Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফিরে দেখা: ইউরো ২০২০

রোমের এস্তাদিও অলিম্পিক থেকে লন্ডনের ওয়েম্বলি। ১১টি শহরের ১১টি স্টেডিয়াম ঘুরে ইউরো ২০২০ এর পর্দা নামলো সবে মাত্র একদিন হলো। উল্লাস, জয়ধ্বনি, হতাশা কিংবা কান্নায় মিলেমিশে একাকার এই ইউরো যেন কোভিড আক্রান্ত পৃথিবী জুড়ে এসেছিল একটুখানি হাসি-আনন্দের কারণ হয়ে। ফুটবলে বিভোর হয়ে রাত জেগে থাকার সমাপ্তির দিনে দেখে নেওয়া যাক, কী কী ঘটলো পুরো ইউরো জুড়ে।

আত্মঘাতী গোল

সিমোন কায়েরের পায়ে লেগে বল জড়িয়ে যাচ্ছে জালে; Image Credit: Getty Images

শুরুটা করেছিলেন ডেমিরাল। তাও কি না উদ্বোধনী ম্যাচের উদ্বোধনী গোল হিসেবে! সেখান থেকে ব্যাপারটা ‘হরহামেশাই’ যেন ঘটেছে। ২০২০ সালের ইউরোকে ‘আত্মঘাতী গোলের আসর’ বললেও ভুল হবে না। এখন পর্যন্ত মোট ১১ বার নিজেদের জালে নিজেরাই বল জড়িয়েছেন খেলোয়াড়েরা। অথচ ইউরোর বিগত সব আসর মিলিয়ে আত্মঘাতী গোলের সংখ্যা ছিল সর্বসাকুল্যে ৯টি!

এই ১১ গোলের মধ্যে ৮টিই হয়েছে গ্রুপপর্বে। আর একটি করে দ্বিতীয় রাউন্ডে, কোয়ার্টার ফাইনালে, আর সেমিফাইনালে। আত্মঘাতী গোলের সুবিধা সবচেয়ে বেশি পেয়েছে এনরিকের স্পেন। মোট ৩টি গোল তারা পায় এই সুবাদে। অবশ্য নিজেরাও একটি ফিরিয়ে দেয় ক্রোয়েশিয়াকে।

স্পেনের আত্মঘাতী গোল বেশি পাওয়া থেকেই আঁচ করা যায় সাম্প্রতিককালে সব টুর্নামেন্টে এমন গোল বেশি হওয়ার কারণ। বর্তমানে ফুটবলে উইং থেকে সরাসরি ক্রস না করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাট-ইন করে খেলোয়াড়েরা ছোট ডি-এর সামনে থেকে মাইনাস করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাতে করে সেই বল ফেরাতে গিয়ে আত্মঘাতী গোলের সম্ভাবনাও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তবে এই ইউরোতে এটার পাশাপাশি দায়ী কিছু দৃষ্টিকটু ভুলও। উনাই সিমন কিংবা ম্যাটস হামেলসের আত্মঘাতী গোল থাকবে এই তালিকায়।

ফুলব্যাকদের জয়জয়কার

১৯৭০ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দল সর্বপ্রথম ‘ব্যাক ফোর’ প্রথা নিয়ে আসে ফুটবলে। সেই থেকে ফুটবলে ফুলব্যাকদের অবদান আমূল পরিবর্তন হয়। আর আধুনিক ফুটবলে তো ফুলব্যাকদের অবদান অনস্বীকার্য। বড় বড় প্রোফাইলের কোচদের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। আর কিছু চাই বা না চাই, বিশ্বমানের ফুলব্যাকের বিকল্প নেই।

এই ইউরোতে ফুলব্যাকদের পারফরম্যান্স যেন আরো চোখ ধাঁধানো। এর প্রধান কারণ, বেশিরভাগ দলই ‘থ্রি ম্যান ডিফেন্স’ নিয়ে খেলেছে। আর থ্রি ম্যান ডিফেন্স যারা খেলেনি, তারাও অন্তত দুই হোল্ডিং মিডফিল্ডার নামিয়েছে মাঝমাঠে। ফলে ফুলব্যাকরা পেয়েছেন পূর্ণ স্বাধীনতা।

