ইংরেজি একটি কথার সাথে আমরা সবাই মোটামুটি পরিচিত, আর সেটা হচ্ছে “MY GAME IS FAIR PLAY”। প্রায় প্রতিটি ফুটবল ম্যাচের আগেই এই কথা সম্বলিত ব্যানার আমরা খেলার মাঠে দেখতে পাই। পরিচ্ছন্ন ফুটবলকে উৎসাহিত করতেই ফিফার এই উদ্যোগ, এছাড়া প্রতি বিশ্বকাপেই সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ফুটবল খেলা দলকে দেওয়া হয় ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড।
খেলাধুলা অনেক সময়ই বিনোদনের চেয়ে বেশি কিছু হয়ে গেলেও সেটা যেন দুই দলের মধ্যে শুধুমাত্র শত্রুতাই বয়ে না আনে এজন্যই মূলত ফিফা এই উদ্যোগ নেয়। তবে ফেয়ার প্লের ব্যাপারে ফিফা এত জোর দিলেও বিশ্বকাপ ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনাই আছে যেগুলোকে আনফেয়ার বললেও আসলে কম বলা হবে। এসব ঘটনা কোনোভাবেই পরিচ্ছন্ন ফুটবলের সাথে যায় না, বরং এসব লজ্জাজনক ঘটনার কারণে ফুটবল হয়েছে কলঙ্কিত। প্রায় ৯২ বছরের ফুটবল ইতিহাসে এমন অনেকগুলো বিতর্কিত ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে হলি ওয়াটার কেলেঙ্কারি। আজ আমরা ১৯৯০ বিশ্বকাপের সেই বিতর্কিত ঘটনার ব্যাপারেই জানবো।
মূল ঘটনার আগের প্রেক্ষাপট
সেই বিতর্কিত ঘটনায় যাওয়ার আগে একটি ব্যাপার পরিষ্কার করে নেওয়া দরকার। আমাদের এই লেখাটি বিশেষ কোনো দলকে হেয় করা কিংবা কোনো বিশেষ দলের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্যে লেখা হয়নি। এই ঘটনা কিংবা ১৯৮৬ বিশ্বকাপের হ্যান্ড অফ গডে আর্জেন্টিনা দায়ী এই সত্য যেমন আর্জেন্টিনা ভক্তদের মেনে নেওয়া উচিত, তেমনি ব্যাটল অফ বার্নে ম্যাচ শেষ হওয়ার পর হাঙ্গেরির সাথে মারামারির ঘটনায় যে ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা দায়ী, ১৯৩৪ বিশ্বকাপে ইতালি কিংবা ১৯৫৪ বা ১৯৯০ বিশ্বকাপ ফাইনালে রেফারির কাছ থেকে জার্মানি কিছুটা হলেও সুবিধা পেয়েছিলো এই সত্যগুলোও ব্রাজিল, ইতালি কিংবা জার্মানির ভক্তদের মেনে নেওয়া উচিত। এই লেখায় যেসব তথ্য দেওয়া হবে তার কোনোটাই আমাদের মনগড়া তথ্য নয়। প্রতিটি তথ্যের উৎস এই লেখার সাথে যোগ করে দেয়া হয়েছে। “If you tell the truth, you don’t need to remember anything”- মার্ক টোয়েনের এই বিখ্যাত উক্তিটি মনে রেখেই আমরা মূল ঘটনায় চলে যাচ্ছি।
ঘটনাটি ঘটেছিলো ১৯৯০ বিশ্বকাপের রাউন্ড অফ সিক্সটিনের এক ম্যাচে, সেই ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলো দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। এই দুই দলের মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বীতার ইতিহাস বহু পুরনো, বহু ঐতিহাসিক ম্যাচ এই দু’দল উপহার দিয়েছে। ১৯৯০ বিশ্বকাপের আগে এই দুই দল বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছিলো তিনবার। এর মধ্যে ১৯৭৪ ও ১৯৮২ বিশ্বকাপে জিতেছিলো ব্রাজিল আর ১৯৭৮ বিশ্বকাপে অনুষ্ঠেয় দুই দলের মধ্যকার ম্যাচটি শেষ হয়েছিলো অমীমাংসিতভাবে। তাই বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথমবারের মতো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারানোর বড় সুযোগ হিসেবেই এই ম্যাচটি আর্জেন্টিনার সামনে আসে।
