ক্রিকেটে নিজেদের আবির্ভাব ঘটার পর থেকেই দ্রুত উন্নতি করছে আফগানিস্তান। তারা প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে। এরপর থেকে খুব দ্রুত ক্রিকেট বিশ্বে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে তারা। বেশ কয়েকজন ম্যাচ মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ক্রিকেটার রয়েছে তাদের দলে। অল্প সময়ের মধ্যে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর নিজেদের দ্বিতীয় টেস্টেই জয় তুলে নিয়েছে আফগানিস্তান। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে দশ দলের একটি দল তারা। যেখানে তাদের অনেক আগে থেকে ক্রিকেট খেলা জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসের মতো দলগুলো ইংল্যান্ডের যাওয়ার টিকেট পায়নি, সেখানে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা অর্জন করে।
জিম্বাবুয়েতে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফাইনালে হারিয়ে আফগানিস্তান চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো। অবশ্য আসরের শুরুতে তাদের অবস্থা বেশ শোচনীয় ছিলো। গ্রুপ পর্বে স্কটল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে এবং হংকংয়ের কাছে পরাজিত হয়ে সুপার সিক্সে খেলাটাই অনিশ্চিত ছিলো তাদের। সেখান থেকে অনেক সমীকরণের পর সুপার সিক্সে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। শেষপর্যন্ত দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি ভাগ্যের সহায়তায় বাছাইপর্বের চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপের মূল আসরে জায়গা করে নেয় তারা।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আফগানিস্তান দল হিসেবে বেশ কঠিন প্রতিপক্ষ। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপেও তার প্রমাণ রেখেছিল তারা। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বড় জয় পাওয়ার পর শেষ চারেও দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছিল তারা। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে সমানে সমানে লড়াই করে পরাজিত হলেও শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ‘টাই’ করে রশিদ খান, নবীদের আফগানিস্তান।
আফগানিস্তান এখন পর্যন্ত ১১১টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ৫৭ ম্যাচে জয় পেয়েছে। টি-টোয়েন্টিতেও বেশ সফল তারা। ৭১ ম্যাচের মধ্যে জয় পেয়েছে ৪৯টিতে। বিশ্বকাপে তাদেরকে হালকাভাবে নেওয়ার মতো ভুল করবেনা কোনো দলই। নিজেদের দিনে তারা ক্রিকেট বিশ্বের যেকোনো পরাশক্তিকে হারানোর সক্ষমতা রাখে। বর্তমানে তাদের দলে রয়েছে রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, মোহাম্মদ নবীর মতো বিশ্বমানের স্পিনাররা। সেইসাথে মোহাম্মদ শাহজাদ এবং হযরতুল্লাহ জাজাইয়ের মতো আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানও রয়েছে তাদের দলে, যারা মুহূর্তের মধ্যে ম্যাচের চিত্র পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। ইংল্যান্ডের মাটিতে তাদের ভোগাতে পারে পেসাররা। উপমহাদেশের মাটিতে চলনসই পেসার থাকলেও ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রয়োজন বুদ্ধিদীপ্ত পেস বোলার। তাদের এই দুর্বল দিক রশিদ খান এবং মুজিবরা নিজেদের ঘূর্ণি বোলিং দিয়ে কতটা ব্যাকআপ দিতে পারেন, সেটাই দেখার বিষয়।
শুক্রবারে (৫ই এপ্রিল) হঠাৎ করেই আফগানিস্তান অধিনায়ক পরিবর্তন করে। দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা আসগার আফগানকে সরিয়ে তিন ফরম্যাটে তিনজনকে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওয়ানডে ফরম্যাটে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন গুলবাদিন নাইব। টেস্টে রহমত শাহ এবং টি-টোয়েন্টিতে রশিদ খান। নতুন অধিনায়কের নাম ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেনি আফগানিস্তান। বিশ্বকাপে তাদের স্কোয়াড কেমন হতে পারে, সেই সম্পর্কে আলোচনা থাকছে এই লেখায়।
টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান
১. মোহাম্মদ শাহজাদ
