এক যুগ আগের কথা। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ২০০৭ সালের মে মাসে বাংলাদেশ-ভারত প্রথম টেস্ট।
মাশরাফি বিন মুর্তজার করা ইনিংসের প্রথম বলেই অফ স্ট্যাম্প উড়ে গেল ওয়াসিম জাফরের। ভারতীয় এই ওপেনার ওই টেস্টে আর রানের খাতাই খুলতে পারেননি। দ্বিতীয় ইনিংসে শাহাদাত হোসেন রাজীবের শিকার হওয়ার আগে তিনি উইকেটে স্থায়ী হয়েছিলেন মাত্র ৩ বল।
বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে মাশরাফির বলে স্ট্যাম্প উড়ে যাওয়ার দৃশ্যেই হয়তো বেশি পরিচিত ওয়াসিম জাফর। তবে ভারতের অন্যতম প্রতিভাবান ওপেনার হিসেবেই ধরা হয় তাকে। রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসে সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন তিনি। ধারাবাহিকতা না থাকায় ভারতের হয়ে অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা বড় করতে পারেননি। তারপরও শচীন-দ্রাবিড়-গাঙ্গুলিদের সোনালী ব্যাটিং লাইনআপের যুগে ভারতের হয়ে ৩১টি টেস্ট খেলেছেন। পাঁচ সেঞ্চুরির মধ্যে দু’টি ডাবলে রূপ দিয়েছিলেন মুম্বাইয়ের এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
জাতীয় দলে গৌতম গম্ভীর, শিখর ধাওয়ানদের কাছে জায়গা হারানো ওয়াসিম জাফর ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে এক রানমেশিন, জীবন্ত কিংবদন্তি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫৭ সেঞ্চুরি এবং ৮৮ হাফ সেঞ্চুরিতে ৫১.১৯ গড়ে করা ১৯,১৪৭ রানই তার ব্যাটিং সামর্থ্যের পরিচয়বহন করছে। ৪১ বছর বয়সেও দিব্যি খেলে যাচ্ছেন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট।
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে আবাহনীর হয়ে খেলতে ওয়াসিম জাফর এখন বাংলাদেশে রয়েছেন। একান্ত আলাপে নিজের ক্যারিয়ারের নানা দিক, ভারতীয় ক্রিকেটের বাঁকবদল, দেশটির ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামোর পরিবর্তন ও বাংলাদেশ দল নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
ভারতের হয়ে ৩১টি টেস্ট খেলেছেন, যেটি ছিল ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটিং লাইনআপ। শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলিদের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
প্রথমত, ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা অনেক বড় সম্মানের ব্যাপার ছিল। যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলাম, তখন এটাই স্বপ্ন ছিল। ভারতের হয়ে খেলাই ছিল সর্বোচ্চ অর্জন। এখন পর্যন্ত ২৭৫ থেকে ৩০০ জন ভারতের জার্সিতে খেলেছেন। সুতরাং, নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমি নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করি। আর আমি খেলেছি একঝাঁক গ্রেট ক্রিকেটারদের সাথে। আমি শচীন টেন্ডুলকারকে দেখে বড় হয়েছি। শচীন ও আমি একই রাজ্যের ক্রিকেটার। শচীনকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলি, আজহারউদ্দিন, অনিল কুম্বলে, ভিভিএস লক্ষ্মণের মত ক্রিকেটাররা খেলেছে সেই সময়। সেই স্বর্ণযুগে ভারতের হয়ে ৩০টির মতো (আসলে ৩১টি) টেস্ট খেলতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি আমি।
মুম্বাই থেকে সুনীল গাভাস্কার, শচীন টেন্ডুলকারসহ আরও অনেক ভারতীয় গ্রেট ব্যাটসম্যান উঠে এসেছে। মুম্বাইয়ের ব্যাটসম্যানদের বিশেষত্ব কী?
