প্রয়োজন ছাড়া এই পৃথিবীতে এমনি এমনি কোনো কিছু তৈরি করা হয়নি, তাই তো বলা হয়, প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক। আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ থেকে সহজতর করে তুলতেই যেন উঠে-পড়ে লেগেছে প্রযুক্তি বিষয়ক ছোট-বড় সকল কোম্পানি। ভাবলে অবাক হতে হয়, আপনার-আমার মতো সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করে তুলতেই বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ খরচ করে গবেষণা চলছে, নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে পৃথিবীর সেরা মস্তিষ্কগুলোকে। সেই সাথে তাদের নিজস্ব ব্যবসায়িক লাভ-ক্ষতির বিষয়টি তো আছেই। সেরকমই দশটি প্রয়োজনীয় গ্যাজেটের বিস্তারিত নিয়ে সাজানো হয়েছে এই লেখাটিকে।
অ্যামাজন ইকো
২০১৪ থেকে যাত্রা শুরু করে ধীরে ধীরে এই ক্ষুদে যন্ত্রটি হয়ে উঠেছে অসাধারণ। কিছুকাল আগে গুগলের একটি নতুন খেলনা ‘গুগল হোম’ এর রিভিউ দেওয়া একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিলো, সবাই অবাক হয়ে সেটির কার্যকারিতা দেখেছে, অনেকে হা-হুতাশ করেছে, আমাদের দেশে এটি কবে পাওয়া যাবে। এই অ্যামাজন ইকো খানিকটা গুগল হোমের মতোই কাজ করে, তবে আরেকটু বেশি স্মার্ট পদ্ধতিতে। ক্ষুদ্র ও দৃষ্টিনন্দন যন্ত্রটিকে এমনভাবেই ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে ব্যবহারের জন্য যেকোনো জায়গাতে এটি মানিয়ে যায়। বাসার যেকোনো রুমে কিংবা অফিসে খুব সহজেই একে ব্যবহার করা যায় একজন স্মার্ট সহযোগী হিসেবে। নির্দিষ্ট মানুষের কণ্ঠস্বর চিনে নিতে পারে এই অ্যামাজন ইকো, সেই মানুষটির আদেশ-নিষেধ বিবেচনা করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ঘরে থাকা আরো সব স্মার্ট যন্ত্রকে। স্মার্ট টিভি সহ বাতি, এয়ার কন্ডিশনার, রুম হিটার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা যায় এর দ্বারা। এছাড়াও এই ইকো আপনার পছন্দের গান বাজানো, উবারের ট্যাক্সি ডেকে দেওয়া সহ আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো তথ্য মনে করিয়ে দিতে সক্ষম।
অ্যাংকার পাওয়ারকোর
আমাদের দেশে বর্তমানে অনেক মানুষকেই পোর্টেবল ব্যাটারি ব্যবহার করতে দেখা যায়। স্মার্টফোনগুলো দিন দিন স্মার্ট হয়ে চলেছে, কিন্তু ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার স্মার্ট কোনো সমাধান এখনো তৈরি হয়নি। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো হচ্ছে পোর্টেবল ব্যাটারি দিয়ে, জিনিসটা অনেক কাজের, যাত্রাপথে কিংবা দৈনন্দিন জীবনে অনেক সুবিধা দেয়। বাজারে অনেক ধরনের পোর্টেবল ব্যাটারি পাওয়া যায়, কিন্তু একটি ভিন্ন আঙ্গিকের ব্যাটারি হলো ‘অ্যাংকার পাওয়ারকোর’। এটি অত্যন্ত ক্ষুদ্র ও ব্যবহারে সাশ্রয়ী। খুব দ্রুত এটি দিয়ে স্মার্টফোন চার্জ করা যায়। এই স্মার্ট ব্যাটারির সাহায্যে দুই থেকে তিনটির মতো স্মার্টফোন সম্পূর্ণ চার্জ করে নেওয়া যাবে।
ওয়্যারলেস চার্জার
