ব্যাক টু ব্যাক শতক। অসাধারণ দুটো ইনিংস, সেই সাথে ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করে ফেলেছেন ভারতীয় দেশসেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে ব্যাট হাতে বোলারদের বিরুদ্ধে নিজের অাধিপত্য বিস্তার করে পাঁচ সংখ্যাবিশিষ্ট রানের মাইলফলক স্পর্শ করা সত্যিই অনেক কঠিন এবং সম্মানের। ৪৭ বছরের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদের দেখা মিললেও ধারাবাহিক পারফরম্যান্স ও নৈপুণ্যের বদৌলতে গোটা ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে অার মাত্র ১৩ জন ব্যাটসম্যান এই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন, যার মধ্যে ৫ জন ব্যাটসম্যানই ভারতীয় শিবিরের। চলুন দেখে নেয়া যাক, সবচেয়ে কম ম্যাচে খেলে এ মাইলফলক স্পর্শ করেছেন কোন পাঁচজন ব্যাটসম্যান।
৫. জ্যাক ক্যালিস (২৮৬ ম্যাচ)
একজন স্পেশালিস্ট ফাস্ট বোলার, সাথে একজন স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিকেট ইতিহাসে তার মতো একজন অলরাউন্ডার খুবই বিরল। জ্যাক ক্যালিস, বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের মধ্যে অন্যতম একজন এই আফ্রিকান অলরাউন্ডার। এমনকি তাকে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার গ্যারি সোবার্স ও ইয়ান বোথামের সাথেও তুলনা করা হয়ে থাকে হরহামেশা। তিনিই একমাত্র অলরাউন্ডার, যিনি টেস্ট ও ওয়ানডে দুই ফরম্যাটের ক্রিকেটেই ১১ হাজার রানের পাশাপাশি বল হাতে ৫০০-র বেশি উইকেট নিয়েছেন। সব মিলিয়ে নিঃসন্দেহে তিনি আধুনিক ক্রিকেটের ‘গ্রেট’ একজন অলরাউন্ডার ছিলেন।
ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা একমাত্র আফ্রিকান ব্যাটসম্যান এই সাবেক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যক্তিগত ২৮৬তম ম্যাচে তিনি ১০ হাজার রানের এই অসাধারণ মাইলফলক স্পর্শ করেন, যা তাকে দ্রুততম সময়ে এই মাইলফলক স্পর্শ করা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে দিয়েছে। ওয়ানডে ক্যারিয়ার থেকে অবসরের আগে তিনি মোট ৩২৮ ম্যাচে ১৭টি শতক ও ৮৬টি অর্ধশতকের মাধ্যমে মোট ১১,৫৭৯ রান করেছেন।
৪. রিকি পন্টিং (২৭২ ম্যাচ)
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সর্বসেরা ব্যাটসম্যান ও অধিনায়ক ছিলেন রিকি পন্টিং। ২০০২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি টেস্ট ও ওয়ানডে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বেই অস্ট্রেলিয়া দল ২০০৩ ও ২০০৭ সালে টানা দুবার ক্রিকেট বিশ্বকাপ ট্রফি জিতেছিলো। টানা তিনবার বিশ্বকাপ জয়ের ইতিহাস সৃষ্টি করা অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম সদস্য তিনি। অনেক ক্রিকেটবোদ্ধার মতে, ভারতের শচীন টেন্ডুলকার ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারার সাথে তিনিও আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবিদার।
অস্ট্রেলিয়ান ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে ১০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করা একমাত্র ব্যাটসম্যান রিকি পন্টিং। ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্যক্তিগত ২৭২তম ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নেমে তিনি ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। দ্রুততম ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় তিনি শীর্ষ চার নম্বরে রয়েছেন। এছাড়াও ওয়ানডে ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে অবসর গ্রহণের আগপর্যন্ত তিনি মোট ৩৭৫টি ম্যাচে ৩০টি শতক ও ৮২টি অর্ধশতকের সমন্বয়ে ১৩,৭০৪ রান করেছেন।
৩. সৌরভ গাঙ্গুলী (২৭২ ম্যাচ)
