Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কেন শুধু বিশ্বকাপের খেলা দেখে প্লেয়ার কেনা উচিৎ নয়?

ফুটবলারদের জন্য নিজেকে চেনানোর সবচেয়ে বড় মঞ্চ ধরা হয় ফুটবল বিশ্বকাপকে। পুরো একমাস বিশ্ববাসীর চোখ আটকে থাকে এই প্রতিযোগিতায়। মিডিয়ার কল্যাণে এই বিশ্বকাপ জ্বর কমার কোন সুযোগই থাকে না।  তাই এখানে ফুটবলারদের সুযোগ হয় পুরো বিশ্ববাসীর কাছে নিজেদের নৈপুন্য তুলে ধরার। বলা হয় যে এই প্রতিযোগিতা বিশ্বের সাত ভাগের একভাগ লোক উপভোগ করে। এখানে অবশ্য খেলার সুযোগও পেয়ে থাকেন হাতে গোনা কয়েকজন সেরা খেলোয়াড়। ২০২২ সালের বিশ্বকাপটা বাদ দিলে এর আগেরগুলো অনুষ্ঠিত হয় জুন-জুলাই মাসে। ফলে এই বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স দেখে ট্রান্সফার উইন্ডোতে যে কোন দল তাদের দল গোছাতে পারে। এবারের ২০২২ বিশ্বকাপ নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে হলেও, এরপরই ছিল শীতকালীন দলবদলের সুযোগ। ফলে মৌসুমের শুরুতে না হলেও অনেক দল বিশ্বকাপের সেরা তারকাদের নিয়ে তাদের দল গুছিয়েছে এবার মৌসুমের মধ্যখানেই।

কিন্তু এই একমাসে সর্বোচ্চ ৭টি ম্যাচের পারফরম্যান্স দিয়ে কি কাউকে দলে ভেড়ানোর জন্য বিবেচনা করা উচিত? ইতিহাস কি বলে? এর আগে যারা শুধু এই বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স দেখে খেলোয়াড় কিনেছিল, আদৌ কি তা সফলতার মুখ দেখেছে?

বিশ্বকাপে আপনি কখনোই কোনো খেলোয়াড়কে টার্গেট করে স্কাউট করতে পারবেন না। কারণ এই বিশ্বমঞ্চে আপনার মতো আরো অনেকেই তার খেলা দেখছে। অনেক ক্লাবেরই সুযোগ হয় এসময় কোনো খেলোয়াড়কে স্কাউট করার কিংবা প্রথমবারের মত নিজের চোখে দেখার। সবাই যার যার মতো বিশ্লেষণ করে ঠিক করে যে আদৌ এই খেলোয়াড় তাদের ‘সিস্টেমে’ যায় কি না। সুতরাং বলতে পারেন এই বাজারে তখন পণ্যের চাইতে ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে যায়। তবে সবার যে কেনার সামর্থ্য রয়েছে, তাও নয়। কিন্তু আপনি দেখবেন যে আপনার সামনে কেনার জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়েছে আরো অনেকেই।

দারুণ এক বিশ্বকাপ শেষ করে বড় বড় ক্লাবের নজরে এসেছেন ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডার জ্যাস্কো ভার্দিওল; Image Credit: AFP

ফলে কোনো খেলোয়াড় নির্দিষ্ট একটি ক্লাবের পরিবর্তে বেশ কয়েকটি ক্লাবেরই নজরে চলে আসে। এবং এতে করে চাহিদা বাড়ার ফলে বেড়ে যায় ট্রান্সফার ভ্যালু।

বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স দেখে খেলোয়াড় কেনার ক্ষেত্রে প্রথম যে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়, তা হচ্ছে ওই খেলোয়াড় বিশ্বকাপের এক মাসে যেমন খেলেছে, তেমন খেলা কি সে বাকি ৯ মাসে দেখাতে পারবে? তার জাতীয় দলের যে নৈপুণ্যতা তা কি সে ক্লাবে নিয়ে আসতে পারবে?

