বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক অনেক আনন্দ ও বেদনার দিন আছে। কিন্তু আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে সবচেয়ে বেশি আনন্দের দিন কোনটি, আমি বলবো ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিতে যেদিন চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৯৯ বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো, সেদিনই মূলত আমাদের ক্রিকেটের সবচেয়ে আনন্দের দিন। মনে আছে, সেদিন রেডিওতে কীভাবে পুরো জাতি একটি জয়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো। কেনিয়াকে হারিয়ে সেই কাঙ্ক্ষিত জয়ের পরই মূলত বাংলাদেশ দলটি বদলে যায় আপাদমস্তক। বিশ্বকাপে খেলার কারণেই দ্রুত টেস্ট স্ট্যাটাস পায় টাইগাররা, সেই সাথে ক্রিকেটবিশ্বে বাংলাদেশ নামটি ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত বেগে।
২০১৯ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ আবার ফিরেছে ইংল্যান্ডে। ১৯৯৯ সালের পর প্রতিটি বিশ্বকাপ খেলা বাংলাদেশ এবার খেলছে তাদের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ। অতীতে খেলা আমাদের প্রতিটি বিশ্বকাপের সাফল্য ও ব্যর্থতাগুলো তুলে ধরতেই আজকের এই লেখাটির প্রয়াস।
বিশ্বকাপ ১৯৯৯
আয়োজক: ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস ও নেদারল্যান্ডস
বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে তুলে ক্যারিবিয়ান কোচ গর্ডন গ্রিনিজ তখন জাতীয় হিরো। তারই অধীনে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যায় বাংলাদেশ। ১২ দলের বিশ্বকাপে নবীনতম দলটি পড়ে বেশ কঠিন গ্রুপেই। স্কটল্যান্ড ছাড়া বি গ্রুপে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য চার দল ছিলো পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডের মতো পরাশক্তিরা। জয়-পরাজয়ের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলা ও অংশগ্রহণই আমাদের কাছে তখন মুখ্য।
গ্রুপপর্বের প্রথম দুই ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারলেও তৃতীয় ম্যাচে এসে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় টাইগাররা। স্কটল্যান্ডের হোম ভেন্যু এডিনবার্গে অনুষ্ঠিত ম্যাচে মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর অপরাজিত ফিফটিতে (৬৮) ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ১৮৫ রানের ছোট সংগ্রহ করলেও দারুণ বোলিং-ফিল্ডিংয়ে স্কটল্যান্ডকে ১৬৩ রানে অলআউট করে দেয় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে প্রথম জয়টি তারা তুলে নেয় ২২ রানে।
এরপর সেই আসরের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও বড় ব্যবধানে হার স্বীকার করে। ৩১মে ইংল্যান্ডের নর্দাম্পটন কাউন্টি গ্রাউন্ডে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় পাকিস্তানের। প্রথমে ব্যাট করে আসরে নিজেদের দলীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহে আসে। ব্যাটসম্যানদের সম্মিলিত দলীয় প্রচেষ্টায় ৫০ ওভার খেলে ৯ উইকেটের বিনিময়ে সংগ্রহ হয় ২২৩ রান। সর্বোচ্চ ৪২ রান করেন আকরাম খান, পাকিস্তানি স্পিনার সাকলাইন মুশতাক নেন ৫ উইকেট।
২২৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে বাংলাদেশি বোলারদের তোপের মুখে পড়ে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা। ফিল্ডাররাও করেন দারুণ সহযোগিতা। একের পর এক উইকেট পড়তে থাকে নিয়মিত বিরতিতে। ওয়াসিম আকরাম (২৯) ছাড়া পাকিস্তানের কেউ দাঁড়াতেই পারেননি সেদিন। তারা অলআউট হয় ১৬১ রানে, ৬২ রানের এক অসাধারণ জয় পায় বাংলাদেশ। ব্যাটিং-বোলিংয়ে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন খালেদ মাহমুদ সুজন।