কিন্তু আর্জেন্টিনার অবস্থা তখন মোটেও সুবিধাজনক ছিল না। ম্যারাডোনার অসাধারণ পারফর্মেন্সে এর আগের আসরের শিরোপা জিতলেও সেই বিশ্বকাপের অনেক তারকাই ইনজুরি আর খারাপ ফর্মের কারণে ১৯৯০ বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনা দলে ছিলেন না। আর্জেন্টিনার সেই বিশ্বকাপের শুরুটাও ছিল ভয়াবহ, নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ক্যামেরুনের কাছে তারা হেরে বসে ১-০ গোলে! গ্রুপপর্বের পরের ম্যাচে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে ২-০ গোলে হারালেও রোমানিয়ার সাথে ম্যাচটা ১-১ গোলে ড্র করে গ্রুপে তৃতীয় হয়ে কোনোমতে রাউন্ড অফ সিক্সটিন নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা।
অন্যদিকে পেলের অবসরের পর দীর্ঘদিন বিশ্বকাপে নিজেদের ঠিকভাবে মেলে ধরতে পারছিলো না ব্রাজিল। বিশেষ করে সর্বকালের অন্যতম সেরা দল নিয়েও ১৯৮২ বিশ্বকাপে সাফল্য না পেয়ে সমগ্র ব্রাজিলবাসীই বেশ হতাশ হয়ে পড়ে। ১৯৯০ বিশ্বকাপের ব্রাজিল দলে তেমন বড় কোনো তারকা না থাকলেও তৎকালীন কোচ সেবাস্তিও ল্যাজারনির অধীনে বেশ গোছানো দল নিয়েই সেবার এসেছিলো সেলেসাওরা। গ্রুপপর্বের সবগুলো ম্যাচ জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই রাউন্ড অফ সিক্সটিন নিশ্চিত করে তারা। তাই রাউন্ড অফ সিক্সটিনে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মহারণে ফেভারিট ছিল ব্রাজিলই।
যা ঘটেছিলো সেদিন
১০ জুন, ১৯৯০ সালে তুরিনে মুখোমুখি হয় দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। ফর্মের দিক থেকে পিছিয়ে থাকার কারণে শুরু থেকেই কিছুটা রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে থাকে আর্জেন্টিনা। আর এই সুযোগে শুরু থেকেই আর্জেন্টিনার উপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকে ব্রাজিল। মিডফিল্ডে দুই ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডারের দুঙ্গা ও অ্যালেমাওর দাপটে বলই পাচ্ছিলো না আর্জেন্টিনা। ফলে টানা আক্রমণ চালিয়ে যাওয়াটাও ব্রাজিলের পক্ষেই সহজ ছিল। কিন্তু আর্জেন্টিনার গোলমুখে আক্রমণের ফোয়ারা বইয়ে দিলেও মূল কাজের কাজটা ব্রাজিল কিছুতেই করতে পারছিলো না, প্রতিটা আক্রমণ শেষ মুহূর্তে খেই হারানোয় সেদিন কিছুতেই আর গোল পাচ্ছিলো না ব্রাজিল। প্রথমার্ধে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ক্যারেকা দারুণ একটা সলো রান নিয়ে আর্জেন্টাইন ডিফেন্স ভেদ করলেও সেটিকে তিনি আর গোলে পরিণত করতে পারেননি। দুই অর্ধ মিলিয়ে দুইবার ব্রাজিলের শট গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসায় মনে হচ্ছিলো আজ বুঝি ভাগ্য ব্রাজিলের পক্ষে নেই।
