাংলাদেশের জয় চায়। খোদ বাংলাদেশ দলও তো প্রতি ম্যাচেই জয়ের জন্য মাঠে নামে। কখনো সফল হয়, কখনো ব্যর্থ হয়। যদিও দলের ব্যর্থতায় সমর্থকরা ব্যথিত হন, নির্দিষ্ট প্লেয়ারের ব্যর্থতায় তার উপর ক্ষুদ্ধ হন। অতীতে এসব রাগ, ক্ষোভ চায়ের টেবিল, আলোচনা-আড্ডায় সীমাবদ্ধ ছিল। গত অর্ধদশকে ইন্টারনেট তথা অন্তর্জাল দুনিয়ার ব্যাপ্তি বড়েছে হুহু করে। তাতেই এসব আলোচনা পেয়ে গেছে মুক্ত মাঠ। ঘরে বসেই সবাই নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দিতে পারছেন গোটা বিশ্বকে। বিশ্লেষণের বিচক্ষণ দৃষ্টিকোণ ফেলে, কয়েক লাইন লিখিয়ে নিজের ক্ষোভ উগরে দিতে পারছেন। বাছবিচার ছাড়াই হামলে পড়ছেন নির্দিষ্ট ক্রিকেটারের উপর, যেটাকে বলা হচ্ছে অতিপ্রতিক্রিয়াশীলতা।
সমস্যা হল, এই প্রতিক্রিয়াশীলতার পরিচয় দিতে গিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি করছেন। একটা ক্ষণিকের ভুলের জন্য ক্রিকেটারদের পরিবার-স্বজনকেও কথার তোড়ে আক্রান্ত করছেন। সমালোচনার ভাষায় থাকছে না কোনো লাগাম। যেকোনো ব্যর্থতার জন্যই ক্রিকেটারদের প্রতি তীব্র আক্রমণ করা হচ্ছে।
এই নেতিবাচক সমালোচনার মিছিল আবারও জেগে উঠেছে বাংলাদেশে, চলমান বিশ্বকাপ যার উৎস। অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপে গিয়েছিল বাংলাদেশ। মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে খেলার টার্গেটই বুকে ধারণ করেছে টাইগাররা। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শুরুটা হয়েছে উড়ন্ত। কিন্তু তারপর টানা দু’টি ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের অনভ্যস্ত, বিরুদ্ধ কন্ডিশনে এখনও নিজেদের সেরাটা দিতে পারেননি অনেক ক্রিকেটার। আর পারফরম্যান্সের হেতু ধরে বাংলাদেশ দলের কয়েকজন পরীক্ষিত ক্রিকেটার চরম সমালোচনার শিকার হচ্ছেন। সমালোচনার তীর বিদ্ধ করছে অধিনায়ক মাশরাফিকেও। অতীতে এসব বাজে সময়ে সতীর্থদের আগলে রাখতেন তিনি। এবার খোদ মাশরাফিই সমালোচকদের টার্গেট।
বিশ্বকাপে তিন ম্যাচে শুরুর তিন ম্যাচে একটি উইকেট নিয়েছেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’, পেস বোলার হিসেবে যা তার নামের সঙ্গে বেমানান। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞতম সদস্য তিনি। দু’টি ম্যাচ ভালো না করায় মাশরাফির সমালোচনায় উচ্চকিত কিছু সমর্থক। মুহূর্তেই তারা ভুলে যাচ্ছে দেশের প্রতি এই ক্রিকেটারের অবদান। কেউ কেউ আবার কয়েক কাঠি সরেস, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বিবাদে লিখে যাচ্ছেন, মাশরাফিকেও দল থেকে বাদ দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন! কান্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় এখানে স্পষ্ট।
