Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইউরোর বিদায়ী তারকারা || দ্বিতীয় পর্ব

“পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,

প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়…।” 

জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন তার ‘দু’জন’ কবিতায়। প্রকৃতির এই অমোঘ নিয়মের বাইরে কেউই নেই। সেই নিয়ম মেনেই শেষ ইউরো খেলতে নামবেন ইউরোপ-মাতানো অনেক তারকারা। পরবর্তী ইউরোতে যাদের ফেলে যাওয়া শূন্যতায় অনুভব করতে পারেন সমর্থকেরা, তাদের নিয়েই এই আয়োজনের আজ দ্বিতীয় পর্ব। 

লুকা মদরিচ

মেসি-রোনালদো ব্যালন ডি’অর লড়াইয়ে যতি টেনেছিলেন তিনি। ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বকাপ ফাইনালে, বগলদাবা করেছিলেন গোল্ডেন বলটাও। মাদ্রিদের ফ্লপ সাইনিং থেকে সময়ের সেরা তো বটেই, অনেকের মতে প্রজন্মেরই অন্যতম সেরা এই ‘লুকিতা’। ক্রোয়েশিয়ান রাজপুত্র বললেও একদমই বাড়াবাড়ি মনে হবে না।

ক্রোয়েশিয়ার ব্যাটন থাকবে মদরিচের হাতেই; Image Source:  Igor Soban/Pixsell/MB Media/Getty Images

সেই লুকিতা এবার নামবেন শেষ ইউরো খেলতে। ইউরোশেষে সামনের সেপ্টেম্বরে পা দিবেন ৩৬ বছর বয়সে। কাতার বিশ্বকাপে ‘লাস্ট ড্যান্স’ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এই ইউরোই যে শেষ, তা অনুমিতই। ক্রোয়েশিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা মদরিচ চাইবেন রাশিয়া বিশ্বকাপের ফর্মটিই টেনে আনতে। বুড়ো হাড়ে সেই ভেলকি দেখানোর যোগ্যতা যে এখনো মদরিচের আছে, তা নিয়ে সন্দেহেরও অবকাশ নেই বিন্দুমাত্র। প্রতিভাবান কিছু খেলোয়াড় নিয়ে আসা ক্রোয়েশিয়া ঠিক ফেভারিটের কাতারে না পড়লেও হয়ে উঠতে পারে বিপদজনক। তবে কেউ একজনকে হয়ে উঠতে হবে পরশপাথর; সেই মহানায়ক হওয়ার জন্য একজনই আছেন, লুকা মদরিচ। মদরিচ কি পারবেন নিজের শেষ ইউরোতে ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলে আরেকটি রূপকথা যোগ করতে? 

করিম বেনজেমা

প্রত্যাবর্তনের চিন্তা কি বেনজেমার মাথায় ঘুণাক্ষরেও ছিল? সে কথাই বেনজেমাই ভালো বলতে পারবেন। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে ৬ বছর পর বেনজেমা ফিরলেন ফ্রান্স দলে। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা বেনজেমাকে আর উপেক্ষা করতে পারেননি কোচ দিদিয়ের দেশম।

প্রত্যাবর্তনের আনন্দ থাকলেও উল্টো দিকও আছে। ৩২ বছর বয়সী বেনজেমার জন্য যে এটিই হতে চলেছে শেষ ইউরো! ২০১৬ ইউরো কিংবা রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি। তার আগে ব্রাজিল বিশ্বকাপে ছিলেন ফ্রান্সের দেবদূত হয়ে। একটি হ্যাটট্রিকসহ দুর্দান্ত এক বিশ্বকাপ কাটিয়েছিলেন। নিজের খেলা শেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের রেশ ধরে রাখতে চাইবেন বেনজেমাও। তবে অতদূরও যাওয়ার প্রয়োজন নেই, চলতি মৌসুমের ভয়ঙ্কর বেনজেমাকে গোলমুখে দেখা গেলেই ফ্রান্সের ইউরো জয়ের রাস্তাটা হবে আরো মসৃণ।

লা ব্লুজের জার্সি গায়ে প্রত্যাবর্তন রাঙাতে চাইবেন বেনজেমা; Image Source: Getty Image 

ফ্রান্সের হয়ে ৮২ ম্যাচে ২৭ গোল করা বেনজেমা নির্বাসিত না হলে সহজেই হয়তো হতে পারতেন ফ্রান্সের সর্বোচ্চ গোলদাতা। তবে যত আক্ষেপই থাকুক না কেন, এক ইউরো শিরোপাই তা ঢেকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সে কথা নিশ্চয়ই বেনজেমার চেয়ে বেশি করে কেউ আর উপলব্ধি করেন না!

