Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ন্যু ক্যাম্পের ডাচ তারকারা

৭৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে আয়াক্সের প্রতিভাবান মিডফিল্ডার ডি ইয়ংকে সদ্যই দলে ভেড়ালো স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা। আর এই খেলোয়াড়ের অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে ২০তম ডাচ খেলোয়াড় হিসেবে ক্যাম্প ন্যু-তে পা রাখতে যাচ্ছেন ডি ইয়ং। সেই ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজন ডাচ খেলোয়াড়ই ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটিয়ে এসেছেন এই ক্লাবে। তবে সবাই যে নিজেদের প্রতি রাখা আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছেন, তা কিন্তু নয়। এর যোগ্য উদাহরণ ইয়োহান ক্রুয়েফেরই পুত্র জর্ডি ক্রুয়েফ। বর্তমানেও বার্সেলোনাতে আছেন ডাচ গোলরক্ষক জেসপার সিলেসেন। শুধু খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রেই নয়, কাতালানদের ডাচ মেলবন্ধন দেখা গিয়েছে ডাগ আউটেও। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড ও ইয়োহান ক্রুয়েফ। তবে আজ আমরা জানবো বার্সেলোনার ইতিহাসে স্বনামধন্য কয়েকজন ডাচ ফুটবলারের কীর্তিকলাপ।

ফিলিপ কোকু

ফিলিপ কোকু নামটি তেমন একটা পরিচিত না হলের বার্সেলোনার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরেই লিখা থাকবে এই ডাচম্যানের নাম। ২০১১ ও ২০১২-তে লিওনেল মেসি রেকর্ড ভাঙার আগে বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে সবচেয়ে বেশি লা লিগা (২০৫) ও সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (২৯১) খেলার রেকর্ডটি ছিলো কোকুর দখলেই।

১৯৯৮ সালে ডাচ ক্লাব পিএসভি থেকে কোকুর আগমন ঘটে বার্সেলোনায়। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার পজিশনে খেলা এই খেলোয়াড় খুব অল্প সময়েই কোচিং স্টাফদের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি গোল করতেও পটু ছিলেন তিনি। প্রথম মৌসুমেই পিভট রোল পালন করেন তিনি। সেই মৌসুমে বার্সেলোনাকে লা লিগা শিরোপা জেতাতে গিয়ে ৩৬ ম্যাচে ১২ গোল করেন। একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের জন্য পরিসংখ্যানটি বেশ আকর্ষণীয়।

ফিলিপ কোকু; Image Source: Daily Mail

২০০২ সালে কোচ লুই ভ্যান গাল কোকুকে ক্লাবের সহ-অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করেন। তবে ২০০২-০৩ মৌসুমেই তার সাথে করা চুক্তি শেষ হয়ে যেত, যদি না কোকু জেদ ধরে থেকে যেতেন বার্সায়। কোকুর ইচ্ছাতেই আরো এক বছর বার্সেলোনায় থেকে পরবর্তীতে ফিরে যান পিএসভিতে। বিদায়ের আগে ক্লাবের প্রতি তার আনুগত্যের জন্য তৎকালীন ক্লাব প্রেসিডেন্ট হুয়ান লাপোর্তা পুরস্কৃত করেন এই ডাচ খেলোয়াড়কে।

এডগার ডেভিডস

মাত্র আধা মৌসুম বার্সেলোনা থেকেই বিরাট এক প্রভাব বিস্তার করে গেছেন এই প্রতিভাবান মিডফিল্ডার। ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডের আমলে জুভেন্টাস থেকে ধারে কাতালানরা ন্যু ক্যাম্পে নিয়ে আসে এডগার ডেভিডসকে। তার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত লিগ কিংবা চ্যাম্পিয়নস লিগ দুই জায়গাতেই খাবি খাচ্ছিলো বার্সেলোনা। নিজের চাকরি নিয়েও চিন্তিত ছিলেন রাইকার্ড। কিন্তু ডেভিডস আসার সাথে সাথেই দলের পরিবর্তন ঘটে চোখে পড়ার মতো। আধ মৌসুমেই তার প্রভাবে বার্সেলোনা সেই মৌসুমে পয়েন্ট টেবিল দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। ডেভিডস চলে যাওয়ার পরও রাইকার্ড নিজের দল ততদিনে গুছিয়ে ফেলেন, যার স্বরূপ টানা দু’টি লা লিগা ছাড়াও একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতেন তিনি।

এডগার ডেভিডস; Image Source: Soccerraid.com

জিওভানি ভ্যান ব্রনক্রোস্ট

২০০৩ সালে আর্সেনাল থেকে বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার পরপরই লেফটব্যাকের জায়গাটি নিজের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেন জিওভানি ভ্যান ব্রনক্রোস্ট। চার বছর ধরে দলের নিয়মিত মুখ ছিলেন এই ডাচ ডিফেন্ডার। প্রথমে আর্সেনাল থেকে ধারে আনলেও পরবর্তীতে বার্সেলোনা তার সাথে চার বছরের চুক্তি করে।