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আসলে তা হয় না। উদাহরণ হিসেবে রয়েছে ২০০২ বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স দেখে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন দলে ভিড়িয়েছিলেন ব্রাজিলের মিডফিল্ডার ক্লেবারসনকে, যিনি কি না ছিলেন ওই দলের অবিচ্ছেদ্য এক অংশ। ক্লেবারসনকে দলে নিতে ইউনাইটেড পরে ছেড়ে দেয় হুয়ান সেবাস্টিয়ান ভেরনকে, তাও আবার চেলসির কাছে।

কিন্তু ক্লেবারসন ইউনাইটেডে সাফল্যের মুখ দেখেননি। মাত্র দুই মৌসুম তিনি সেখানে স্থায়ী হতে পারেন। এর চাইতে চেলসিতে ভেরনের ক্যারিয়ার লম্বা ছিল। ফার্গুসনের জন্য এমন ভুল তার ক্যারিয়ারে নতুন ছিল না। এর আগেও তিনি ১৯৯৬ সালের ইউরোর পারফরম্যান্স দেখে দলে ভিড়িয়েছিলেন জর্ডি ক্রুইফ ও ক্যারেল পোবোরস্কিকে।

ক্লেবারসন ও রোনালদো একই সময়ে যোগ দেন ইউনাইটেডে। তাদের প্রতি প্রত্যাশাও ছিল সমান। কিন্তু দুই দশক পর একজনকে ইউনাইটেডের কিংবদন্তি ধরা হলেও অপরজনকে চেনেই না অধিকাংশ ইউনাইটেড সমর্থকেরা; Image Credit; AP

এই ব্যর্থতা নিজের জীবনীতেও তুলে ধরেন স্যার অ্যালেক্স। সেখানে তিনি বলেন যে তিনি এই ইউরোতে তাদের পারফরম্যান্স দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন, কিন্তু তার ছিটেফোঁটাও তিনি তাদের কাছ থেকে পাননি ক্লাবে। তার মতে, খেলোয়াড়েরা এই  বিশ্বকাপ বা ইউরোর মতো বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য আলাদা করে প্রেরণা পেয়ে থাকেন, এবং টুর্নামেন্ট শেষেই আবার আগের রূপে ফিরে যান। এমন খেলোয়াড়ের সংখ্যা কিন্তু আমাদের চোখের দেখাতেও নেহায়েত কম নয়। মেক্সিকোর গোলরক্ষক গিলের্মো ওচোয়া এনাদের একজন। পুরো মৌসুম কোনো খবরে না থাকলেও বিশ্বকাপের সময় তিনি বরাবরের মতোই খবরের শিরোনাম।

প্রতি মৌসুমেই ফ্লপ ট্রান্সফারের রেকর্ড কিন্তু কম নয়। দেখা যাচ্ছে, কোনো এক খেলোয়াড় তার ক্লাবে খুব ভাল ফর্মে রয়েছেন, সেই ফর্ম দেখে অন্য কোনো ক্লাব তাকে বেশি দামে কিনে নিল। কিন্তু কেনার পরে দেখা যায়, তিনি আর আশানুরূপ নৈপুণ্য দেখাতে পারছেন না। এমন ফ্লপ ট্রান্সফারের উদাহরণ হিসেবে আনা যায় আতোঁয়ান গ্রিজমানকে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ও জাতীয় দলে দারুণ ছন্দে থাকায় তাকে ১২০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কিনেছিল বার্সেলোনা, কিন্তু পুরোপুরি ফ্লপ পারফরম্যান্স দিয়ে তিনি আবারও ফিরে গিয়েছেন অ্যাটলেটিকোতে। অন্যদিকে জাতীয় দলে এখনো এক অবিচ্ছেদ্য নাম গ্রিজমান। এমন অসংখ্য ফ্লপ ট্রান্সফারের পিছনে কারণও আছে অনেক। নতুন পরিবেশ, নতুন টিমমেট, নতুন কলাকৌশলে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন না অনেকেই।

অনেক আশা জাগিয়ে বার্সেলোনায় যোগ দিলেও সেখানে চূড়ান্ত ব্যর্থ ছিলেন গ্রিজমান; Image Credit: Fabrrice Coffrin

তেমনই জাতীয় দলে কেন একজন খেলোয়াড় ক্লাবের চেয়ে ভাল খেলে, তারও নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। এমন হতে পারে যে তিনি জাতীয় দলের জার্সি গায়ে বেশি অনুপ্রাণিত থাকেন, কিংবা জাতীয় দলের কলাকৌশলের সাথে সহজে মানিয়ে নিতে পারেন। অনেকসময় সেখানের কলাকৌশল খেলোয়াড়ের খেলার ধরনের সাথে মিলে যায়।

