Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্রুতই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থেকে অবসর নিয়েছেন যেসব ফুটবলাররা

ক্লাব ক্যারিয়ারে টাকা পয়সার ছড়াছড়ির পরও একজন খেলোয়াড় দেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে সম্মানের পাশাপাশি আবেগও কাজ করে এখানে। দেশের হয়ে খেলার সময় তাই নিজের সবটুকু উজাড় করে খেলেন। তারপরও মিডিয়া, দর্শক কিংবা কোচের সাথে বনিবনা হওয়ায় অনেকে অল্প বয়সেই ইতি টানেন দেশের হয়ে খেলার ইচ্ছা। চলুন দেখে আসা যাক এমন কিছু ফুটবলার যারা দেশকে অনেক কিছু দেবার আগেই অবসর নিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থেকে।

মেসুত ওজিল (জার্মানি)

সময়ের অন্যতম সেরা এই প্রতিভাবান মিডফিল্ডার দিনকয়েক আগেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। মাত্র ২৯ বছর বয়সে এই সিদ্ধান্তের পিছনে অনেকাংশেই দায়ী জার্মান মিডিয়া। ২০১৪ সালে জার্মানিকে চতুর্থ বিশ্বকাপ জেতানো ওজিল ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স আশানুরূপ ছিলোনা। ডাই ম্যানশ্যাফটরাও বাদ পড়ে গ্রুপ পর্বেই। সেই থেকে সমালোচনা পিছু ছাড়ছিলনা এই আর্সেনাল খেলোয়াড়ের। তবে জার্মান মিডিয়া যখন বর্ণবাদের জন্য ওজিলকে কাঠগড়ায় তোলে তখন আর এত সমালোচনা নিতে পারেননি ওজিল। ঘটনার সূত্রপাত তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে বিশ্বকাপের আগে একটি ছবি নিয়ে। তার্কিশ বাবা-মার ঘরে জন্ম নেওয়া ওজিলকে সেই সূত্র ধরে স্বীকার হতে হয় বর্ণবাদের। জার্মান মিডিয়ার পাশাপাশি জনগণের কাছেও বৈষম্যের স্বীকার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন মেসুত ওজিল। জার্মানির হয়ে ৯২ ম্যাচে ২৩ গোলের পাশাপাশি ৪০টি গোলে সহায়তা করেছেন তিনি।

মেসুত ওজিল; Image Source: Goal

রাদজা নাইঙ্গোলান (বেলজিয়াম)

রোমার হয়ে অসাধারণ একটি মৌসুম কাটানোর পরও বেলজিয়াম বিশ্বকাপ দলে ব্রাত্য হয়ে থাকেন। কোচ রবার্তো মার্টিনেজের সাথে ঝামেলার জন্যই দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। ২০১৪ বিশ্বকাপেও প্রাথমিক দলে থাকার পরও ফাইনাল স্কোয়াডে জায়গা পাননি। সেইজন্য পাখির চোখ করেছিলেন ২০১৮ বিশ্বকাপকে। রোমার হয়ে দুর্দান্ত খেলার পরও তার আশা পূরণ হয়নি। তাই জাতীয় দলকে বিদায় জানিয়ে দেন ৩০ বছর বয়সেই। বেলজিয়ামের হয়ে ৩০ ম্যাচে ৬টি গোল করেছেন নাইঙ্গোলান।

রাদজা নাইঙ্গোলান; Image Source: Gettty Images

ফ্রাঙ্ক রিবেরি (ফ্রান্স)

বায়ার্ন মিউনিখ এই ফরাসি উইঙ্গার ২০১৪ বিশ্বকাপের পর ৩১ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থেকে অবসর নেন। অতিরিক্ত সমালোচনা আর মিডিয়ার দোষারোপে বিরক্ত হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন তিনি। ২০০৬ রানার্স আপ হওয়া বিশ্বকাপ দল থেকেই পরবর্তী ৮ বছর লা ব্লুজদের অপরিহার্য অংশ ছিলেন রিবেরি। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ৮১টি ম্যাচ খেলে ১৬ টি গোল করেছেন। পরিবারকে বেশি সময় দেওয়ার কারণ দেখিয়ে অবসরের ঘোষণা দেন ‘দ্য জুয়েল অফ ফ্রেঞ্চ ফুটবল’। তার আগে ফ্রান্সের হয়ে খেলেছেন তিনটি বিশ্বকাপ।