জিওভানি ভ্যান ব্রনক্রোস্ট; Image Source: Reuters

এই চার বছরে দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে ২০০৪-০৫ ও ২০০৫-০৬ মৌসুমে টানা দু’টি লা লিগা জেতেন তিনি। এর পাশাপাশি ২০০৬ সালে নিজের সাবেক ক্লাব আর্সেনালকে হারিয়ে জেতেন আরাধ্য চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাও। চার বছরে কাতালানদের হয়ে ১৫০টির উপর ম্যাচ খেলেছেন ব্রনক্রোস্ট।

প্যাট্রিক ক্লাইভার্ট

১৯৯৮ সালে রিভালদোর সাথে এসি মিলান থেকে বার্সেলোনা দলে ভেড়ায় ডাচ ফরোয়ার্ড প্যাট্রিক ক্লাইভার্টকে। পরবর্তী ছয় বছর ক্লাবটির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকেন তিনি। গোলের সাথে সাথে নিয়মিত গোলে সহায়তাও করে যেতে থাকেন ক্লাইভার্ট। ন্যু ক্যাম্পে কাটানো ছয় বসন্তে মাত্র দু’বার ২০টির বেশি গোল করতে ব্যর্থ হন তিনি, সেটাও ইনজুরির কারণে।

প্যাট্রিক ক্লাইভার্ট; Image Source: Goal.com

রিভালদোর সাথে এক ভয়ঙ্কর জুটি গড়ে প্রথম মৌসুমেই বার্সেলোনাকে জেতান লিগ শিরোপা। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, ক্লাইভার্ট বার্সেলোনার হয়ে জিতেছেন ঐ একটি শিরোপাই।

তবে মানুষ ক্লাইভার্টকে মনে রেখেছে তার খেলার সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে। দুর্দান্ত গতি আর অসাধারণ ড্রিবলিংয়ের মিশেলে মাঠে ক্লাইভার্ট ছিলেন এক নিপুণ শিল্পী। ২০০৪ সালে বার্সেলোনার সাথে চুক্তি শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে তিনি খেলছেন ২৪৯টি ম্যাচ, গোল করেছিলেন ১২৪টি। বার্সা ক্যারিয়ারে এত শিরোপা না জিতলেও ক্লাইভার্ট বার্সা সমর্থকদের মধ্যমণি হয়েই থাকবেন।

ফ্রাঙ্ক ডি বোর

সহোদর রোনাল্ড ডি বোরের সমসাময়িকে বার্সেলোনায় যোগ দিলেও ক্লাবে রোনাল্ডের চেয়ে ফ্রাঙ্ক ডি বোরের অবদান ছিলো ঢের বেশি। ডি বোর ছিলেন একজন বল-প্লেয়িং ডিফেন্ডার। সেই সময়ে বল-প্লেয়িং ডিফেন্ডারদের দেখা পাওয়াই ভার ছিলো। অসাধারণ ট্যাকলিং দক্ষতার পাশাপাশি মিডফিল্ডজুড়ে দারুণ সব পাসও দিতে পারতেন এই ডাচ খেলোয়াড়। তাই ক্লাইভার্টের মতো তেমন শিরোপা না জিততে পারলেও বার্সেলোনার ইতিহাসে অন্যতম সেরা এক রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।

ফ্রাঙ্ক ডি বোর; Image Source: Talksports

চারটি বসন্ত ন্যু ক্যাম্পে কাটানোর পর ২০০৩ সালে ক্লাবকে বিদায় জানান ডি বোর। এই চার মৌসুমে ক্লাবের জার্সি গায়ে চাপিয়েছেন সর্বমোট ২১৫ বার। শুধু বার্সেলোনাই নয়, ইতিহাসের অন্যতম সেরা কয়েকজন ডিফেন্ডারদের মধ্যেও ফ্রাঙ্ক ডি বোরের নাম উল্লেখযোগ্য।

মার্ক ওভারমার্স

আর্সেনালের হয়ে কয়েকটি দুর্দান্ত মৌসুম কাটানোর পর ২০০০ সালে বার্সেলোনায় যোগ দেন মার্ক ওভারমার্স। তাকে দলে ভেড়াতে গিয়ে বার্সেলোনা খরচ করে ২৫ মিলিয়ন ইউরো, যা সেই সময়ে যেকোনো ডাচ খেলোয়াড়ের জন্য সর্বোচ্চ ব্যয় ছিল।

বার্সেলোনার কঠিন সময়ে দলে যোগ দেওয়া ওভারমার্স কোনো শিরোপা না জিতলেও নিজের খেলার ধরন দিয়ে মন জয় করে নিয়েছিলেন বার্সেলোনা সমর্থকসহ পুরো বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের।

