ব্যস্ততার প্রতিটি দিনে আমাদের প্রচুর তথ্য মনে রাখতে হয়। আগামী সোমবার বসের সাথে মিটিং, রবিবার এই এই কাজগুলো শেষ করতে হবে, কিংবা বিদ্যুৎ বিল জমা দেওয়ার শেষ তারিখ আগামী বৃহস্পতিবার। অনেকের জীবন আবার টিউশনির টিচারদের মতো। প্রতিদিন সময় ধরে যেতে হয় এক স্থান থেকে অন্যত্র। শিক্ষার্থীদের অনেকেই পড়ার রুটিন তৈরি করে টেবিলের উপর ঝুলিয়ে রাখে। টেবিল থেকে সামান্য দূরে থাকলে রুটিনের কথা মনেও থাকে না। প্রতিদিনই আমাদের এরকম বহু তথ্য মনে রেখে চলতে হয়। আর এত তথ্য মনে রাখার মানসিক চাপের প্রতিফলন আমাদের দেহে ও কাজে প্রভাব ফেলে। যদি এমন হয় যে, আমাদের হয়ে প্রতিদিনের তথ্যগুলো কেউ মনে রাখবে (যেমনটা আমরা মনে রাখি), আমাদের প্রতিদিনের কাজের তালিকা সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখবে, আমাদের বলে দেবে কোন কাজটার পরে কোন কাজটা করতে হবে- তাহলে নিশ্চয়ই অনেক ভালো হয়। তা-ই নয় কি?
হ্যাঁ, প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা সেই সুযোগটি পাচ্ছি। বর্তমানে আমাদের নিত্যসঙ্গী হলো হাতের স্মার্টফোনটি! স্মার্টফোনে আমাদের প্রয়োজনমতো এক বা একাধিক অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করে আমরা সহজেই আমাদের প্রতিদিনের সকল কাজ মনে রাখার দায়িত্ব স্মার্টফোনকে দিয়ে দিতে পারি। অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের তেমনই ১০টি ফ্রি অ্যাপ্লিকেশনের সাথে আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব। যেগুলো প্রত্যেকটাই বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য তৈরি হয়েছে এবং প্রত্যেকটাই নিজ পরিকল্পনায় শ্রেষ্ঠ। কাজের ধরন, ইউজার ইন্টারফেইস, নটিফিকেশনের ধরন, ইউজার কনট্রোল ও সময় উপযোগিতার উপর ভিত্তি করে অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে ১০ থেকে ১ পর্যন্ত সাজানো হয়েছে। কাজের চাহিদার উপর ভিত্তি করে আপনি এক বা একাধিক অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে পারেন। কোন অ্যাপ্লিকেশনটি আপনি নাম্বার ১ এ রাখবেন সেটা আপনার চাহিদার উপর নির্ভর করবে।
১০. D Note
আমাদের নাম্বার ১০ এ থাকা অ্যাপ্লিকেশনটি হলো D Note.; হালকা, ফ্লেক্সিবল ও চমৎকার গ্রাফিক্সের এই নোট অ্যাপ্লিকেশনটিতে আপনি টেক্সট নোটের পাশাপাশি ইমেজও যুক্ত করতে পারবেন। তবে মূলত টেক্সট নোটের জন্যই এটি সবথেকে ভালো সার্ভিস দিয়ে থাকে। এছাড়াও রয়েছে থিম ও নোটের ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তনের সুবিধা।
৯. Notepad
Notepad অ্যাপ্লিকেশনটি অনেকটা পকেট ডায়েরির মতো কাজ করে। এখানে ছুটির পরিকল্পনা, সাক্ষাৎকারের সময়, কেনাকাটার তালিকা চমৎকারভাবে লিপিবদ্ধ করতে পারেন। এছাড়াও রয়েছে ভয়েজ রেকর্ড সুবিধা। পাশাপাশি নোটগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সাজিয়েও রাখতে পারেন। Notepad অনলাইন ব্যাকআপও সমর্থন করে। আপনার ড্রপবক্স ও গুগল ড্রাইভের সাথে সিনক্রোনাইজেশন করে নোটের ক্লাউড ব্যাকআপ রাখতে পারেন। তাছাড়া, ওয়াইফাই সংযোগ পেলে অ্যাপ্লিকেশন নিজে থেকেই ব্যাকআপ রেখে দেবে।
৮. TimeTune – Optimize Tour Time