হুগো লরিস

বর্তমান প্রজন্মের সেরা গোলকিপার কে? নয়্যার, বুফন, নাভাসের নাম নিলেও আপনি হয়তো ভুলেও লরিসের নাম নেবেন না। বেশ আড়ালেই থেকেছেন পুরো ক্যারিয়ারে, সম্ভবত টটেনহ্যামে খেলার কারণে ক্যামেরার লেন্সেও ততটা ধরা পড়েননি। তবে ক্যামেরার আড়ালে থেকেই নিজের কাজটা করে গিয়েছেন বেশ সাফল্যের সাথেই।

লরিসের শেষ ইউরো হতে চলছে এটিই; Image Source : Getty Images

ফ্রান্সের নিয়মিত সেই গোলরক্ষক হুগো লরিসের শেষ ইউরো এবার। ৩৪ বয়সী লরিস লা ব্লুজের জার্সি গায়ে চাপিয়েছেন ১২৫ বার, লিলিয়াম থুরামের (১৪২) পরই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। ২০১২ সাল থেকে অধিনায়কের ভারটাও সামলাচ্ছেন। অধিনায়ক হিসেবে খেলে ফেলেছেন ১০০টি ম্যাচ। সেই হিসেব করলে তার অধিনায়কত্বে ফ্রান্স খেলেছে দুইটি ইউরো আর দুইটি বিশ্বকাপ।

বিশ্বকাপ জিতলেও ইউরো ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখা বাকি লরিসের। শেষ ইউরোর ফাইনালে এডারের আচমকা শটে গোল হওয়ার দায় কিছুটা হলেও বর্তায় তার উপরে। এবার নিজের শেষ ইউরোতে সেই শাপমোচনের পালা। অধিনায়কের আর্মব্যান্ড হাতে গোলবারে দাঁড়ানো সদাসৌম্য লরিসও নিশ্চয়ই প্রস্তুত!

লিওনার্দো বোনুচ্চি

ইতালির রক্ষণদূর্গের কথা তো সর্ববিদিত। একের পর এক প্রজন্ম এসেছে, তাতে নিজেদের প্রাচুর্যের স্থানে মরচে পড়তে দেননি কেউই। শেষ প্রজন্মের এমনই একজন লিওনার্দো বোনুচ্চি। কিয়েল্লিনিকে সঙ্গী করে নিয়ে দিনের পর দিন ইতালির রক্ষণভাগকে রেখেছেন নিশ্চিদ্র।   

আজ্জুরিদের হয়ে মাঠে নেমেছেন ৯০ বার। অথচ বড় কোনো সাফল্য যোগ হয়নি বোনুচ্চির শোকেসে। ২০১২ ইউরোতে গিয়েছিলেন সবচেয়ে কাছাকাছি, ফাইনালে হার মেনেছিলেন ইনিয়েস্তা-জাভিদের স্পেনের কাছে। সামনের কাতার বিশ্বকাপে না-ও দেখা মিলতে পারে বোনুচ্চির। ৩৪ বছর বয়সে পা দেওয়া বোনুচ্চির জন্য তাই শেষ সুযোগ এই ইউরো।

নিজের শেষ টুর্নামেন্টে দেশের হয়ে কিছু জেতার আপ্রাণ চেষ্টা তো থাকবেই, সাথে নতুন প্রজন্মের কাছে নিজেদের রক্ষণ সামলানোর ব্যাটন পাস করার বড় মঞ্চও হতে পারে এই ইউরো।

ইতালির রক্ষণের প্রতীক বোনুচ্চি; Image Source : Getty Images

মানচিনির অধীনে ইতালির সাম্প্রতিক ফর্ম অবশ্য আশাবাদী করতে পারে বোনুচ্চিকে। তবে নতুন এক প্রজন্মে প্রবেশের আগে যে কয়েকজন অভিজ্ঞ সেনানী দলে রয়েছেন, বোনুচ্চি তাদেরই একজন। তাই শিরোপার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করতে হলে শুধু রক্ষণভাগ নয়, পুরো দলটাকে এক সুতোয় বাঁধার দায়িত্বও বোনুচ্চির কাঁধেই বর্তাবে।