ইতালির স্পিনাৎজোলা কিংবা ইংল্যান্ডের লুক শ দারুণ খেলেছেন, সাথে যোগ করতে পারেন বেলজিয়ামের মুনিয়ের, ডোকু অথবা অস্ট্রিয়ার ডেভিড আলাবাকে। একই কথা প্রযোজ্য রবিন গোসেন্সের ক্ষেত্রেও। দলের আক্রমণের ভিত গড়ে দিয়েছেন এরাই। এমনকি ছোট দলগুলোও ফুলব্যাকদের দিয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা। ডেনমার্কের মাহেলে সেই স্বাধীনতা পেয়ে কাজে লাগিয়েছেন শতভাগই। এমন ধারা চলতে থাকলে সম্ভবত অদূর ভবিষ্যতে ফুটবলে ‘থ্রি-ম্যান ডিফেন্স’ ই হয়ে উঠতে পারে জনপ্রিয়তম কৌশল।

ইতালির হয়ে দুর্দান্ত খেলা স্পিনাৎজোলা; Image Source : Getty Images

‘ইট’স কামিং হোম’

ইংলিশ মিডিয়ার বৌদলতে ‘ইটস কামিং হোম’ বেশ সুপরিচিত পুরো বিশ্ব জুড়েই। অবশ্য প্রতি বড় আসরের শুরুতেই অনেক হম্বিতম্বি করেও ইংল্যান্ডের মুখ থুবড়ে পড়ার কারণে হালে পানি পায়নি বাক্যটি। তবে গত বিশ্বকাপের পর এই ইউরো – বেশ জোরেশোরেই উচ্চারিত হয়ে চলেছে ক্যাচফ্রেজটি। তবে সুযোগ বুঝে কেউ কেউ একটু ফোঁড়ন কাটতেও ছাড়েননি। ডেনমার্কের গোলরক্ষক ক্যাসপার স্মাইকেলই যেমন সেমিফাইনালের আগের প্রেস কনফারেন্সে টিপ্পনি কেটেছিলেন,

“Has it ever been home?”

২০১৮ বিশ্বকাপটা ‘থ্রি লায়ন্স’ শেষ করেছিল সেমিফাইনালে। সমূহ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও হতাশ করেছিল দলটি। তবে নকআউট কিংবা টাইব্রেকার ফাঁড়াটা শেষতক কাটিয়েই উঠেছিল বোধহয় সাউথগেটের শিষ্যরা। যার ফলস্বরূপ পুরো ইংল্যান্ড দল এবার ছিলো দারুন ছন্দে। 

তবে শেষ পর্যন্ত ফুটবলের আর ঘরে ফেরা হলো না। রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে হৃদয় ভাঙ্গলো ইংলিশ সমর্থকদের। ম্যাচ শেষে অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলা এই ‘ক্যাচফ্রেজ’ কে ঠাট্টা করতে ভোলেননি বনুচ্চি। ক্যামেরার সামনে যেয়ে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলেছিলেন 

           “It’s coming to Rome.”

ওয়েম্বলিতে এইবার ফাইনাল খেলবে থ্রি লায়ন্স; Image Source : Getty Images

আজ্জুরিদের ফেরা

ফুটবলে শৌর্যে-বীর্যে ইতালি শীর্ষস্থানীয় এক দেশ। অথচ চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরাই খাবি খাচ্ছিল গত কয়েকবছর ধরেই। রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বই উতরাতে পারেনি দেশটি। সেই অন্ধকার সময়ে দলের হাল ধরেন রবার্তো মানচিনি।

এসেই নিলেন এক সাহসী পদক্ষেপ। ইতালিও চিরায়ত রক্ষণাত্মক ‘কাতেনাচ্চিও’ ফুটবল থেকে বের হয়ে আসেন তিনি। দলকে খেলাতে শুরু দুর্দান্ত ধ্রুপদী আক্রমণাত্মক ঘরানার ফুটবল। ইতালির সেই বেহাল সময়ের বিবেচনায় বেশ সাহসী সিদ্ধান্তই বৈকি।

