২০১৫-১৬ মৌসুমে পুরো ফুটবল বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জিতে নিয়েছিল ক্লদিও রানিয়েরির লেস্টার সিটি। অথচ মাত্র আগের মৌসুমেই দলটা ছিল রেলিগেশনের পথে। পরের মৌসুমেই ভোজবাজির মতো পাল্টে গেল চিত্র। লিগে ধুঁকতে থাকা দলটা পরের মৌসুমেই জিতে নিল ইংলিশ চ্যাম্পিয়নের মুকুট। তবে এরকম ঘটনা কিন্তু ফুটবল ইতিহাসে এটাই প্রথম নয়, শূন্য থেকে শুরু করে রাজার আসনে বসার মতো ঘটনা এর আগেও ঘটেছে ফুটবলে। এর জন্য আমাদের ফিরে যেতে হবে আজ থেকে প্রায় ৩৬ বছর আগে। ইতালির এমন এক শহরে, যে শহরকে মানুষ ফুটবলের চেয়ে বেশি চেনে রোমিও-জুলিয়েটের প্রেমকাহিনীর জন্য।
ইতালিয়ান ফুটবলের কথা বললেই চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মাথায় আসে জুভেন্টাসের কথা। কয়েক বছর আগে শিরোপা দৌড়ে এসি মিলান-ইন্টার মিলানও ছেড়ে কথা বলতো না। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না ক্লাব দুটো। এছাড়াও সফল ক্লাবের তালিকায় আরো আছে রোমা, লাৎসিও, তোরিনোসহ আরও কয়েকটি ক্লাব। কিন্তু ১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে এইসব ক্লাবকে পেছনে ফেলে ইতালিসেরার মুকুট নিজেদের করে নেয় হেল্লাস ভেরোনা। তখনকার ইতালিয়ান লিগ এখনকার মতো ম্যাড়ম্যাড়ে ধরনের ছিল না। তখন ইতালিয়ান লিগে লড়াই হতো ডিয়েগো ম্যারাডোনার নাপোলি, মিশেল প্লাতিনির জুভেন্টাস, কার্ল-হেইঞ্জ রুমেনিগের ইন্টার, ফ্যালকাওয়ের রোমা এবং জিকোর উদিনেসের মাঝে। এই বাঘা বাঘা ফুটবল ক্লাবগুলোর চোখের সামনে দিয়ে ১৯৮৫ সালে লিগ জিতেছিল অখ্যাত এক ক্লাব হেল্লাস ভেরোনা।
ক্যালসিওপোলির আগেও ইতালিতে আরেকটা ফিক্সিং স্ক্যান্ডাল আলোড়ন তুলেছিল — টটোনেরো, ইতালির প্রথম বড় ম্যাচ ফিক্সিং স্ক্যান্ডাল। এই স্ক্যান্ডাল জনসম্মুখে এনেছিল ইতালির গার্দিয়া দি ফিনানজা। এই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাটি খেলোয়াড় এবং ক্লাব মেম্বারদের একটি বেটিং সিন্ডিকেটের কথা সবার সামনে আনে, যারা টাকার বিনিময়ে ম্যাচ ফিক্সিং করতো। সেই ফিক্সিংয়ে শাস্তির মুখোমুখি হয় মিলান এবং লাৎসিও। ক্লাব দু’টিকে রেলিগেট করে দেয়া হয় ইতালিয়ান ফুটবলের দ্বিতীয় বিভাগে।
এই স্ক্যান্ডালের পর ইতালিয়ান ফুটবল লিগের রেফারিং সিস্টেমে পরিবর্তন আসে। আগে ম্যাচ অফিশিয়াল নির্ধারণের জন্য প্যানেল নির্ধারিত থাকলেও এই ঘটনার পর থেকে দৈবচয়ন উপায়ে ম্যাচ অফিশিয়াল নির্ধারিত হতো। এই নিয়ম পরিবর্তনের ফলে ইতালিয়ান ফুটবলে আসে স্বচ্ছতা, সাথে ইতালিয়ান লিগ পায় নতুন এক চ্যাম্পিয়ন।
