“আমরা সাইফউদ্দিনের অনেক প্রতিভা দেখেছিলাম, সে ওই জায়গায় আদর্শ ক্রিকেটার আমাদের জন্য। কিন্তু ওর বোলিং নাকি খুবই খারাপ হয়ে গেছে। ওর খোঁজখবর নিলেই শুনি, সে বল করা ভুলে গেছে। এখন বল করা ভুলে গেলে কীভাবে হবে, আমার তো বোলিং অলরাউন্ডার দরকার। সে নাকি বল ফেলতেই পারে না জায়গামতো।”
চলমান সিরিজের দল ঘোষণার কিছুদিন আগেই এমন মন্তব্য করে বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এই মন্তব্যের কিছুদিনের মধ্যেই জাতীয় দলে ডাক পেয়ে গেলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, যাকে ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরেই গোটা বাংলাদেশ স্বপ্ন বুনে চলেছে সেই ‘চির আরাধ্য’ পেস বোলিং অলরাউন্ডারের। ক্যারিয়ারের শুরুতে ঠিক জমিয়ে বসতে পারেননি, দলের বাইরে চলে যেতে হয়েছিলো খুব দ্রুতই। তবে ঘরোয়া ক্রিকেট এবং ‘এ’ দলের হয়ে দারুণ খেলার পুরস্কার হিসেবেই এই সিরিজে আরেকবার নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। কি অসাধারণভাবেই না কাজে লাগালেন সুযোগটা!
রুবেল হোসেন সুস্থ থাকলে হয়তো একাদশেই সুযোগ মিলতো না তার। খুব ভালোভাবেই তাই জানতেন, সুযোগ এলে লুফে নিতে হবে সেটাই। প্রত্যাশার প্রতিদান দিলেন ষোল আনা, গত ম্যাচে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে জুটি বেঁধে অপরাজিত অর্ধশতকের পর এই ম্যাচে বল হাতে আউটসুইংয়ের মনোহর প্রদর্শনীতে দলের সেরা বোলার হিসেবে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ খেতাবটাও জিতে নিলেন তিনি। সম্ভাবনার সবটুকু এখনো পারফরম্যান্সে প্রতিফলিত হয়নি বটে, উন্নতিরও জায়গা রয়েছে ঢের, তবু স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সাইফউদ্দিন।
ঠিক এর উল্টো মেরুতে দাঁড়িয়ে এই সিরিজেই অভিষিক্ত ব্যাটিং অলরাউন্ডার ফজলে মাহমুদ রাব্বি। অভিষেকের আগেই তার ঘাড়ে চেপেছিলো প্রত্যাশার জগদ্দল পাথর, সাকিব আল হাসানের শূন্যতা পূরণের দায়িত্ব পেয়েছেন যে! কাজটা যে শুধু কঠিনই নয়, রীতিমতো অসম্ভব, সেটাও বারবার করে মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। সেই চাপেই হোক কিংবা নেহায়েত দুর্ভাগ্যের কাছে হার মেনেই হোক, রাব্বির শুরুটা হলো বিভীষিকাময়। বাংলাদেশের হয়ে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ম্যাচেই ‘জোড়া চশমা’ পেয়ে বসেছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে হঠাৎ করেই লাফিয়ে ওঠা বলে আউট হয়েছিলেন রানের খাতা খোলার আগেই, আর এ ম্যাচে সিকান্দার রাজাকে অনেকটা এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে হলেন স্ট্যাম্পড। সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকারের পাশেই তার নামটিও শোভা পেলেও নিশ্চিতভাবেই তিনি এই ‘কীর্তি’র অংশীদার হতে চাননি।
তবে পারফরম্যান্সের ঔজ্জ্বল্যে সবাইকে ছাপিয়ে গেলেন ওরা দু’জন। কিছুদিন আগেও যেন বাংলাদেশের টপ অর্ডার ছিল তাসের ঘর; এনামুল হক-সৌম্য সরকারের উপর্যুপরি ব্যর্থতা, তামিম ইকবাল ইনজুরিতে পড়ার পর লিটন দাস-নাজমুল হোসেন শান্তও খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারলেন না। অগত্যা এশিয়া কাপের ফাইনালে ফাটকা খেলতে হলো অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে, হুট করেই ব্যাটিং অর্ডারে ‘প্রমোশন’ দিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজকে তুলে আনলেন ওপেনিংয়ে। হঠাৎ করেই যেন বদলে গেল বাংলাদেশের মোমেন্টাম, শতরানের জুটি গড়লেন লিটন-মিরাজ। লিটন সে ম্যাচে করলেন দুরন্ত এক শতক। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তামিমের অবর্তমানে ওপেনিংয়ে নামলেন ইমরুল-লিটন। এবার লিটন ব্যর্থ হলেও জ্বলে উঠলেন ইমরুল কায়েস, খেললেন ১৪৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। আর দ্বিতীয় ম্যাচে দু’জনই জ্বলে উঠলেন একই সাথে। কিছুদিন আগেও ‘বালির বাঁধ’ মনে হওয়া টপ অর্ডারটা যেন হঠাৎ করেই ‘চাঁদের হাট’ হয়ে উঠেছে!