তবে ভাগ্য যে সবসময় থাকে সাহসীদের পক্ষেই! ইতালিও দারুণভাবে মানিয়ে নিল এই আক্রমণাত্মক ফুটবলে। অবশ্য সেজন্য মানচিনি নিজেদের ঐতিহ্যের রক্ষণ বিসর্জন দেননি। সমানতালে রক্ষণভাগও নিঃশ্ছিদ্র রেখেছেন ম্যাচের পর ম্যাচ।

মানচিনির হাত ধরে বদলে যাওয়া ইতালি; Image Source : Getty Images

তার ফলাফল তো সুস্পষ্ট এই ইউরোতেই। আজ্জুরিরা টানা ২৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে এসেছিল ইউরোতে। সেই ‘আনবিটেন রান’ টা তারা টেনে নিয়ে গিয়েছে শেষ পর্যন্তই। দ্বিতীয়বারের মতো ইউরো চ্যম্পিয়নের মুকুট উঠলো আজ্জুরিদের মাথায়। 

মানচিনি দলের দায়িত্ব নিয়েই বলেছিলেন তিনি এই ইউরো জিততে চান। যেটি কিনা ভেরাত্তির কাছে মনে হয়েছিলো ‘অবিশ্বাস্য স্বপ্ন।’ তবে অবিশ্বাস্য স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করেছেন মানচিনি, করেছেন হৃদয় নিংড়ানো ফুটবল খেলা ইতালিয়ানরা। আর এই ইউরো জয়েই পূর্ণতা ফেলো ইতালির বিশ্বমঞ্চে ফেরা। 

‘আন্ডারডগ’দের ইউরো

ইউরোকে অনেকে বলে থাকেন ‘মিনি বিশ্বকাপ।’ কথাটি একদিক দিয়ে যথার্থই মনে হতে পারে। হাতেগোনা কতকগুলো দল বাদে তো সব বড় দলগুলো ইউরোতেই। আর বর্তমান ফর্ম বিবেচনায় ‘বড়’ দলের সংখ্যাটাও বেশ বেড়ে গেছে এইবারের ইউরোতে। বরাবরের মতো ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, স্পেন, নেদারল্যান্ড, ইংল্যান্ডের সাথে যোগ দিয়েছে পর্তুগাল, ক্রোয়েশিয়া কিংবা বেলজিয়ামের মতো দলও।

তবে এত সব দুর্দান্ত দল থাকা সত্ত্বেও এই ইউরো যেন তোলা ছিলো সব আন্ডারডগদের জন্যই। শুরুতেই বলা যাক শেভচেঙ্কোর ইউক্রেনকে নিয়ে। নিজে খেলোয়াড় থাকা অবস্থাতেও এতটা সাফল্য এনে দিতে পারেননি দেশকে, যেটা এনে দিয়েছেন ডাগআউটে থেকে। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের সাথে ৪-০ গোলে হারলেও তাই বাহবার কমতি ছিল না ইউক্রেনের জন্য।

একই কথা প্রযোজ্য চেক রিপাবলিকের জন্যও। নেদারল্যান্ডের মতো দুর্দান্ত টিমকে প্লেনের টিকেট ধরিয়ে দিয়েছিল চেকরা। প্যাট্রিক শিকের অনবদ্য পারফরম্যান্সে চেকরা লড়াই করেছিল কোয়ার্টার ফাইনালেও। তবে সেখানে তারা হার মানতে বাধ্য হয় এই ইউরোরই আরেক চমক ডেনমার্কের কাছে।

সেমিফাইনালে হারের পর কান্নারত জোয়াকিম মাহেলে; Image Source : Getty Images

অথচ ডেনমার্কের শুরুটা হয়েছিল ভয়াবহ রকমের বাজে। ফিনল্যান্ডের সাথে হারটা বাদ দিন; প্রথম ম্যাচেই এরিকসেনকে হারিয়ে পুরো দলই হয়ে পড়েছিল শোকে ম্যূহমান। গ্রুপপর্বে দ্বিতীয় ম্যাচে লড়াই করেছিল বেলজিয়ামের বিপক্ষে, হারতে মানতে হয়েছিল একজন ডি ব্রুইনার জন্য। দুই ম্যাচ শেষে শূন্য পয়েন্ট!

