Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিদেশের মাটিতে ওপেনারদের কঠিন সময়

১.

ঘরের মাঠ, চেনা পরিবেশে সবাই-ই একটু বেশি আত্মবিশ্বাসী থাকে। ক্রিকেটে ঘরের মাঠের সুবিধা, এই কথাটি বেশ প্রচলিত। প্রত্যেক ক্রিকেট খেলুড়ে দেশই ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগায়। পরিচিত পরিবেশ, দর্শকদের বাড়তি অনুপ্রেরণার পাশাপাশি নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী পিচ খেলার উপযোগী করে তুলে স্বাগতিক দেশ। এতে করে শুরু থেকেই সফরকারী দেশ কিছুটা পিছিয়ে থাকে। স্বাগতিক দেশ নিজেদের শক্তিমত্তা অনুযায়ী পিচ তৈরি করে থাকে। এশিয়ার মাটিতে যেমন বেশিরভাগ পিচ স্পিনবান্ধব হয়ে থাকে, তেমনি দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং নিউ জিল্যান্ডের পিচগুলো পেস সহায়ক হয়ে থাকে।

ঘরের বাইরে কঠিন সময় পার করছে সফরকারীরা; Image Source: BCCI

টেস্ট ক্রিকেটে বরাবরবই চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা কঠিন। তা যদি হয় স্পিনবান্ধব উইকেটে, তখন সেটা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। সদ্য সমাপ্ত দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ভারতের মধ্যকার টেস্ট সিরিজেও এটা দেখা গিয়েছে। তিন টেস্টের সবক’টি ম্যাচে টসে হেরে প্রথমে ফিল্ডিং করতে হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে এবং তিন ম্যাচেই শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে তারা। টেস্ট ক্রিকেটে গত দুই বছরে সফরকারী দল ৮০ টেস্টের মধ্যে ৪৮ টেস্টে টসে পরাজিত হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র নয় টেস্টে জয় পায় তারা। টসে জেতা ৩২ ম্যাচের মধ্যে ১৩ ম্যাচে জয় পাওয়ার পাশাপাশি চার ম্যাচে ড্র করতে সক্ষম হয়েছিল সফরকারীরা। গত কয়েকবছর ধরে টেস্ট ক্রিকেটে ম্যাচের অর্ধেক ফলাফল নিশ্চিত হয়ে যায় টসের ভাগ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়েই। কোনো সফরকারী দল টসে হেরে গেলে তারা বল মাঠে গড়ানোর আগেই ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে। 

২.

টেস্ট ম্যাচ জিততে হলে প্রয়োজন প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট। তাই স্বাগতিক দেশগুলো পরিস্থিতি অনুযায়ী স্পিন অথবা পেস সহায়ক পিচ তৈরি করে থাকে। এতে করে বিপদে পড়ে সফরকারী দলের ব্যাটসম্যানেরা। তারা ভিন্ন পরিবেশে খেলতে এসে খুব একটা সুবিধা করতে পারেন না। বিশেষ করে ওপেনাররা নতুন বল সামলাতে হিমশিম খেয়ে যায়। পিচ এবং নতুন বলের সহায়তায় ইনিংসের শুরুতেই প্রতিপক্ষকে চেপে ধরে স্বাগতিক বোলাররা।

গত দুই বছরে অ্যাওয়ে টেস্টে কোন দল ওপেনিং উইকেট জুটিতে শতরান যোগ করতে পারেনি ; Image Credit: Stu Forster

গত দুই বছরের সফরকারী দলের ওপেনাররা কঠিন সময় পার করছেন। ২৫শে অক্টোবর ২০১৭ থেকে ২২শে অক্টোবর ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার তৃতীয় টেস্ট পর্যন্ত কোনো সফরকারী দল উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে শতরানের জুটি গড়তে পারেননি। এই সময়ে ১৫৭ বার ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ওপেনাররা মাত্র ২০ বার অর্ধশত রানের জুটি গড়তে পেরেছিলেন, সর্বোচ্চ জুটি ৯৮ রানের। ওপেনাররা গড়ে প্রতি ইনিংসে ২০.৬৩ রান করে যোগ করেছিলেন। এই সময়ের আগের বছরেও ওপেনাররা ঘরের বাইরে ৯৮ বার ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে আটবার শতরানের এবং ১১ বার অর্ধশত রানের জুটি গড়েছিলেন।

৩.

