কে হতে পারে ২০১৮ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন?

কে জিতবে ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১৮?

উত্তরটা এত সহজেই যদি বলে দেওয়া যেত, তাহলে আর এক মাসব্যাপী টুর্নামেন্ট এবং সেটার আগে এত ঘটা করে বাছাই পর্ব আয়োজন করার নিশ্চয়ই প্রয়োজন ছিল না। কাজেই, উত্তরটি এতটা সহজ নয়, সেটি সবাই জানে। তবুও মানুষের স্বাভাবিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সে সব সময় অনুমান করার চেষ্টা করবে। তবে এই অনুমান অবশ্যই বাস্তবতা বিবর্জিত হওয়া উচিত হবে না।

৩২ দলের মাঝে একটি দল যেহেতু বিশ্বকাপ জিতবে, তাই ‘কোন দল জিতবে’ সেটি বলার চেয়ে ‘কোন দল বিশ্বকাপ জিতবে না’ সেটি বলাটাই তুলনামূলকভাবে সহজ।

প্রথম বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে; Source: Sports World Cards

বিশ্বকাপ শুরুর আগেই আপনি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারেন যে, মিশর বিশ্বকাপ জিতবে না, ইরানও বিশ্বকাপ জিতবে না। এভাবে আরো ২০টি দেশের নাম বললে সেগুলোও মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯৯% বলে ধরে নেওয়া যায়। তবে আপনি যদি একটু ইতিহাসের মনোযোগী পাঠক হন, তাহলে ‘বিশ্বকাপ জয় কে করবে’ তার অনুমান করতে গেলেও ৫/৬টি দলের নাম অনায়াসে নিয়ে আসতে পারবেন।

এই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ২০টি আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মাত্র ৮টি দেশ। বিশ্বকাপ জিততে দুর্দান্ত দল, অসাধারণ ট্যাকটিক্স, ভালো খেলোয়াড়- এসব কিছুর সাথে সাথে আরেকটি বিষয় লাগে, সেটি হচ্ছে ফুটবল ঐতিহ্য।

এসব কিছু থাকার পরেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি, এমন দল এখন পর্যন্ত একটিই আছে- সেটি হলো নেদারল্যান্ড। তিন তিনবার ফাইনাল খেলেও জিততে না পারার দুঃখ তাদের বেড়ে গেছে এবারের বাছাইপর্ব থেকে বাদ পড়ে।

এই দলগুলোর বাইরে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে আর মাত্র ৩টি দল- হাঙ্গেরি, চেকোস্লোভাকিয়া আর সুইডেন, সেটিও সর্বশেষ ১৯৬২ সালের কথা। পুসকাসদের আমলে হাঙ্গেরি ছিল জায়ান্ট, সুইডেন খেলেছিল নিজেদের মাটিতে। দু’বারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েরও সোনালি অতীত খুব সহসা ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই।

বিশ্ব ফুটবলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানি; Source: FABRICE COFFRINI/AFP/Getty Images

কাজেই আপনি যদি বলেন, আগামী কয়েক বিশ্বকাপ ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি, ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড- এই আটটি দেশের মাঝেই থাকবে তাহলে আপনার অনুমান মিলে যাবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এর মাঝে এবারের বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব থেকে ইতালি আর নেদারল্যান্ড বাদ পড়ে যাওয়াতে, সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নের তালিকায় অনায়াসেই বাকি ৬টি দলকে নিয়ে আসতে পারেন।

তবে এই জায়ান্ট দলগুলোর প্রতিটিই চাইবে টুর্নামেন্টের প্রথমদিকেই যেন একে অপরের মুখোমুখি না হয়। দ্বিতীয় পর্বেই যদি ব্রাজিল আর স্পেন মুখোমুখি হয়, তাহলে যত ভালোই খেলুক না কেন, একটি দল বাদ পড়বে সেটা নিশ্চিত।

এখন দেখা যাক, ফিক্সচার অনুযায়ী কোন দলের কত দূর যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।

গ্রুপ পর্ব

গ্রুপ পর্বের দলগুলো হলো:

Source: yugopolis.ru

গ্রুপ ‘এ’ থেকে পরের পর্বে যাওয়ার সম্ভাবনা হচ্ছে রাশিয়া আর উরুগুয়ের। রাশিয়া স্বাগতিক দেখে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন রাশিয়াকেই ধরা হলো, তাহলে রানার্স আপ হবে উরুগুয়ে।