মোহাম্মদ শাহজাদ ইনিংস গোড়াপত্তন করার পাশাপাশি উইকেটরক্ষক হিসেবেও আফগানিস্তানের প্রথম পছন্দ। শুধুমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে আফগানিস্তানের ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের হয়ে ৭৯টি ওয়ানডে খেলে পাঁচটি শতক এবং ১৩টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩৩.৭১ ব্যাটিং গড়ে ২,৫৬২ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি। আফগানিস্তানের হয়ে সবচেয়ে বেশি শতক এবং অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন তিনি।
২. হযরতুল্লাহ জাজাই
আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগে ছয় বলে ছয় ছক্কা হাঁকানোর পর আলোচনায় আসেন হযরতুল্লাহ জাজাই। এর আগে আসরের শুরুতে দ্রুতগতিতে শতকও হাঁকিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অপরাজিত ১৬২ রানের ইনিংস খেলে ওয়ানডেতে সুযোগ পান জাজাই। মাত্র ছয়টি টি-টোয়েন্টিতে একটি শতক এবং তিনটি অর্ধশতক হাঁকানোর পর তাকে ওয়ানডে দলে ডাক দেয় আফগানিস্তান। দ্রুতগতিতে রান তোলার সক্ষমতার কারণে বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের তুরুপের তাস হতে পারেন তিনি।
৩. নুর আলি জাদ্রান
নুর আলি জাদ্রান দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করেছেন। ২০১৭ সালের পর থেকে সুযোগ না পেলেও আফগানিস্তানের সর্বশেষ ওয়ানডেতে একাদশে ছিলেন তিনি। তাই ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে তাকেও স্কোয়াডে রাখতে পারে আফগানিস্তান। ২০০৯ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটা এই ব্যাটসম্যান আফগানিস্তানের হয়ে একটি শতক এবং সাতটি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন।
৪. ইহসানুল্লাহ
আফগানিস্তানের হয়ে ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে নিয়মিত ইনিংস উদ্বোধন করেছিলেন ইহসানুল্লাহ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে দলকে জেতানোর পাশাপাশি ওয়ানডেতে তিনটি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন তিনি। তরুণ এই ব্যাটসম্যান কিছুটা মন্থরগতিতে ব্যাটিং করলেও ব্যাটসম্যান হিসেবে বেশ পরিপক্ব। শাহজাদ কিংবা জাজাইয়ের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের সময় একপ্রান্ত আগলে রাখার সামর্থ্য রয়েছে তার।
৫. রহমত শাহ
টেকনিক্যালি আফগানিস্তানের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান রহমত শাহ। ইতিমধ্যে আফগানিস্তানের টেস্ট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। ওয়ান ডাউনে ব্যাট করা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান আফগানিস্তানের হয়ে ৫৮টি ওয়ানডেতে তিনটি শতক এবং ১৩টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩৫.০৩ ব্যাটিং গড়ে ১,৮২২ রান তুলেছেন। পার্টটাইম বোলার হিসেবেও তিনি বেশ কার্যকরী। লেগব্রেক বোলিং করে ইনিংসে পাঁচ উইকেট সহ মোট ১২ উইকেট শিকার করেছেন রহমত শাহ।
৬. জাভেদ আহমাদি
আফগানিস্তানের টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান জাভেদ আহমাদি ২০১০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। ইতিমধ্যে আফগানদের হয়ে ৪২ ম্যাচে সাতটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৯৭১ রান সংগ্রহ করেছেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজেও একাদশে ছিলেন তিনি। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পার্টটাইম বোলার হিসেবেও বেশ কার্যকরী তিনি। ওয়ানডেতে ৩৬.৭৫ বোলিং গড়ে তার উইকেট সংখ্যা আটটি।
৭. হাশমতউল্লাহ শহিদি
বাঁহাতি টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান হাশমতউল্লাহ শহিদি ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। আসন্ন বিশ্বকাপেও তার উপর ভরসা রাখবে আফগানিস্তান। তিনি ২৮টি ওয়ানডেতে ছয়টি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। সর্বোচ্চ ৯৭* রানের ইনিংস সহ ৩২.৪৭ ব্যাটিং গড়ে তার রান সংখ্যা ৭৪৭। নিয়মিত রানের দেখা পেলেও বিশ্বকাপে স্ট্রাইক রেটের দিকে বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে তার। ওয়ানডেতে তার বর্তমান স্ট্রাইক রেট মাত্র ৬৩.৩৫।
মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান
৮. আসগর আফগান