সেই বিশ্বকাপের সবচেয়ে প্রতাপশালী দল পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের ফলে পুরো বিশ্ব কুর্ণিশ জানায় টাইগারদের। দেশের ফেরার পর দেয়া হয় বীরোচিত সংবর্ধনা। ঐ জয়ের এক বছর পর আমরা পেয়ে যাই টেস্ট স্ট্যাটাসও, প্রবেশ করি ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত ক্লাবে।
বিশ্বকাপ: ২০০৩
আয়োজক: সাউথ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়া
টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর বাংলাদেশ তখন বেশ ভুগছিলো। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই ঐতিহাসিক জয়ের পর আর কোথাও জয়ের দেখা মিলছিলো না। টানা পরাজয়ে বিধ্বস্ত একটি দল পাকিস্তানি অখ্যাত কোচ মহসিন কামালের অধীনে খালেদ মাসুদ পাইলটের নেতৃত্বে ১৪ দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ খেলতে সাউথ আফ্রিকায় যায়। পুল বি-তে বাংলাদেশের গ্রুপে পড়ে শ্রীলঙ্কা, নিউ জিল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, কেনিয়া ও কানাডা। অন্য দলগুলোর সাথে হারুক কিংবা জিতুক সেটা নিয়ে এতটা আশা না করলেও কানাডা ও কেনিয়ার সাথে জয়ের ব্যাপারে পুরো দেশই ছিলো আশাবাদী।
ডারবানের কিংসমিডে অনুষ্ঠিত নিজেদের প্রথম ম্যাচ টাইগাররা খেলে বিশ্বকাপের নবীনতম দল কানাডার সাথে। শক্তি কিংবা ঐতিহ্যে কানাডার চেয়ে যোজন যোজন ব্যবধানে এগিয়ে ছিলাম আমরা। দেশে সেদিন কোরবানির ঈদের আগের রাত ছিলো। পুরো দেশবাসী বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জয় দিয়ে ঈদের আনন্দ করার জন্য মুখিয়ে ছিলো। কানাডা প্রথমে ব্যাট করে যখন মাত্র ১৮০ রানে অলআউট হয়ে গেলো, তখন অনেকেই পরদিন ঈদ বলে নিশ্চিত জয় আসছে ভেবে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। শুধু আমাদের মতো ক্রিকেটপাগলরা জেগে ছিলো অনেকদিন পর একটি জয় দেখার আশায়। কিন্তু আমাদের ব্যাটসম্যানরা মাত্র ১২০ রানে অলআউট হয়ে গিয়ে পুরো জাতির ঈদের আনন্দকে বিষাদে পরিণত করে দেন। অস্টিন কডরিংটন নামের অখ্যাত এক বোলার ৫ উইকেট নিয়ে গুঁড়িয়ে দেন আমাদের ব্যাটিং লাইনআপ।
সেই যে শুরু হলো, এরপর পুরো বিশ্বকাপেই শোচনীয় ব্যর্থতা চলতে থাকলো। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হলেও বাকি পাঁচটি ম্যাচ হেরে গ্রুপের একেবারে তলানির দল হিসেবে বিদায় নিই গ্রুপপর্ব থেকেই। লজ্জার সে বিশ্বকাপেই আমাদের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কান পেসার চামিন্দা ভাস ইনিংসের প্রথম তিন বলে তিন উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েন, যে রেকর্ড এখনও অটুট আছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জার বিশ্বকাপ হয়ে এখনও আছে ২০০৩ বিশ্বকাপ।
বিশ্বকাপ-২০০৭
আয়োজক: ওয়েস্ট ইন্ডিজ
২০০৩ বিশ্বকাপের শোচনীয় ব্যর্থতার পর নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। দলে পরিবর্তন আনা হয় ব্যাপক। বদলানো হয় কোচ। শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপ জেতানো অজি কোচ ডেভ হোয়াটমোর এসে হাল ধরেন দলের। ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ টানা পাঁচ বছর ও ৪৭টি ম্যাচ জয়হীন থাকার পর ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮ রানের জয় দিয়ে জয়ের ধারায় ফেরে টাইগাররা। এরপর ভারতবধ (২০০৪), অস্ট্রেলিয়া (২০০৫), শ্রীলঙ্কা (২০০৬) ও জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া, স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে জয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা দলটি ডেভ হোয়াটমোরের অধীনে, হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জে খেলতে যায়।
