ইতোমধ্যেই মাঠে গড়িয়ে গেছে বহুল প্রতীক্ষিত প্রিমিয়ার লিগ। নতুন মৌসুম শুরুর আগে প্রায় সবগুলো ক্লাবই দল গুছিয়ে নিয়েছে। খেলোয়াড় কেনাবেচায় সবচেয়ে সরব উপস্থিতি ছিলো আর্সেনাল ও লিভারপুলের। আর্সেনালের পাঁচ খেলোয়াড়ের চুক্তির বিপরীতে লিভারপুল অ্যানফিল্ডে এনেছে নতুন চারজন খেলোয়াড়।
এই দুই দল বাদেও চলতি মৌসুমের ট্রান্সফার উইন্ডোতে প্রিমিয়ার লিগে যোগ দিয়েছেন বেশ কিছু তারকা ও প্রতিভাবান খেলোয়াড়। চলুন দেখে আসা ২০১৮-১৯ মৌসুমের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে দামি দশ চুক্তি নিয়েই।
১০) জন মাইকেল সেরি – ২৫ মিলিয়ন ইউরো (নিস – ফুলহাম)
গত কয়েক বছর ধরে সেরিকে নিয়ে অনেক শোরগোল শোনা গেলেও গত মৌসুম পর্যন্ত ফরাসি ক্লাব নিসেই পড়ে ছিলেন আইভরি কোস্টের এই খেলোয়াড়। তবে এ মৌসুমেই মধ্যমাঠের এই খেলোয়াড় যোগ দিয়েছেন প্রিমিয়ার লিগের দল ফুলহামে। তাকে দলে ভেড়াতে ফুলহামকে গুণতে হয়েছে ২৫ মিলিয়ন ইউরো, যার মাধ্যমে তিনি পরিণত হয়েছেন ক্লাবটির ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ে।
টাকার অঙ্কটা নেহায়েত কম নয়। তবে এই ২৭ বছর বয়সী মিডফিল্ডারের যোগ্যতা আছে দলের নিউক্লিয়াস হয়ে ওঠার। চুক্তি অনুযায়ী ফুলহামের জার্সি গায়ে সেরি মাঠ মাতাবেন চার বছর। নিসের হয়ে ১২৩ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আর অসাধারণ গেম রিডের দক্ষতা দিয়ে ফুলহামের কী-ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন এই ফুটবলার।
৯. ফেলিপে অ্যান্ডারসন – ৩৫ মিলিয়ন ইউরো (লাজিও – ওয়েস্টহাম ইউনাইটেড)
২৫ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ফেলিপে অ্যান্ডারসনকে ৩৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে এই সিজনে দলে ভিড়িয়েছে লন্ডনের ক্লাব ওয়েস্টহাম ইউনাইটেড। দ্রুতগতির এই উইঙ্গার পাসিংয়ের পাশাপাশি ড্রিবলিংয়েও সমান পারদর্শী। পাঁচ বছর লাজিওতে থেকে খেলেছেন ১৭৭টি ম্যাচ। গোল করানোর পাশাপাশি করেছেন ৩৪টি গোলও। গত মৌসুমের ভরাডুবি থেকে উত্তরণের জন্য অ্যান্ডারসন হতে পারেন ওয়েস্টহামের তুরুপের তাস।
৮. রিচার্লিসন – ৪০ মিলিয়ন ইউরো (ওয়াটফোর্ড – এভারটন)
গত মৌসুমে ওয়াটফোর্ডের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করে নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছেন মাত্র ২১ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান। ওয়াটফোর্ডের হয়ে এক মৌসুমে ৩৮টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৫ গোলের পাশাপাশি অসংখ্য চান্সও তৈরি করেছেন এই তরুণ খেলোয়াড়। ফলে চলতি সিজনে বড় বড় ক্লাবগুলোর চোখ ছিলো এই ব্রাজিলিয়ানের উপর।
সবাইকে টপকে তাকে দলে ভেড়ায় এভারটন। তবে অনেকটা চড়া দাম দিয়েই রিচার্লিসনকে গুডিসন পার্কে নিয়ে এসেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দলটি। ভবিষ্যতের এই তারকা খেলোয়াড়ের জন্য এভারটনকে দিতে হয়েছে ৪০ মিলিয়ন ইউরো।
৭. ফ্যাবিনহো – ৪৩.৭ মিলিয়ন ইউরো (মোনাকো – লিভারপুল)