গ্রুপ ‘বি’ থেকে অনুমিতভাবেই চ্যাম্পিয়ন আর রানার্স আপ ধরা যায় যথাক্রমে স্পেন আর পর্তুগালকে।

গ্রুপ ‘সি’ তুলনামূলক কঠিন। এখানে ফ্রান্সের অবস্থান মোটামুটি নিশ্চিত হলেও পেরু আর ডেনমার্ক পরের অবস্থানের জন্য লড়বে। ইউরোপে খেলা হবার কারণে, ধরে নেওয়া যাক, রানার্স আপ হিসেবে যাবে ডেনমার্ক।

গ্রুপ ‘ডি’তেও লড়াই হবে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আর্জেন্টিনাকে ধরে নেওয়া গেলেও, ক্রোয়েশিয়া কিংবা নাইজেরিয়া ছেড়ে কথা বলবে না। তবুও প্রথম দুই দল হিসেবে আর্জেন্টিনা আর ক্রোয়েশিয়াকেই নেওয়া যাক।

গ্রুপ ‘ই’ থেকে যাবে ব্রাজিল আর সুইজারল্যান্ড। কোস্টারিকা লড়বে সুইসদের সাথে, এটি ধরে নিয়েই অনুমান করা যাক, সুইসরা যাবে পরের পর্বে।

এবারে সত্যিকারের গ্রুপ অফ ডেথ বলা যায় গ্রুপ ‘এফ’ কে। জার্মানদের জায়গা শক্ত ধরা গেলেও, মেক্সিকো আর সুইডেন লড়াই করবে। এর মাঝে নেদারল্যান্ড আর ইতালিকে বাদ দিয়ে উঠে আসা সুইডেনকেই গ্রুপ রানার্স আপ হিসেবে আপাতত ধরা যাক।

কোনো অঘটন না ঘটলে গ্রুপ ‘জি’ থেকে যাবে ইংল্যান্ড আর বেলজিয়াম।

গ্রুপ ‘এইচ’ থেকে পরের পর্বে যাওয়ার দল দুটি হওয়া উচিত কলম্বিয়া আর পোল্যান্ড।

দ্বিতীয় পর্ব

যদি আগের ধরে নেওয়া হিসেবগুলো মিলে যায়, দ্বিতীয় পর্বের সম্ভাব্য দলগুলো হবে:

তাহলে দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচগুলো হবে অনেকটা এমন:

ম্যাচ ৪৯: রাশিয়া বনাম পর্তুগাল

ম্যাচ ৫০: ফ্রান্স বনাম ক্রোয়াশিয়া

ম্যাচ ৫১: স্পেন বনাম উরুগুয়ে

ম্যাচ ৫২: আর্জেন্টিনা বনাম ডেনমার্ক

ম্যাচ ৫৩: ব্রাজিল বনাম সুইডেন

ম্যাচ ৫৪: ইংল্যান্ড বনাম পোল্যান্ড

ম্যাচ ৫৫: জার্মানি বনাম সুইজারল্যান্ড

ম্যাচ ৫৬: কলম্বিয়া বনাম বেলজিয়াম

রাশিয়া বনাম পর্তুগাল ম্যাচে রাশিয়া স্বাগতিক হলেও, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালও ভালো অবস্থানেই আছে। জয়ী হিসেবে পর্তুগালকেই ধরা যাক।

ঠিক তেমনিভাবে ফ্রান্স বনাম ক্রোয়াশিয়াতে ফ্রান্সই ফেভারিট।

স্পেন বনাম উরুগুয়ের ম্যাচে স্পেন, আর আর্জেন্টিনা বনাম ডেনমার্কের ম্যাচে আর্জেন্টিনারই জয় পাওয়া উচিত।

ব্রাজিল দ্বিতীয় পর্বেই বাদ পড়বে, এমন ভবিষ্যদ্বাণী দেবার দুঃসাহস আপাতত না দেখালেও চলবে। কাজেই সুইডেনকেই বাদ দিতে হয়। তেমনিভাবে পোল্যান্ডকে বাদ দিয়ে ইংল্যান্ডের জেতার সম্ভাবনাই দেখা যায়।