মার্ক ওভারমার্স; Image Source: Marca

শুরুতেই ওভারমার্স ‘রোডরানার’ উপাধি পেয়ে যান। রক্ষণে খেলা এই ডাচম্যানের ছিলো দুর্দান্ত গতি। যেকোনো রক্ষণ দেয়াল ক্ষিপ্র গতিতে পার হয়ে যাওয়ার অভাবনীয় ক্ষমতা ছিলো তার। যদিও হুটহাট ইনজুরির জন্য নিজেকে মেলে ধরার সময় পেয়েছেন খুবই কম। এই ইনজুরির জন্যই মাত্র ৩১ বছর বয়সে বার্সেলোনায় থাকতেই ২০০৪ সালে ক্যারিয়ারের ইতি টানেন তিনি। ন্যু ক্যাম্পের চার মৌসুমে ওভারমার্স গোল করেছেন ১৯টি এবং সহায়তা করা গোলের সংখ্যাও ১৯টি।

রোনাল্ড কোম্যান

৩৫০ ম্যাচে ১০৬ গোল। গড়ে প্রতি চার ম্যাচে একটি, অথবা প্রতি মৌসুমে ১৮টি। একজন সাধারণ মানের স্ট্রাইকারের জন্যই এই পরিসংখ্যান মানেই পোয়াবারো। কিন্তু ঠিক এতগুলো গোলই করেছেন রোনাল্ড কোম্যান। কিন্তু স্ট্রাইকার নয়, একজন ডিফেন্ডার হয়ে।

১৯৮৯ মৌসুমে পিএসভি আইন্দহোফেন থেকে বার্সেলোনায় আসেন এই ডাচম্যান। পিএসভির হয়ে ৯৮ ম্যাচে ৫১ গোল করেছিলেন তিনি। সেই ধারা অব্যাহত রাখেন ন্যু ক্যাম্পে এসেও। তবে সেই সময় সেটপিসগুলো নিতেন কোম্যানই। তবে কোম্যানের ক্যারিয়ারসেরা গোলটি আসে ১৯৯২ সালে। সেই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে মুখোমুখি হয় বার্সেলোনা ও সাম্পদোরিয়া। নব্বই মিনিট শেষে গোলশূন্য ড্র থাকায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। আর অতিরিক্ত সময়েই ফ্রি কিক থেকে গোল করে বার্সেলোনাকে সর্বপ্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের শিরোপা এনে দেন তিনি। ক্লাবটির হয়ে টানা ২৫টি পেনাল্টি গোল করে বিশ্বরেকর্ডও করেন তিনি, যা টিকে আছে এখনো।

রোনাল্ড কোম্যান; Image Source: Liverpool echo

কোম্যানের ট্যাকলিং আর গোল করার অসাধারণ ক্ষমতার জের ধরেই ১৯৯০-৯১ মৌসুম থেকে টানা চারটি লিগ শিরোপা জেতে বার্সেলোনা। পাশাপাশি তিনটি সুপারকোপা ও কোপা দেল রেও জিতে নেয় কাতালান ক্লাবটি। কোম্যানের অবদানই তাকে জায়গা করে দিয়েছে বার্সেলোনার ইতিহাসের সর্বকালের সেরা একাদশে।

ইয়োহান ক্রুইফ

সর্বপ্রথম ডাচম্যান হিসেবে ন্যু ক্যাম্পে আগমন তার। বিদায় নেওয়ার বেলাতেই সর্বকালের সেরা ডাচম্যান হিসেবেই বিদায় নিয়েছেন ফুটবল থেকে। তিনি আর কেউ নন, ইয়োহান ক্রুইফ। ফুটবলার কিংবা কোচ, যে দায়িত্বেই ছিলেন, বার্সেলোনাকে রাঙিয়ে গেছেন সর্বদাই।

এই ফুটবল কিংবদন্তী ১৯৭৩ সালে আয়াক্স ছেড়ে যোগ দেন বার্সেলোনায়। পাঁচ বছর বার্সায় থাকাকালীন অবস্থায় জিতে নেন লা লিগা ও কোপা দেল রে শিরোপা। ১৯৭৪ সালে স্বীকৃতি পান বছরের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে। তবে শুধু নিজের খেলাই নয়, পুরো বার্সেলোনার খেলার ধরন বদলে দিয়েছিলেন তিনি।

ইয়োহান ক্রুইফ Image Source: Barcelonas

‘টোটাল ফুটবল’ এর জনক ক্রুইফ কোচ হিসেবেও বার্সেলোনাকে নিয়ে গিয়েছিলেন এক অনন্য উচ্চতায়। ডাগআউটে আট মৌসুম থেকে জিতে নিয়েছিলেন সব শিরোপাই, যার মধ্যে ছিল সর্বপ্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাও। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, ক্রুইফই বার্সেলোনার ইতিহাসে সেরা ডাচম্যান।

This Bangla article is about the famous Dutch player who dazzled in Barcelona. Necessary references are hyperlinked in the article.

Featured Image: beIN Sports

Related Articles