এছাড়া খেলোয়াড়ের সাথে তার জাতীয় দলের কোচ-সতীর্থদের সাথে যেমন সম্পর্ক, ক্লাবে তেমন না-ও হতে পারে। জাতীয় দলে ভাষাগত ও সংষ্কৃতিগত মিল থাকে, ফলে সতীর্থদের সাথে সহজেই মিশতে পারা যায়। এটি যেকোনো খেলোয়াড়ের পারফর্ম্যান্সকে বাড়াতে সক্ষম। সবকিছুই বলতে গেলে এখানে ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। এই সুবিধাগুলো নতুন ক্লাবে পাওয়া না গেলেই তখন তখন তার খেলা আর আগের মতো থাকে না এবং ফ্লপ ট্রান্সফারের সিলমোহর শরীরে লেগে যায়। অবশ্য এগুলো ছাড়াও একটি বড় ফ্যাক্টর রয়েছে।

২০১০ বিশ্বকাপে মেক্সিকান গোলরক্ষক গিলের্মো ওচোয়া একাই ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন ব্রাজিলকে; Image Credit: Fabrrice Coffrin

আমরা যেহেতু এখানে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ট্রান্সফারের কথা আলোচনা করছি, তো সেটা বিশ্বকাপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা যায়।

একজন খেলোয়াড় বিশ্বকাপে সর্বনিম্ন ৩টি ম্যাচ থেকে সর্বোচ্চ ৭টি ম্যাচ খেলে থাকেন। ফলে যেকোনো ক্লাব একজন খেলোয়াড়কে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সর্বোচ্চ চার সপ্তাহের মতো সময় পায়। এই সময়ের মধ্যেই তাদের দেখতে হয় যে এই খেলোয়াড় তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারবে কি না এবং তাদের সিস্টেমের সাথে মানানসই কি না। যে কাজটা পুরো বছর ধরে করা যায়, সেই একই কাজ এখানে করার জন্য সময় পাওয়া যায় মাত্র ১ মাস।

সচরাচর ইউরোপে একটি ফুটবল মৌসুমের সময়কাল থাকে গড়ে ৮ মাস। বিশ্বকাপ খেলা হয় কেবল এক মাস। এই একমাসে একজন খেলোয়াড় যে নৈপুণ্য দেখায়, তা কি তার কাছ থেকে টানা ৮ মাস পাওয়া সম্ভব? এই প্রশ্ন সবারই থাকে।  কারণ এই ১ মাসে সর্বোচ্চ ৭টি ম্যাচ খেলার জন্য প্রস্তুতিকাল পাওয়া যায় লম্বা। সেই সাথে টানা ১ মাস যে পরিশ্রম যায়, এরপর খেলোয়াড়দের বিশ্রামে পাঠিয়ে তাদের আবার খেলার উপযোগী করা সম্ভব। কিন্তু ক্লাবে এভাবে বিশ্রামের কোনো সুযোগ নেই। খেলোয়াড়কে পুরো মৌসুমজুড়েই খেলতে হবে।

এরপর ব্যাপার থাকে আবহাওয়া এবং জলবায়ুর। একটি আবহাওয়া একটি ফুটবল ম্যাচের ফল পাল্টে দিতে যথেষ্ট। ২০১৮ বিশ্বকাপে রাশিয়ার কন্ডিশনের সুবিধা নিয়েছিল ইউরোপীয়ানরা। আবার কাতারের আবহাওয়ার সুবিধা পেয়েছিল লাতিনরা। ইউরোপের ক্লাবগুলোয় অসংখ্য লাতিন খেলোয়াড় থাকায় এই খেলোয়াড়দের জন্য অন্য আবহাওয়ায় মানিয়ে নেয়া তুলনামূলক সহজ। কিন্তু ইউরোপীয় খেলোয়াড়েরা ইউরোপের বাইরে খুব কমই খেলে থাকে। তাই অন্য কন্ডিশনের সাথে মানিয়ে নেয়া তাদের জন্য তুলনামূলক কঠিনই বলা চলে। তো একজন খেলোয়াড় বিশ্বকাপে তার জন্য অনুকূল পরিবেশ পেতেও পারে, নাও পারে। এখন সে যদি অনুকূল পরিবেশ পেয়ে ভাল খেলে এবং তার সেই নৈপুণ্য দেখে যদি অন্য কন্ডিশনে থাকা কোনো ক্লাব তাকে কিনে নেয়, তবে তারা তার কাছ থেকে আশানুরূপ ফল নাও পেতে পারে। একজন শীতপ্রধান দেশের খেলোয়াড়ের কাছ থেকে কখনোই ক্রান্তীয় জলবায়ুতে শীতের দেশে খেলার মতো ফলাফল পাওয়া যাবে না, কারণ তার শরীর সেই আবহাওয়ায় মানিয়ে নিতে পারবে না এবং তার অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