ওদিকে সুইসদের টপকে জার্মানদের আসাটা মোটেও অঘটন হবে না। দ্বিতীয় পর্বের সবচেয়ে সেরা ম্যাচ হবার সম্ভাবনা কলম্বিয়া বনাম বেলজিয়ামের ম্যাচটি। ইউরোপে ম্যাচ হওয়ায় বেলজিয়ামকেই আপাতত এগিয়ে রাখা যাক।

কোয়ার্টার ফাইনাল   

উপরের সব সমীকরণ মিলে গেলে কোয়ার্টার ফাইনালের ফিক্সচার হবে অনেকটা এমন:

ম্যাচ ৫৭: পর্তুগাল বনাম ফ্রান্স

ম্যাচ ৫৮: ব্রাজিল বনাম ইংল্যান্ড

ম্যাচ ৫৯: স্পেন বনাম আর্জেন্টিনা

ম্যাচ ৬০: জার্মানি বনাম বেলজিয়াম

পর্তুগালের জন্য ফ্রান্স অবশ্যই কঠিন প্রতিপক্ষ। তবে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে কঠিন প্রতিপক্ষ আসবেই। এই ম্যাচে খুব বেশি ঝামেলা না হলে, ফ্রান্সেরই জেতার কথা। অবশ্য রোনালদোবিহীন পর্তুগালও ফ্রান্সকে ইউরো তে হারিয়ে দেওয়ায় একটি কু ডাক ফ্রান্সের ভক্তদের মনে ডাকতেই পারে।

ওদিকে ব্রাজিল আর ইংল্যান্ডের ম্যাচে ব্রাজিলেরই জয় পাওয়ার কথা।

আর্জেন্টিনা বনাম স্পেনের ম্যাচটি কোয়ার্টার ফাইনালের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ম্যাচ হওয়ার কথা। একদিকে থাকবে দলগত শক্তি, আরেকদিকে থাকবেন অপ্রতিরোধ্য মেসি।

জার্মানি আর বেলজিয়ামের মধ্যকার ম্যাচে জার্মানদেরই জেতা উচিত।

সেমিফাইনাল

কোয়ার্টার ফাইনালের সমীকরণ মিলে গেলে সেমি ফাইনালের ফিক্সচার হবে নিম্নরূপ:

ম্যাচ ৬১: ফ্রান্স বনাম ব্রাজিল

ম্যাচ ৬২: জার্মানি বনাম আর্জেন্টিনা

হিসেবটা আপাতত সেমি ফাইনাল পর্যন্তই থাকুক।

এই জায়গায় শেষ চারে আর্জেন্টিনাকে টপকে স্পেন চলে আসলে সেটিকেও অঘটন বলা যাবে না।

বিশ্বকাপের সম্ভাব্য ফলাফল যেমন হতে পারে

এই পর্যায়ে আসার পর, ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে, সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন দলের তালিকা থেকে আপনি আপাতত জার্মানিকে বাদ দিতে পারেন। কোনো দল পরপর দু’বার বিশ্বকাপ জিতেছে, এমন ইতিহাস বিশ্বকাপে মাত্র দুটি দলেরই রয়েছে। এর প্রথমটি ১৯৩৪ আর ১৯৩৮ সালের ইতালি, অন্যটি ১৯৫৮ আর ১৯৬২ সালের ব্রাজিল। ১৯৬২ সালের পর টানা দু’বার ফাইনাল খেলেছে নেদারল্যান্ড (১৯৭৪ আর ১৯৭৮) আর আর্জেন্টিনা (১৯৮৬ আর ১৯৯০), টানা তিনবার ফাইনাল খেলেছে জার্মানি (১৯৮২, ১৯৮৬, ১৯৯০) আর  ব্রাজিল (১৯৯৪, ১৯৯৮, ২০০২)। কিন্তু কোনো দলই টানা দু’বার চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি।

আর সবকিছু এভাবে চললে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনার ফাইনালে মুখোমুখি হবার একটা সম্ভাবনা থাকে।

কিন্তু এখানেও ইতিহাস বাধা। এই পর্যন্ত ইতিহাসে মাত্র একবার ইউরোপ থেকে ল্যাটিন কোনো দল কাপ আনতে পেরেছে। এজন্য ল্যাটিনদের সরাসরি ফেভারিটও বলা যায় না নিশ্চিন্তভাবে।

