ভারতের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে মাঠে নামার আগে জেমস অ্যান্ডারসনের টেস্ট ক্রিকেটে উইকেট সংখ্যা ছিলো ৫৫৭টি। সাউথাম্পটনে আরও দুই উইকেট শিকার করলে তা বেড়ে ৫৫৯ এ দাঁড়িয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটে পেস বোলার হিসাবে সর্বকালের সেরা উইকেট সংগ্রাহক হিসাবে নিজের নাম লেখানোর জন্য অ্যান্ডারসনের প্রয়োজন আর মাত্র পাঁচ উইকেট। আর পাঁচ উইকেট শিকার করলে তিনি অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রাকে টপকে যাবেন। গ্লেন ম্যাকগ্রা ১২৪ টেস্ট ম্যাচে ৫৬৩ উইকেট শিকার করেছিলেন।
নিজের সিংহাসন হারানো নিয়ে এবং জেমস অ্যান্ডারসনকে শুভকামনা জানিয়ে ডেইলি মেইলে একটি কলাম লিখেছেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। সেখানে তিনি বলেছেন, “আমি বিশ্বাস করি, জিমি একবার আমাকে টপকে গেলে তাকে আর কেউ টপকাতে পারবে না।”
ম্যাকগ্রার এই কথার পেছনে যুক্তিটাও মন্দ নয়। বর্তমানে পেসাররা শুধুমাত্র টেস্ট ক্রিকেট খেলেন না। তারা প্রচুর লিমিটেড ওভার ম্যাচ খেলার পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটও খেলেন। টি-টোয়েন্টির যুগে কোনো পেসারের পাঁচ-ছয়শ টেস্ট উইকেট শিকার করা কল্পনাতীত।
রেকর্ড গড়া হয় ভাঙবার জন্য। গ্লেন ম্যাকগ্রার রেকর্ডটি যেমন এখন তার হাতছাড়া হওয়ার সম্মুখীন, তেমনি জেমস অ্যান্ডারসনের রেকর্ডও হয়তো একদিন কেউ টপকে যাবে। অথবা স্পিনার মুরালিধরনের মতো পেসার জেমস অ্যান্ডারসনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন।
টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে পেসার হওয়া অন্যতম কঠিন কাজ। জেমস অ্যান্ডারসন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বলের পর বল করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি ১৪২টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ফেলেছেন, যা কোনো পেসারের পক্ষে সর্বোচ্চ। জেমস অ্যান্ডারসনের মাঠের বাইরের কঠোর পরিশ্রম নিয়েও গ্লেন ম্যাকগ্রা সাধুবাদ জানিয়েছেন।
জেমস অ্যান্ডারসনের রেকর্ডটি কি সর্বকালের সেরার মানদণ্ড হিসাবে থাকবে, না তাকেও কেউ টপকাতে পারবে? বর্তমানের শীর্ষ ক্যাটাগরির পেসারদের পরিসংখ্যান বিবেচনা করে দেখা যাক, অ্যান্ডারসনের মুকুট কেউ ছিনিয়ে নিতে পারে কিনা!