সেই ১৯৮৮ সালে যেদিন প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামের বুকে প্রথমবার ওয়ানডে খেলতে নেমেছিলো বাংলাদেশ, সেই ম্যাচে বাংলাদেশ দলে ছিলেন চট্টগ্রামের আবেদীন কলোনিতে বেড়ে ওঠা মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। জিম্বাবুয়ে তখন প্রবল পরাক্রমশালী এক প্রতিপক্ষের নাম, অন্যদিকে বাংলাদেশ মাত্রই গুটি গুটি পায়ে হাঁটতে শিখেছে। এরপর সময়ের পরিক্রমায় বদলে গেছে অনেক কিছুই; এমএ আজিজ স্টেডিয়াম ছেড়ে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পাড়ি জমিয়েছে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে, সেদিনের ‘সম্ভাবনাময় তরুণ ব্যাটসম্যান’ মিনহাজুল আবেদীন এখন প্রধান নির্বাচক হয়েছেন, একসময়ের ‘সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হওয়া’ বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে ম্যাচগুলোও কোন ফাঁকে যেন হয়ে উঠেছে অনেকটাই একতরফা। চলমান সিরিজের প্রথম ম্যাচেই আভাস পাওয়া গিয়েছিলো, সাকিব-তামিমবিহীন এই বাংলাদেশের সামনেও জিম্বাবুয়ে হয়তো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। অপেক্ষা ছিল শুধু এতটুকু দেখার, কতটুকু ‘পরিণত’ পারফর্ম করতে পারে তারুণ্যোদীপ্ত এই বাংলাদেশ দল।
ব্যাটিংয়ে খুব অসাধারণ কোনো ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ছিল না আজ, বোলিংয়েও ‘জাদুকরী’ কোনো ছোঁয়া নেই। তবু আজ সব মিলিয়ে আরো দাপুটে ব্যাটিং পারফরম্যান্স এবং শাণিত বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়েছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা। কিছুদিন আগেও অগোছালো দলটা অনেকটাই গুছিয়ে নিয়েছে নিজেদের, আবারও ফিরেছে জয়ের ধারায়।
ঠিক উল্টো পরিস্থিতি জিম্বাবুইয়ান শিবিরে। এ বছরের মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ার ম্যাচে ১০৭ রানের ব্যবধানে জয়ের পর হুট করেই যেন খেই হারিয়ে ফেলেছে তারা। গুনে গুনে এরপর আরও ১৯টি ম্যাচ খেলে ফেলেছে তারা, জয় যেন তাদের কাছে ‘সোনার হরিণ’ হয়ে উঠেছে। এই ম্যাচের শুরুটা হয়েছিলো দারুণ, টসে জিতে ব্যাটিং করতে নেমে একটা সময় মনে হচ্ছিলো, হয়তো ২৭৫ পেরিয়ে যাবে জিম্বাবুয়ের ইনিংস। তবে সাইফউদ্দিনের বোলিং নৈপুণ্য এবং মুস্তাফিজের স্লগ ওভার