শুধু বোলার হিসেবে পারফরম্যান্স মাশরাফিকে সরানোর দাবিতে জড়িয়ে আছে আরও কিছু বিষয়। যেমন, বাংলাদেশ পরপর দুই ম্যাচ হেরেছে। রুবেল হোসেনকে বসিয়ে রাখা হয়েছে টিম কম্বিনেশনের কারণে। এসবের তোপও এসে পড়ছে অধিনায়কের উপর। মাশরাফিকে আক্রমণের একটি পক্ষ অবশ্য তৈরি হয়েছে গত ডিসেম্বরের পর থেকে, যখন সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন এই ক্রিকেটার। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের টিকেট নিয়ে নড়াইল-২ আসন থেকে এমপি হয়েছেন তিনি। তারপর থেকে রাজনৈতিক বিরোধীদের কাছেও চক্ষুশূল হয়ে গেছেন মাশরাফি। তার প্রতি তাদের ভালো লাগা, শ্রদ্ধা উবে গেছে।
খারাপ খেললে সমালোচনা মাথা পেতে নিতে হয় ক্রিকেটারদের। কিন্তু গত কয়েক বছরে সমালোচনার মাত্রা লাগাম ছাড়িয়ে যাচ্ছে, যা ব্যক্তিগত আক্রমণের শামিল হয়ে পড়ছে অনেক সময়। প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ মাশরাফির এমন নগ্ন সমালোচনা প্রাপ্য কি না? তামিম ইকবাল, কোর্টনি ওয়ালশ, স্টিভ রোডসরা বলছেন, কোনোভাবেই এমন আক্রমণ প্রাপ্য নয় বাংলাদেশের অধিনায়কের, বরং আরও বেশি সম্মান তার প্রাপ্য।
প্রতি ম্যাচেই জিততে হবে, এমন নেশায় মত্ত সমর্থকরা তামিম-রোডসদের এসব কথা শুনতে পাবেন কি না, বলা কঠিন।
পারফরমার মাশরাফি
মাশরাফির ক্যারিয়ারটা চোটজর্জর, এটা সর্বজনবিদিত। ১৮ বছর ধরে হয়ে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। দুই পায়ে সাতটি অস্ত্রোপচার। তবে এসব ইনজুরির দোহাই দিয়ে দলে টিকে নেই তিনি। বল হাতে, অধিনায়ক হিসেবে পারফর্ম করছেন বলেই টিকে আছেন। চোটের সঙ্গে বসবাসের এই ক্যারিয়ারে ২০০১-২০১১ পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে ১১৮ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এই সময় দেশের হয়ে মিস করেছেন ৭৮ ম্যাচ। মাশরাফির পায়ে সর্বশেষ বড় অস্ত্রোপচার হয়েছিল ২০১১ সালে। তারপর থেকে এখন অব্দি দেশের হয়ে ৯৪টি ম্যাচ খেলেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস, মিস করেছেন ৩৩টি ম্যাচ। ফিটনেসের দিক থেকে বড়সড় উন্নতির প্রমাণ তার এই ধারাবাহিক অংশগ্রহণ।
এবার আসি, পেস বোলার মাশরাফির মাঝে। বয়স, চোট মিলে গতি কমেছে তার। তবে ধার কমেছে বলা কঠিন। ২০১২ সাল থেকে সাল থেকে চারটি বছরে দেশের দ্বিতীয় সেরা উইকেটশিকারী তিনি। যার মধ্যে ২০১৬ সালে ছিলেন সেরা।
২০১৪ সালে আবার ওয়ানডে দলে নেতৃত্বে ফেরার পর থেকে তার পারফরম্যান্সে চোখ রাখলে সমালোচকরা লজ্জাও পেতে পারেন। টানা ব্যর্থতায় ভঙ্গুর একটা দলের ভার মাশরাফির কাঁধে তুলে দিয়েছিল বিসিবি। ২০১৪ সালের শেষ দিকে, নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ দিয়ে তার নতুন যাত্রা। সেই থেকে ওয়ানডে দলের নেতৃত্বে এখনও আছেন তিনি। নেতৃত্বের পাশাপাশি বোলার মাশরাফিও সমানভাবে উজ্জল এই সময়ে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে ১৬ জুন, ২০১৯ অব্দি ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা বোলার মাশরাফি। ৭৩ ম্যাচে তিনি নিয়েছেন ৯২ উইকেট। দ্বিতীয় স্থানে মুস্তাফিজ, ৪৯ ম্যাচে ৮৭ উইকেট নিয়েছেন এই তরুণ। সাকিব ৬৫ ম্যাচে ৮১ উইকেট এবং রুবেল ৪৮ ম্যাচে ৫৮ উইকেট পেয়েছেন।