ফুটবলারদের জন্য সহনশীল আবহাওয়া তৈরি করতে কাতারে বসানো হয়েছিল এমন বিশাল এয়ার কন্ডিশনিং ব্যবস্থা; Image Credit: Lars Baron

এছাড়া জাতীয় দলের খেলার জন্য সময় থাকে মাত্র ১ মাস। এই সময়ে অনেক ক্ষেত্রে বিপক্ষ দল অন্য দলের কৌশল ধরতে পারে না। ফলে কোনো খেলোয়াড়ের দুর্বলতা সেখানে প্রকাশ না-ও পেতে পারে। কিন্তু ক্লাবে এই সুযোগ নেই বললেই চলে। সেখানে একদম পুরো একটি মৌসুম পাওয়া যায় একজন খেলোয়াড়কে জানার জন্য। এই সময়ের মধ্যে তার নাড়ীনক্ষত্র বের করে ফেলা সম্ভব। ফলে তাকে আটকাতে কী করতে হবে, তা অনেক কোচেরই জানা থাকে। এখন বিশ্বকাপে তাকে নিয়ে বেশি বিশ্লেষণের সুযোগ হয়নি। কিন্তু ক্লাবে যখন সে খেলতে আসবে, তখন অন্য ক্লাব তাকে আটকানোর কৌশল বের করে ফেলবে। ফলে যে উদ্দেশ্যে তাকে আনা তা পুরো বিফলে যাবে।

এরপর একজন খেলোয়াড়ও টানা ৮ মাস নিজের ফোকাস ক্লাবের খেলায় ধরে রাখতে পারবে কি না, তা-ও আলোচনার বিষয়। বিশ্বকাপের একমাস সে খেলায় ফোকাস রাখতে পারে, সেই সাথে সেখানে তার জাতীয়তাবোধ কাজ করে। দেশের টানে অনেকসময় একজন খেলোয়াড় এতটাই উজ্জ্বীবিত থাকেন যে তার কাছ থেকে আশাতীত পারফর্ম্যান্স পাওয়া যায়।  কিন্তু ক্লাবের প্রতি তার টান অবশ্যই জাতীয় দলের মতো থাকে না, তাই সেখানে তেমন নৈপুণ্য-উদ্দীপনা ভেতর থেকে আসে না। এছাড়া একবার যখন কোনো খেলোয়াড়ের ফোকাস নষ্ট হয়ে যায়, তখন সেটি আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে অনেক বেগ পেতে হয়। আর টানা ৮ মাস মনোযোগ ধরে রাখা খুবই কঠিন ব্যাপার। মেসি-রোনালদোর মতো গ্রেট ছাড়া হাতেগোনা কিছু খেলোয়াড়ের পক্ষেই এটি সম্ভব। তাই এক মাসের পারফর্ম্যান্সের জন্য যেরকম মনোযোগের দরকার, তা দিয়ে অবশ্যই ৮ মাস খেলা সম্ভব নয়।

ক্লাবের খেলার চাইতে জাতীয় দলে খেলার সময় আবেগ বেশি কাজ করবেই। ছবিতে জাতীয় সঙ্গীত গাচ্ছেন ইতালির অনুর্ধ্ব-২১ দলের খেলোয়াড়েরা; Image Credit: Getty Image

তবে বিশ্বকাপের পারফর্ম্যান্স দেখে কেনা সকল খেলোয়াড়ই যে ব্যর্থ, তা নন। তবে সফলতার মাঝে ব্যর্থতার হারই বেশি। তালিকা করলে এই ব্যর্থদের তালিকাই বেশি লম্বা হবে। যখন আপনি একজন খেলোয়াড়কে এভাবে একদম টার্গেট করে কিনতে যাবেন, তখন তার মূল্য নেহায়েত কম হবে না। এইখানে যাদের ব্যর্থ বলা হচ্ছে, তাদের দামের সাথে পারফর্ম্যান্স বিবেচনায়ই তাদের ব্যর্থ বলা হচ্ছে।

এই ব্যর্থদের তালিকায় থাকবেন এল-হাজি দিউফ, সালিফ ডিয়াও, হামেস রদ্রিগেজ, দেনিলসন, ক্লেবারসন, রবার্ট জার্নি, ডেভিড ওডোংকো, হ্যাভিয়ের মারগাস, আসামোয়াহ জিয়ান, স্টেফার গুইভার্চ, আন্দ্রেস ইসাকসন।

হামেস এখন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন এভারটনে; Image Credit: Reuters

