Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ভিভ রিচার্ডস: আক্রমণই ছিল যার ব্যাটিংয়ের শেষ কথা

স্যার আইজ্যাক ভিভিয়ান আলেকজান্ডার রিচার্ডস; নামের বহর দেখে আতঙ্কিত হচ্ছেন না তো? আপনার জন্য ঠিক আতঙ্কের না হলেও বোলারদের জন্য একসময় মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম ছিলেন তিনি। নাম শুনে কিছুটা হয়তো আঁচ করতে পারছেন, স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস।

অনেকের কাছে ক্রিকেটের আসল ‘মাস্টার ব্লাস্টার’ এই ক্যারিবিয়ান গ্রেট। হেলমেট নয়, মেরুন রঙের টুপি মাথায় দিয়ে চুইংগাম চিবুতে চিবুতে ‘কিং ভিভ’ উইকেটে এসে দাঁড়াতেন। এরপর একেবারে প্রথম বল থেকেই প্রতিপক্ষের বোলারদের উপর চড়াও হতেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আক্রমণই ছিল যার ব্যাটিংয়ের শেষ কথা। ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে আগ্রাসী আর খুনে মেজাজের ভিভ প্রতিপক্ষের বোলিং লাইনআপকে স্রেফ খুন করতেন।

ফাস্ট বোলারদের স্বর্ণযুগে তিনি ছিলেন ফাস্ট বোলারদের যম। ডেনিস লিলি, জেফ থমসন, ইমরান খান কিংবা কপিল দেব- কেউই ভিভের হাত থেকে রক্ষা পাননি। এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটে সতীর্থ ম্যালকম মার্শাল, মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নার বা অ্যান্ডি রবার্টসের মতো দানবদের নিয়েও ছেলেখেলা করেছেন।

viv richards
Image Courtesy: PA Photos

হুক আর পুল শটে ভিভকে সর্বকালের সেরাদের একজন মনে করা হয়। অনসাইডে ফ্লিক ছিল ভিভের ট্রেডমার্ক শট। পারফেক্ট টাইমিং, পাওয়ার হিটিংয়ে অসামান্য দক্ষতা, দুর্দান্ত রিফ্লেক্স, নিখুঁত স্ট্যন্স- এই জায়গাগুলোতে ভিভ ছিলেন সবার চেয়ে আলাদা। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের গুড লেন্থের বলকে মূহুর্তেই সীমানা ছাড়া করতেন। তিনি সব সময় ‘অ্যাক্রস দ্য লাইনে’ শট খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন, তাই নিজের আত্মজীবনীর নামও দেন ‘হিটিং অ্যাক্রস দ্য লাইন’।

viv richards
Image Courtesy: Getty Images

ওয়াসিম আকরামের ভাষায়, “মার্টিন ক্রো, গাভাস্কারদের বিপক্ষে বল করা কঠিন ছিল, কিন্তু ভিভকে বল করতে গেলে রীতিমতো গলা শুকিয়ে আসত আমার।

শুধু বোলাররা নয়, প্রতিপক্ষের ফিল্ডাররা পর্যন্ত ভিভকে বিশেষ সমীহের চোখে দেখত। সাবেক উইকেটরক্ষক জেফ্রি ডুজনের ভাষায়, “নতুন ব্যাটসম্যান ক্রিজে আসলে সাধারণত ফিল্ডাররা দুই ধাপ এগিয়ে আসে। কিন্তু ভিভের বেলায় দেখেছি তার ঠিক উল্টো। ভিভ নামলে ফিল্ডাররা বরং দুই ধাপ পিছিয়ে যেত।

ব্যাট হাতে শুধু মারমুখীই ছিলেন না, ছিলেন অসম্ভব রকমের ধারাবাহিক। ১৯৭৬-৮৮ পর্যন্ত টেস্টে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫৫ গড়ে রান করেছেন ভিভ। তার ধারাবাহিকতার ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা পেতে এই একটা পরিসংখ্যানই যথেষ্ট।

তখনকার সময়ে টেস্টে ৮৬ স্ট্রাইক রেটে ১৮২ ইনিংসে তুলেছেন ৮,৫৪০ রান। গড় যেখানে ৫০.২৪। আছে ২৪ সেঞ্চুরি এবং ৪৫ হাফ সেঞ্চুরি। অধিনায়ক হিসেবেও ভিভ ছিলেন দুর্দান্ত। তার অধীনে খেলা ৫০ টেস্টের ২৭টিতেই জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হেরেছে মাত্র আটটিতে, বাকিগুলো ড্র। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো তার অধীনে খেলা ১২ সিরিজের একটিতেও হারেনি দল, যা একটি বিশ্বরেকর্ড।

viv richards
Image Courtesy: Getty Images

ওয়ানডেতে ক্যারিয়ার জুড়ে প্রায় ৯০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে গেছেন, তখনকার ক্রিকেটে যা ছিল অবিশ্বাস্য। ১৬৭ ইনিংসে ৪৭ গড়ে রান করেছেন ৬,৭২১। একদিনের ক্রিকেটে ১১ শতক আর ৪৫ অর্ধশতকের মালিক কিং ভিভ। তিনি ছিলেন সত্যিকারের ম্যাচ উইনার। ১৮৭ ওয়ানডেতে ৩১ বার হয়েছেন ম্যাচসেরা। গড়ে ৬ ম্যাচে একবার। ম্যাচ এবং ম্যাচসেরার অনুপাতে যেটি সর্বোচ্চ।

