বর্তমানে ফুটবলের দারুন প্রসারের জন্য ফুটবল মানেই অর্থের ঝনঝনানি। দলবদল বাজারে আগুনের পাশাপাশি খেলোয়াড়দের ব্যাংক ব্যালেন্সও ফুলে ফেঁপে উঠছে। ক্লাবের পক্ষ থেকে বেতন ভাতা ও বোনাসের পাশপাশি স্পন্সরশিপ থেকেও খ্যাতিমান ফুটবলাররা আয় করেন মোটা অঙ্কের টাকা। সেইসবের উপর ভিত্তি করেই বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস কিছুদিন আগে প্রকাশ করেছে ২০১৮ সালে ফুটবলের সবচেয়ে বেশি আয় করা ১০ ফুটবলারের তালিকা। চলুন দেখে আসা যাক এই বছরের সবচেয়ে ধনী দশ ফুটবলার কারা।
১০. এঞ্জেল ডি মারিয়া (পিএসজি/আর্জেন্টিনা)
রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ঘুরে ২০১৫ সালে পিএসজিতে থিতু হন এই আর্জেন্টাইন উইঙ্গার। সেই থেকে দলের অপরিহার্য অংশ হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন। নেইমার, এমবাপ্পে ও কাভানির সাথে মিলে পিএসজির আক্রমণভাগকে করে তুলেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা। নাসের আল খেলাইফির অর্থের ঝনঝনানি ইতিমধ্যেই টের পেয়েছে বিশ্ব। তাই এত সব তারকা খেলোয়াড়দের বেতন ভাতা নিয়েও তেমন বেগ পোহাতে হয় না এই ফরাসি ক্লাবটিকে। গত দুই-এক সিজন ধরে আশানুরুপ পারফর্ম না করা সত্ত্বেও ডি মারিয়ার বেতন ও বোনাস অনেকটা বিস্ময়কর বটে।
বেতন ও বোনাস – ২০.৬ মিলিয়ন ডলার
এন্ডোর্সমেন্ট – ২ মিলিয়ন ডলার
মোট আয় – ২২.৬ মিলিয়ন ডলার
প্রধান স্পন্সর – এডিডাস
৯. সার্জিও আগুয়েরো (ম্যানচেস্টার সিটি/আর্জেন্টিনা)
ম্যানসিটির হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করা সার্জিও আগুয়েরো প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা এক তারকা। গত কয়েকবছর ধরেই ম্যানসিটির হয়ে নজরকাড়া পারফর্ম করায় বড় ক্লাবগুলো আগুয়েরোকে দলে ভেড়ানোর জন্য লেগে ছিলো। কিন্তু আগুয়েরো সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইতিহাদ ছেড়ে তিনি কোথাও যাচ্ছেন না। তার পেছনে হয়তো ম্যানসিটির মালিক আরব শেখদের টাকাও একটি মূল ফ্যাক্টর। যদিও ম্যানসিটির হয়ে সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া খেলোয়াড় ডি ব্রুইনা, তবে স্পন্সরশিপ ও অন্যান্য আয় মিলিয়ে ম্যানসিটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় করা খেলোয়াড় এই আর্জেন্টাইনই। সব মিলিয়ে তার স্থান নয়ে।
বেতন ও বোনাস – ১৭ মিলিয়ন ডলার
এন্ডোর্সমেন্ট – ৬.৫ মিলিয়ন ডলার
মোট আয় – ২৩.৫ মিলিয়ন ডলার
প্রধান স্পন্সর – পুমা
৮. ওয়েইন রুনি (ডি সি ইউনাইটেড/ইংল্যান্ড)
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়লেও রুনির ধারে যে মরচে পড়েনি তা কয়েকদিন আগেই দুর্দান্ত এক এসিস্ট করে জানান দিয়েছেন। ম্যানচেস্টার ছাড়লেও আয়ের দিক দিয়ে এখনো টপ লিস্টেই জায়গা করে নিয়েছেন একসময়ের ইংল্যান্ডের এই পোস্টার বয়। বেতন ভাতা ছাড়াও রুনির আয়ের একটা বড় অংশ আসে স্পন্সরশিপ থেকে।