ইতালির ভেনেতো অঞ্চলের ক্লাব ভেরোনা। জন্ম ১৯০৩ সালে হলেও সিরি-আ’তে আসতে সময় লেগে গেছে প্রায় ৫৪ বছর। তারপর থেকে কখনো সিরি-আ’তে, কখনো সিরি-বি’তে। শিরোপাও তেমন একটা নেই। এর আগে শুধু দু’বার জিতেছে সিরি-বি ট্রফি। তবে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন হবার আগের বছরগুলোতে ভেরোনার লিগ পজিশন ভিন্ন কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। আগের দুই মৌসুমে পয়েন্ট টেবিলে যথাক্রমে ষষ্ঠ আর চতুর্থ স্থানে থেকে লিগ শেষ করেছিল দলটি।
তবে এর আগের মৌসুমগুলো খুব একটা ভালো যায়নি। ভেরোনার এই ক্লাবটি ১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে মাত্র ১৫ পয়েন্ট নিয়ে নেমে গিয়েছিল সিরি-আ থেকে। পরের দুই মৌসুম দলটি কেবল কোনোরকম লড়ে গিয়েছিল তৃতীয় বিভাগে রেলিগেশন থেকে বাঁচতে।
ক্লাবের এমন করুণ অবস্থায় ক্লাবের ত্রাণকর্তা হিসেবে আসলেন সাবেক সেসেনা কোচ ওসভালদো বানিওলি। জিয়ানকার্লো কাদের কাছ থেকে দায়িত্ব নিয়ে প্রথম মৌসুমেই বানিওলি প্রমাণ করে দিলেন, কেন তার দায়িত্ব নেয়াটা জরুরি ছিল। ভগ্নপ্রায় ক্লাবটির দায়িত্ব নিয়ে প্রথম মৌসুমেই পিসা এবং সাম্পাদোরিয়াকে পেছনে ফেলে সিরি-বি চ্যাম্পিয়ন করলেন ভেরোনাকে। তখন কেউ থোড়াই জানতো যে একইভাবে সিরি-আও জিতে নেবেন এই ইতালিয়ান।
সিরি-আতে তো উঠে এলেন বটে, কিন্তু জিতবেন কেমন করে? সিরি-আ’র দলগুলো যে তখন তারকায় ঠাসা! জুভের মিশেল প্লাতিনি, পাওলো রসি, জিবিগনিয়েভ বনিক থেকে শুরু করে রোমার ফ্যালকাও, রবার্তো প্রুজ্জো। তার উপর সে মৌসুমে রেকর্ড ফিতে নাপোলিতে যোগ দিয়েছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। কাজটা খুব সহজ ছিল না।
কিন্তু এই ম্যারাডোনার নাপোলির বিপক্ষেই নিজেদের স্বপ্নযাত্রার শুভ সূচনা করে বানিওলির ভেরোনা। নেপলসের এই দল নিজেদের নতুন সাইনিং ফুটবল-ঈশ্বর ডিয়েগো ম্যারাডোনাসহ আসে ভেনেতোতে। পুরো ফুটবল বিশ্ব মুখিয়ে ছিল নাপোলির এই আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের অভিষেক ম্যাচের জন্য।
সবার আশায় পানি ঢেলে সেই ম্যাচে ম্যারাডোনাকে আটকে দেন ভেরোনার নতুন সাইনিং জার্মান খেলোয়াড় হ্যান্স-পিটার ব্রিগেল। ডিফেন্ডার ব্রিগেলের গোলেই প্রথমে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ভেরোনা। ম্যাচ শেষে স্কোরলাইন ছিল ৩-১। এই ম্যাচ জিতে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে যায় ভেরোনা। এরপর আর পিছন ফিরে তাকায়নি দলটি।
