ভারতের বিপক্ষে লর্ডস টেস্টে আদিল রাশিদ অদ্ভুত এক কীর্তি গড়েন। তিনি দুই ইনিংসে এক বল করারও সুযোগ পাননি। তিনি ব্যাটিংয়ে নামার আগেই জো রুট ইনিংস ঘোষণা করেন এবং স্লিপে ফিল্ডিং না করার দরুন ম্যাচে কোনো ক্যাচও করেননি রাশিদ। আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেছে মাত্র ১৪ বার। এই অদ্ভুত তালিকায় ১৩তম ক্রিকেটার হিসাবে তিনি নাম লেখিয়েছেন।
লর্ডস টেস্টের প্রথম দিন বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। দ্বিতীয় দিনেও বেশ কয়েকবার বৃষ্টিজনিত বাধার কারণে খেলা বন্ধ থাকলে মাত্র ৩৫.২ ওভার মাঠে গড়ায়। লর্ডস টেস্টে আদিল রাশিদের কাজ ছিলো ফিল্ডিংয়ে নামা এবং বৃষ্টি আসলে দৌড়ে মাঠ ত্যাগ করা। আর এতে করেই তিনি ম্যাচ ফি বাবদ ১২,৫০০ পাউন্ড পকেটে পুরেছেন।
মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া কাজে লাগানোর জন্য টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন জো রুট। তার সিদ্ধান্তকে যথার্থ প্রমাণিত করে প্রথম ওভারেই মুরালি বিজয়কে সাজঘরে ফেরান জেমস অ্যান্ডারসন। এরপর তিনি একে একে লোকেশ রাহুল, আজিঙ্কিয়া রাহানে, কুলদ্বীপ যাদব এবং ইশান্ত শর্মাকে ফিরিয়ে দিলে ভারত তাদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ৩৫.২ ওভারে ১০৭ রানে গুটিয়ে যায়। জেমস অ্যান্ডারসন ২০ রানে পাঁচ উইকেট শিকার করলে এবং ব্রড, ওকস ও স্যাম কুরান তাকে যোগ্য সমর্থন যোগানোর কারণে অধিনায়ক জো রুট লেগস্পিনার আদিল রাশিদের শরণাপন্ন হননি।
ইংল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১৩১ রানে পাঁচ উইকেট হারালে আদিল রাশিদের ব্যাট করার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু এরপর জনি বেয়ারস্টোর ৯৩ রান, ক্রিস ওকসের অপরাজিত ১৩৭ রান এবং স্যাম কুরানের ৪০ রানের উপর ভর করে ইংল্যান্ড সাত উইকেটে ৩৯৬ রান সংগ্রহ করলে অধিনায়ক জো রুট ইনিংস ঘোষণা করে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮৯ রানে পিছিয়ে থাকা ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে আবারও জেমস অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রড আঘাত হানলে আদিল রাশিদকে বোলিং আক্রমণে আনেননি রুট।
জেমস অ্যান্ডারসন দ্রুত দুই ওপেনারকে সাজঘরে ফেরত পাঠানোর পর ব্রড এক স্পেলে পূজারা, রাহানে, কোহলি এবং কার্তিককে আউট করে ইংল্যান্ডের জয় সময়ের ব্যাপারে পরিণত করেছিলেন।
প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়া অ্যান্ডারসন দ্বিতীয় ইনিংসে চার উইকেট এবং স্টুয়ার্ট ব্রড চার উইকেট শিকার করলে ভারত তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৭ ওভারে ১৩০ রানে গুটিয়ে যায়। যার ফলে ইংল্যান্ড লর্ডস টেস্টে ইনিংস ও ১৫৯ রানের ব্যবধানে জয় পায়।
ম্যাচে জেমস অ্যান্ডারসন ৪৩ রানের বিনিময়ে নয় উউইকেট শিকার করলে আদিল রাশিদ তার স্পিন ভেলকি দেখানোর সুযোগ পাননি।
ভারতের বিপক্ষে লিমিটেড ওভারের ক্রিকেটে ভালো বোলিং করার সুবাদে টেস্ট দলে জায়গা পান আদিল রাশিদ। রঙিন পোশাকে বিরাট কোহলিকে তিনি ভালোই ভুগিয়েছেন। তাই নতুন নির্বাচক এড স্মিথ তাকে টেস্ট দলে ডাক দেন।
আদিল রাশিদকে হঠাৎ করে টেস্ট দলে ডাক দেওয়ার ফলে তাকে বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। রাশিদের কাউন্টি ক্লাব ইয়র্কশায়ারের সাথে বড় ধরনের গণ্ডগোল বেধে যায় এড স্মিথের। কারণ আদিল রাশিদ এই মৌসুমে ইয়র্কশায়ারের সাথে শুধুমাত্র সাদা বলের ক্রিকেট খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। এতেই বোঝা যায়, রাশিদও ভেবে নিয়েছিলেন যে তার আর ইংল্যান্ড টেস্ট দলে ফেরা হবে না।