সর্বশেষ ল্যাটিন চ্যাম্পিয়ন দল; Source: Fusion

গত কয়েকটি বিশ্বকাপ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, দলীয় সমন্বয়ের উপর নির্ভরশীল দলগুলোই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ২০০৬ এর ইতালি, ২০১০ এর স্পেন কিংবা ২০১৪ এর জার্মানি- সবক’টি দলই একক কোনো খেলোয়াড়ের উপর নির্ভরশীল ছিল না। এর মানে এটা নয় যে দলগুলো বিশেষ খেলোয়াড় ভিত্তিক দল গঠন করে, সে দলগুলো ভালো হয় না। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের ব্রাজিল দল সাজিয়েছিল রোমারিওকে কেন্দ্র করে, ১৯৯৮ বিশ্বকাপের ব্রাজিল সাজিয়েছিল রোনালদোকে কেন্দ্র করে। দুটো দলই কিন্তু ভালো ছিল। এছাড়া গত বিশ্বকাপের ব্রাজিল দলটিও ভালো খেলেই সেমি পর্যন্ত উঠেছিল। কিন্তু সেমিতে তাদের মূল খেলোয়াড় নেইমারের অনুপস্থিতি এবং নেইমারের বিকল্প খেলোয়াড়ের অভাব তাদেরকে ৭-১ গোলের লজ্জাজনক পরাজয়ের মুখোমুখি দাঁড় করায়। এমনকি তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচেও নেদারল্যান্ডের কাছে ৩-০ গোলে পরাজিত হয় তারা।

দলকে মোটামুটি একাই বিশ্বকাপে নিয়ে এসেছেন তিনি; Source: Evening Standard

তবে এই কথাটিও সত্য যে, বর্তমানে একক কোনো খেলোয়াড়ের কাছে একটি দলগত শক্তি পরাজিত হবে, এরকম খেলোয়াড়ের সংখ্যাও বেশি নয়। মোটা দাগে হিসেব করলে, মাত্র ৩ জন খেলোয়াড়ের নাম আনা যায় এই তালিকায়- মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আর নেইমার।

এর মাঝে দলগত শক্তি কিংবা ফর্ম বিবেচনায় ব্রাজিলকে এগিয়ে রাখা যায়। নেইমারের পক্ষে সম্ভব বর্তমান ব্রাজিলকে নিয়ে বিশ্বের যে কোনো দলকেই হারানো। একই কথা অন্য দুজনের জন্যও। মেসি কিংবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো যে মানের খেলোয়াড়, তাতে তারা নিজেদের দিনে ইরানের হয়ে খেললেও জার্মানি কিংবা স্পেনের মতো দলকে হারিয়ে দিতে পারেন। আবার দিনটা নিজেদের না হলে আর্জেন্টিনা কিংবা পর্তুগালকে নিয়েও কিছু করতে পারবেন না তারা। সমস্যা হচ্ছে জিদান, পেলে কিংবা ম্যারাডোনা যতবার বড় দলগুলোকে হারিয়েছেন, মেসি কিংবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বড় উপলক্ষ্যগুলোতে ঠিক ততবার পারেন নি আলোটা নিজের উপরে নিয়ে আসতে। কিন্তু এই কারণে তাদের সামর্থ্যের উপর সন্দেহ থাকাটা ঠিক হবে না। দেখা যাক, এই বিশ্বকাপে তারা কতটা সামর্থ্যের প্রয়োগ ঘটাতে পারেন।

নেইমারের টার্গেট কি জায়গামতো পৌঁছুবে; Source: Goal.com

তবে বিশ্বকাপ রহস্য করতে ভালোবাসে। এই কারণেই প্রতিটি বিশ্বকাপে কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে যায়।

সবচেয়ে বড় কথা, এই ধরনের টুর্নামেন্টগুলো কখনোই কাগজ-কলমের হিসেব মেনে চলে না। গাণিতিক হিসেব আপনাকে একটা সম্ভাবনা দেবে, কখনোই নিশ্চয়তা দিতে পারবে না।

তাছাড় অতীতের চেয়ে বর্তমানে দলগুলোর মাঝে শক্তির ব্যবধান অনেকটাই কমে এসেছে। ১৯৫০ সালের দিকে ব্রাজিল বনাম চিলি মুখোমুখি হলে যতটা সহজে বলা যেত যে, ব্রাজিলের জেতার সম্ভাবনা বেশি; ২০১৭ সালে বসে সেই কথাটা তত সহজে বলা যাবে না। এই মূহুর্তেও ব্রাজিলের দিকেই পাল্লা ভারি থাকবে, তবে চিলির জয়ের সম্ভাবনাটা আগের চেয়ে কিছুটা হলেও বেশি হয়েছে।