আসুন বোলিংয়ের বৈচিত্র্যের কথায়। বাংলাদেশ জাতীয় দলে একমাত্র পেসার মাশরাফি, যিনি সিম ব্যবহার করে বোলিংটা করতে পারেন। যা নতুন বল কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে পেসারদের জন্য বড় অস্ত্র। তারও আছে স্লোয়ার, কন্ডিশন ও পিচের উপর ভিত্তি করে বৈচিত্র্য আনেন বোলিংয়ে। সেখানে কাটার, স্লোয়ার বাউন্সারও করেন নিয়মিত। তার সবচেয়ে ভালো হলো লেন্থ, ঠিক জায়গায় বল ফেলে এই স্বল্প গতির বলেও ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখতে পারেন।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নতুন বলে বাংলাদেশের বড় ভরসা তিনি। রুবেল, মুস্তাফিজ, সাইফউদ্দিনদের জন্য অনেক সময় নতুন বলে বোলিং করেন না। তরুণদের জায়গা ছেড়ে দিলেও অভিজ্ঞতার কারণে বল হাতে সবসময়ই সফল মাশরাফি।
অধিনায়ক মাশরাফি
একদিবসী ক্রিকেটে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বদলে গেছে তার নেতৃত্বে। ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে টাইগাররা। দেশে ফিরে ঘরের মাঠে টানা তিন সিরিজে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভূপাতিত করেছিল বাংলাদেশ। ওই সময় টানা ছয়টি ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল মাশরাফি বাহিনী। এই সফলতায় র্যাংকিংয়েও উন্নতি হয়েছে। ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে সাত নম্বরে এসেছে তার অধীনে। তার নেতৃত্বের গুণমুগ্ধ গোটা ক্রিকেটবিশ্ব। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলেছিল। সর্বশেষ গত মে মাসে বাংলাদেশের সফলতার রথে নতুন পালক যুক্ত হয়েছে তার নেতৃত্বে। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ। প্রথমবার বহুজাতিক টুর্নামেন্টের ট্রফি জিতেছে টাইগাররা। ছয়টি ফাইনাল হারের পর বহুল কাঙ্খিত ট্রফিটা এসেছে তার ধরে। প্রথম বড় কোনো ট্রফি জয়ের আক্ষেপটাও পূরণ হয়েছে মাশরাফির অধিনায়কত্বেই।
ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে শেষ বিশ্বকাপে খেলছেন মাশরাফি। আগামীতে তার বিদায়ের পর ওয়ানডেতে নিশ্চিতভাবেই আরও বড় উচ্চতায় যাবে বাংলাদেশ। কিন্তু ক্রিকেটবিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়ানোর, নিজেদের সামর্থ্যের স্বাক্ষর রাখা, ওয়ানডেতে প্রতিষ্ঠিত শক্তির স্বীকৃতি পাওয়া, নতুন উচ্চতায় দেশের ক্রিকেটকে নিয়ে যাওয়ার কান্ডারি অধিনায়ক মাশরাফি। ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সম্মান আদায় করে নেয়া, পারফরমার সাকিব-মুশফিক-তামিম-রিয়াদ-মুস্তাফিজদের একসঙ্গে জেগে উঠার মন্ত্রটা দিয়েছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেসই।