১৬ দলের সেই বিশ্বকাপের চারটি গ্রুপের মধ্যে বাংলাদেশ পড়ে বি গ্রুপে। প্রতিপক্ষ ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নবাগত বারমুডা। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি খেলার জন্য যখন টাইগাররা প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখনই দেশ থেকে এক দুঃসংবাদ তাদের গ্রাস করে ফেলে। জাতীয় দলের অলরাউন্ডার মানজারুল ইসলাম রানা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন, সাথে এক বাংলাদেশী ক্রিকেটারও ছিলেন। রানার প্রিয় বন্ধু বর্তমান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ পুরো দলই রানার মৃত্যুতে মুষড়ে পড়লেও রানার জন্যই ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি খেলার প্রতিজ্ঞা করেন। শোককে শক্তিতে পরিণত করেন মাঠে। অসাধারণ বোলিং করে মাশরাফি প্রায় একাই গুঁড়িয়ে দেন ভারতের বিখ্যাত ব্যাটিং লাইনআপ। পোর্ট অফ স্পেনে অনুষ্ঠিত ম্যাচে আগে ব্যাট করা ভারতকে টাইগার বোলাররা মাত্র ১৯১ রানে অলআউট করে দেয়। নবাগত সাকিব, তামিম, মুশফিকের দারুণ ব্যাটিংয়ে সেই রান পাঁচ উইকেট হাতে রেখেই পেরিয়ে যান ব্যাটসম্যানরা। এরপর শ্রীলঙ্কার সাথে হারলেও বারমুডাকে হারিয়ে, ভারতকে বিদায় করে দিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সুপার এইটে ওঠে বাংলাদেশ।
সুপার এইটে সবগুলো ম্যাচ হারলেও গায়ানায় মহা-পরাক্রমশালী সাউথ আফ্রিকাকে হারিয়ে দেয়। প্রথমে ব্যাট করে মোহাম্মদ আশরাফুলের ৮৩ বলে ৮৭ রানের অসাধারণ ইনিংসে ভর করে ২৫১ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। জবাবে টাইগার বোলারদের তোপে পড়ে ১৮৪ রানে অলআউট হয়ে যায় সেই আসরের সেমি ফাইনালিস্ট সাউথ আফ্রিকানরা। ৬৭ রানের ব্যবধানে বাংলাদেশ পায় আরেকটি স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক জয়। পরে আয়ারল্যান্ডের সাথে হারলেও সেই জয় ও ভারতের বিপক্ষে পাওয়া জয়ের সুখস্মৃতি নিয়েই সে সময়ে দেশের সেরা দলটি দেশে ফেরে।
বিশ্বকাপ-২০১১
আয়োজক: ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ
উপমহাদেশে বিশ্বকাপ, প্রথমবারের মতো আয়োজক বাংলাদেশও। টাইগাররা নিউ জিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে, সর্বশেষে ১১ ওয়ানডের ১০টিতেই জিতে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে। মাশরাফির আকস্মিক ইনজুরিতে জেমি সিডন্সের অধীনে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে খেলতে নামে বাংলাদেশ। ১৪ দলের বিশ্বকাপে গ্রুপ বি-তে সাউথ আফ্রিকা, ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও আয়ারল্যান্ড ছিলো বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ।
প্রথম ম্যাচটি ছিলো মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে। ২০০৭ বিশ্বকাপে হারের প্রতিশোধের ম্যাচে বীরেন্দর শেবাগের অতিমানবীয় ইনিংসে (১৭৫ রান) বাংলাদেশকে ৮৭ রানে হারায় ভারত। দ্বিতীয় ম্যাচেই অবশ্য আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে ২০৫ রানে অলআউট হলেও আইরিশদের ১৭৮ রানে অলআউট করে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে প্রথম জয় পায় টাইগার বাহিনী। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুরেই মাত্র ৫৮ রানে অলআউট হয়ে লজ্জাজনক পরাজয় স্বীকার করলেও চট্টগ্রামে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয় ও নেদারল্যান্ডসকে সহজে হারিয়ে সুপার এইটে ওঠার সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে। কিন্তু সাউথ আফ্রিকার সাথে শেষ ম্যাচে মাত্র ৭৮ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জায় পড়ে আবারও। সমান ৬ পয়েন্ট নিয়েও নেট রানরেটে এগিয়ে থেকে সুপার এইটে চলে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ঘরের মাঠে দর্শক হয়ে যায় বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপ: ২০১৫
আয়োজক: অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ড