অন্যদিকে শুরু থেকেই ব্রাজিলের টানা আক্রমণে দিশেহারা আর্জেন্টিনার শুরু থেকেই লক্ষ্য ছিল তাদের সেরা খেলোয়াড় ম্যারাডোনাকে কাউন্টার অ্যাটাকে কাজে লাগিয়ে একটি গোল আদায় করে নেওয়া। কিন্তু সেদিন শুরু থেকেই ব্রাজিলের ডিফেন্ডার ও ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডাররা ম্যারাডোনাকে কড়া পাহাড়ায় রাখায় ম্যারাডোনা ঠিক সুবিধা করতে পারছিলেন না। বিশেষ করে ব্রাজিলিয়ান লেফটব্যাক ব্রাংকো সেদিন অসাধারণ খেলছিলেন, ব্রাংকোকে বেশ কয়েকবার ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করলেও ম্যারাডোনা সেটা কিছুতেই করতে পারছিলেন না। এদিকে দ্বিতীয়ার্ধে আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার পেদ্রো ত্রগলিও আহত হলে বেশ কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে, তবে কিছুক্ষণ পর খেলা আবার শুরু হয়ে যায়। কিন্তু খেলা শুরু হওয়ার পর থেকেই ব্রাংকোকে ঠিক আর আগের মতন চনমনে লাগছিলো না, তাকে দেখে মনে হচ্ছিলো তার যেন কিছু একটা হয়েছে।
ব্রাংকোর হুট করে এই পরিবর্তনের সুযোগটাই নিলেন ম্যারাডোনা, যে ব্রাংকো সারা খেলায় ম্যারাডোনাকে দারুণভাবে আটকে রেখেছিলেন, সেই ব্রাংকোকেই খেলার ৮১ মিনিটে অনায়াসে ফাঁকি দিয়ে ডানপ্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে এগিয়ে গেলেন ম্যারাডোনা। হুট করে ব্রাংকো এভাবে খেই হারানোয় পুরো ম্যাচে অসাধারণ ডিফেন্স করা ব্রাজিলের ডিফেন্সিভ সেটআপ গেলো ভেঙ্গে। ম্যারাডোনাকে ঠেকাতে গিয়ে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডাররা তাকে ঘিরে ধরলে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড ক্লদিও ক্যানিজিয়া হয়ে যান আনমার্কড। ম্যারাডোনাও তাই বল বাড়িয়ে দিলেন ক্যানিজিয়ার দিকে। ব্রাজিলের গোলকিপার তাফারেলকে একা পেয়ে বল জালে জড়াতে ভুল করলেন না ক্যানিজিয়া। পুরো খেলায় ব্রাজিলিয়ানরা দাপট দেখালেও স্রোতের বিপরীত দিক থেকে গোল করে এগিয়ে গেলো আর্জেন্টিনা। ম্যারাডোনার অ্যাসিস্টটা আসলেই অসাধারণ ছিল। কিন্তু এই গোলের পর থেকেই ব্রাংকোকে অজানা এক কারণে উত্তেজিত দেখাচ্ছিলো, তিনি যেন তার সতীর্থদের কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন। ওদিকে মেজাজ হারিয়ে খেলার ৮৫ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ব্রাজিলের অধিনায়ক রিকার্ডো গোমেজ। শেষপর্যন্ত ম্যারাডোনার ওই দুর্দান্ত অ্যাসিস্টেই ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে যায় আর্জেন্টিনা।
মূল বিতর্কটা শুরু হয় ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে। ব্রাংকো ম্যাচ শেষে দাবি করেন, দ্বিতীয়ার্ধে পেদ্রো ত্রগলিওর ইনজুরির কারণে খেলা যখন কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ ছিল, তখন তিনি নাকি আর্জেন্টিনার ফিজিও মিগুয়েল ডি লরেঞ্জোর কাছ থেকে এক বোতল পানি নিয়ে পান করেছিলেন আর সেটার পরেই নাকি তার মাথা ঝিমঝিম করছিলো এবং তিনি অসুস্থতা বোধ করছিলেন! ব্রাংকো যে আর্জেন্টিনার ফিজিওর আনা পানি খেয়েছিলেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। নিচে দেওয়া ভিডিওটা দেখলেই এ ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাবে।