প্রথমেই বলে দেওয়া দরকার, নাম দেখেই এই যন্ত্রটি আসলে আপনি যা ভাবছেন, ঠিক তা নয়। অর্থ্যাৎ সম্পূর্ণ তারবিহীন চার্জের পদ্ধতি এখনো আসেনি। তবে বর্তমানে মানুষের একটি অন্যতম একটি চাওয়া হলো এই ওয়্যারলেস চার্জিং সিস্টেম। স্মার্টফোনে চার্জ শেষ হয়ে গেলে চার্জার কর্ড লাগানো অবস্থায় ব্যবহার বিরক্তিকর। যদি এমন হয়, কর্ড প্লাগিন করে দিয়ে স্মার্টফোন হাতে নিয়ে ঘোরা যাবে নির্দিষ্ট সীমার মাঝে, ব্যবহার করা যাবে, তাহলে কিন্তু মন্দ হয় না। হয়তো একদিন এমন ব্যবস্থাও চলে আসবে, সেই দিনটিও বেশি দূরে নেই আর।
পাওয়ার কর্ড থেকে স্মার্টফোনে সরাসরি ইলেক্ট্রিসিটি পাস করানো যায় না, তাই কর্ড বিদ্যুৎ সংযুক্ত অবস্থায় অপর একটি প্যাডের উপর স্মার্টফোনটি রাখতে হয়, এ দুইয়ের মাঝে কোনো তারের সংযোগ না থাকায় ইচ্ছেমতো নির্দিষ্ট সীমার মাঝে প্যাডটি রাখা যাবে। ছোট-বড় তারের যন্ত্রণা নেই এই ওয়্যারলেস চার্জারটিতে, এক হিসেবে একে কিন্তু তারবিহীন বলাটা ভুল কিছু নয়। আরো একটি কথা, এই প্রযুক্তিটি যেহেতু নতুন, এর থেকে খুব বেশি স্মার্ট কিছু আশা করা যায় না। এই যন্ত্রটি স্ট্যান্ডার্ড স্পিডে স্মার্টফোন চার্জ করবে, দ্রুত চার্জিং প্রয়োজন হলে আপনাকে ফিরে যেতে হবে সেই তারযুক্ত চার্জিং ব্যবস্থাতেই।
নোম্যাড কি
এই গ্যাজেটটির নাম খানিকটা কাব্যিক। নোম্যাড কি বা ‘যাযাবরের চাবি’; আসলে ভুল কিছু বলা হয়নি নামে। সবসময় স্মার্টফোনের ডাটা ক্যাবল সঙ্গে রাখা সম্ভব হয় না। এই গ্যাজেটটি মূলত একটি চাবির রিং, এতে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় সকল চাবি রাখতে পারবেন। চাবি রাখার সুবাদে আপনি পেয়ে যাবে স্মার্টফোনের ডাটা ক্যাবলের সুবিধাটুকু; যা বাঁকানো অবস্থায় সংযুক্ত করা রয়েছে এতে।
লেদারম্যান- সাইডকিক মাল্টিটুল
একটি ভালো মানের মাল্টিটুল সঠিক সময়ে অনেক উপকারী হয়ে উঠতে পারে। ম্যাকগাইভার্স টুলের নামে-বেনামে আমাদের দেশে অনেক মাল্টিটুল পাওয়া যায়। তবে সেগুলোতে সবকিছু একসাথে থাকে না। সেই সমস্যাটি এড়াতেই ছোট পরিসরে যতটুকু সম্ভব এই লেদারম্যান মাল্টিটুলটি ডিজাইন করা হয়েছে। এতে প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য করতে সক্ষম এমন সবগুলো ব্যবস্থাই রয়েছে।
টাইল
ব্যাগ, চাবির রিং, মানিব্যাগ সহ যেকোনো প্রয়োজনীয় জিনিস যা আপনি তাৎক্ষণিকভাবে খুঁজে পাচ্ছেন না, এমন সবকিছুর সাথে জুড়ে দিতে পারেন সাদা রঙের এই ক্ষুদে কার্ডটি। এই কার্ডটি ১০০ ফুট দূর থেকে ব্লুটুথ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপনার স্মার্টফোনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম এবং সেই সাথে এ-ও বলে দেবে আপনি ঠিক কোথায় এটি রেখেছেন।
ফিলিপস হিউ স্মার্ট বাল্ব