প্রথম ম্যাচেই জয় পাওয়া ভেরোনার আরেকটি সাইনিং ছিল ড্যানিশ খেলোয়াড় প্রিবেন এল্কশার। দারুণ ভার্সেটাইল এবং ফিজিকাল এই মিডফিল্ডার ছিলেন বানিওলির একাদশের নিয়মিত সদস্য। নতুন দুই সাইনিং ব্রিগেল এবং এল্কশারের জ্বলে ওঠা ভেরোনার জন্য ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হতাশ হতে হয়নি বানিওলিকে, সেবার দুর্দান্ত পারফর্ম করেন এই দুই খেলোয়াড়। ব্রিগেলের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তাকে এনে দেয় ১৯৮৫ সালের জার্মানির প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ারের খেতাব।
তবে সেবার ইতালির ক্লাবটির সেরা খেলোয়াড় ছিলেন এল্কশার। এনার্জেটিক এই মিডফিল্ডার এসেছিলেন বেলজিয়ান ক্লাব লোকেরেন থেকে। তার ইতালিতে আসা ব্যার্থ যায়নি। ১৯৮৪ এবং ১৯৮৫ সালের ব্যালন ডি’অর তালিকায় এই খেলোয়াড় ছিলেন যথাক্রমে তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে। শুধু তাই নয়, ১৯৮৬ বিশ্বকাপে শেষ ১৬ তে গিয়েছিল এল্কশারের জাতীয় দল ডেনমার্ক। বিশ্বকাপের সেই আসরে এল্কশার জিতেছিলেন ব্রোঞ্জ বল।
চেইন স্মোকার এই খেলোয়াড়কে মানুষ বেশি মনে রেখেছে তার কিছুটা আলাদা ফুটবল ব্যক্তিত্বের কারণে। বেশ স্কিলফুল হবার পাশাপাশি খেলার মাঠে এই ড্যানিশ খেলোয়াড় ছিলেন আগ্রাসী। তার মধ্যে জেতার আকাঙ্ক্ষা ছিল তীব্র। তার এই জেতার তীব্র আকাঙ্ক্ষার কারণেই সেবার লিগ জিতেছিল হেল্লাস ভেরোনা। এল্কশার পেয়েছিলেন ডাকনাম ‘সিনডাকো টু’, ইংরেজিতে যার অর্থ হলো ‘দ্য মেয়র’।
বাজেট স্বল্পতায় থাকা ভেরোনা দলে ভিড়িয়েছিল কেবল এই দুই খেলোয়াড়কেই। চাইলে সিরি-আ’র বড় কোনো ক্লাবে যেতে পারতেন, কিন্তু তারা বেছে নিয়েছিলেন ভেরোনাকে। হতাশ হতে হয়নি তাদের। বানিওলি বিগত কয়েকবছর ধরে যে দল সাজাচ্ছিলেন, তার জন্য এই দুই খেলোয়াড় ছিল পাজলের শেষ দুই টুকরার মতো। তার দলের অন্য খেলোয়াড়েরাও কম প্রতিভাবান ছিলেন না। কিন্তু বড় ক্লাবগুলোতে নিজেদের ঠিক খুঁজে পাচ্ছিলেন না তারা।
ডিফেন্ডার লুসিয়ানো ম্যারাঙ্গন এসেছিলেন রোমা থেকে। অধিনায়ক রবার্তো ত্রিচেলা যোগ দিয়েছিলেন ইন্টার থেকে। জুভেন্টাসে একশ’রও বেশি ম্যাচ খেলেও পায়ের নিচে খুব একটা মাটি পাচ্ছিলেন না উইঙ্গার পিয়েত্রো ফানা। আক্রমণভাগে এল্কশারের সাথে জুটি গড়েছিলেন তরুণ স্ট্রাইকার জিউসেপ্পে নানু গালদেরিসি। ত্রিচেলা এবং গালদেরিসি পরে ডাক পান ইতালির ১৯৮৬ বিশ্বকাপ দলে।