নিজের উইকেট সহজে বিলিয়ে দিয়ে আসার সংস্কৃতি নেই মুম্বাই ক্রিকেটে। ‘খাড়স’ (দৃঢ়চেতা) মনোভাব বলে থাকি আমরা এটাকে। যেকোনো অবস্থাতেই আমরা জিততে চাই। যেভাবেই হোক, জিততে হবে, রান করতে হবে, উইকেট নিতে হবে। মুম্বাই প্লেয়ারদের এই মনোভাব দেখেই আমি বড় হয়েছে। তাদের সাথে খেলেই বড় হয়েছি। ওদের মধ্যে অনেকে ভালো ক্রিকেটার হওয়ার পরও দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেনি। কিন্তু তারা খুব গর্বের সাথে মুম্বাই ক্রিকেটকে প্রতিনিধিত্ব করেছে। মুম্বাই ব্যাটসম্যানদের এটাই উল্লেখযোগ্য দিক।
আপনি ২০-৩০ রান করেছেন তো সেঞ্চুরি করতেই হবে। সেঞ্চুরি করলেই থেমে যাবেন না, আপনাকে ১৫০-২০০-২৫০ রান করার চেষ্টা করতে হবে। মুম্বাই এর প্লেয়াররা এমন মনোভাব নিয়েই খেলে থাকে। ছোটবেলা থেকে আমি এমন পরিবেশেই খেলেছি, বড় হয়েছি ও শিখেছি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও আপনি একই মনোভাব নিয়ে খেলার চেষ্টা করেছেন নিশ্চয়ই…
হ্যাঁ, আমি চেষ্টা করেছি। আমার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দু’টি ডাবল সেঞ্চুরি আছে, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকায় সেঞ্চুরি আছে। আমি ভাগ্যবান বলতে পারেন, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি আছে আমার। ভাগ্যবান মনে করি নিজেকে, প্রথমত দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে এবং সামর্থ্যের কিছুটা হলেও দেখাতে পেরে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে ডাবল সেঞ্চুরি, কেপটাউনে সেঞ্চুরি, ইংল্যান্ডে রান করা ও সিরিজজয়ী দলের অংশ হওয়া, এগুলোই তো আপনার ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত…
অবশ্যই। আমরা ইংল্যান্ডে ২৬ বছর পর সিরিজ জয় করেছিলাম, ৩১ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে জিতেছিলাম। আমার ক্যারিয়ারের বড় হাইলাইটস বলা যায়। পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরিও স্মরণীয়। একমাত্র ভারতীয় ওপেনার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে সেঞ্চুরি আছে আমার। সেই সময়টায় খেলতে পেরে এবং পারফর্ম করতে পেরে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে হয়।
কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে খুব ধারাবাহিক হতে পারেননি। নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আমার মনে হয়, আমি আরও ভালো করতে পারতাম। কোনো ক্রিকেটারই বলতে পারবে না, তার ক্যারিয়ারে নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, আমার দ্বারা আরও ভালো করা সম্ভব ছিল। গৌতম গম্ভীর আমার জায়গায় এসে ভালো করেছে। শিখর ধাওয়ান পরবর্তীতে সুযোগ পেয়ে ভালো করেছে। ওরা সুযোগ লুফে নিয়েছে। আমার কোনো অভিযোগ নেই। যেটা প্রাপ্য, সেটাই পেয়েছি। আমি সুযোগ লুফে নিতে পারিনি, বাকিরা নিয়েছে। এটাই জীবন।
২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়া সিরিজেই কি নিজের ক্যারিয়ারের শেষটা দেখেছিলেন?