সমালোচকদের কড়া জবাব দিলেন তামিম
মাশরাফি ছাড়াও সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হচ্ছিলেন তামিম ইকবাল, মুস্তাফিজুর রহমান। বিশ্বকাপে তাদের সেরাটাও দেখা যায়নি প্রথম তিন ম্যাচে। নিজেরটা মেনে নিলেও অগ্রজ মাশরাফির সমালোচকদের এক হাত নিয়েছেন তামিম। টন্টনে গত ১৫ জুন চলমান সমালোচনার স্রোত নিয়ে সাংবাদিকদেরকে এই বাঁহাতি ওপেনার বলেছেন,
‘কথা বলে কারা? এটা দেখা গুরুত্বপূর্ণ যে, কারা কথা বলছে। আমার কথা বাদ দিলাম, মাশরাফি ভাইয়ের কথাই বলি। আমি আগেও বলেছি, যারা লিখছে বা বলছে, তারা যদি লেখা বা বলার আগে দুই মিনিটও চিন্তা করে যে কার ব্যাপারে লিখছি, তিনি কী করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য! তাকে যদি আনফিট বলা হয়, তাহলে তো গত ১০ বছর ধরেই আনফিট! তার দুই হাঁটু তো কখনোই ঠিক ছিল না। তখন আমরা এগুলোকে আবেগ দিয়ে দেখেছি। এখন একটু উনিশ-বিশ হচ্ছে বলে বড় করে দেখা হচ্ছে।’
এসব সমালোচনা মাশরাফির প্রতি অবিচার অ্যাখ্যা দিয়ে তামিম বলেছেন,
‘এমন একজন ব্যক্তিকে নিয়ে কথা হচ্ছে, যার হাত ধরে আজ আমরা এখানে। দল হিসেবে বলুন বা আমি নিজে, তার হাত ধরেই এগিয়েছি। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। উনি যা করেছেন দলের জন্য, বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য, উনার ব্যাপারে এভাবে মন্তব্য করা বা আলোচনা করা খুবই অন্যায়।’
ওই এক প্রশ্নের জবাবে এখানেই থেমে যাননি তামিম। দেশের বাইরের ক্রিকেট বিশ্লেষকদেরও জবাব দিয়েছেন। ভারতের সাবেক পেসার অজিত আগারকার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচের পর বলেছেন, বাংলাদেশ দলে জায়গা পাওয়া উচিত নয় মাশরাফির। সেদিকে ইঙ্গিত করে তামিম ছুঁড়েছেন পাল্টা প্রশ্ন। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান বলেছেন,
‘অন্যরা কী বলছে, সেটাকে আমি পাত্তাও দেই না। কিন্তু কয়েকজন বিদেশি ক্রিকেটার যারা বলেছেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, নিজেরা কী করেছেন? নিজেদের খেলোয়াড়ি জীবনে কী করেছেন যে আরেকজনকে নিয়ে এভাবে বলছেন?’
তবে আগারকারদের সমালোচনাকে গুরুত্ব না দিয়ে দেশের ক্রিকেট অনুসারীদের অনুরোধ করেছেন, ক্রিকেটের আলোচনায় বাস্তবতাকে পাশে রাখতে। ওয়ানডেতে দেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এই ওপেনার বলেছেন,
‘আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ না যে, দেশের বাইরে কে কী বলছেন। সবাই নিজের মতামত দিতে পারে। কিন্তু দেশের মানুষের মনে রাখা উচিত যে, আমি যখন মাশরাফি মুর্তজার ব্যাপারে কথা বলছি, দেশের ক্রিকেটকে উনি কী দিয়েছেন।’
যেমনটা ভালো সময়ে প্রশংসার বন্যা বয়ে যায়, তামিমের চাওয়া খারাপ সময়েও যেন সমর্থকরা ক্রিকেটারদের পাশে থাকে। তিনি বলেছেন,