বানিওলির দলে নিয়মিত প্লেমেকারের ভূমিকায় থাকতেন আন্তোনিও ডি জেনারো। প্রতিভাবান মিডফিল্ডার ডি জেনারো স্কিলফুল হবার পাশাপাশি ড্রিবলিংয়ে ছিলেন অসাধারণ। সাথে হাই ওয়ার্করেট এবং স্টামিনার কারণে বানিওলির মধ্যমাঠের কান্ডারি ছিলেন এই ইতালিয়ান।
বানিওলির অধীনে প্রতিভা এবং কঠোর পরিশ্রমের মিশেলে গড়ে উঠেছিল দারুণ একটি দল। বানিওলির ম্যান ম্যানেজমেন্ট ছিল প্রশংসনীয়, সাথে ট্রান্সফার মার্কেটেও তার বিচক্ষণতায় এমন একটি দল গঠিত হয়েছিল যাদের মাঝে বোঝাপড়াটা ছিল অসাধারণ।
ভেরোনার আগে ইতালিতে কেবল তৃতীয় সারির দল সামলানোর অভিজ্ঞতা থাকলেও ভেরোনায় এসে নিজেকে সেরা কোচদের একজন হিসেবে প্রমাণ করেছেন বানিওলি। দলকে বিভিন্ন প্রতিপক্ষের জন্য বিভিন্নভাবে প্রস্তুত করায় তার জুড়ি ছিল না। প্রতিপক্ষের খেলা কাটাছেঁড়া করে নিজের দলকে সেভাবে প্রস্তুত করতেন তিনি।
বানিওলির ভেরোনা সুপরিচিত ছিল নিজেদের সুগঠিত কাউন্টার অ্যাটাকের কারণে। ডিফেন্সে অধিনায়ক ত্রিচেলা ছিলেন ‘লিবেরো’ হিসেবে। তার সঙ্গী ছিলেন সিলভানো ফন্টোলান। দু’পাশে ফুলব্যাকের ভূমিকায় থাকতেন মাউরো ফেরোনি এবং লুসিয়ানো ম্যারাঙ্গন। গোলবার সামলানোর দায়িত্ব থাকত ক্লদিও গ্যারেলার হাতে। সিরি আ’র ইতিহাসে অন্যতম সেরাদের কাতারে থাকবে এই ডিফেন্স লাইনআপ। কারণ, সেই মৌসুমে এই রক্ষণ ভেঙে বল জালে জড়িয়ে ছিল কেবল ১৯ বার!
মাঝমাঠ সামলাতেন ব্রিগেল এবং ডমেনিলো ভলপাতি, সামনে রেজিস্তা হিসেবে ছিলেন ডি জেনারো। ফানা বেশিরভাগ সময় খেলতেন রাইট উইংয়ে। সাপোর্ট দিয়ে যেতেন ফরওয়ার্ড জুটি এল্কশার এবং গালদেরিসিকে। এল্কশার-গালদেরিসি জুটি সে মৌসুমে করেছিলেন ২০ গোল। খেলার মাঠে প্রতিটি খেলোয়াড়ই নিজের ভূমিকা বেশ ভালোভাবে পালন করতেন। বানিওলির ট্যাকটিক্স অনুযায়ী প্রতিপক্ষ বুঝে মাঝেমধ্যে তাদের রোলে পরিবর্তনও আসত। কমবেশি সবাই ভার্সেটাইল হওয়ার চমৎকারভাবে কাজ করতো বানিওলির ট্যাকটিক্স।
প্রথম ম্যাচে ম্যারাডোনার নাপোলিকে হারানোর পর নিজেদের অসাধারণ ফর্ম ধরে রাখে ভেরোনা। টানা ১৪ ম্যাচ অপরাজিত ছিল ভেনেতো অঞ্চলের ক্লাবটি। মাঝেমধ্যে ভাগ্যেরও সহায়তা মিলছিল। কিছু ম্যাচে স্বল্প ব্যবধানে জয়, কিছু ম্যাচে লড়াই করে ড্র। এভাবে দলটা আরও সংঘবদ্ধ হয়ে উঠছিল। জেতার আকাঙ্ক্ষা আরও ভালোভাবে চেপে বসেছিল বানিওলি এবং তার খেলোয়াড়দের মনে, যখন লিগের পঞ্চম ম্যাচে তারা ইতালিয়ান জায়ান্ট জুভেন্টাসকে হারাল।