রবার্ট লেওয়ান্ডস্কি

২০২১ সালের ইউরোতে লেওয়ানডস্কি যখন এসেছেন, তার ছোঁয়া যেন সোনা ফলাচ্ছে। ক্যারিয়ার-সেরা ফর্ম তো বটেই, গোলমুখে মেসি-রোনালদো বাদে এত দুর্দান্ত কাউকে সর্বশেষ বিশ্ব কবে দেখেছে, তার জন্য ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টাতে হবে অনেকদূর। এমনই একটা সময়ে এসেছেন ইউরোতে, হাতে অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ডটাও শোভা পাচ্ছে। মোক্ষম সুযোগ যাকে বলে! 

চলতি মৌসুমে ভেঙেছেন জার্ড মুলারের বুন্দেসলিগায় এক সিজনে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। পোল্যান্ডের হয়েও সবচেয়ে বেশি ম্যাচ ও গোলের রেকর্ড লেওয়ান্ডস্কির দখলে। ১১৮ ম্যাচ খেলে করেছেন ৬৬টি গোল।

ক্লাব ফর্মটা ইউরোতেও টেনে আনতে চাইবেন লেওয়ানডস্কি; Image Source : Getty Images

ঈর্ষণীয় পরিসংখ্যানের পাশাপাশি মুদ্রার অপর পৃষ্ঠটাও রয়েছে। জাতীয় দলে সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেও বড় টুর্নামেন্টে নিজেকে কখনোই মেলে ধরতে পারেননি লেওয়ান্ডস্কি। ৩টি মেজর টুর্নামেন্ট খেলে তার গোল মোটে দুইটি। অধিনায়ক হিসেবে এবার নিশ্চয়ই খুব করে চাইবেন এই বেমানান পরিসংখ্যানটি ঝেড়ে ফেলার জন্য।

সামনের আগস্টেই ৩৩ বছরে পা দিবেন লেওয়ান্ডস্কি। বলা বাহুল্য, পোল্যান্ডবাসী তাকিয়ে থাকবে তাদের সবচেয়ে বড় তারকার দিকেই। নিজের শেষ ইউরোতে পোল্যান্ডবাসীর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য যে অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনার শুটিং বুটটিই লাগবে, তা রবার্ট লেওয়ানডস্কি বেশ ভালো করেই জানেন।

টনি ক্রুস

টনি ক্রুজ; Image Credit: Getty Images

নামটা দেখে চমকে উঠেছেন নিশ্চয়ই? চমকে উঠারই কথা। সদ্যই ৩১ বছর বয়সে পা দিলেন। ‘জার্মান মেশিন’-খ্যাত ক্রুস চাইলেই অবলীলায় খেলতে পারতেন আরো একটি ইউরো। তবে ক্রুসের ভাবনায় ছিল অন্য কিছু। ইউরোর পরপরই জাতীয় দলের হয়ে বুট জোড়া তুলে রাখতে চান তিনি। ক্লাব ক্যারিয়ারে মনোযোগ ও জাতীয় দলে তরুণদের জন্য জায়গা করে দেওয়া – এই দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়েই ক্রুসের এই সিদ্ধান্ত।

জার্মানির হয়ে ক্রুসের খেলা ম্যাচসংখ্যা ১০২টি। জার্মানির হয়ে জিতেছেন আরাধ্য বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপের অনবদ্য ক্রুস এখন আরো পরিণত। নিজের শেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হিসেবে ক্রুস নিশ্চয়ই চাইবেন ইউরো জিতে জার্মানদের এই শিরোপা নিয়ে আক্ষেপ ভোলাতে। নিজের শোকেসেও একমাত্র অপূর্ণতার ‘ইউরো’ ট্রফিটা পাওয়ার জন্য যে মুখিয়ে থাকবেন, সেটা বুঝতে খুব বেগ পেতে হয় না।

This article is about the football star who will play their last Euro. Necessary information are hyperlinked in the article. 

Feature Image: Sachin Singh 

Background Image: Photo by Joshua Hoehne on Unsplash

Related Articles