অনেকটা। তিনটি বাজে ম্যাচ গিয়েছিল আমার। আমি জানতাম, সুযোগ সীমিত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনি এমনিতেই অনেক চাপের মুখে। আর আপনি যখন তিন-চার ইনিংসে ব্যর্থ হন, তখন চাপ তো আসবেই। কিন্তু এটাই জীবন, উত্থান-পতন আসবেই। এইসব মেনে নিয়েই চলতে হয়।
২০০০ সালের পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতীয় দলের পারফরম্যান্সে, মানসিকতায় একটা বড় পরিবর্তন আসা শুরু হয়। সেই পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে চাই…
পরিবর্তন এসেছে সৌরভ গাঙ্গুলির সময়। যখন তিনি অধিনায়কত্ব নিয়েছেন, তখনই ভারত ভালো দলে পরিণত হয়। আমরা জহির খানকে খুঁজে পাই, জাভাগাল শ্রীনাথ তো আগে থেকেই ছিল, আশীষ নেহরা ছিল, পরবর্তীতে ইরফান পাঠান এসেছিল। সুতরাং আমি মনে করি, পরিবর্তন এসেছে গাঙ্গুলির অধীনেই, এবং পরবর্তীতে সেটা ক্রমান্বয়ে ধোনি ও ভিরাটের হাত ধরে এক ধাপ থেকে আরেক ধাপের দিকে যাচ্ছে। মানসিকতার পরিবর্তনের জন্য কৃতিত্ব গাঙ্গুলিকেই দিতে হবে। ভারতের মাঠে এসে সিরিজ জয় করার মতো দল এখনও খুব বেশি নেই। সমস্যা ছিল বিদেশের মাটিতে ভারতের পারফরম্যান্স, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকায়। এইসব দেশে আমরা জয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেও জিততে পারতাম না। আমাদের এই দিকটায় একটু খেয়াল দেয়া দরকার ছিল। আমরা সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়াকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবারের মতো হারিয়েছি। এটা প্রমাণ করে, ভারতীয় দল এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমান ভারতীয় দলকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? ভিরাট কোহলির নেতৃত্বে ভারত দেশের মাটিতে এবং বিদেশেও সাফল্য পেতে শুরু করেছে…
সফরকারী দল হিসেবে আমরা খুব ভালো করছিলাম না। কিন্তু গত দুই-তিন বছরে আমাদের বোলিং আক্রমণ অনেক শাণিত হয়েছে। বিশেষ করে বিদেশ সফরে ব্যাটসম্যানদের ভোগান্তিতে ফেলার মতো অস্ত্র এখন ভারতের আছে। আমাদের বুমরাহ, শামির মতো বোলার আছে। তাদের সাথে আছে ইশান্ত শর্মা, যে সময়ের সাথে সাথে পরিপক্ব হয়েছে। ভুবনেশ্বর কুমার আছে, হার্দিক পান্ডিয়ার মতো অলরাউন্ডার পেয়েছে ভারত। ব্যাটিং আমাদের সবসময়ই ছিল, কিন্তু বোলিং আক্রমণ ভয়ঙ্কর ছিল না। অস্ট্রেলিয়ায় আমরা সিরিজ জিতেছি, ইংল্যান্ডকেও হারানোর খুব কাছে এসেছিল ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকাকেও আমাদের হারানো উচিত ছিল। আমি মনে করি, ভিরাট কোহলির অধীনে দল খুবই ইতিবাচক ক্রিকেট খেলছে। যেকোনো পরিস্থিতিতেই দল জয়ের চিন্তা করে থাকে। এটাই মানসিকতার পরিবর্তন।
বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। এখনও ঘরোয়া ক্রিকেটে অবিশ্বাস্য ফর্ম ধরে রেখেছেন আপনি। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের জন্য কীভাবে নিজেকে মোটিভেট করেন?