সব আলোচনা সমালোচনা শেষে এজবাস্টনে সিরিজের প্রথম টেস্টে একাদশে ছিলেন আদিল রাশিদ। লো স্কোরিং ম্যাচে দুই ইনিংসে ১৬ এবং ১৩ রানের ইনিংস খেলার পাশাপাশি ম্যাচে ৪০ রানের বিনিময়ে তিন উইকেট শিকার করেছিলেন এই লেগস্পিনার।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন অদ্ভুত রেকর্ড গড়া ক্রিকেটারদের তালিকায় ১৩ জনের নাম রয়েছে। রাশিদের আগে সর্বশেষ ক্রিকেটার হিসাবে এই তালিকায় নাম লেখিয়েছিলেন ভারতের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ঋদ্ধিমান সাহা। তিনি ২০১৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইনডোর টেস্টের দুই ইনিংসের কোনো ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পাননি। ঐ ম্যাচে ভারতের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন। উইকেটরক্ষক হিসাবে পুরো ম্যাচে কিপিং করলেও কোনো ক্যাচ বা স্ট্যাম্পিংয়ে অবদান রাখতে পারেননি ঋদ্ধিমান সাহা।
১৩ বছর আগে সর্বশেষ ইংলিশ ক্রিকেটার হিসাবে এই তালিকায় নাম লেখিয়েছিলেন গ্যারেথ ব্যাটি।
২০০৫ সালের ২৬শে মে বাংলাদেশের বিপক্ষে লর্ডস টেস্টে ব্যাটিং এবং বোলিং করার সুযোগ পাননি ব্যাটি। ফিল্ডার হিসাবেও কোনো ক্যাচ তালুবন্দী করতে পারেননি তিনি।
ঐ ম্যাচের দুই ইনিংসে বাংলাদেশ যথাক্রমে ৩৮.২ ওভার এবং ৩৯.৫ ওভার ব্যাটিং করেছিলো। ইংল্যান্ডের চার পেসার মিলে বাংলাদেশের সবক’টি উইকেট নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন। এই তালিকায় নাম লেখানো বেশিরভাগ ক্রিকেটার লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং খণ্ডকালীন বোলার। স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান কিংবা বোলার হিসাবে ম্যাচে একবারও বোলিং বা ব্যাটিং করার সুযোগ পায়নি এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা একদম কম। আদিল রাশিদ স্পেশালিষ্ট বোলার হিসাবে খেললেও ম্যাচে তার প্রয়োজন পড়েনি।
সর্বপ্রথম ক্রিকেটার হিসাবে এই তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান পার্সি চ্যাপম্যান।
১৯২৪ সালের ২৮শে জুন লর্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এমন অদ্ভুতুড়ে কীর্তি গড়েন চ্যাপম্যান। ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকা ১১৬ ওভারে ২৭৩ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ইংল্যান্ড ব্যাট করতে নেমে জ্যাক হবসের ২১১ রান, হার্বাট সাটক্লিপের ১২২ রান, ফ্রাঙ্ক ওলির অপরাজিত ১৩৪ রান এবং প্যাটসি হেনড্রেনের অপরাজিত ৫০ রানের উপর ভর করে দুই উইকেটে ৫৩১ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিলো ইংল্যান্ড। যার ফলে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান পার্সি চ্যাপম্যান ব্যাট করার সুযোগ পাননি।
দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা ১২৩.৪ ওভার খেলে ২৪০ রানে সবক’টি উইকেট হারালে ইংল্যান্ড ইনিংস ও ১৮ রানের ব্যবধানে জয়লাভ করে।
দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের ছয়জন বোলার আক্রমণে আসলেও প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে মোট ২২ উইকেট শিকার করা পার্সি চ্যাপম্যানকে আক্রমণে আনেননি অধিনায়ক আর্থার জিলিগান।
এই তালিকায় একমাত্র ক্রিকেটার হিসাবে একাধিক বার নাম লিখিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার বিল জন্সটন। এই সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার হাঁটুর ইনজুরির কারণে তার ক্যারিয়ার বেশি দূর টেনে নিতে পারেননি। জন্সটন বাঁহাতি পেস বোলিংয়ের পাশাপাশি বাঁহাতি স্পিন বলও করতেন।
১৯৫৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টানা দুই ম্যাচে দলে থাকলেও ব্যাটিং ও বোলিং কিছুই করেননি বিল জন্সটন। ইনজুরির কারণে দলে থাকলেও দলের কোনো কাজে আসতে পারেননি। শেষপর্যন্ত ঐ সিরিজ শেষে ক্রিকেটকে বিদায় জানান ৪০ টেস্টে ১৬০ শিকার করা বিল জন্সটন।
ফিচার ইমেজ- Getty Images