বেতন ও বোনাস – ২২ মিলিয়ন ডলার
এন্ডোর্সমেন্ট – ৫ মিলিয়ন ডলার
মোট আয় – ২৭ মিলিয়ন ডলার
প্রধান স্পন্সর – হার্পার কলিন্স
৭. লুইস সুয়ারেজ (বার্সেলোনা/উরুগুয়ে)
বর্তমানে কয়েকজন বাঘা বাঘা স্ট্রাইকারদের নাম নিলে সুয়ারেজের নাম আসাটা আবশ্যক। লিভারপুল ও বার্সেলোনার হয়ে দারুন কয়েকটি মৌসুম কাটানো সুয়ারেজের বয়স বাড়লেও ধার কমেনি এতটুকু। এখনো বার্সেলোনার মতো ক্লাবের প্রধান স্ট্রাইকার হিসেবে খেলে যাচ্ছেন নিয়মিত। গোলমুখে ভয়ঙ্কর সুয়ারেজ ক্যারিয়ারে কিছু নেতিবাচক কর্মকান্ডের জন্য সমালোচিত হলেও বিশ্ববাজারে নিজের ব্র্যান্ড ভ্যালু ঠিকই ধরে রেখেছেন। বেশ কিছু স্পন্সরশিপ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে সুয়ারেজ এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন সাত নাম্বারে।
বেতন ও বোনাস – ১৯.৯ মিলিয়ন ডলার
এন্ডোর্সমেন্ট – ৭ মিলিয়ন ডলার
মোট আয় – ২৬.৭ মিলিয়ন ডলার
প্রধান স্পন্সর – এডিডাস, প্রো ইভ্যলুশন সকার, গেটোরেড
৬. অস্কার (সাংহাই শেনহুয়া/ব্রাজিল)
২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের অন্যতম তারকা খেলোয়াড় ছিলেন চেলসির সাবেক এই খেলোয়াড়। সামনে দারুন একটি ক্যারিয়ার পড়ে থাকা সত্ত্বেও বিশাল টাকার অফার পেয়ে চাইনিজ লিগ খেলতে চীনে পাড়ি জমান অস্কার, যার দরুন ব্রাত্য হন ব্রাজিল জাতীয় দল থেকে। তারকা তকমা হারানোর পাশাপাশি মিডিয়া স্পটলাইট সরে যায় প্রতিভাবান এই মিডফিল্ডারের উপর থেকে। তবে প্রফেশনালিজম থেকে চিন্তা করলে অস্কার আদৌ কোনো ভুল করেননি। চাইনিজ লিগে খেলে ঠিকই পেয়ে যাচ্ছেন মোটা অঙ্কের অর্থ। ইউরোপিয়ান কোনো লিগে খেললে নিঃসন্দেহে তার চেয়ে কম পেতেন অস্কার। সম্ভবত আয়ের দিক দিয়ে সেরা দশেও জায়গা করে নিতে পারতেন না তিনি।
বেতন ও বোনাস – ২৫.৯ মিলিয়ন ডলার
এন্ডোর্সমেন্ট – ১.৫ মিলিয়ন ডলার
মোট আয় – ২৭.৪ মিলিয়ন ডলার
প্রধান স্পন্সর – এডিডাস
৫. পল পগবা (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড / ফ্রান্স)
জুভেন্টাসের হয়ে মাঝমাঠে নিজের প্রতিভার পরিচয় দিয়ে নজর কাড়েন পল পগবা, যার দরুন ৮৯ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে তাকে দলে ভেড়ায় তারই সাবেক ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। যদিও অনেকে ওভারপ্রাইস ট্যাগ লাগিয়েছেন পগবার পিঠে, কিন্তু নিজের প্রতিভার জানান তিনি দিয়ে আসছেন ফ্রান্স ও ম্যানচেস্টারের হয়ে। আর সেজন্য নিজের একাউন্টও ভারি করে চলছেন ২৫ বছর বয়সী এই ফ্রেঞ্চম্যান।
বেতন ও বোনাস – ২৫ মিলিয়ন ডলার
এন্ডোর্সমেন্ট – ৪.৫ মিলিয়ন ডলার
মোট আয় – ২৯.৫ মিলিয়ন ডলার
প্রধান স্পন্সর – এডিডাস
৪. গ্যারেথ বেল (রিয়াল মাদ্রিদ/ওয়েলস)