প্রথমেই শুরু করা যাক অস্ট্রেলিয়ার তিন পেসার মিচেল স্টার্ক, জস হ্যাজলেউড এবং প্যাট কামিন্সকে দিয়ে। তাদের মধ্যে কেউ ৫৫০ কিংবা ৬০০ টেস্ট উইকেট টেস্ট উইকেট শিকার করতে পারেন কি না, সেটা নির্ভর করছে অস্ট্রেলিয়া বছরে কয়টি টেস্ট খেলছে এবং তারা কয়টি টেস্ট ম্যাচ খেলছেন। বর্তমানে অবশ্য এই তিন পেসারই ইনজুরির কারণে দলের বাইরে আছেন।
২০১৩-১৭ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া মোট ৫৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। বছরে প্রায় ১২টি টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছেন তারা।
মিচেল স্টার্ক
মিচেল স্টার্কের বর্তমান বয়স ২৮ বছর। এই তিন পেসারের মধ্যে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ বোলার তিনি। ২০১১ সালের পহেলা ডিসেম্বর টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটার পর এখন পর্যন্ত ৪৩টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ১৮২ উইকেট শিকার করেছেন স্টার্ক। গড়ে ম্যাচ প্রতি তিনি ৪.২৩টি উইকেট শিকার করেছেন। ইনজুরির কারণে বেশ কিছু ম্যাচেও মূল একাদশের বাইরে থাকতে হয়েছিলো তাকে। অভিষেকের পর থেকে তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৩৪টি টেস্ট ম্যাচ মিস করেছেন। ২০১৫ সালের আগে অন্যান্য ফার্স্ট বোলার ফর্মে থাকার কারণে তিনি সুযোগ না পেলেও ২০১৫ সাল থেকে এই মধুর সমস্যার কারণে দলের বাইরে থাকতে হয়নি তাকে। এই সময়ে সম্ভাব্য ৪০ ম্যাচের মধ্যে ২৯টি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি।
জেমস অ্যান্ডারসনের বর্তমান বয়স ৩৬ বছর। এই বয়সে বেশিরভাগ পেসাররা ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও অ্যান্ডারসন এখনও তার ফিটনেস এবং ফর্ম ধরে রেখেছেন। এই বছরেও এখন পর্যন্ত নয় ম্যাচে ৩৭ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।
জেমস অ্যান্ডারসনের তুলনায় মিচেল স্টার্ক ম্যাচপ্রতি গড়ে ০.২৯টি উইকেট বেশি শিকার করেছেন। এই বাঁহাতি পেসার যদি আরও সাত বছর ক্রিকেট খেলেন, তখন তার বয়স হবে ৩৫ বছর। এই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাব্য টেস্ট ম্যাচের মধ্যে ৮০% ম্যাচও যদি খেলেন তাহলে তার সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৭ ম্যাচ। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার মোট টেস্টে ৭৫% ম্যাচ খেলছেন।
বর্তমানে তিনি প্রতিম্যাচে ৪.২৩টি উইকেট শিকার করছেন। সম্ভাব্য ৬৭ ম্যাচেও যদি ৪.২৩ গড়ে উইকেট শিকার করেন, তাহলে তার মোট উইকেট সংখ্যা হবে ৪৬৫টি। একজন পেসারের জন্য নিঃসন্দেহে এটি অসাধারণ কীর্তি। কিন্তু তিনি তখনও গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং জেমস অ্যান্ডারসন থেকে অনেক পিছিয়ে থাকবেন।
জস হ্যাজলেউড
মিচেল স্টার্কের চেয়ে এক বছরের ছোট জস হ্যাজলেউড ইতিমধ্যে ৪০টি টেস্টে ১৫১ উইকেট শিকার করেছেন।
বর্তমানে ইনজুরির কারণে দলের বাইরে থাকলেও হ্যাজলেউড অন্য পেসারদের তুলনায় কম ইনজুরিতে ভোগেন। অভিষেকের পর থেকে দলের ৪২টি টেস্টের মধ্যে ৪০টি খেলেছেন তিনি।
জস হ্যাজলেউডের অসাধারণ টেকসই স্বভাবের কারণে ধরে নেওয়া যাক, তিনি আরও নয় বছর টেস্ট ক্রিকেট খেলবেন। তখন তার বয়স হবে ৩৬ বছর সাতমাস। তার আইডল গ্লেন ম্যাকগ্রা প্রায় ৩৭ বছর বয়স পর্যন্ত খেলেছেন।