কিন্তু কথা হচ্ছে, আর্জেন্টাইন ফিজিওর দেওয়া পানি ব্রাংকো পান করেছিলেন এটা প্রমাণ করলেই সবকিছু প্রমাণিত হয় না, কারণ মূল অভিযোগ পানিতে কিছু মেশানোর ব্যাপারে, যেটা শুধুমাত্র ব্রাংকোর কথায় প্রমাণিত হয় না। তাছাড়া ব্রাংকোর এই বক্তব্যের পর আর্জেন্টিনার প্রেস ব্রাংকোর অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ করেছিলো। তাই তখন এ ব্যাপারটা একটা দুর্বল অভিযোগ হিসেবেই অভিহিত হয়েছিলো।
থলের বিড়াল বের হলো ১৫ বছর পর!
এরপর বহুদিন কেটে গেলো। সেই ম্যাচের সব খেলোয়াড়ও অবসরে চলে গিয়েছিলেন। ব্রাংকোর সেই অভিযোগের কথাটাও হয়তো অনেকেই ভুলে গিয়েছিলো। কিন্তু সেই ঘটনার পনেরো বছর পর সবচেয়ে বড় বোমাটা ফাটালেন দিয়েগো ম্যারাডোনা নিজেই! ২০০৫ সালে ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনার এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন যে, সেদিন ব্রাংকোকে দেওয়া পানিতে আসলেই তারা ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলেন! ম্যারাডোনার এই বক্তব্যের পর ১৫ বছর আগের সেই ছাইচাপা আগুন আবারো দাউদাউ করে জ্বলে উঠে।
এই ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী কে ছিল এটা জানতে সাংবাদিকরা ছুটে যান ১৯৯০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কার্লোস বিলার্দোর কাছে। এই প্রশ্নের উত্তরে বিলার্দো বলেন, “আমি কিছু জানি না এ ব্যাপারে, তবে আমি এটাও বলছি না যে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি!” সাংবাদিকের ভাষ্যমতে, এ কথা বলার পরেই নাকি বিলার্দো নিজেকে সংযত করে থেমে যান এবং তার মুখভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিলো তিনি বুঝি কিছু লুকাচ্ছেন! পরে অবশ্য বিলার্দো সমস্ত ঘটনাই অস্বীকার করেন এবং সবকিছুকে সাংবাদিকদের বানানো গল্প হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বিলার্দো ম্যারাডোনাকে বাস্তবে ফেরার কথাও বলেন। এদিকে যে ফিজিওকে নিয়ে এত গণ্ডগোল সেই ফিজিও নিজেও এই ঘটনা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।
কোনো অপরাধ প্রমাণের জন্য রাজসাক্ষী হিসেবে সব আসামীকে দরকার হয় না, একজন আসামী সেই দোষ স্বীকার করলেই সব আসামীর অপরাধ প্রমাণিত হয়ে যায়। তাই ম্যারাডোনার ওই স্বীকারোক্তির পর তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন ব্রাজিলের ১৯৯০ বিশ্বকাপের খেলোয়াড়েরা। ঘটনার মূল ভুক্তভোগী ব্রাংকো তো আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশনকে কাঠগড়ায় নেওয়ার হুমকিও দিয়ে বসেন। সবচেয়ে রাগান্বিত মন্তব্যটি এসেছিলো তৎকালীন ব্রাজিল কোচ সেবাস্তিও ল্যাজারনির কাছ থেকে। তিনি বলেন, “এটা কিছুতেই স্পোর্টসসম্যানশিপের অংশ হতে পারে না, এটা সম্পূর্ণ নোংরা একটা খেলা। ঘটনা ১৪ বছর আগে হোক বা ১৪ দিন, ফিফার উচিত এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টদের কঠিন শাস্তির আওতায় এনে একটা উদাহরণ স্থাপন করার। কে নিশ্চয়তা দিতে পারে আর্জেন্টিনা অন্য কোনো দলের বিপক্ষে এমন কোনো নোংরা খেলে খেলেনি?”