এরিকসেন ফিরেছেন, ফিরেছে ডেনমার্কও। সেখান থেকেই ইউরোর সেমিফাইনালে ডেনমার্ক। এক বিতর্কিত পেনাল্টির জেরে বাদ পড়লেও ডেনমার্কবাসী নিশ্চিতভাবেই দল নিয়ে গর্বিত। এরিকসেনকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে নিজেদের উজাড় করে দিয়ে খেলেছেন ড্যানিশরা। সিমোন কায়ের, স্মাইকেল কিংবা মাহেলে প্রতিটা জায়গাতেই নিজেদের নতুন করে চিনিয়েছে ডেনমার্ক। তাই আন্ডারডগ থেকেই নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম এক ইউরো শেষ করলো দলটি।

তারুণ্যের জয়গান

পুরো ইউরোজুড়ে সুবাস ছড়িয়েছেন পেদ্রি; Image Source : Getty Images

১৮ বছর বয়স। সুকান্ত বলেছিলেন এই বয়স ডানা মেলবার; এই বয়স দুর্বার, দুনির্বার। সেটি যেন আক্ষরিক অর্থেই মাঠে ফুটিয়ে তুলেছেন পেদ্রি। স্পেনের মাঝমাঠের তারকাদের নাম শুনে ভিড়মি খাওয়ার যোগাড় হওয়াটাই স্বাভাবিক। থিয়াগো, বুস্কেটস, রদ্রি, কোকে; দলে মিডফিল্ডারের অভাব ছিল না। অথচ এদের বাদ দিয়ে প্রতিটি ম্যাচেই মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ১৮ বছরের এক ছোকড়া!

বলছিলাম পেদ্রির কথা। এই ইউরোতে স্পেনের হয়ে মাঠে সবচেয়ে বেশি দৌড়ানো খেলোয়াড়টির নামও পেদ্রি। অথচ ইউরো শুরু হওয়ার আগে বার্সেলোনার হয়ে প্রায় প্রতিটি ম্যাচই খেলেছেন শুরু থেকেই। সেই ক্লান্তি এতটুকুও ভর করেনি পেদ্রির মাঝে। ফলাফল ইউরোর সেরা তরুন খেলোয়াড়ের পুরষপুরষ্কার উঠলো তার হাতে। পেদ্রিই নয়, স্পেনের আরেক তরুণ তুর্কি দানি অলমোও সুবাস ছড়িয়েছেন মাঠজুড়ে।

এবারের ইউরোতে অন্য যেকোনোবারের চেয়ে তরুণরা আলো কেড়েছেন বেশ। সুইডেনের আলেক্সান্ডার ইসাক কিংবা ডেনমার্কের ড্রামসগার্ড এবং ওলসেনের সাথে যোগ করতে পারেন ডোনারুমা কিংবা জেরেমি ডৌকুকেও; এবার ইউরোতে এরা সবাই ছিলেন স্বমহিমায় ভাস্বর।

ফ্লপ অফ দ্য ইউরো

হতাশ করেছেন কিলিয়ান এমবাপে; Image Source : Getty Images

পেলের পর প্রথম টিনএজার হিসেবে গোল করেছেন বিশ্বকাপ ফাইনালে। গায়ে চাপিয়েছেন বিখ্যাত ১০ নাম্বার জার্সিও। ভবিষ্যতের তারকার খ্যাতিও জুড়েছে নামের পাশে। অথচ সেই এমবাপে সম্ভবত সবচেয়ে হতাশ করেছেন এই ইউরোতে। পুরো ইউরোজুড়ে কোনো গোল তো নেই-ই, টাইব্রেকারে শট মিস করে দলকেও ডুবিয়েছেন। আগের লাইনে ‘সম্ভবত’ শব্দটি ব্যবহার করার কারণ, শুধু এমবাপেই নয়, এই তালিকায় রয়েছে বেশ নামীদামী আরো কিছু নাম।