উক্ত নয় বছরে জস হ্যাজলেউড যদি অস্ট্রেলিয়ার মোট ম্যাচের ৯০% ম্যাচ খেলতে পারেন, তাহলে তিনি আরও ৯৭টি টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন।
বর্তমানে জস হ্যাজলেউড ম্যাচপ্রতি গড়ে ৩.৭৮টি উইকেট শিকার করছেন। একই গড়ে উক্ত ৯৭ ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা হবে ৩৭০টি। তখন তার মোট উইকেট সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৫২১টিতে। তিনিও জেমস অ্যান্ডারসন এবং গ্লেন ম্যাকগ্রা থেকে পিছিয়ে থাকবেন।
প্যাট কামিন্স
বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় পেসার হলেন প্যাট কামিন্স। কিন্তু ইনজুরি বরাবরই তার প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখানোর পর ইনজুরির কারণে দল থেকে ছিটকে পড়েন কামিন্স। এরপর প্রায় ছয় বছর পর ২০১৭ সালের মার্চে টেস্ট দলে ফেরেন তিনি। দলে জায়গা করে নেওয়ার পর টানা ১৩টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন তিনি। কামিন্সও হ্যাজলেউডের মতো আসন্ন পাকিস্তান সিরিজ মিস করবেন।
দীর্ঘদিন বিরতির পর দলে ফেরা প্যাট কামিন্স অ্যাশেজে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে অজিদের সেরা বোলার ছিলেন।
২৫ বছর বয়সী এই ডানহাতি পেসার অস্ট্রেলিয়ার ত্রয়ীর মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। কিন্তু ইনজুরির কারণে তার ক্যারিয়ার সফলতার মুখ দেখছে না। এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৬৬ উইকেট শিকার করেছেন কামিন্স।
ক্যারিয়ারের শুরুতে ইনজুরির কারণে বেশিরভাগ সময় দলের বাইরে থাকা প্যাট কামিন্স হয়তো ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে নিয়মিত খেলতে পারবেন। ২৫ বছর বয়সী কামিন্স যদি আরও ১১ বছর খেলেন, তখন তার বয়স হবে ৩৬ বছর।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে উক্ত সময়ের টেস্ট ম্যাচ গুলোর মধ্যে ৮৫% ম্যাচও তিনি খেলতে পারেন, তাহলে তিনি আরও ১১২টি টেস্ট ম্যাচ খেলবেন। বর্তমানে কামিন্স ম্যাচপ্রতি গড়ে ৪.৭১টি উইকেট শিকার করছেন। সে হিসাবে ১১২টি টেস্টে তার উইকেট সংখ্যা দাঁড়াবে ৫২৮। ইতোমধ্যে ৬৬ উইকেট শিকার করা কামিন্সের তখন মোট সংখ্যা হবে ৫৯৪টি, যা গ্লেন ম্যাকগ্রার থেকে বেশি। জেমস অ্যান্ডারসন কোথায় গিয়ে থামেন, তা এখনও বলা মুশকিল। বর্তমান ইংলিশ কোচ তো বলেছেন, জিমি আরও চার বছর টেস্ট খেলার সামর্থ্য রাখেন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশী দেশ নিউজিল্যান্ডে বর্তমানে দুইজন বিশ্বমানের পেসার রয়েছে। ডানহাতি টিম সাউদি এবং বাঁহাতি ট্রেন্ট বোল্ট বিগত কয় বছর ধরে কিউইদের বোলিং ডিপার্টমেন্টে অন্যতম ভরসা। তাদের দুজন কি পারবেন জেমস অ্যান্ডারসন এবং গ্লেন ম্যাকগ্রাকে টপকাতে! পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে সেই সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
সাউদি এবং বোল্ট দুইজনের বয়সই ত্রিশ ছুঁইছুঁই। তাদের পরিসংখ্যান, রেকর্ড কতটা স্বাস্থ্যকর হবে, সেটা নির্ভর করছে নিউজিল্যান্ড বছরে কতটা টেস্ট ম্যাচ খেলছে এবং তারা কয়টি টেস্ট ম্যাচ খেলছেন, তার উপর। নিউজিল্যান্ড ২০১৩-১৭ সাল পর্যন্ত ৯.৪ গড়ে ৪৭টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। গত বছরে যদিও মাত্র সাতটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে, তবুও গড়ে প্রতি বছর প্রায় দশটি টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে ব্ল্যাক ক্যাপসরা।