এই বাতিগুলো আর সব সাধারণ বাতির মতোই, আমাদের বাসা-বাড়িতে বাতিগুলো যেভাবে সকেটে ব্যবহার করা হয়, এগুলোও ঠিক একইভাবে ব্যবহার করা যাবে। এই সাধারণের মাঝেই এর রয়েছে অসাধারণ গুণ। বাতিগুলোকে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন আপনার স্মার্টফোনের সাহায্যে। পছন্দমতো বাতির তীব্রতা কমানো-বাড়ানো সহ হরেক রঙের বাতি আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। বাতিগুলোকে আপনি বাসার বাইরে থেকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। তাই হুট করে যদি মনে হয় বাতি বন্ধ করেছেন কিনা, সেটি সঙ্গে সঙ্গে দেখে নিতে পারবেন স্মার্টফোনে এবং সাথে সাথে বাতিগুলো নেভানো যাবে। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এই বাতিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় অ্যামাজন ইকোর সাহায্যে।
রোকু মিডিয়া স্ট্রিমার
এই ইউএসবি ডিভাইসটি স্মার্ট টিভিতে ব্যবহার করা যাবে। স্মার্ট টিভি থেকেই এটি প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের যোগান নিয়ে নিবে। কষ্ট করে শুধু প্লাগিন করে দিলেই সব কাজ শেষ আপনার। অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসের সাহায্যে আপনি এটি ব্যবহার করতে পারবেন আপনার স্মার্ট টিভিতে। এর সঙ্গে আসা রিমোটের সাহায্য একে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। রিমোটের ব্যাটারি নিয়েও চিন্তার কিছু নেই, এই রিমোটের ব্যাটারি রিচার্জেবল। নেটফ্লিক্স, প্লেক্স সহ আরো যতসব অনলাইন স্ট্রিমিং ব্যবস্থা রয়েছে, সবকিছুতে প্রবেশ করা যাবে এর দ্বারা। কোনো টিভি সিরিজ কিংবা মুভি দেখা নিয়ে তাই আর ডাউনলোডের ঝামেলায় যেতে হবে না আপনাকে।
ইউনিভার্সাল রিমোট
নাম এবং ছবিটি দেখেই নিশ্চয় বুঝে গিয়েছেন এই গ্যাজেটটির প্রয়োজনীয়তা কী হতে পারে। এটি একটি সার্বজনীন রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেম। এর সাহায্যে যেকোনো স্মার্ট ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। একইসঙ্গে আটটি ডিভাইসে এটি সেটাপ করে রাখা সম্ভব। প্লেস্টেশন, এক্সবক্স, টিভি, হোম থিয়েটার, মিউজিক প্লেয়ার সবই ব্যবহার করা যাবে এর সাহায্যে। এর ছোট স্ক্রিনে রিমোটের সেটিংস পরিবর্তন করে নেওয়া যাবে, এছাড়াও প্রতিটি কমান্ড দেখাবে এই স্ক্রিনটিতে।
কিন্ডল পেপারহোয়াইট
ই-বুক পড়ার জন্য কিন্ডল নামক যন্ত্রের নাম আশা করি সকলেরই জানা আছে। তবে এটি স্মার্টফোনের আকারের নয়, এই যা ভরসা, বারবার নেভিগেশনের প্রয়োজন পড়ে না। এর আকার প্রায় একটি বইয়ের পৃষ্ঠার সমান। একটির পর একটি পৃষ্ঠা আপনি উল্টে পড়ে যেতে পারবেন যেকোনো বই। এতে লক্ষাধিক বই রাখা সম্ভব। যেহেতু ই-বুক পড়ার জন্যই তৈরি করা হয়েছে একে, তাই নিশ্চিত থাকুন, ব্যবহারকারী হিসেবে আপনি সর্বোচ্চটা সুবিধাটাই পাবেন। রাতের আঁধারেও যাতে পড়তে সমস্যা না হয় কিংবা চোখের ক্ষতি না হয় একটানা ব্যবহারের দরুণ, সেসব ব্যাপারেও নজর দেওয়া হয়েছে এতে।
এত সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, কিছু একটা তো ইনপুট প্রয়োজন এতে, এবার ইনপুটের কথা বলি। এই যন্ত্রটি চার্জ দিতে হয়, তবে প্রতি রাতে দেওয়ার প্রয়োজন নেই, একবার ফুল চার্জে এক সপ্তাহ টানা ব্যবহার করা যায়। ভ্রমণ কিংবা যেকোনো প্রয়োজনে সাথে রাখা যায়। সহজ, সুন্দর আর মানানসই আকারের যন্ত্রটিতে যখন খুশি, যেখানে খুশি, যা খুশি পড়ে ফেলা যায়।