ফ্রাঙ্ক রিবেরি; Image Source: Pinterest

কেভিন প্রিন্স বোয়াটেং (ঘানা)

মাত্র ২৪ বছর বয়সেই ঘানার জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন প্রতিভাবান এই ফরোয়ার্ড। জার্মানির হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও একটা সময় আদি নিবাস ঘানাকেই প্রতিনিধিত্ব করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ২০১০ বিশ্বকাপে ঘানার হয়ে অসাধারণ একটি বিশ্বকাপ কাটানোর পর আরো চার বছর দলের সাথে থাকেন তিনি। ২০১৪ সালে এসে অবসরের ঘোষনা দেন এই সাসুয়েলো ফরোয়ার্ড। কারণ হিসেবে দেখান যে তিনি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ গুলোতে ইনজুরিতে পড়তে চান না। সেই দরুন জাতীয় দল পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন জার্মানিতে জন্ম নেওয়া এই ফুটবলার। ঘানার হয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে ২টি গোল করেছেন কেভিন প্রিন্স বোয়েটাং।

কেভিন প্রিন্স বোয়াটেং; Image Source: FIFA

ফ্রান্সেসকো টট্টি (ইতালি)

ইতালিয়ান ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম এক বিখ্যাত ফুটবলার ফ্রান্সেসকো টট্টি। এই রোমা কিংবদন্তী মাত্র ৩০ বছর বয়সেই ইতালিকে বিদায় জানান। যেখানে তিনি রোমার হয়ে খেলেছেন আরো ১০ বছর। ২০১৭ সালে এসে ফুটবল ক্যারিয়ারকে বিদায় বললেও জাতীয় দলকে বিদায় বলে দেন ২০০৬ বিশ্বকাপ জেতার পরপরই। তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ দিতে এবং নিজের ক্লাব ক্যারিয়ারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে জাতীয় দল থেকে সরে দাঁড়ান। ইতালিকে বিশ্বকাপ জেতাতে অনবদ্য অবদান ছিলো রোমার এই মিডফিল্ডারের। আজ্জুরিদের হয়ে সর্বমোট ৫৮ ম্যাচ খেলে ৯টি গোল করেছেন এই ফুটবল কিংবদন্তী।

ফ্রান্সেসকো টট্টি; Image Source: These Football Image

সরদার আজমুন (ইরান)

রুবিন কাজান ফরোয়ার্ড সরদার আজমুন ২০১৮ বিশ্বকাপের পরপরই জাতীয় দলকে বিদায় জানান। প্রতিভাবান এই খেলোয়াড় মাত্র ২৩ বছর বয়সেই ইরান ফুটবল দল থেকে অবসর নেন। ইরানের হয়ে ৩৬ ম্যাচে ২৩ গোল করা এই খেলোয়াড়ের উপর দর্শকদের আস্থা ছিলো অনেক। কিন্তু বিশ্বকাপে সেই আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি তিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপে ইরান গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যায়। যার ফলস্বরুপ অনেক ভারি ভারি সমালোচনার মুখে পড়তে হয় সরদার আজমুনকে। সমালোচনার জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন সরদারের মা। সেজন্য মায়ের পাশে থাকার জন্য ইরান জাতীয় দল থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপের পরপরই এই আকস্মিক ঘোষণা দেন সরদার আজমুন। তবে অবসর ভেঙ্গে ইরানের জার্সি আবার গায়ে জড়ানোর সম্ভাবনাও রয়েছে অনেক।

সরদার আজমুন; Image Source: Youtube

কার্লোস রোয়া (আর্জেন্টিনা)