টিম সাউদি
২০০৮ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটা সাউদির আগামী ডিসেম্বরে ৩০ বছর পূর্ণ হবে। তিনি এখন পর্যন্ত ৬০ ম্যাচে ২২০ উইকেট শিকার করেছেন। গড়ে ম্যাচপ্রতি ৩.৬৭টি শিকার করেছেন সাউদি।
তিনি যদি আরও ছয় বছর টেস্ট ক্রিকেট খেলেন এবং নিউজিল্যান্ডের মোট টেস্টের ৯০% ম্যাচ খেলেন, তাহলে তার উইকেট সংখ্যা হবে ২০৭টি। বর্তমানের ২২০টি সহ তখন মোট উইকেট সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৪২৭টিতে, যা গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং জেমস অ্যান্ডারসন থেকে অনেক কম। কিন্তু তিনি যদি বর্তমান গতিতে আরও ছয় বছর খেলে যেতে পারেন, তাহলে নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি ক্রিকেটার স্যার রিচার্ড হ্যাডলির ৪৩১ উইকেটের রেকর্ডকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারবেন।
ট্রেন্ট বোল্ট
টিম সাউদির চেয়ে আটমাসের ছোট ট্রেন্ট বোল্ট ইতিমধ্যে ৫৪ টেস্টে ২১৫ উইকেট শিকার করেছেন। ম্যাচপ্রতি উইকেট শিকারের দিক দিয়ে তিনি সাউদির চেয়ে এগিয়ে আছেন। তিনি ম্যাচপ্রতি গড়ে ৩.৯৮টি উইকেট শিকার করেছেন।
ট্রেন্ট বোল্ট যদি একই গতিতে আরও সাত বছর টেস্ট ক্রিকেট খেলেন এবং নিউজিল্যান্ডের মোট ম্যাচের ৯০% ম্যাচ খেলেন, তাহলে তিনি তার ঝুলিতে আরও ২৩৫ উইকেট যোগ করবেন। যার ফলে ক্যারিয়ার শেষে তার মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৫০। তখনও তিনি গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং জেমস অ্যান্ডারসন থেকে অনেকটা পিছিয়ে থাকবেন।
মোহাম্মদ আমির
পাকিস্তানের এই বাঁহাতি পেসার মাত্র ১৮ বছর বয়সেই ৫০ টেস্ট উইকেট শিকার করেছিলেন। এরপর ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে পাঁচ বছরের জন্য সবধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন মোহাম্মদ আমির। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরে এসে এখন পর্যন্ত ৫৬ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।
সবমিলিয়ে ২৬ বছর বয়সী মোহাম্মদ আমির ৩৩ টেস্টে ১০৭ উইকেট শিকার করেছেন।
তার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিলো স্বপ্নের মতো। এরপর পাঁচ বছর নিষিদ্ধ থাকার পরেও ২৬ বছর বয়সে তার উইকেট সংখ্যা ১০৭টি। এখনও যদি আরও এক দশক ক্রিকেট খেলতে পারেন, তাহলে তার ক্যারিয়ার বেশ সমৃদ্ধ হবে। ঠিক কতটা উঁচুতে গিয়ে থামবে আমিরের ক্যারিয়ার, তা দেখা যাক।
পাকিস্তানি এই পেসার ম্যাচপ্রতি মাত্র ৩.২৪ গড়ে উইকেট শিকার করেছেন। পাকিস্তানের মাটিতে এখনও বড় দলগুলো ক্রিকেট খেলতে নারাজ বলে খুব বেশি ম্যাচও পাচ্ছে না পাকিস্তান। ২০১৩-১৭ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরে ৮.৪টি করে টেস্ট খেলছে তারা।
সেই হিসাবে মোহাম্মদ আমির যদি পাকিস্তানের মোট ম্যাচের ৯০% ম্যাচ খেলে বর্তমান গতিতে উইকেট শিকার করেন, তাহলে তিনি আরও ২৪৫ উইকেট শিকার করবেন। যার ফলে তার মোট উইকেট সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৩৫২তে, যা জেমস অ্যান্ডারসন এবং গ্লেন ম্যাকগ্রা থেকে অনেক কম।
ইশান্ত শর্মা