‘খেলোয়াড়দের জীবন সার্কেলের মতো। ভালো খেলবে, খারাপ খেলবে আবার ভালো খেলবে। ভালো খেললেই যে আপনারা সাথে থাকবেন, তেমনটা নয়। যখন কেউ খারাপ খেলবে, তখনও তার সাথে থাকতে হবে। এরকম মেগা ইভেন্টে প্রত্যেকটা খেলোয়াড় ভালো খেলে না। কিছু খেলোয়াড় ভালো খেলে। যারা চ্যাম্পিয়ন হবে, তাদেরও কিন্তু সব খেলোয়াড় ভালো খেলবে না। কয়েকজন খেলবে। কিছু খেলোয়াড় ফর্মে থাকবে, কিছু থাকবে না। আমি খুব বেশি কিছু জানি না যে, কে কী বলছে। তবে যতটুকু জানি, সেটাও বেশি। আমার প্রত্যাশা এগুলো নিয়ে আর বেশি কথা না হোক। উনি ক্রিকেট দলের জন্য যা করেছেন, সেটা মনে রাখা উচিত সমালোচনার আগে।’
মাশরাফি আরও বেশি সম্মান প্রাপ্য বলে মনে করেন তামিম। তার মতে,
‘উনি এখন যে সম্মান পাচ্ছেন, তার থেকেও বেশি সম্মান তার পাওয়া উচিত। কোনো একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম, যারা এ কথাগুলো বলছে এবং যারা এ কথাগুলো লিখছে, তারা যদি কথাটা বলার আগে কিংবা লেখার আগে দুইটা মিনিট যদি একটু চিন্তা করে, উনি দেশের জন্য কী করেছে। সবার মত থাকতে পারে, সবাই সেই মত প্রকাশের অধিকার রাখে। দেশের মানুষজনের এটা বোঝা উচিত আমি যখন মতুর্জার বিষয়ে একটা কথা বলছি তখন যেন শুধু চিন্তা করে সে আমাদের দেশকে কী দিয়েছে। এতটুকু অনুরোধ।’
এত সমালোচনা মাশরাফির প্রাপ্য নয়: রোডস
বাংলাদেশের কোচ হওয়ার পর শুরু থেকেই মাশরাফিকে অধিনায়ক হিসেবে পেয়েছেন স্টিভ রোডস। অধিনায়কের প্রতি এই সমালোচনার মিছিল ভালো লাগেনি তারও। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর সাথে আলাপকালে রোডস তাই আক্ষেপ করে বলেছেন,
‘আমি মনে করি, মানুষ তার (মাশরাফি) প্রতি রূঢ়তা দেখায়। মানুষের স্মৃতিশক্তি কম। তার এত সমালোচনা প্রাপ্য নয়। সে অবশ্যই আমাদের জন্য অনেক ভালো স্পেল উপহার দিয়েছে। আমার মতে, কিছু দল তাকে খুব কম টার্গেট করে। তবে আশা করি, আমরা এটি আমাদের সুবিধা হিসেবে কাজে লাগাতে পারব। সে চতুর এবং জানে সে কী করছে। এটি আমাদের জন্য কিছু উইকেট এনে দিতে পারবে।’
রোডসের চোখে, মাশরাফি একজন যোদ্ধা। এত ইনজুরির ধাক্কা সামলেও ২২ গজে লড়ে যাচ্ছেন। এই ইংলিশ কোচ বলেছেন,
‘আমি মনে করি, ম্যাশ আসলেই একজন যোদ্ধা। মানুষ তাকে কিছুটা চাপের মুখে রাখে। তবে সে ভালোই আছে। সে দারুণ একজন প্রতিযোগী। সে বিশ্বের সেরা আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। সে অনেক গর্বিত, এবং আমিও তাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। আমি তার অধিনায়কত্বে কিংবা খেলায় কোনো সমস্যা দেখছি না।’
বিশ্বকাপ শুরুর আগেই পাকিস্তানের স্পিডস্টার শোয়েব আখতার বলেছিলেন, এই বিশ্বকাপের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি। ইয়ান বিশপ থেকে শুরু করে বিখ্যাত ধারাভাষ্যকাররাও তার নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বাংলাদেশকে বড় দলের স্বাদ পাইয়ে দেয়া মাশরাফি স্বভূমেই প্রতিনিয়ত নেতিবাচকভাবে মূল্যায়িত হচ্ছেন।