অনেকটা অদ্ভুত কারণেই জাতীয় দলকে বিদায় জানান তিনি। নিজেকে ধর্মের পথে নিয়োজিত করতে অবসরের ঘোষনা দেন কার্লোস রোয়া। ১৯৯৮ বিশ্বকাপেও ছিলেন আর্জেন্টিনার প্রথম পছন্দের গোলকিপার। গ্রুপ পর্বে তার দৃঢ়তায় কোনো গোল হজম করেনি আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয় রাউন্ডে কার্লোস রোয়ার উপর ভর করেই টাইব্রেকারে ইংল্যান্ডকে হারায় আর্জেন্টিনা। তবে বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরের বছরই মাত্র ২৯ বছর বয়সে আর্জেন্টিনাকে বিদায় জানান তিনি। লা আলবিসেলেস্তেদের হয়ে মোট ১৬ বার আকাশী-সাদা জার্সি গায়ে জড়ান তিনি।

কার্লোস রোয়া; Image Source: Sportskeeda

পল স্কোলস (ইংল্যান্ড)

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই স্বনামধন্য মিডফিল্ডার মাত্র ২৯ বছর বয়সেই ইংল্যান্ড জাতীয় দল থেকে অবসর নেন। ইংল্যান্ডের হয়ে ১৯৯৭ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ৬৬ ম্যাচ খেলে ১৪টি গোল করেছেন স্কোলস। কিন্তু গোরান এরিকসন কোচ হওয়ার পরে ল্যাম্পার্ড আর জেরার্ড ডুয়োর কাছে দলে জায়গা হারান তিনি। ২০০৬ সালে স্টিভ ম্যাকলারেন নতুন কোচ হয়ে আসার পরে তাকে দলে ফিরে আসার অনুরোধ করলেও তা নাকচ করে দেন স্কোলস। ২০১০ বিশ্বকাপেও ফ্যাবিও ক্যাপেলো তাকে দলে নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাতে রাজি হননি পল স্কোলস। তাই ২০০৪ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সেই ইংল্যান্ডের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলা হয় এই মিডফিল্ডারের। নিজের ক্লাব ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগ দেওয়ার জন্যও এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পরবর্তীতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ সহ চ্যাম্পিয়ন্স লিগও জেতেন এই বিখ্যাত মিডফিল্ডার।

পল স্কোলস; Image Source: Squawka

ফিলিপ লাম (জার্মানি)

২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী জার্মান অধিনায়ক ফিলিপ লাম ৩০ বছর বয়সেই জার্মানি জাতীয় দল থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নেন। জার্মানির হয়ে লাম খেলেছেন ১১৩টি ম্যাচ। তিনটি বিশ্বকাপ দলে ছিলেন সাবেক এই বায়ার্ন মিউনিখ রাইট ব্যাক। ১১৩ ম্যাচে ৫টি গোল করা লাম দলে তরুণদের সুযোগ দিতেই ৩০ বছর বয়সে অবসর নেন। আর ফিলিপ লামের মতে বিশ্বকাপ জিতে ক্যারিয়ার শেষ করাটাই সবচেয়ে উত্তম কাজ। তাই ২০১৪ বিশ্বকাপ জয়ের সাথেসাথেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন ফিলিপ লাম।

ফিলিপ লাম; Image Source: Munich.co

সামির নাসরি (ফ্রান্স)

সাবেক আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার সিটির এই মিডফিল্ডার ২৯ বছর বয়সে ফ্রান্স জাতীয় দলকে বিদায় জানান। ২০১২ সালে ইউরো ব্যর্থতার পর পুরো ফ্রান্স দল অনেক সমালোচনার মুখে পড়ে। সেই সময় সাংবাদিকের সাথে খারাপ ব্যাবহার করায় তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হন সামির নাসরি। সেই ফলস্বরুপ ২০১৪ বিশ্বকাপ দল ঘোষণার সময় নাসরিকে স্কোয়াডের বাইরে রেখেই দল সাজান দিদিয়ের দেশম। পরবর্তীতে বিশ্বকাপের পর ৯ আগস্ট অবসরের ঘোষণা দেন নাসরি। অবসরের আগে ফ্রান্সের হয়ে ৪১ ম্যাচে ৫ টি গোল করেছেন তিনি।

সামির নাসরি; Image Source: Youtube

This Bangla article is about the footballers who retired very early in international stage. Necessary sources are hyperlinked in the article.

Feature Image: Goal.com

Related Articles