এমবাপের পরপরই আসবে হাকান চালহানোলুর নাম। তুরস্ক এই ইউরোতে এসেছিল ‘ডার্ক হর্স’ হিসেবে, মূল ভরসাগুলোর একটি নাম ছিল তার। অথচ তিনটি ম্যাচ হেরে সবার প্রথমে বাদ পড়েছে তারাই, আর সেই দায়ভার অনেকখানিই বর্তায় হাকানের উপর। পুরো ইউরোজুড়ে তিনি ছিলেন নিষ্প্রভ।

শেজনিও দলকে ডুবিয়েছেন; Image Credit: Getty Images

চালহানোলুর মতো শেজনিও দলকে ডুবিয়েছেন। প্রথম ম্যাচে তারই আত্মঘাতী গোলে পয়েন্ট হারানোর খেসারত পোল্যান্ড দিয়েছে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিয়ে।

তবে প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী অথচ গড়পড়তা খেলা উপহার দিয়েছেন, এমন কারো নাম আসলে সবার প্রথমেই আসবে ব্রুনো ফার্নান্দেজের নাম। শেষ পর্যন্ত যাকে কি না ফার্নান্দো সান্তোস মূল একাদশ থেকেই বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন। একই কথা খাটবে আরেক ‘রেড ডেভিল’ মার্কাস রাশফোর্ডের বেলাতেও। তালিকা লম্বা করতে চাইলে আসতে রুবেন দিয়াজ, সার্জ ন্যাব্রি আর কারাস্কোর কথাও।

পেনাল্টি-জুজু

পেনাল্টি নিয়ে এমনিই মানুষের আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। পেনাল্টিতে কেউ গোল করল, তো সেটা নিয়ে খোঁচা। কেউ মিস করেই বসলো, তবে সেটা নিয়েও খোঁচা। পেনাল্টি তো না, রীতিমতো শাঁখের করাত!    

ভিডিও রেফারি অ্যাসিস্টেন্টের বদৌলতে ফুটবল এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পেনাল্টি দেখছে। ব্যতিক্রম ঘটেনি এই ইউরোতেও। সর্বমোট পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ১৭ বার পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছেন রেফারি, যেটি কি না ইউরো ২০১৬ থেকে চারটি বেশি। তবে মিস করার দিক দিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে এই ইউরো। ১৭ পেনাল্টির মধ্যে ৮টিই মিস করেছেন খেলোয়াড়েরা। অবশ্য গোলকিপারের কৃতিত্ব না দেওয়াটাও পাপ সমতূল্য। ৮টির মধ্যে যে ৬টিতেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন প্রতিপক্ষ গোলকিপাররা!  

 একমাত্র রোনালদোই ছিলেন পেনাল্টি নেওয়ার ক্ষেত্রে ইস্পাতকঠিন; Image Source : Uefa.com

অথচ আগের সব ইউরো আসর মিলিয়ে ৮৮ পেনাল্টির মধ্যে মিসের সংখ্যা ছিল মোটে ২৬টি, যেটি কি না শতকরা হিসেবে ২৯ শতাংশ। আর চলতি ইউরোতে সেই মিসের পাল্লা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ শতাংশে। আধুনিক যুগের ফুটবলাররা কি নিজেদের নার্ভ ধরে রাখার ক্ষেত্রে পূর্বসূরিদের থেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন?