অনুপ্রেরণা হচ্ছে খেলা চালিয়ে যাওয়া। আমি ভারতের হয়ে খেলছি না, তাই বলে আমার খেলা চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হারিয়ে যাবে, এমন হওয়া উচিত না। আমি ক্রিকেট খেলছি, কারণ আমি খেলাটা উপভোগ করি। যতদিন আমার ফিটনেস থাকবে এবং ইচ্ছে থাকবে, ততদিন খেলা চালিয়ে যাব। ভারতের হয়ে খেলছি না, তাই বলে মন ভেঙ্গে যাবে, তা নয়। আমি খেলছি, কারণ আমি এখনো রান করা উপভোগ করি। আমি এখনো পর্দার পেছনের কঠোর পরিশ্রম উপভোগ করি। ম্যাচ খেলার জন্য যা যা করার দরকার, তা করতে পছন্দ করি। যতদিন উপভোগ করবো, দলের স্বার্থে অবদান রাখতে পারবো, ততদিন খেলা চালিয়ে যেতে বাড়তি অনুপ্রেরণার দরকার হবে না। আমি জানি, ভারতের হয়ে আর খেলা হবে না আমার। কিন্তু আমি খেলাটা এখনো পছন্দ করি। এখনো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ভালোবাসি, রান করতে পছন্দ করি।
গত পাঁচ-ছয় বছরে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে কী কী পরিবর্তন এসেছে, যার ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভূতপূর্ব উন্নতি করছে দলটি?
আমি মনে করি, ক্রিকেট কমিটি ভালো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। নিরপেক্ষ কিউরেটর ফর্মুলার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে কর্তারা, যা খুবই ভালো পরিবর্তন আমি মনে করি। ফলে, যেমন ইচ্ছা তেমন উইকেট তৈরি করা বন্ধ হয়েছে। স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে, ক্রিকেট ভালো হচ্ছে, ভালো ক্রিকেটার বের হয়ে আসছে। ভারতে আম্পায়ারিংয়ের মান ভালো হয়েছে। ক্রিকেটাররা ১০-১১টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলছে। অনেক কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাদের। ঘর থেকে দীর্ঘদিন বাইরে থাকতে হয় ক্রিকেটারদের। ফিটনেসের কঠিন পরীক্ষা হয়, মানসিক ও শারীরিক। আমি আশা করি, ভারতে ক্রিকেটাররা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে মূল্যায়ন করবে। আমি জানি, আইপিএল বড় মঞ্চ। তবে আইপিএল হওয়া উচিত দ্বিতীয় ধাপ, প্রথম ধাপ হওয়া উচিত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। তরুণ ক্রিকেটারদের কাছে আমার এটাই চাওয়া, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে গুরুত্বসহকারে দেখুক ওরা। কারণ, চারদিনের ক্রিকেট টি-টোয়েন্টি থেকে ভিন্ন। আর টেস্ট ক্রিকেটের গুরুত্বই আলাদা। একজন ক্রিকেটার সত্যিকারের সম্মান পায় টেস্ট ক্রিকেট খেলে। তরুণরা বিষয়টি মনে রাখুক, এটাই চাওয়া।
দেশের বাইরে টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করতে পারছে না বাংলাদেশ। আপনার কি মনে হয়, ভারতের সফল হওয়া ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামোর ব্লু-প্রিন্ট বাংলাদেশেও কার্যকরী হবে?
আমি তাই মনে করি। কোচ, ক্রিকেট কর্তাব্যক্তিদের ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের প্রাধান্য দেয়া উচিত। যেই পদক্ষেপই নেয়া হোক না কেন, সেটা হওয়া উচিত ক্রিকেট ও ক্রিকেটারের কথা চিন্তা করেই। ক্রিকেটারদেরও নিজেদের কঠিন পরিস্থিতির জন্য তৈরি করা উচিত। আমি জানি, বাংলাদেশ দল ঘরের মাঠে ভালো। তবে তাদের নিজেদেরকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে হবে। তাদের অচেনা কন্ডিশনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। বাংলাদেশ সবসময় নিজেদের ঘরের মাঠে এসে রান করতে পারবে, উইকেট নিতে পারবে, ম্যাচ জিততে পারবে। স্পিন তাদের পছন্দের অস্ত্র। কিন্তু তাদের পেসারদেরও ধাপে ধাপে উন্নতি করতে হবে। ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউ জিল্যান্ডের কন্ডিশন মাথায় রেখে উইকেট তৈরি করা উচিত। নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন প্রথমবারের মতো। কেমন লাগছে?