TimeTune প্রতিদিনের কজের রুটিন তৈরির জন্য একটি চমৎকার অ্যাপ্লিকেশন। বিশেষ করে, স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি অ্যাপ্লিকেশন। TimeTune আপনার ঘুম থেকে শুরু করে কাজের সময়, অবসর সময়, ঘুরতে যাওয়ার সময়, আড্ডার সময় সবকিছুই হিসাব রাখবে। এতে করে আপনি আপনার প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডের উপর একটি চমৎকার গ্রাফ পাবেন।
৭. ColorNote
ColorNote সবথেকে জনপ্রিয় নোট অ্যাপ্লিকেশনগুলোর একটি। এর নাম থেকেই আপনি কাজের বিষয় অনেকটা হয়তো ধারণা করতে পারছেন। এখানে আপনার বিভিন্ন ক্যাটাগরির নোটগুলো বিভিন্ন কালার দিয়ে চিহ্নিত করে রাখতে পারবেন। অবশ্য ColorNote এর এই আইডিয়াটি পরবর্তীতে অনেক নোট অ্যাপ্লিকেশনেই ব্যবহার করা হয়েছে। ColorNote ইউজারকে নোট, লিস্ট সহ আরও বেশ কিছু সুবিধা দিতে থাকে। এই নোটের বড় সুবিধা হলো, ক্যালেন্ডার সাপোর্টের পাশাপাশি আপনার নোটগুলোর অনলাইন ব্যাকআপও দিচ্ছে।
৬. Gnote
অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের জন্য তৈরী নোট অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মধ্যে Gnote বেশ স্মার্ট একটি অ্যাপ্লিকেশন। আধুনিক নোট অ্যাপ্লিকেশনের সকল সুযোগ সুবিধা সহ রয়েছে নিজস্ব লক সিস্টেম। যা এই অ্যাপ্লিকেশনটিকে করে তুলেছে অনন্য। এছাড়াও প্রতিটি নোট সার্ভারে ব্যাকআপ রাখা হচ্ছে। ফলে, মোবাইলে লেখা কোনো নোট সহজেই পিসিতে পাচ্ছেন। অত্যাধুনিক কিছু সুবিধার জন্য রয়েছে সাবস্ক্রিপশন ব্যবস্থা।
৫. Google Calendar
Google Calendar অত্যাধুনিক সব ফিচার সমৃদ্ধ একটি ক্যালেন্ডার অ্যাপ্লিকেশন। এই অ্যাপ্লিকেশনটি আপনি একটি ডায়রির মতো ব্যবহার করতে পারেন। আপনার স্মরণীয় মুহূর্তগুলো এখানে সংরক্ষণ রাখতে পারেন, যা আপনার গুগল অ্যাকাউন্টে জমা থাকবে। তবে এই অ্যাপ্লিকেশনটি মূলত ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন মাসে কাজের তালিকা তৈরি করার জন্য। এখানে রয়েছে নটিফিকেশন সিস্টেম। ধরুন আগামী মাসের ১৫ তারিখ আপনার কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে এবং আপনি চাচ্ছেন ১০ তারিখে যেন আপনাকে কাজের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়। তাহলে এক্ষেত্রে Google Calendar আপনার জন্য একটি প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন।
৪. Evernote- stay organised
Evernote হলো অত্যন্ত শক্তিশালী নোট অ্যাপ্লিকেশন। অনেকগুলো চমৎকার ফিচার নিয়ে মার্কেটে এসেছে। উল্লেখযোগ্য ফিচারগুলো হলো, বিভিন্ন নোটের ধরন, নোটবুক সাপোর্ট, সাংগঠনিক বৈশিষ্ট্য, সহযোগিতামূলক বৈশিষ্ট্য, নোট ভাগাভাগি এবং ক্রস প্ল্যাটফর্ম সাপোর্ট ফিচার। এই নোটটি আপনি মোবাইল ও পিসি উভয়ের জন্যই ব্যবহার করতে পারেন। মোবাইলে লেখা কোনো নোট পিসিতে পেয়ে যাবেন। আবার পিসিতে লেখা নোটগুলোও আপনি মোবাইলে পেয়ে যাবেন। এভাবে আপনি বাসায় বসে মোবাইলে কিছু নোট করলেন সেটা অফিসের পিসিতে পেয়ে যাচ্ছেন। Evernote এর শেয়ার সুবিধাও চমৎকার। Evernote এর একজন ইউজারের কাছে কোনো নোট শেয়ার করতে চাইলে শেয়ার অপশনে গিয়ে তার ইউজার নেমটি লিখে দিলেই হবে। তবে এ নোটের কিছু কিছু সুবিধা সাবস্ক্রিপশন মেম্বারদের জন্য রাখা হয়েছে। তাই সকল সুবিধা পেতে হলে আপনাকে এখানে সাবস্ক্রিপশন মেম্বার হতে হবে।
৩. OneNote