যারা ছিলেন দেয়াল হয়ে

ইয়ান সমার; Image Credit: Getty Images

ক্রিকেটের ‘দ্য ওয়াল’-খ্যাত ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। ফুটবলে এমন বিশেষণে বিশেষায়িত কেউ নেই বোধহয়। তবে এই ইউরোতে যেন গোলরক্ষকরা পণ করেই নেমেছেন সবাই হয়ে উঠবেন একেকটি দেয়াল। কমবেশি বেশিরভাগ গোলকিপাররাই এই ইউরোতে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন। আলাদা করে যাদের নাম বলতে হবে, তাদের প্রথমেই থাকবেন ইয়ান সমার।

ফ্রান্স ও স্পেনের সামনে সমার যেন দাঁড়িয়েছিলেন দানব হয়ে। টাইব্রেকারে এমবাপের পেনাল্টিও থামিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই। কোয়ার্টার ফাইনালে মূল সময়ে তাকে পরাস্ত করতে পারেননি কোনো স্প্যানিশই। গোল যেটি খেয়েছিলেন, সেটিও ছিল আবার আত্মঘাতী গোল। মোট ৯টি সেভ করেছিলেন শুধু স্পেনের বিপক্ষেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে টাইব্রেকারে এবার আর পেরে ওঠেননি, অগত্যা কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয় সুইসদের। 

সমার যদি হয়ে থাকেন সুইসদের ঢাল হয়ে, তেমনি ড্যানিশদের ছিলেন ক্যাসপার স্মাইকেল। বাবা পিটার স্মাইকেলের লেগ্যাসি ধরে রেখেছেন দারুণভাবে। লেস্টার সিটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আরেকবার জাতীয় দলেও টেনে আনলেন। বাবার মতো ডেনমার্ককে এবার জেতাতে পারেননি ইউরো শিরোপা। তবে তাতে খেদ নেই, ক্যাসপারের পক্ষে যতটুকু করার, সবটুকুই তো করেছেন তিনি। হ্যারি ম্যাগুয়ারের একটা হেডার যেভাবে আটকে দিয়েছিলেন, ডেনমার্কের সামনে তাতে ফাইনাল চকচকিয়ে না উঠেই পারে না। প্রথমে তো ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন হ্যারি কেইনের পেনাল্টি শটও। তাতে অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি ক্যাসপারের, হয়নি ডেনমার্কেরও। ফিরতি শটে জালে জড়িয়ে দিয়েছিলেন কেইন; সেবারও চেয়ে চেয়ে দেখেননি ক্যাসপার, নিংড়ে দিয়েছিলেন নিজেকে।  

দুঃসাধ্য এক অ্যাঙ্গেল থেকে করা এক ক্রসকে দুর্দান্ত এক সেভে মাঠের বাইরে পাঠাচ্ছেন ক্যাসপার; Image Credit: Getty Images 

স্মাইকেল, সমাররা দলীয় সাফল্য না পেলেও ডোনারুমা পেয়েছেন সবকিছুই। যা ছুঁয়েছেন, তাতেই যেন সোনা ফলেছে। সেমিফাইনাল আর ফাইনালের এই নায়ক বগলদাবা করেছেন ইউরোর গোল্ডেন বলও, যেটি কি না ইউরোর ইতিহাসে প্রথম কোনো গোলকিপারের গোল্ডেন বল জেতা। আর বিশ্বকাপকে টেনে আনলে অলিভার কানের পর ডোনারুমাই দ্বিতীয় ব্যক্তি। বুফনের যোগ্য উত্তরসূরী যে ইতালি পেয়ে গেছে, সেই ঘোষণাও বিশ্ব শুনেছে তাতেই। 

এরা ছাড়াও ইউরোতে আলো কেড়েছেন সুইডেনের ওলসেন, ইংল্যান্ডের পিকফোর্ড প্রমুখ।

অনেকের মতে ট্যাকটিকালি কিংবা শিহরণ বইয়ে দেওয়ার বিবেচনায় অন্যতম এক সেরা ইউরো হলো এবার। অনেকে একমত হবেন তাতে, আবার অনেকের চোখে ব্যাপারটা হতে পারে অন্যরকম। তবে ফুটবলপ্রেমীরা যে দারুণ উপভোগ করেছে এই ইউরো, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আরো তিন বছর পর আবার ফিরবে ইউরোপিয়ান এই চ্যাম্পিয়নশিপ, তার আগ পর্যন্ত…

বিদায় ইউরো, দেখা হবে জার্মানিতে!

This article is in bangla language. It is about the highlights of the EURO 2020.

Feature Image : Alberto Rubio/Marca

Related Articles