প্রথম একশ মিলিয়ন ইউরো মূল্যমানের খেলোয়াড় গ্যারেথ বেল আছেন এই লিস্টের চার নাম্বারে। রোনালদোর বিদায়ে এখন তিনিই রিয়াল মাদ্রিদের পোস্টার বয়। ইনজুরি ক্যারিয়ারে বড় বাধা না হয়ে দাঁড়ালে এতদিনে আরো দূরে যেতে পারতেন এই ওয়েলসের উইঙ্গার। তবে রিয়াল মাদ্রিদের মতো ধনী ক্লাবের প্রধান খেলোয়াড় হওয়ায় বেতন ও বোনাস মিলিয়ে গ্যারেথ বেলের পকেটও কম ভারি নয়।
বেতন ও বোনাস – ২৮.৬ মিলিয়ন ডলার
এন্ডোর্সমেন্ট – ৬ মিলিয়ন ডলার
মোট আয় – ৩৪.৬ মিলিয়ন ইউরো
প্রধান স্পন্সর – এডিডাস
৩. নেইমার (প্যারিস সেইন্ট জার্মেই/ব্রাজিল)
ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় গত মৌসুমেই নাম লিখিয়েছেন ধনকুবের নাসের আল খেলাইফির দল প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে। বার্সেলোনা থেকে প্যারিসে পাড়ি জমানো মাত্রই নেইমারের বেতন বেড়ে যায় প্রায় দ্বিগুন। বনে যান মেসির পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া খেলোয়াড়ে। পাশাপাশি ইতিমধ্যেই জানান দিয়েছেন বিশ্বসেরা হওয়ার সামর্থ্য তার মাঝে আছে। মেসি–রোনালদোর পর নেইমারকেই ধরা হয় এই সময়ের সবচেয়ে প্রতিভাবান ফুটবলার। তাই স্পন্সরশিপেও কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করেন এই ব্রাজিলিয়ান পোস্টার বয়।
বেতন ও বোনাস – ৭৩ মিলিয়ন ডলার
এন্ডোর্সমেন্ট – ১৭ মিলিয়ন ডলার
মোট আয় – ৯০ মিলিয়ন ডলার
প্রধান স্পন্সর – নাইকি, রেড বুল, জিলেট, বিটস ইলেকট্রনিকস, ম্যাকডোনাল্ড
২. ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (জুভেন্টাস/পর্তুগাল)
এই প্রথমবারই ফোর্বসের জরিপে সবচেয়ে বেশি আয় করা ফুটবলারদের তালিকায় নিজের প্রথম স্থানটি হারান সময়ের অন্যতম সেরা এ খেলোয়াড়। তবে ৩৩ বছর বয়সে এসেও রোনালদো এতটুকু ফুরোননি। সদ্যই রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে যোগ দিয়েছেন জুভেন্টাসের মতো স্বনামধন্য ক্লাবে। পাশাপাশি মার্কেটিংয়ের জগতে এখনো এক নাম্বার স্থানটি ধরে রেখেছেন তিনি।
বেতন ও বোনাস – ৬১ মিলিয়ন ডলার
এন্ডোর্সমেন্ট – ৪৭ মিলিয়ন ডলার
মোট আয় – ১০৮ মিলিয়ন ডলার
প্রধান স্পন্সর – নাইকি, হার্বালাইফ, ক্লিয়ার, আমেরিকান টুরিস্টার, সি আর সেভেন জিনস, আন্ডারওয়্যার, ফ্র্যাগন্যান্স, হোটেল, জিমস
১. লিওনেল মেসি (বার্সেলোনা/আর্জেন্টিনা)
প্রথমবারের প্রতিদ্বন্দ্বী রোনালদোকে সরিয়ে এই তালিকার প্রথম স্থানটি দখল করে নেন আরেক সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি। মূলত বার্সেলোনার সাথে নতুন চুক্তিতে বেতন ভাতা বৃদ্ধিতেই এক নাম্বারে উঠে আসেন মেসি। নতুন চুক্তিতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া খেলোয়াড় বনে যান লিওনেল মেসি। পাশাপাশি এডিডাস, পেপসি ইত্যাদি স্পন্সরশিপে থেকে আয় করা অর্থ তো আছেই। তাতেই এই বছরের সবচেয়ে বেশি আয় করে খেলোয়াড় নির্বাচিত হন এই আর্জেন্টাইন ফুটবলার।
বেতন ও বোনাস – ৮৪ মিলিয়ন ডলার
এন্ডোর্সমেন্ট – ২৭ মিলিয়ন ডলার
মোট আয় – ১১১ মিলিয়ন ডলার
প্রধান স্পন্সর – এডিডাস, গেটোরেড, মাস্টারকার্ড, পেপসি, লেইস, ওরেডো, হুয়াউই টেকনোলোজিস