‘প্রিন্স অব কলকাতা’ নামে খ্যাত ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ও অধিনায়ক ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী। একটা সময় ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি তিনি বল হাতেও বেশ চমক দেখিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বেই ভারত দীর্ঘ ২০ বছর পর ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে ফাইনালে অংশগ্রহণ করে। তার ব্যক্তিগত অসাধারণ পারফর্মেন্সের পরও শেষপর্যন্ত ভারত রানার্সআপ হয়েই টুর্নামেন্ট শেষ করে। সৌরভ গাঙ্গুলী যেমন মাঠে অসাধারণ অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, ঠিক তেমনি ড্রেসিংরুমেও দলের জুনিয়রদের আগলে রেখেছেন সবসময়, গড়ে তুলেছেন দারুণ সব ক্রিকেটার।
আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের তৃতীয় ও দলের হয়ে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী। ২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যক্তিগত ২৭২তম ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নেমে তিনি এই অসাধারণ মাইলফলকটি স্পর্শ করেন। দ্রুততম সময়ে এই মাইলফলক স্পর্শ করা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছেন অাগ্রাসী এই ব্যাটসম্যান। এছাড়াও ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের আগপর্যন্ত তিনি মোট ৩১১টি ম্যাচে ২২টি শতক ও ৭২টি অর্ধশতকের সমন্বয়ে ১১,৩৬৩ রান সংগ্রহ করেন, যা ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান।
২. শচীন টেন্ডুলকার (২৬৬ ম্যাচ)
‘ভারতীয় ক্রিকেট ঈশ্বর’ নামে খ্যাত শচীন টেন্ডুলকার শুধুমাত্র ভারতীয় ক্রিকেট নয়, বিশ্ব ক্রিকেটেরই অন্যতম সেরা একজন ব্যাটসম্যান। আন্তর্জাতিক টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক তিনি, এমনকি ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ‘শতকের শতক’ হাঁকানো একমাত্র ব্যাটসম্যানও তিনি। কোনো কোনো প্রবন্ধে তাকে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা ক্রিকেটার হিসেবেও অভিহিত করা হয়েছে। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি অসংখ্য খেতাবে ভূষিত হন, এবং ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে অবসরের পরই ২০১৪ সালে ভারত সরকার কর্তৃক তাকে ভারতের সর্বোচ্চ পুরষ্কার ‘ভারতরত্ন’ প্রদান করা হয়।
বিশ্ব ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ও ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা প্রথম ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার। বিশ্বসেরা এই সাবেক ব্যাটসম্যান ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যক্তিগত ২৬৬তম ম্যাচে ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করতে সক্ষম হন। দ্রুততম সময়ে এই মাইলফলক স্পর্শ করা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে অবসরের আগে তিনি মোট ৪৬৩ ম্যাচে ৪৯টি শতক ও ৯৬টি অর্ধশতকের সমন্বয়ে ১৮,৪২৬ রান সংগ্রহ করেন।
১. বিরাট কোহলি (২১৩ ম্যাচ)
বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। ক্ল্যাসিক্যাল ঘরানার ব্যাটিং করা এই ভারতীয় ব্যাটসম্যান যেকোনো দলের বিপক্ষে ভয়ংকর হয়ে ওঠেন প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই। বর্তমানে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যাটিং র্যাংকিংয়ের এক নম্বরে রয়েছেন বিরাট কোহলি। মাত্র ১০ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ইতিমধ্যেই ভেঙে ফেলেছেন বেশ কিছু ব্যাটিং রেকর্ড। বিশ্ব ক্রিকেটবোদ্ধাদের মতে, ক্রিকেটের ‘লিটল মাস্টার’ খ্যাত শচীন টেন্ডুলকারের বিশ্বরেকর্ডসমূহের অধিকাংশই ভেঙে ফেলতে পারেন বর্তমানের বিশ্বসেরা এ ব্যাটসম্যান।
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে ধারাবাহিক ও অন্যতম স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত বিরাট কোহলি। সর্বশেষ এবং সবচেয়ে দ্রুততম ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা ব্যাটসম্যানও তিনি। মাত্র ২১৩ ম্যাচে ৩৭টি শতক ও ৪৮টি অর্ধশতকের সমন্বয়ে তিনি মোট ১০,০৭৬ রান করে দ্রুততম ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন। যেখানে শীর্ষ দুই নম্বরে থাকা শচীন টেন্ডুলকার তার থেকে ৫৩টি ম্যাচে বেশি ব্যাটিং করে এ কীর্তি গড়েছিলেন।