২০১৪ বিশ্বকাপে এক বড়সড় ধামাকা ছিলেন হামেস রদ্রিগেজ। কলম্বিয়ার হয়ে ৬ গোল করে জিতেছিলেন গোল্ডেন বুট। এমন খেলোয়াড় দলে ভেড়াতে দেরি করেনি রিয়াল। ৭৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তারা নিয়ে আসে তাকে। প্রথম মৌসুমে তার পা থেকে আসে ১৭টি গোল, ১৭টি অ্যাসিস্ট। নির্বাচিত হয়েছেন লা লিগার সেরা মিডফিল্ডার হিসেবেও। এরপর জিদান কোচ হিসেবে আসার পর দলে জায়গা হারান তিনি। এরপর আর ফিরতে পারেননি সেভাবে। তাকে বায়ার্ন মিউনিখে লোনে নেন তাকে রিয়ালে নিয়ে আসা কোচ কার্লো আনচেলত্তি। দুই বছরের লোন শেষে মাদ্রিদে ফিরেও থিতু হতে পারেন নি। আনচেলত্তি এভারটনের কোচ হবার পর সেখানে যোগ দেন হামেস। আনচেলত্তি এরপর রিয়ালে ফিরলেও হামেস আর ফিরতে পারেননি প্রথম সারির ফুটবলারদের কাতারে। একই কথা খাটে ২০১০ বিশ্বকাপে চমক দেখানো আসামোয়াহ জিয়ানের বেলায়ও। বিশ্বকাপের পরে অনেক আশা নিয়ে ইপিএলে সান্ডারল্যান্ডে যোগ দিলেও হারিয়ে যান সেখানেই। কপাল খারাপ হলে এই পথে তাদের সঙ্গী হতে চলেছেন আর্জেন্টিনার হয়ে সদ্য বিশ্বকাপজয়ী মিডফিল্ডার, বিশ্বকাপের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় এনজো ফার্নান্দেজ। এই বিশ্বকাপে তার পারফর্ম্যান্স দেখে টড বোহেলি তাকে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে এনেছিলেন ১০৭ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে। তবে এনজো তেমন খারাপ না খেললেও পুরো চেলসির অবস্থাই আসলে খারাপ। তার উপর সাড়ে ৮ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করে একরকম নিজের ভবিষ্যতকেই হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছেন তিনি। চেলসির এমন অবস্থা চলতে থাকলে খুব শীঘ্রই হামেস রদ্রিগেজ, আসামোয়াহ জিয়ানের সাথে উচ্চারিত হবে তার নাম।

চেলসির ১২১ মিলিয়ন ইউরোর নতুন খেলোয়াড় এনজো ফার্নান্দেজ। বিশ্বকাপের মাত্র ৬ মাস আগে বেনফিকা যাকে রিভার প্লেট থেকে কিনেছিল ৪৪ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে; Image Credit: Divulgação

ফুটবল বিশ্বকাপ যদিও ফুটবলারদের সামনে একটি প্ল্যাটফর্ম খুলে দেয় বিশ্ববাসীর সামনে নিজেকে চেনানোর জন্য, কিন্তু এটি কোনোভাবেই ভবিষ্যতে তাদের পারফর্ম্যান্স কেমন হবে, তা নিয়ে বলতে পারে না। ফর্ম, ফিটনেস, ক্যাপাবিলিটি, অ্যাডাপ্টেশন – এমন অনেক ইস্যুই সেখানে থেকে যায়। তাই যেকোনো খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রেই ট্রান্সফারের ব্যাপারে আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন। শুধু একটি টুর্নামেন্টে তার খেলা দেখেই হুট করে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া উচিৎ নয় এখানে। বিশ্বকাপে ভাল বা খারাপ খেলার কারণ অনেককিছুই হতে পারে। তাই শুধু বিশ্বকাপে পারফর্ম্যান্স না, বিবেচনায় আনতে হবে ফুটবলারের ট্র্যাক রেকর্ড, তার অতীত, তার ফিটনেস, তার অ্যাডাপ্টেশন। এসব মাথায় রেখে কাজ করলেই কেবল তারা একটি সম্ভাব্য ব্যর্থতা এড়াতে পারবে।

This article is in Bangla language. This is about the reasons why clubs should not buy a player only by seeing his performance in the world cup. This can cause a panic buy and a complete failure.

Feature Image Credit: Denis Doyle

References:
1. https://bazelive.com.ng/why-world-cup-transfers-are-problematic/
2. https://bleacherreport.com/articles/2089067-the-15-worst-transfer-moves-on-the-back-of-world-cup-performances
3. https://www.espn.in/football/soccer-transfers/story/4796981/how-the-2022-world-cup-impacts-the-january-transfer-market

Related Articles