গত কয়েক মৌসুম ধরে ধারাবাহিক পারফর্ম করে যাওয়া এই ব্রাজিলিয়ান রাইট ব্যাককে এবার দলে ভিড়িয়েছে ক্লপের লিভারপুল। মোনাকো থেকে ফ্যাবিনহোকে কিনতে লিভারপুলের খরচ হয়েছে ৪৩.৭ মিলিয়ন ইউরো। ২৪ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লুমিনেন্সে ক্যারিয়ার শুরুর পর রিয়াল মাদ্রিদ বি দলের ও সিনিয়র দলের হয়ে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন। পরবর্তীতে মোনাকোর হয়ে কাটান চারটি বছর। মোনাকোর হয়ে ২৩৩ ম্যাচ খেলে ৩১টি গোল করেন ফ্যাবিনহো। লিভারপুলের মাঝমাঠের সমস্যা কাটাতে এই মৌসুমে ফ্যাবিনহোকে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে।
৬. ফ্রেড – ৫২ মিলিয়ন ইউরো (শাখতার দোনেৎস্ক – ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)
ভবিষ্যতের মাঝমাঠের এই কান্ডারি ৫২ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে চলতি সিজনে যোগ দিয়েছেন হোসে মরিনহোর দলে। শাখতার দোনেৎস্কের হয়ে নজরকাড়া পারফরম্যান্সের পর ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি বড় বড় ক্লাবগুলোর সুনজরে ছিলেন ২৫ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান। ইউক্রেনিয়ান ক্লাব শাখতারের হয়ে ১০১ ম্যাচ খেলে ১০ গোল করেন ফ্রেড। ম্যাটিচ, পগবাদের সাথে মিলে রেড ডেভিলদের মাঝমাঠ যে ফ্রেড আরো শক্তিশালী করে তুলবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
৫. নাবি কেইটা – ৫২.৭৫ মিলিয়ন ইউরো (আরবি লাইপজিগ – লিভারপুল)
দুই সিজন ধরে লিভারপুলের টার্গেট হয়ে থাকা গিনিয়ান ফুটবলার নাবি কেইটাকে অবশেষে এ বছর লিভারপুলের লাল জার্সি পরে মাঠ মাতাতে দেখা যাবে। যদিও চুক্তিটি একপ্রকার হয়েই ছিলো। তবে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে নাবি কেইটা এখন লিভারপুলের খেলোয়াড়। চুক্তি অনুযায়ী লাইপজিগ লিগ টেবিলে চারের মধ্যে থাকতে পারলে লিভারপুলকে ৬০ মিলিয়ন ইউরো দিতে হতো। তা না হওয়াতে ৫২.৭৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কেইটাকে দলে ভেড়াতে সক্ষম হয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের এই দলটি। লিগে লাইপজিগের অসাধারণ পারফরম্যান্সের পেছনের কলকাঠি নেড়েছেন মাঝমাঠের এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়। লাইপজিগের হয়ে ৫৯ ম্যাচ খেলে কেইটা গোল করেছেন ১৪টি। নতুন মৌসুমে ফ্যাবিনহোর সাথে লিভারপুলের মধ্যমাঠের দখল নেবেন তিনি।
৪. জর্জিনহো – ৫৭ মিলিয়ন ইউরো (নাপোলি – চেলসি)
২৬ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত এই ইতালিয়ানের ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেয়াটা সময়ের ব্যাপারই মনে হচ্ছিলো। কিন্তু নাপোলি ও জর্জিনহোর সাবেক কোচ মাউরিজিও সারি এই মৌসুমে চেলসির দায়িত্ব নেওয়ার পর ম্যানসিটি থেকে একপ্রকার হাইজ্যাক করেই স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে নিয়ে আসেন জর্জিনহোকে। সেজন্য অবশ্য রোমান আব্রামোভিচকে গুনতে হয় ৫৭ মিলিয়ন ইউরো। গত সিজনে নাপোলির অসাধারণ খেলার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন জর্জিনহো। লা ব্লুজ ফ্যানরাও এবার মাঝমাঠে তাকিয়ে থাকবে জর্জিনহোর দিকেই।