২০১৪ সালে একের পর এক সিরিজ হারে মুশফিকুর রহিমকে সরিয়ে আবারও অধিনায়ক করা হয় মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। প্রথম সিরিজটি ছিলো ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে পুরো দলকে এক সুতোয় বেঁধে দেন ক্যাপটেন ম্যাশ। চন্দিকা হাথুড়ুসিংহের অধীনে মাশরাফি বাহিনী তাসমান সাগরের দু’পাড়ের দুই প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডে যায়।
১৪ দলের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খেলে পুল এ-তে। প্রতিপক্ষ ছিলো অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও আফগানিস্তান। প্রথম ম্যাচে ক্যানবেরায় আফগানিস্তানকে ১০৫ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে দারুণ সূচনা করে টাইগার বাহিনী। দ্বিতীয় ম্যাচটি ছিলো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। বৃষ্টির কারণে একটি বলও মাঠে না গড়ানোয় খেলা পরিত্যক্ত হয়, পয়েন্ট ভাগাভাগি করে দু’দল। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারলেও নিউ জিল্যান্ডের নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১৮ রান তাড়া করে ৬ উইকেটের বড় জয় পায় বাংলাদেশ।
সেই জয়ের অনুপ্রেরণা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড ওভালে ইংলিশদের বিপক্ষে খেলতে নামে। প্রথমে ব্যাট করে মাহমুদুল্লাহর দারুণ সেঞ্চুরিতে ২৭৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বকাপে সেটাই ছিলো টাইগারদের প্রথম সেঞ্চুরি। ২৭৬ রানের জবাবে ভালোই খেলছিলো ইংলিশরা। কিন্তু জয় থেকে যখন ১৬ রান দূরে, হাতে দুই উইকেট, তখনই যাদুকরী এক স্পেল করেন ফাস্ট বোলার রুবেল হোসেন। অসাধারণ দুই ইয়র্কারে শেষ ইংলিশ দুই ব্যাটসম্যানের স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলে বিশ্বকাপ থেকে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে দিয়ে টাইগারদের প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নকআউটে পৌঁছে দেন। হ্যামিল্টনে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি আনুষ্ঠানিকতা হলেও দারুণ লড়াই করে হারে বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ পান টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে বিতর্কিত ম্যাচে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করলেও টাইগারদের এক অপ্রতিরোধ্য ওয়ানডে দল হওয়ার রসদ যোগায় ২০১৫ বিশ্বকাপ।
বিশ্বকাপ-২০১৯
আয়োজক: ইংল্যান্ড ও ওয়েলস
২০১৫ বিশ্বকাপের পর ওয়ানডেতে এক অন্য বাংলাদেশ দেখে বিশ্ব। ঘরের মাঠে সে বছরই পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে, ভারত ও সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জেতে। এ সাফল্যের ধারা চলতে থাকে ক্রমশ। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে খেলা, এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলা, ধারাবাহিকভাবে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে একের পর এক ম্যাচ ও সিরিজ জয়ের পর আয়ারল্যান্ডে গিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েই বিশ্বকাপের মঞ্চে পা রাখছে বাংলাদেশ।
ওয়ানডেতে ক্রমেই বড় দল হয়ে ওঠা দলটি এবার ইংলিশ কোচ স্টিভ রোডসের অধীনে, মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে অনুষ্ঠিত ১০ দলের বিশ্বকাপে খেলতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলটি অন্যতম অভিজ্ঞ ও দারুণ ফর্মে থাকা একটি দল হিসেবে খেলছে। বহু অপমান, লাঞ্চনা আর অবহেলা সহ্য করে এত দূর আসা দলটির এবার প্রমাণ করার পালা তারা কি সত্যি বড় দল হয়ে উঠবে নাকি পিছিয়ে যাবে আবারও। ১৬ কোটি মানুষের পুরো জাতি অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে ১৫ টাইগারের দিকে। বিশ্বকাপ না জিতুক, ন্যূনতম সেমিফাইনাল খেলার মতো দল এবার বাংলাদেশের আছে। আর সেমিফাইনাল খেলতে পারলে মাত্র দুটো ম্যাচই তো জেতা লাগবে, কে জানে হয়তো তখন কিছু হয়েও যেতে পারে। আশা করতে দোষ কী?