এবারই প্রথম খেলছি বাংলাদেশে। এখানে খেলতে পেরে ভালো লাগছে। এখানে প্রতিযোগিতা ভারতের ওয়ানডের প্রতিযোগিতার মতোই। আবাহনী দলটি দারুণ, জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটারে ভরা দল আবাহনী। প্রথমত, এটা একটা ভালো দিক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাররা এখানে খেলছে। তরুণ ক্রিকেটাররা উৎসাহিত হবে তারকাদের সাথে খেলতে পারলে। মাশরাফি বা সাকিবদের খেলতে দেখলে যে কেউই নিজেদের সর্বোচ্চটা দিতে চাইবে।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। লিগের সেরা দলে খেলতে পারাটা নিশ্চয়ই ভালো অনুভূতি হিসেবে কাজ করে…
অবশ্যই। আগেই বলেছি, আবাহনীতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটার খেলছে। একদম জাতীয় দলের মতোই দল আবাহনী। খুবই শক্তিশালী দল। আমি প্রথমত চাইবো দলের হয়ে পারফর্ম করতে। এরপর যেভাবেই পারি, দলকে সাহায্য করতে। নিজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান তরুণদের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে মুখিয়ে আছি আমি।
আবাহনীতে আপনার সতীর্থ এখন মাশরাফি। ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে মাশরাফি আপনাকে টেস্টের প্রথম বলেই বোল্ড করেছিল। সেই স্মৃতি মনে পড়ে নিশ্চয়ই?
হ্যাঁ, তবে আমি সেই স্মৃতি মনে করতে চাই না (হাসি)। তবে হ্যাঁ, খুবই ভালো লাগছে তার সাথে খেলতে পেরে। মাশরাফি এখন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। আমি আগামী বিশ্বকাপের জন্য তাকে শুভকামনা জানাতে চাই। বাংলাদেশ দলকেও শুভ কামনা জানাতে চাই। আমি মনে করি, বাংলাদেশ দলের সামর্থ্য আছে যেকোনো বড় দলের বিপক্ষে অঘটন ঘটানোর এবং অনেক দূর যাওয়ার। আমি তাদেরকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে খেলতে দেখেছি। সুতরাং, তাদের মধ্যে সেই সামর্থ্য রয়েছে। তবে তাদের সঠিক সময়ে জ্বলে উঠতে হবে। মাশরাফি বাংলাদেশ ক্রিকেটের মহান সেবক, তিনি ১০-১৫ বছর ধরে খেলে যাচ্ছেন। আমি মাশরাফি ও তার দলকে শুভকামনা জানাতে চাই।
আপনার পরিবারের আরেকজন সদস্য ক্রিকেট খেলছে। স্কুল ক্রিকেটে ৪৯৮ রান করে সাড়া জাগানো আরমান জাফর সম্পর্কে জানতে চাই…
হ্যাঁ, সে খুব ভালো ক্রিকেটার। এখন সে ইনজুরির কারণে খেলা থেকে দূরে, তবে সে প্রতিভাবান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খুব ভালো সূচনা হয়নি তার। যখন সে ফিরবে, তখন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে।
ক্রিকেট থেকে অবসরের পর কী করার পরিকল্পনা করছেন? কোচিং, নাকি ধারাভাষ্যকার হিসেবে আপনাকে দেখা যাবে?
হতে পারে। আমি ক্রিকেটের সাথেই থাকতে চাই, সেটা যেভাবেই হোক। ধারাভাষ্যকার হিসেবে হোক, কিংবা কোচিং। আমি যেটা উপভোগ করবো, সেটাই চালিয়ে যাব। আমি এখনো এমন কিছু চূড়ান্ত করিনি, যার কারণে বলতে পারছি না কোন পথ ধরবো। যদি কিছু করি, সেটা উপভোগ করেই করবো।