৩. অ্যালিসন – ৬৫ মিলিয়ন ইউরো (রোমা – লিভারপুল)
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে লরিস কারিউসের হাস্যকর গোলকিপিংয়ের পর থেকে লিভারপুলের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় একজন ভালো মানের গোলকিপারকে উড়িয়ে নিয়ে আসা। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই অ্যালিসনকে লিভারপুলে নিয়ে আসেন ক্লপ। ব্রাজিল দলের প্রধান এই গোলকিপার গত বছর পুরো সিজন ধরে দারুণভাবে সামলিয়েছেন রোমার গোলবার। রোমার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে ওঠার পেছনে কার্যকরী ভূমিকা ছিলো অ্যালিসনের। দারুণ ক্ষিপ্রতা আর রিফ্লেক্সের মাধ্যমে গত মৌসুমে সর্বমোট ২২ বার ক্লিনশিট রেখেছেন তিনি। ৬৫ মিলিয়ন একজন গোলকিপারের জন্য চড়া দাম হলেও অ্যালিসনের সামর্থ্য রয়েছে এই দামের যোগ্য হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার।
২. রিয়াদ মাহরেজ – ৬৭ মিলিয়ন ইউরো (লেস্টার সিটি – ম্যানচেস্টার সিটি)
জর্জিনহোকে চেলসির কাছে হারানোর পর পেপ গার্দিওলা পাখির চোখ করেন আলজেরিয়ান খেলোয়াড় রিয়াদ মাহরেজকে। সাবেক প্রিমিয়ার লিগ বেস্ট প্লেয়ার পুরস্কার জেতা এই খেলোয়াড় লেস্টার সিটিকে প্রিমিয়ার লিগ জেতাতে পালন করেছেন অনবদ্য ভূমিকা। সেই থেকে তাকে কেনার জন্য বার্সেলোনা সহ বড় বড় ক্লাবগুলো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো। তাদের টপকে এই মৌসুমে ম্যানসিটির একমাত্র সাইনিং হয়ে যান মাহরেজ।
লেস্টার থেকে তাকে ইতিহাদে আনতে সিটিজেনদের খরচ পড়েছে ৬৭ মিলিয়ন ইউরো, যাতে করে তিনি হয়ে যান সবচেয়ে দামি আফ্রিকান খেলোয়াড়। ফক্সেসদের হয়ে ১৭৯ ম্যাচ খেলে ৪৮ গোল করেছেন এই উইঙ্গার। মাহরেজের অন্তর্ভুক্তি সিটিজেনদের মাঝমাঠকে করে তুলেছে আরো শক্তিশালী ও বৈচিত্রময়।
১. কেপা আরিজাবালাগা – ৭১.৬ মিলিয়ন ইউরো (অ্যাথলেটিক বিলবাও – চেলসি)
গোলকিপারদের কেনাবেচার ইতিহাসে আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে কেপাকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিয়ে আসে চেলসি। ২৩ বছর বয়সী এই গোলকিপারের ৭১.৬ মিলিয়ন রিলিজ ক্লজের পুরোটা শোধ করে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে নিয়ে আসেন রোমান আব্রামোভিচ। তাতে করে কেপা বনে যান বিশ্বের সবচেয়ে দামি গোলকিপারে। কয়েক সিজন ধরেই অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের হয়ে ধারবাহিকভাবে ভালো পারফর্ম করে যাওয়ায় রিয়াল মাদ্রিদের সুনজরে ছিলেন এই স্প্যানিশ গোলরক্ষক। তবে এই মৌসুমে চেলসি থেকে কর্তোয়াকে রিয়াল মাদ্রিদ কিনে নেওয়ায় তার শূন্যস্থান পূরনের জন্য কেপাকে নিয়ে আসে চেলসি। ২৩ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক তার উপর রাখা আস্থার প্রতিদান কতটুকু দিতে পারবেন তা সময়ই বলে দিবে। তবে আপাতত কেপাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে দামি গোলকিপার। পাশাপাশি এই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে দামি সাইনিংও।