পর্তুগাল তাকিয়ে আছে তার দিকে © Alex Morton/Action Images/ZUMA24.com

১৯৮৬ বিশ্বকাপ থেকে প্রতি আসরেই কোনো না কোনো দল অপ্রত্যাশিত চমক দেখিয়েছে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের সেমি ফাইনাল, ১৯৯০ বিশ্বকাপে ক্যামেরুনের কোয়ার্টার ফাইনাল, ১৯৯৪ বিশ্বকাপে সুইডেন আর বুলগেরিয়ার সেমি ফাইনাল, ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার সেমি ফাইনাল, ২০০২ বিশ্বকাপে সেনেগালের কোয়ার্টার ফাইনাল, তুরস্ক আর দক্ষিণ কোরিয়ার সেমি ফাইনাল- এর  প্রতিটিই তেমনই চমকের উদাহরণ।

সাধারণ দলের অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো করার ঘটনাকে যেমন চমক বলা হয়, ঠিক তেমনি ঐতিহ্যবাহী দলগুলোর হোঁচট খাওয়াকে বলা হয় অঘটন। রহস্যময় বিশ্বকাপ ফুটবলে অঘটনের ঘটনাও কম না। ২০১৪ বিশ্বকাপের হট ফেভারিট স্পেন বাদ পড়ে যায় গ্রুপ পর্ব থেকেই। অথচ টানা ‘ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো’ জয়ী একমাত্র দল হিসেবে সেবারে বিশ্বকাপে এসেছিল স্পেন। একই বিশ্বকাপে ‘ডি’ গ্রুপটিকে বলা হয়েছিল ডেথ গ্রুপ। কোস্টারিকা, উরুগুয়ে, ইতালি আর ইংল্যান্ডের মাঝে পরের পর্বের দুটি দল হিসেবে ইংল্যান্ড আর ইতালিকেই বিবেচনা করা হয়েছিল। অথচ এই দুই দলই বাদ পড়ে যায় গ্রুপ পর্বেই। ফেভারিট হয়েও অনেক আগেই বাদ পড়ে যাওয়ার এটিই কিন্তু একমাত্র ঘটনা না। ২০০২ বিশ্বকাপের কথাই ধরুন। হট ফেভারিট ছিল আর্জেন্টিনা আর ফ্রান্স, দুটো দলই বাদ পড়ে গ্রুপ পর্ব থেকে।

ফেভারিট হয়েও প্রথম পর্বেই বাদ পড়েছিল তারা; Source: Goal.com

কাজেই, এই বিশ্বকাপেও কিছু দল চমক দেখাবে, আবার কিছু দল অঘটনের ফাঁড়ায় পড়ে বাদ পড়বে।

এখনো প্রায় মাস সাতেক বাকি বিশ্বকাপ আরম্ভ হওয়ার। এর মাঝে অনেক দল ফর্ম হারিয়ে ফেলতে পারে, অনেক ভালো খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়ে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে যেতে পারেন। কাজেই এত আগেই অঘটনের অনুমান করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

এত কিছুর পরেও শুরুর কথাতে আরেকবার ফিরে যাওয়া যাক।

আপনি যদি অনুমান করেন যে, আগামী বিশ্বকাপ ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড আর জার্মানির মাঝেই থাকবে তাহলে আপনার অনুমান ভুল হবার সম্ভাবনা কম। তবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কিংবা অন্য কোনো খেলোয়াড় যদি অবিশ্বাস্য কোনো পারফর্মেন্স দেখিয়ে নিজের দলকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দিতে পারেন, তাহলে ভিন্ন কথা।

বিশ্ব কি দেখবে ফাইনালে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দ্বৈরথ? Source: AFP PHOTO/DOUGLAS MAGNO

এসব কিছু দেখার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া বিকল্প নেই। আপাতত তাই অপেক্ষাই করা যাক। বিশ্বকাপ মানেই হাজারো জল্পনা-কল্পনা, হাজারো বিশ্লেষণ-ভবিষ্যৎবাণী। শেষ পর্দা না নামা হাজারো মাইল দূরে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় চলবেই, ফুটবল প্রেম মানে তো এটাই।

ফিচার ইমেজ- fifa.com

Related Articles

Exit mobile version