OneNote হলো মাইক্রোসফটের নোট অ্যাপ্লিকেশন। যা সর্বাধিক হাই গ্রাফিক্যাল নোট অ্যাপ্লিকেশন হিসেবেই পরিচিত। এই অ্যাপ্লিকেশনটি মাইক্রোসফট ক্লাউড OneDrive এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই আপনার প্রতিটি নোট ইন্টারনেট কানেকশন পাওয়া মাত্র ক্লাউডে ব্যাকআপ রেখে দেবে। এই নোটের বিশেষ সুবিধাগুলো হলো, সংগঠনের বৈশিষ্ট্য, ক্রস-প্ল্যাটফর্ম সাপোর্ট, উইজেট, অ্যান্ড্রয়েড ওয়্যার সাপোর্ট, সহযোগিতামূলক বৈশিষ্ট্য, ভয়েস নোট এবং ফটো সংযোজনের জন্য রয়েছে একটি আধুনিক টুল বক্স। এই সকল আধুনিক সুবিধার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, গবেষক ও চাকরিজীবীদের মধ্যে এই নোটের জনপ্রিয়তা লক্ষণীয়।
২. Schedule – Schedule, Note and Todo for Free
মাত্র কয়েকমাস আগে রিলিজ হওয়া Schedule অ্যাপ্লিকেশনটি অভিনব কিছু ফিচার নিয়ে মার্কেটে এসেছে! এই অ্যাপ্লিকেশনটি তিন ধরনের ভিন্ন কাজের জন্য উপযুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে, যা আপনার প্রতিদিনের জীবনেকে সবথেকে বেশি সহজ করে তুলতে পারে। এখানে আপনার পুরো সপ্তাহের কাজের রুটিন তৈরি করে রাখতে পারবেন। যা প্রতি সপ্তাহে লুপ হিসেবে চলতে থাকবে।
Schedule অ্যাপ্লিকেশনটি আপনার প্রতিদিনের কাজগুলোকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখবে এবং কাজ শুরুর নির্দিষ্ট সময় পূর্বে আপনাকে মনে করিয়ে দেবে। এখানে সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে চিহ্নিত করে রাখতে পারবেন। ফলে মাত্র এক ক্লিকে এই সপ্তাহের সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজের উপর নজর বুলিয়ে নিতে পারবেন। এছাড়াও এখানে কেনাকাটা ও বাসার টুকটাক কাজের তালিকা তৈরি করতে পারবেন। পাশাপাশি আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য নোট করেও রাখতে পারবেন। এখানে যুক্ত করা হয়েছে বেশ আধুনিক নোট টুল। টেক্সট কালার, টেক্সট সাইজ, ব্যাকগ্রাউন্ড কালার সবকিছুই আপনার পছন্দমতো নির্বাচন করতে পারবেন।
১. Google Keep
Google Keep এখনই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় নোট অ্যাপ্লিকেশন। এটি রঙিন ও হালকা ডিজাইনের অতি চমৎকার ও অত্যন্ত কার্যকরী অ্যাপ্লিকেশন। এখানে নোটগুলো কার্ডের মতো দেখায়, যা আপনি দ্রুত স্ক্রোল করতে পারেন এবং নির্বাচন করতে পারেন। অ্যাপ্লিকেশনটিতে গুগল ড্রাইভের ইন্টিগ্রেশন রয়েছে, যাতে আপনি তাদের প্রয়োজনে অনলাইন অ্যাক্সেস করতে পারেন। তাই নোট ওপেন করার পরে আপনি অনলাইন ও অফলাইনের কোনো পার্থক্যই বুঝবেন না। এছাড়াও রয়েছে তালিকা তৈরির সুবিধা, ভয়েস নোট, ইমেজ নোট, ইমেজ ড্রয়িং সুবিধা, রয়েছে ক্যাটাগরি তৈরি ও নোট আর্কাইভ করে রাখার সুবিধা। এর ব্যবহার এতটাই মসৃণ যে, Google Keep ব্যবহারের পর এর বিকল্প কোনো নোট অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের কথা ভাবতেও আপনার কষ্ট হবে।
কোন অ্যাপ্লিকেশন কোন প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে বা গ্রাফিক্স কতটা সুন্দর দেখায়, তা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, অ্যাপ্লিকেশনটি আপনার প্রয়োজনে কতটা কাজে লাগছে। কোনো প্রতিষ্ঠান বা ডেভলপার যখন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে, তখন তারা গ্রাহকের নির্দিষ্ট চাহিদা পূরণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। কিন্তু মানুষের ভিন্নতার কারণে সব অ্যাপ্লিকেশন সবার পছন্দসই হয় না। কাজেই পছন্দ ও চাহিদার উপর ভিত্তি করেই আপনি বেছে নিতে পারেন আপনার জন্য সেরা অ্যাপটি।
ফিচার ইমেজ : www.rewireme.com