বিদেশের মাটিতে ওপেনাররা কতটা কঠিন সময় পার করছেন সেটা ওপেনারদের গত দুই বছরের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাবে। গত দুই বছরে মোট ৪৮জন ক্রিকেটার ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমেছিলেন। যার মধ্যে মাত্র সাতজন তিন অংকের রান স্পর্শ করতে পেরেছেন। একের অধিক শতক হাঁকিয়েছেন মাত্র একজন। শ্রীলঙ্কার অনিয়মিত ওপেনার কুশল মেন্ডিস এই সময়ে পাঁচবার ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে দুটি শতক হাঁকিয়েছিলেন। যার মধ্যে একটি বাংলাদেশের মাটিতে।

গত দুই বছরে বিদেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশি রান রাহুলের; ব্যাটিং গড় মাত্র ২২.৭০; Image Credit; Ryan Pierse

রান সংগ্রহের দিক থেকেও ওপেনারদের অবস্থা নাজুক। গত দুই বছরে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি ইনিংস ব্যাট করেছেন শ্রীলঙ্কার ওপেনার দিমুথ করুণারত্নে। তিনি ২১ ইনিংস ব্যাট করে মাত্র ১৯.১৪ ব্যাটিং গড়ে ৪০২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। শতকের সংখ্যা শূন্য। সর্বোচ্চ ইনিংস ৭৯ রানের। তার চেয়ে এক ইনিংস কম খেলে ভারতের লোকেশ রাহুল ২২.৭০ ব্যাটিং গড়ে ৪৫৪ রান সংগ্রহ করেছেন। ইংল্যান্ডের মাটিতে ১৪৯ রান ছাড়া নেই কোনো অর্ধশত রানের ইনিংসও।

৪৮ জন ওপেনারের মধ্যে মাত্র নয়জন তিন শতাধিক রান সংগ্রহ করেছেন। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় বাংলাদেশের তামিম ইকবাল আছেন ষষ্ঠ স্থানে। তিনি অন্যান্য ওপেনারদের চেয়ে কম সুযোগ পেয়েও সেটা কাজে লাগিয়েছেন। মাত্র আট ইনিংস ব্যাট করে একটি শতক এবং দুটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৪২.৭৫ ব্যাটিং গড়ে ৩৪২ রান করেছেন।

৪.

পহেলা জানুয়ারি ২০১০ সাল থেকে ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিদেশের মাটিতে ওপেনাররা ৩৬৩ বার ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ৩৪.৯২ গড়ে মোট ১২,৫০২ রানের জুটি গড়েছিলেন। এই পাঁচ বছরে তারা ২৯ বার শতরানের এবং ৫৩ বার অর্ধশত রানের জুটি গড়েছিলেন। অপরদিকে ২০১৫ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত বিদেশের মাটিতে ওপেনাররা ৩৭৮ বার ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ২৭.৪৭ গড়ে ১০,১৯৫ রানের জুটি গড়েছেন। শতরানের জুটি মাত্র ১৮টি এবং অর্ধশত রানের জুটি ৪৭টি।

২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিদেশের মাটিতে দুর্দান্ত সময় কাটিয়েছিলেন কুক ; Image Credit: Jordan Mansfield

এই দশকের শুরুর পাঁচ বছরে বিদেশের মাটিতে ওপেনারদের গড় জুটির চেয়ে শেষ পাঁচ বছরে গড় জুটির মধ্যে প্রায় আট রানের ব্যবধান রয়েছে। ওপেনারদের ব্যক্তিগত পারফরমেন্সের দিক থেকেও বর্তমানের ওপেনাররা বেশ পিছিয়ে আছেন। ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ওপেনারদের মধ্যে বিদেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন ইংল্যান্ডের ওপেনার অ্যালিস্টার কুক। তিনি ৪২ ইনিংস ব্যাট করে নয়টি শতক এবং আটটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৬৩.২৮ ব্যাটিং গড়ে ২,৪০৫ রান সংগ্রহ করেছেন। এই পাঁচ বছরে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা কুক ২০১৫ সালের পর থেকে ৪১ ইনিংস ব্যাট করে তিনটি শতক এবং পাঁচটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৩৩.৫৬ ব্যাটিং গড়ে ১,৩০৯ রান করেছিলেন। 