স্পেলের বদৌলতে তারা স্কোরবোর্ডে তুলেছিলো ২৪৬ রান। ২০১১ সালের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাটিং করে এত রান করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে, আঁটসাঁট বোলিংয়ে চাপের মুখে রাখতে পারলে এই পিচে সাকিব-তামিমবিহীন বাংলাদেশকে আটকে রাখা সম্ভব ভেবেই হয়তো বোলিংয়ে নেমেছিলো তারা। তবে যথেষ্ট হয়নি এই রান, ইমরুল-লিটনের ব্যাটে চড়ে বাংলাদেশ সহজেই পেরিয়ে গেছে এই রান। ফলে জিম্বাবুয়ের জয়ের অপেক্ষাটা আরও একটু দীর্ঘতর হলো।
বদলে যাওয়া সাইফউদ্দিন
গত বছরের অক্টোবর থেকে এই অক্টোবর, ডেভিড মিলারের কাছে পাঁচ ছক্কা খাওয়া সেই ওভার থেকে মিরপুরে এই দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন, ক্যারিয়ারের শুরুতেই মুদ্রার দুই পিঠ দেখে ফেললেন সাইফউদ্দিন। শান্ত-নিস্তরঙ্গ এক পুকুর থেকে উঠে এসে নেমেছিলেন উত্তাল সমুদ্রে, ডুবে যেতে পারতেন তাতে, গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাতে পারতেন আরো অনেকের মতো। কিন্তু তিনি ফিরলেন ফেরার মতো করেই, প্রবল পরাক্রমে।
নাহ, দুর্দান্ত কিছু করে দেখাননি সাইফউদ্দিন। বোলিং বিশ্লেষণ ১০-১-৪৫-৩, আহামরি তেমন কিছু নয়। কিন্তু তিনি মুগ্ধ করেছেন শরীরী ভাষায়, আউটসুইংয়ের জাদুতে, কিছু করে দেখানোর প্রবল ইচ্ছায়। এর আগের ম্যাচেই দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছেন, আট নম্বরে নেমে শতরানের জুটি গড়েছেন, ব্যাট হাতেও নির্ভরতার আশা দেখিয়েছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, তিনি সাহস দেখিয়েছেন, আত্মবিশ্বাসের স্ফুরণ ম্যাচের শুরু থেকেই তার চোখেমুখে ছিল স্পষ্ট। সেই আত্মবিশ্বাসটাই প্রেস কনফারেন্সে তার কণ্ঠে ফুটলো,
“আমি মনে মনে চাচ্ছিলাম যে, মাশরাফি ভাই আমাকে আক্রমণে আনুক। আমাকে বোলিংয়ে আনায় তাকে অবশ্যই ধন্যবাদ। আমি চাচ্ছিলাম যে, বোলিংয়ে কিছু একটা করে দেখাই। টিকে থাকতে হলে আমাকে বোলিংয়েই কিছু করে দেখাতে হবে।”
বয়সভিত্তিক দলে থাকতে নিয়মিতই স্লগ ওভারে বোলিং করতেন সাইফউদ্দিন। কঠিন পরিস্থিতিতে অসাধারণ সব ইয়র্কার দেওয়ার ক্ষমতাই তাকে অন্যদের থেকে বেশ আলাদা করে তোলে। আবার সেই বোলিংই তাকে ঠেলে দিয়েছিলো দলের বাইরে, কিছুদিন দলের আশেপাশেও ছিলেন না তিনি। সেখান থেকে কী করে ফিরলেন তিনি?