উৎসাহে টগবগ করা বানিওলির দল হোঁচট খেল তাদের পঞ্চম ম্যাচে, এভেলিনোতে। ২-১ গোলে এভেলিনোর কাছে হারার পর মনোবল ভেঙে গেল ভেরোনার খেলোয়াড়দের। কিন্তু খুব অল্প সময়েই নিজেদের সামলে উঠল তারা। উদিনেসের বিপক্ষে ম্যাচে তার প্রমাণ পাওয়া গেল। ৩০ গোলে এগিয়ে থাকা ম্যাচ ৩-৩ করে ফেলেছিল উদিনেসে। মনে হচ্ছিল, ম্যাচ বুঝি ফসকে গেল। ত্রাতা হয়ে এলেন এল্কশার, ৫৯ মিনিটে উদিনেসের মাসিমো মাউরো সমতা আনার পর ৬১ মিনিটেই আবার লিড এনে দেন তিনি। ৬৩ মিনিটে উদিনেসের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন ব্রিগেল, ৫-৩ এর জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ভেরোনা।
উদিনেসের বিপক্ষে খেলার পরের ম্যাচেই ইন্টারের সাথে ম্যাচে বিপদে পড়েন বানিওলি। অসুস্থতার কারণে মূল একাদশের ছয়জনকে ছাড়াই মাঠে নামে ভেরোনা। আতোবেল্লির গোলের পর আবারও হারের শঙ্কায় ভেরোনা। আরও একবার দলকে বাঁচালেন ব্রিগেল, তার গোলে ১-১ গোলে ড্র নিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন বানিওলি।
ফেব্রুয়ারি-মার্চে নিজেদের ফর্ম ধরে রাখে ভেরোনা। কিন্তু এপ্রিলের প্রথম ম্যাচেই তোরিনোর কাছে ২-১ গোলে হেরে দ্বিতীয়বারের মতো হারের মুখ দেখে। পয়েন্ট ব্যবধান ছয় থেকে নেমে আসে তিনে। লিগের আর দুই ম্যাচ বাকি।
আটালান্টার সাথে ম্যাচ। ভেরোনার উল্লাস দমিয়ে দেয়ার প্ল্যান নিয়েই মাঠে নেমেছিল আটালান্টা। ইউজেনিও পেরিকোর গোলে ১-০ নিজেদের মাঠে এগিয়েও গিয়েছিল আটালান্টা। তবে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি, দ্বিতীয়ার্ধ্ব শুরুর ৬ মিনিটের মাথায়ই সমতা আনেন এল্কশার। ১-১ স্কোরলাইনে শেষ হয় ম্যাচ। এই ড্রয়ে রচিত হয় নতুন ইতিহাস। প্রথমবারের মতো সিরি-আ চ্যাম্পিয়ন হয় ভেরোনা।
মাত্র ১৭ জন খেলোয়াড় ছিল বানিওলির হাতে। এদের কেউই তারকা খেলোয়াড় ছিলেন না। প্রতিভা ছিল এদের মধ্যে, কিন্তু তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। একদল ‘মিসফিট’ খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গড়লেন; ১৫ জয়, ১৩ ড্র নিয়ে দলটাকে করলেন চ্যাম্পিয়ন। এই শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব যতটা খেলোয়াড়দের, ঠিক ততটাই ম্যানেজার ওসভালদো বানিওলির।
বীরের বেশে নিজ শহর ভেনেতোতে ফেরেন গুরু বানিওলি এবং তার শিষ্যরা। রোমান অ্যারেনার সামনে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল ভেরোনাবাসি। রোমিও-জুলিয়েটের শহরে জন্ম হয় নতুন এক লোকগাথার। ভেরোনা শহরের অনেক বার-রেস্টুরেন্টে এখনো দেয়ালে শোভা পায় ১৯৮৫ সালের সেই ইতালি জয়ের স্মৃতি।