তার সময়ে টেস্টে এবং ওয়ানডেতে সবচেয়ে কম বলে সেঞ্চুরির রেকর্ডও তার। ওয়ানডেতে ৭২ বলে এবং টেস্টে ৫৬ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। ভিভ ছিলেন বড় ম্যাচের বড় প্লেয়ার। যেকোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে তার গড় ৫৬।

বিশ্বকাপের প্রথম আসরে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি ভিভের ব্যাট। অবশ্য দ্বিতীয় আসরেই নিজেকে স্ব-মহিমায় মেলে ধরেন। ‘৭৯ এর বিশ্বকাপে এজবাস্টনে ভারতের বিপক্ষে অপরাজিত ২৮ রানের ইনিংস দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা ভিভ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লর্ডসে ১৩৮ (অপরাজিত) ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে দলকে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা জেতান। ফাইনালের ম্যান অফ ম্যাচের পুরস্কারও উঠেছিল তার হাতে। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৪২ রানের মহামূল্যবান ইনিংস। সেই আসরে গর্ডন গ্রিনিজের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেন ভিভ। ৪ ম্যাচে করেছিলেন ২১৭ রান, যার দুই ইনিংসেই ছিলেন অপরাজিত।

viv richards
Image Courtesy: Getty Images

‘৮৩ বিশ্বকাপেও দারুণ ছন্দে ছিল ভিভের উইলো। গ্রুপপর্বে ভারতের বিপক্ষে ১১৯, পরের ম্যাচেই আবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অপরাজিত ৯৫। দুটি ইনিংসই দলকে সেমিফাইনালে তুলতে দারুণ ভূমিকা রাখে। এরপর সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তার অপরাজিত ৮০ রানের উপর ভর করে ফাইনালের টিকিট কাটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যদিও ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে হ্যাটট্রিক শিরোপা থেকে বঞ্চিত হয় ক্লাইভ লয়েডের দল। ‘৮৩ সালের বিশ্বকাপেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন ভিভ। ৮ ম্যাচে ৭৩.৪০ গড়ে তার রান ছিল ৩৬৭।

‘৮৭ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২৫ বলে ১৮১ রানের বিস্ফোরক ইনিংসটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। একই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে ভিভের রান ছিল যথাক্রমে ৫১ এবং ৬৭। ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৪টি বিশ্বকাপ খেলেছেন ভিভ। বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে ২১ ম্যাচে ৬৩.৩১ গড়ে তার রান ১,০১৩, যেখানে ৩ শতকের সাথে আছে ৫ অর্ধশতক।

১৯৯১ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন এই অল টাইম গ্রেট।

viv richards
Image Courtesy: Getty Images

শেষ করা যাক হেলমেট না পরা নিয়ে ভিভের মূল্যায়ন দিয়ে। সম্প্রতি সাবেক অজি অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসনের সাথে পডকাস্টে এক আলাপচারিতায় ভিভ জানিয়েছেন, তার হেলমেট ছাড়া মাঠে নামার কারণ, “খেলার জন্য আমার ভালোবাসাটা ছিল এমন যে ওটা (হেলমেট না পরা) করতে গিয়ে মরলেও কোনো আক্ষেপ থাকত না। খেলাটা আমি ভালোবাসি। আর সেটি যদি ওভাবে করতে চাই তবে এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, “অনেক পুরুষ ও নারী ক্রীড়াবিদকে এই ঝুঁকি নিতে দেখেছি। আমি তাদের সম্মান করি। ফর্মুলা ওয়ান চালানোর ঝুঁকি তো এর (হেলমেট না পরে ব্যাটিং) চেয়েও বেশি!” ভিভের এ কথা বলার পর ওয়াটসনের পাল্টা প্রশ্ন, “কোনটা? হেলমেট ছাড়াই ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতির বল খেলা?

এর আগের এক সাক্ষাৎকারে ভিভ জানান, মুখের সুরক্ষার জন্য এক দন্ত চিকিৎসক তাকে গার্ড রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেটিও তিনি নির্দ্বিধায় অগ্রাহ্য করেছেন। তার মতে, গার্ড রাখলে চুইংগাম চিবুতে অসুবিধা হয়, তাই ওটা কয়েকবার চেষ্টা করেও সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য হন। তাছাড়া মাঠে প্রতিপক্ষের ১১ জন, সাথে আম্পায়ার- সব মিলিয়ে নিজেকে সংখ্যালঘু মনে হত, তাই একমাত্র সঙ্গী হিসেবে ওটাই মুখে থাকত। এজন্যই মূলত কখনও মুখে গার্ড পরা হয়নি!

Related Articles