“সফল হতে গেলে কিছুটা হোঁচট খেতে হয়। আমি একটা কথা সব সময় বিশ্বাস করি, আমার মাও বলতো, একটা ছোট শিশু যখন হাঁটতে শেখে, বারবার হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। তাই বলে কি সে হাঁটা বন্ধ করে দেয়? আমারও একই বিশ্বাস। বোলিংয়ে মার খাব, ওখান থেকে শিখবো।”
পারফরম্যান্সের সাথে সাথে বাক্যবাণেও পরিপক্বতার আভাস। ভবিষ্যতেও মাঠে এই পারফরম্যান্স বজায় রাখতে পারলে সাইফউদ্দিনের জন্য উজ্জ্বল এক ভবিষ্যৎই অপেক্ষা করছে।
আরেকটি সেঞ্চুরি জুটি
কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি নিয়ে মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা চলছিলো। বিজয়-সৌম্য-মিথুন-শান্ত থেকে শুরু করে মিরাজ, লাইনটা নেহায়েত ছোট্ট নয়। গত এশিয়া কাপেও ২০ রানের মধ্যেই তিন উইকেট খুঁইয়ে বসা ছিলো নিতান্তই সাধারণ এক দৃশ্য।
অথচ দৃশ্যপট যেন বদলে গেছে এক নিমিষেই। হঠাৎ ‘এসওএস’ পেয়ে উড়ে আসা ইমরুল কায়েস মিডল অর্ডারে নেমে সত্তরোর্ধ্ব ইনিংস খেললেন, লিটন দাস এশিয়া কাপে ভারতকে দিশেহারা করে দেওয়া এক শতক করলেন, ইমরুল গত ম্যাচেই করলেন লড়াকু এক শতক। প্রথম দুই ম্যাচে দলে না থাকা সৌম্য সরকারও ঘরোয়া ক্রিকেটে ছন্দে ফেরার আভাস দিয়েছেন, ডাক পেয়েছেন তৃতীয় ম্যাচের স্কোয়াডেও। তামিম ইকবালের অভাব বিন্দুমাত্র অনুভব করতে দিচ্ছেন না লিটন-ইমরুলরা। গত তিন ম্যাচে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার শতরানের ওপেনিং জুটি গড়লো বাংলাদেশ। তামিম ফিরলে টিম ম্যানেজমেন্টকে এবার ওপেনিং জুটি নিয়ে মধুর সমস্যাতেই পড়তে হবে বৈকি!
মুশফিকের মাইলফলক
গল টেস্টে তার হাত ধরেই এসেছিলো বাংলাদেশের জার্সিতে কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম দ্বিশতক। এবার মিরপুরে আরেকটি ‘প্রথম দ্বিশতক’-এর স্বাদ পেলো বাংলাদেশ তার হাতেই। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে স্পর্শ করলেন উইকেটরক্ষক হিসেবে ওয়ানডেতে ২০০ ডিসমিসালের কীর্তি। বিশ্বের মাত্র ত্রয়োদশ খেলোয়াড় হিসেবে এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
অভিষেক ওয়ানডেতে খালেদ মাসুদ পাইলটের কারণে গ্লাভসজোড়া হাতে না উঠলে পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচেই সে দায়িত্ব বর্তায় তার উপরই। অবশেষে ১৯৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার পর গতকালের ম্যাচে ইনিংসের ৩৮তম ওভারের শেষ বলে সাইফউদ্দিনের বলে শেন উইলিয়ামসের ক্যাচ তালুবন্দী করে এই রেকর্ডে প্রবেশ করেন তিনি। পরে মাশরাফির বলে সিকান্দার রাজার ক্যাচও নিয়েছেন মুশফিক। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তার এখন ক্যাচ ১৫৯টি, স্টাম্পিং ৪২টি।
উইকেটের পিছনে মাইলফলক গড়ার দিনে ব্যাট হাতেও ছুঁয়েছেন নতুন এক শৃঙ্গ। বিরাট কোহলি’র ওয়ানডেতে দশ হাজার রান ছোঁয়ার রাতে মুশফিকুর রহিমও ছুঁলেন দশ হাজার। হোক না সেটা সব সংস্করণ মিলিয়ে, তবু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেটাই বা কম কীসে! এর আগে বাংলাদেশের মাত্র দুইজন খেলোয়াড় এই উচ্চতায় উঠতে পেরেছেন। বলুন তো, তারা কারা? ঠিক বলেছেন, তামিম ইকবাল এবং সাকিব আল হাসান।