ভারতীয় পেসার ইশান্ত শর্মাও নিজেকে এই দৌড়ে রাখতে পারেন। ২০০৭ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটার পর এখন পর্যন্ত ৮৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ফেলেছেন সদ্য ত্রিশে পা রাখা ইশান্ত শর্মা। বেশিরভাগ সময় স্পিন সহায়ক পিচে বল করার কারণে তার ক্যারিয়ারে খুব আহামরি কোনো অর্জন নেই। এখন পর্যন্ত ম্যাচপ্রতি মাত্র ২.৯৪ গড়ে ২৫৩ উইকেট শিকার করেছেন। কিন্তু তিনি তার দায়িত্ব ঠিকই পালন করে যাচ্ছেন।
জেমস অ্যান্ডারসনের বয়স যখন ত্রিশ ছিলো, তখন ইশান্ত শর্মা থেকে মাত্র ১৯ উইকেট বেশি শিকার করেছিলেন।
ভারত ২০১৩-১৭ সাল পর্যন্ত ৫০টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। গড়ে প্রতি বছরে দশটি করে টেস্ট ম্যাচ খেলেছে ভারত। ইশান্ত শর্মা যদি আরও ছয় বছর ভারতের মোট টেস্ট ম্যাচের ৯০% ম্যাচ খেলেন, তাহলে তিনি আরও ৫৪ টি টেস্ট ম্যাচ খেলবেন। বর্তমান গড়ে ঐ ৫৪ ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা হবে ১৫৯টি। যার ফলে ক্যারিয়ার শেষে তার মোট উইকেট সংখ্যা দাঁড়াবে ৪১২টি।
স্টুয়ার্ট ব্রড
জেমস অ্যান্ডারসনের সাথে নতুন বল ভাগাভাগি করে নেওয়া স্টুয়ার্ট ব্রড বয়সে অ্যান্ডারসনের চেয়ে চার বছরের ছোট। তাই তিনিও গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং জেমস অ্যান্ডারসনের রেকর্ড টপকানোর সামর্থ্য রাখেন। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা তারই রয়েছে।
স্টুয়ার্ট ব্রড ত্রিশ বছর বয়সে ৩৪৫ উইকেট শিকার করেছিলেন। যা যেকোনো পেসারের চেয়ে বেশি।
বর্তমানে ৩২ বছর বয়সী স্টুয়ার্ট ব্রড ম্যাচপ্রতি গড়ে ৩.৫৩টি করে উইকেট শিকার করে মোট ৪৩১টি উইকেট শিকার করেছেন।
যেহেতু তিনি এখন আর লিমিটেড ওভারের ম্যাচ খেলেন না, তাই ফিট থেকে আরও চার বছর টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারলে তার দ্বারাও গ্লেন ম্যাকগ্রাকে টপকানো সম্ভব।
ইংল্যান্ড গত পাঁঁচ বছর গড়ে ১২.৮টি করে টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। স্টুয়ার্ট ব্রড যদি আগামী চার বছর ইংল্যান্ডের মোট ম্যাচের ৯০% ম্যাচও খেলেন, তাহলে ক্যারিয়ার শেষে তার মোট উইকেট সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৯০টি।
কাগিসো রাবাদা
দক্ষিণ আফ্রিকার আক্রমণাত্মক এবং আগ্রাসী পেসার কাগিসো রাবাদা সবচেয়ে কমবয়সী বোলার হিসাবে টেস্ট ক্রিকেটে দেড়শ উইকেট শিকার করেছেন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত নয় ম্যাচে ৪৬ উইকেট শিকার করে তিনি সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। ইনজুরি বাধা হয়ে না দাঁড়ালে তিনি জেমস অ্যান্ডারসনের রেকর্ড অতিক্রম করার সামর্থ্য রাখেন।
কাগিসো রাবাদা এখন পর্যন্ত ৩২টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৩৯.৩ স্ট্রাইক রেইটে ১৫১ উইকেট শিকার করেছেন। ম্যাচপ্রতি গড়ে উইকেট শিকার করেছেন ৪.৭২টি। ২৩ বছর বয়সী রাবাদা যদি আরও ১৩ বছর আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট খেলেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মোট ম্যাচের ৯০% ম্যাচ খেলতে পারেন, তাহলে তিনি আরও ১০৭টি ম্যাচ খেলবেন। দক্ষিণ আফ্রিকা গত পাঁচ বছরে গড়ে ৯.২টি টেস্ট খেলেছে। তিনি যদি বর্তমান গতিতে উইকেট শিকার করেন তাহলে ঐ ১০৭ ম্যাচে ৫০৮টি উইকেট শিকার করবেন। যার ফলে তার মোট উইকেট সংখ্যা দাঁড়াবে ৬৫৯টি। জেমস অ্যান্ডারসন এবং গ্লেন ম্যাকগ্রাকে টপকানোর সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে কাগিসো রাবাদার।
ফিচার ইমেজ- Cricket.com.au