এদিকে আর্জেন্টিনার ফিজিও লরেঞ্জো ঘটনা অস্বীকার করে বক্তব্য দেওয়ায় এর তীব্র সমালোচনা করেন ১৯৯০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড বেবেতো। তিনি বলেন “লরেঞ্জো যদি এ ঘটনা অস্বীকার করে থাকেন তবে তিনি মিথ্যা বলেছেন, লরেঞ্জো পরে আমার কাছে সমস্ত ঘটনা স্বীকার করেছিলেন।” সেসময়ে সিবিএফ এর সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্টোনিও টেক্সেইরা ফিফার কাছে আনুষ্ঠানিক নালিশ জানানোর কথা বললেও প্রেসিডেন্ট রিকার্ডো টেক্সেইরা অভিযোগ না করার ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত নেন। তাছাড়া এত বছর পর অভিযোগ করলেও খুব একটা লাভ হতো এই সম্ভাবনা তেমন একটা ছিল না, কারণ খেলার ফলাফল তো পনেরো বছর আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিলো। সেটাতে তো আর পরিবর্তন আনা যেত না।
তবে সিবিএফ আনুষ্ঠানিকভাবে নালিশ না জানালেও প্রকৃতি কিন্তু ঠিক বিচারটা আরো আগেই করে ফেলেছিলো! আর এ কারণেই হয়তো ১৯৮৬ বিশ্বকাপে রেফারিকে ফাঁকি দিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হাত দিয়ে গোল করা ম্যারাডোনাকে ১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে কাঁদতে হয়েছিলো রেফারির দেওয়া ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই! আর ম্যারাডোনা তো পরের আসরের মাঝপথে ড্রাগ সেবনের দায়ে ফুটবল থেকেই নিষিদ্ধ হয়ে গেলেন। অন্যদিকে যে ব্রাজিলকে ১৯৯০ বিশ্বকাপে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে হারানো হয়, সেই ব্রাজিলই পরের আসরে প্রথম দল হিসেবে চারবারের মতন বিশ্বকাপ জিতে গড়ে নতুন ইতিহাস। তাই ১৯৯০ বিশ্বকাপের সেই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে দুঙ্গা, তাফারেল, বেবেতো, ব্রাংকোরা ১৯৯৪ বিশ্বকাপের ট্রফি হাতে তাদের নিজেদের ছবিগুলো দেখতেই পারেন।
কিন্তু প্রকৃতি যতই ন্যায়বিচার করুক, এ ধরনের নোংরা ঘটনাগুলো খেলাধুলায় কখনোই কাম্য নয়। একজন মানুষ আরেকজন মানুষের কাছে পিপাসা নিবারণের জন্য পানি চাইতেই পারে, কিন্তু সেই সুযোগে ওই পানিতে অন্য কিছু মিশিয়ে দেওয়াটা অবশ্যই ঘৃণ্য একটি কাজ। দিনশেষে ফুটবল তো একটা খেলাই, এটা তো মানুষ মারার যুদ্ধ নয় যে একটা ম্যাচে হেরে যাওয়া মানে জীবন শেষ হয়ে যাওয়া। তাই আমরা আশা করবো, এ ধরনের ঘটনা আর কখনোই কোনো খেলায় ঘটবে না। পরিচ্ছন্ন খেলার সব নিয়ম মেনে সবাই সুন্দর ফুটবলটাই উপহার দিবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ফিচার ইমেজ : Round View