২০১৫ সালের পর থেকে বিদেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশি ইনিংস ব্যাট করা এবং সবচেয়ে বেশি রান করা ওপেনার হলেন ডেভিড ওয়ার্নার। তিনি ৫০ ইনিংস ব্যাট করে দুটি শতক এবং ১১টি অর্ধশতক হাঁকিয়ে মাত্র ২৯.৪৮ ব্যাটিং গড়ে ১,৪৭৪ রান করেছেন। এই সময়ে রান তুলতে হিমশিম খাওয়া ওয়ার্নার ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ২৪ ইনিংস ব্যাটিং করে ৪২.২৫ ব্যাটিং গড়ে ১,০১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। 

অ্যাশেজে ব্রডের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি ওয়ার্নার; Image Creator: Nick Potts

বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবাল ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর থেকে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। কিন্তু তারও শেষ পাঁচ বছরে বিদেশের মাটিতে ব্যাটিং গড় কমে যায়। তিনি ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ঘরের বাইরে ১৬ ইনিংস ব্যাট করে দুটি শতক এবং পাঁচটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৪৪.৬৮ ব্যাটিং গড়ে ৭১৫ রান করেছেন। অন্যদিকে ২০১৫ সালের পর থেকে ১৯ ইনিংসে একটি শতক এবং পাঁচটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৩৫.২৬ ব্যাটিং গড়ে ৬৭০ রান সংগ্রহ করেছেন। 

৫.

এবারের অ্যাশেজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইংল্যান্ডে। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনাররা দুঃস্বপ্নের মতো সময় কাটিয়েছিলেন। ডেভিড ওয়ার্নার ১০ ইনিংসে মাত্র ৯৫ রান এবং হ্যারিস ছয় ইনিংসে ৫৮ রান করেছিলেন। ব্যানক্রফটও রানের দেখা পাননি। তিনি চার ইনিংসে মাত্র ৪৪ রান করেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনাররাও ভারতের মাটিতে পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পাননি। ডেন এলগার এক ইনিংসে ১৬০ রান করার পরেও সিরিজে ছয় ইনিংস ব্যাট করে মোট ২৩২ রান করেছিলেন। আরেক ওপেনার মার্করাম চার ইনিংসে করেছিলেন ৪৪ রান, যার মধ্যে এক ইনিংসেই করেছিলেন ৩৯ রান। মার্করামের অনুপস্থিতিতে শেষ টেস্টে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমেছিলেন মিডল-অর্ডারে সফলতা পাওয়া কুইন্টন ডি কক। ওপেনিংয়ে নেমে তিনিও ব্যর্থ হন। দুই ইনিংসে করেছিলেন মাত্র ৯ রান।

অন্যান্য ওপেনারের চেয়ে সফল ছিলেন তামিম ইকবাল; Image Credit: Hagen Hopkins

সফরকারী দেশগুলোর মাটিতে অন্যান্য ওপেনাররা ব্যর্থ হলেও বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবাল সফল ছিলেন। নিউ জিল্যান্ডের প্রতিকূল পরিবেশে ব্যাট করে চার ইনিংসে ২৭৮ রান করে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তিনি সবার উপরে আছেন। চার ইনিংসে দুটি অর্ধশতক এবং একটি শতক হাঁকিয়েছেন তিনি। 

*সকল পরিসংখ্যান ২৫শে অক্টোবর ২০১৯ সালের আগপর্যন্ত 

প্রিয় পাঠক, রোর বাংলার ‘খেলাধুলা’ বিভাগে এখন থেকে লিখতে পারবেন আপনিও। সমৃদ্ধ করে তুলতে পারবেন রোর বাংলাকে আপনার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত লেখনীর মাধ্যমে। আমাদের সাথে লিখতে চাইলে আপনার পূর্বে অপ্রকাশিত লেখাটি সাবমিট করুন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

ক্রিকেট সম্পর্কে আরও জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলোঃ

১) মাশরাফি
২) কাছের ক্রিকেট দূরের ক্রিকেট
৩) ক্রিকেট অভিধান

This article is in Bangla language. It is about the test openers who struggle in away test. For references, please check the hyperlinks inside the article.

Featured Image: Ricardo Mazalan

Related Articles