আফগানিস্তানের ক্রিকেটে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক আসগর আফগান। কিন্তু হুট করে বিশ্বকাপের আগে তাকে অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অধিনায়কের দায়িত্ব কেড়ে নিলেও বিশ্বকাপে মিডল-অর্ডার সামলানোর দায়িত্ব তার উপর পড়বে। তিনি এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের হয়ে ৯৯টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে একটি শতক এবং ১১টি অর্ধশতকের সাহায্যে ২,০১৩ রান সংগ্রহ করেছেন। তার হাত ধরেই বাছাইপর্বের বাধা টপকে বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেয় আফগানিস্তান।
৯. নাজিবুল্লাহ জাদ্রান
আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান হিসেবে নাজিবুল্লাহ জাদ্রানের বেশ সুনাম রয়েছে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজে ক্যারিয়ারের প্রথম শতক হাঁকিয়ে জানান দিয়েছেন, তিনি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত। এই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত ৫৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে একটি শতক হাঁকানোর পাশাপাশি আটটি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। তার স্ট্রাইক রেটও সন্তোষজনক। ৮৮.১৯ স্ট্রাইক রেটে এবং ২৮.৮০ ব্যাটিং গড়ে ১,২১০ রান করেছেন তিনি।
১০. সামিউল্লাহ শেনওয়ারি
আফগানিস্তানের ক্রিকেটে সামিউল্লাহ শেনওয়ারি বেশ পুরনো এবং পরিচিত মুখ। মিডল-অর্ডারে ব্যাটিং করার পাশাপাশি লেগব্রেক বোলিংও করেন তিনি। ২০০৯ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটার পর থেকে ৮১ ম্যাচে ১১টি অর্ধশতকের সাহায্যে ২৮.৪৭ ব্যাটিং গড়ে ১,৭৮৭ রান করেছেন। তার ব্যাটে চড়েই আফগানিস্তান ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেয়েছিলো। বল হাতেও বেশ সফল তিনি। নামের পাশে ৪৫ ওয়ানডে উইকেট সেই কথাই বলে।
১১. শফিকুল্লাহ শফিক
ওয়ানডে দলে খুব একটা নিয়মিত নন শফিকুল্লাহ শফিক। ২০০৯ সালে অভিষেক ঘটার পর এখন পর্যন্ত মাত্র ২৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। আফগানিস্তানের হয়ে ওয়ানডেতে দুটি অর্ধশতক হাঁকানো শফিক আচমকা আফগানিস্তানের টি-টোয়েন্টি দলের সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পেলেন। তাকে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে রাখার পরিকল্পনা চলছে যে, এতেই অনুমান করা যায়। তাছাড়া ব্যাকআপ উইকেটরক্ষক হিসাবেও তিনি ডাক পেতেন।
১২. ইকরাম আলি খিল
ব্যাকআপ উইকেটরক্ষক হিসেবে ইকরাম আলি খিলকে বিবেচনায় রাখতে পারে আফগানিস্তান। এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান সর্বশেষ আয়ারল্যান্ড সিরিজে দুটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। তিনি অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভালো ব্যাটিং করে আলোচনায় আসেন। সাত ম্যাচের প্রথম শ্রেণীর ক্যারিয়ারের হাঁকিয়েছেন শতক। মিডল-অর্ডারে ব্যাট করার পাশাপাশি উইকেটরক্ষক হিসেবেও তিনি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে জায়গা করে নিতে পারেন।
অলরাউন্ডার
আফগানিস্তানের একাদশের উইকেটরক্ষক ছাড়া প্রায় সবারই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। একসময় তো তারা গর্ব করে বলতো তারা দশ অলরাউন্ডারের দল। বিশ্বকাপে তাদের স্কোয়াডে বেশ কয়েকজন অলরাউন্ডের নাম থাকবে। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, গুলবদিন নাইবের নাম একপ্রকার নিশ্চিত।
১৩. মোহাম্মদ নবী
আফগানিস্তানের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মোহাম্মদ নবী। তিনি আফগানিস্তানের হয়ে সবক’টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। আফগানিস্তান এখন পর্যন্ত ১১১টি ওয়ানডে খেলেছে, যার সবকটিতে নবী খেলেছেন। ওয়ানডেতে আফগানদের সর্বকালের সেরা রান সংগ্রাহকও তিনি। এখন পর্যন্ত ৯৯ ইনিংস ব্যাট করে একটি শতক এবং ১৩টি অর্ধশতকের সাহায্যে ২৯.১৪ ব্যাটিং গড়ে ২,৫৬৫ রান করেছেন। উইকেটের দিক দিয়েও তিনি আফগানদের দ্বিতীয় সেরা বোলার। এখন পর্যন্ত তার উইকেট সংখ্যা ১১৮টি।
১৪. রশিদ খান