শঙ্কার নাম বোলিং
গত দুই ম্যাচেই দাপুটে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচেই জিম্বাবুয়েকে পরিষ্কার ব্যবধানে পরাভূত করলেও ঠিক রাজত্ব করে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ইমরুলের দুর্দান্ত এক ইনিংসের পর অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলো বাংলাদেশের জয়, বোলারদের দায়িত্ব ছিল নির্বিঘ্নে জয় নিশ্চিত করা। সেটা তারা করেছেন বটে, তবে তাতে কিছুটা খাদ রয়ে গিয়েছিলো। ১৪৮ রানেই ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও অল আউট করা যায়নি জিম্বাবুয়েকে, শেষ পর্যন্ত তারা ৫০ ওভার খেলে ৯ উইকেটে ২৪৩ রানে গিয়ে থেমেছিলো।
সে তুলনায় এই ম্যাচে জিম্বাবুয়ে বরং শুরুটা করেছিলো দারুণ। ৩৮তম ওভারের শেষ বলে গত ম্যাচে জিম্বাবুয়ের পক্ষে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক শেন উইলিয়ামস যখন সাজঘরে ফিরলেন, তখনও জিম্বাবুয়ের ২৭৫ রানের সম্ভাবনা উঁকিঝুঁকি মারছে। এরপর সাইফউদ্দিন এবং মুস্তাফিজুর রহমানের নৈপুণ্যে ৭ উইকেটে ২৪৬ রানেই আটকে যায় জিম্বাবুয়ে। কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় হিসেবে থেকে যায় শুধু একটা ব্যাপার, অল-আউট যে করা যায়নি কোনো ম্যাচেই! সামনেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ, হোপ-হেটমায়াররা ভারতের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপের পরীক্ষা নিচ্ছেন, সমানে সমানে লড়াই করে চলেছেন। পরবর্তী সিরিজের ‘প্রস্তুতি’ হিসেবে হলেও সামনের ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে অল-আউট করার চ্যালেঞ্জটা এবার তাই বোলারদেরকে নিতেই হচ্ছে!
এবং ইমরুল
বরাবরের মতোই কিছুটা নড়বড়ে সূচনা করেছিলেন লিটন এবং ইমরুল দু’জনই। নিজের চতুর্থ বলেই এলবিডব্লিউ হয়েছিলেন লিটন, রিভিউ নিয়ে কোনোক্রমে বেঁচে গেছেন। অন্যদিকে দ্বিতীয় বলেই স্লিপে ক্যাচ উঠিয়েছিলেন ইমরুল, বেঁচে গেছেন সেবারও। এরপর সময় যত গড়িয়েছে, ইমরুলের স্থিতির বিপরীতে লিটন হয়ে উঠেছেন দুর্দমনীয়। লিটন ৭৭ বলে ৮৩ রানে থামলেও ইমরুল এরপর টিকে ছিলেন আরো প্রায় ১৪ ওভার। সিকান্দার রাজার নিরীহদর্শন এক বলে ‘আত্মহত্যা’ করে যখন ড্রেসিংরুমে ফিরছেন, তার রানের পাশে জ্বলজ্বল করছে ১১১ বলে ৯০ রান। গত ম্যাচের প্রায় নিখুঁত ইনিংসের পর এ ম্যাচেও জ্বলে উঠেছেন ইমরুল, গত এক দশকের অবহেলার জবাবটা ব্যাট হাতেই দিচ্ছেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ৫০ ওভারে ২৪৬/৭ (মাসাকাদজা ১৪, জুয়াও ২০, টেইলর ৭৫, উইলিয়ামস ৪৭, রাজা ৪৯, মুর ১৭, চিগুম্বুরা ৩, মাভুতা ৯*, তিরিপানো ৩*; মাশরাফি ১/৪৯, মুস্তাফিজ ১/৩৫, সাইফউদ্দিন ৩/৪৫, মিরাজ ১/৪৫, অপু ০/৪৩, মাহমুদউল্লাহ ১/২১)
বাংলাদেশ: ৪৪.১ ওভারে ২৫০/৩ (লিটন ৮৩, ইমরুল ৯০, মাহমুদ ০, মুশফিক ৪০*, মিঠুন ২৪*; জার্ভিস ০/৩১, চাতারা ০/৪৮, তিরিপানো ০/২২, মাভুতা ০/৫৬, উইলিয়ামস ০/৪৩, রাজা ৩/৪৩, জুয়াও ০/৬)