বর্তমানে ওয়ানডেতে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার রশিদ খান। মূলত বোলার হিসেবে খেললেও মাঝেমধ্যে কয়েকটি ক্যামিও ইনিংস খেলেন তিনি। বর্তমানে বিশ্বের সেরা স্পিনারদের মধ্যে একজন রশিদ খান তার ৫৭ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মাত্র ১৫.০০ বোলিং গড়ে শিকার করেছেন ১২৩ উইকেট, যা ওয়ানডেতে তাদের পক্ষে সর্বোচ্চ। ব্যাট হাতে রয়েছে তার চারটি অর্ধশত রানের ইনিংস। ২৩.৬৯ ব্যাটিং গড়ে এবং ১০০.৭৭ স্ট্রাক রেইটে ৭৮২ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি।
১৫. গুলবদিন নাইব
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন গুলবদিন নাইব। তিনি পেস বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংটাও ভালো করেন। আফগানিস্তানের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। এখন পর্যন্ত ৫২টি ওয়ানডেতে পাঁচটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৮০৭ রান করেছেন। সেই সাথে মিডিয়াম পেস বোলিংয়ের মাধ্যমে শিকার করেছেন ৪০ উইকেট।
স্পিনার
অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী, রশিদ খানও বিশ্বমানের স্পিনার। ইংল্যান্ডের মাটিতে এই দুই অলরাউন্ডারের পাশাপাশি তৃতীয় স্পিনার হিসেবে খেলবেন মুজিব উর রহমান। এছাড়া আরও কয়েকজন দুর্দান্ত স্পিনার রয়েছে তাদের। লেগস্পিনার কায়েস আহমেদের এখনও ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেনি। কিন্তু তিনি ইতিমধ্যে খেলে ফেলেছেন বেশ কয়েকটি ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্ট। এছাড়া চায়নাম্যান বোলার জহির খান এবং বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার শারাফুদ্দিন আশরাফ স্কোয়াডে ডাক পাওয়ার আশা রাখতে পারেন।
১৬. মুজিব উর রহমান
স্পিনার হলেও ইনিংসের শুরুতে বল করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন মুজিব। এই ভূমিকায় তিনি আইপিএলসহ বিভিন্ন জায়গায় সফলতা পেয়েছেন। আফগানিস্তানের হয়ে ২০১৭ সালে অভিষেক ঘটার পর মাত্র ২৮টি ওয়ানডেতে শিকার করেছেন ৫১ উইকেট। একবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন। তার ইকোনমি রেটও দুর্দান্ত। মাত্র ৩.৭৪ ইকোনমি রেটে এবং ১৮.৮০ বোলিং গড়ে তিনি ৫১ উইকেট শিকার করেছেন।
১৭. শারাফুদ্দিন আশরাফ
আফগানিস্তানের হয়ে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেললেও বেশ কয়েকদিন ধরে দলে নেই আশরাফ। তবে বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার হওয়ার কারণে বিশ্বকাপের মূল স্কোয়াডে ডাক পেতে পারেন ১৪ ম্যাচে ১২ উইকেট শিকার করা এই বোলার। রশিদ খান, নবী এবং মুজিব তিনজনই ডানহাতি বোলার। তাই বাঁহাতি বোলার হিসেবে দল ভাবনায় থাকবেন আশরাফ।
পেসার
১৮. দাওলাত জাদ্রান
ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে পেসারদের প্রতি। এখানে স্পিনারদের চেয়ে পেসাররাই বেশি সুবিধা পেয়ে থাকেন। আফগানিস্তানের একমাত্র পেসার হিসেবে শতাধিক ওয়ানডে উইকেট শিকার করা দাওলাত জাদ্রানই তাদের পেস ডিপার্টমেন্ট সামাল দেবেন। ডানহাতি এই পেসার ২০১১ সাল থেকে আফগানিস্তানের হয়ে নিয়মিত ক্রিকেট খেলছেন। এখন পর্যন্ত ৭৪ ম্যাচে তিনি ১০৩ উইকেট শিকার করেছেন।
১৯. শাহপুর জাদ্রান
আফগান ক্রিকেটে শাহপুর জাদ্রান বেশ পরিচিত মুখ। ২০০৯ সালে আফগানিস্তান ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায়। তখন থেকেই খেলে যাচ্ছেন তিনি। দলে নিয়মিত না হলেও বিশ্বকাপে তার উপর আস্থা রাখবে আফগানিস্তান। এই বাঁহাতি পেসার এখন পর্যন্ত ৪৪টি ওয়ানডে খেলে ৪৩ উইকেট শিকার করেছেন।
২০. আফতাব আলম
আফতাব আলমও বেশ অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। ওয়ানডেতে তার অভিষেক ২০১০ সালে ঘটলেও দলে নিয়মিত হয়েছেন গত কয়েকবছরে। ডানহাতি এই পেসার এখন পর্যন্ত ২১ ওয়ানডে খেলে ৩১ উইকেট শিকার করেছেন। নিজের শেষ ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে ২৫ রানের বিনিময়ে চার উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।
টেস্ট ক্রিকেটে আফগানিস্তানের দুই পেসার ওয়াফাদার মোহাম্মদ এবং ইয়ামিন আহমেদজাইও স্কোয়াডে জায়গা করে নিতে পারেন। টেস্টে ইয়ামিন আহমেদজাই দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। ইংল্যান্ডের কন্ডিশন মাথায় রেখে স্কোয়াডে রাখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এছাড়া এশিয়া কাপের স্কোয়াডে থাকা মুনির আহমেদ এবং সৈয়দ শিরজাদকে নিয়েও পরিকল্পনা থাকতে পারে আফগানিস্তানের।