বর্তমানে প্রায় কয়েকশ স্মার্টফোন প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন গুনগত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন তৈরি করে থাকে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান গুগলের ‘অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান’ প্রজেক্টের আওতায় অফিশিয়াল অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান স্মার্টফোন তৈরি করে। গুগল সরাসরি এই স্মার্টফোন কোম্পানিগুলোর নির্ধারিত কয়েকটি স্মার্টফোন মডেলের জন্য অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ সরবরাহ করে থাকে।
শুধু অফিসিয়াল অ্যান্ড্রয়েড নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণের আপডেট, মাসিক সিকিউরিটি আপডেট, বাগ ফিক্সসহ যাবতীয় অ্যান্ড্রয়েড সাপোর্টের দায়িত্ব এই স্মার্টফোন প্রস্ততকারক কোম্পানিটির বদলে সরাসরি গুগল দিয়ে থাকে। তবে কোনো স্মার্টফোনকে অ্যান্ড্রয়েড ওয়ানের জন্য উপযোগী হবার জন্য অবশ্যই গুগল নির্ধারিত প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হতে হয়। অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান স্মার্টফোনগুলো সাধারণত-
- পরবর্তী তিন বছর ধরে গুগল থেকে নিয়মিত সিকিউরিটি আপডেট পেয়ে থাকে।
- পরবর্তী দুই বছরের যাবতীয় অফিসিয়াল অ্যান্ড্রয়েড আপডেট পেয়ে থাকে।
- বাধ্যতামূলকভাবে অ্যান্ড্রয়েড ইন্টারফেস এবং গুগল সার্ভিসসহ বাজারজাত করা হয়।
শাওমি এ২ এবং এ২ লাইট
চীনের জনপ্রিয় স্মার্টফোন প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান শাওমি থেকে চলতি বছরের জুলাই মাসে এ২ এবং এ২ লাইট নামের দুটি অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান স্মার্টফোন ঘোষণা করা হয়েছিল। গত বছরের আলোচিত শাওমি এ১ স্মার্টফোনের উত্তরসূরি হিসেবে শাওমি এই মধ্য বাজেটের অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান স্মার্টফোন দুটি বাজারে নিয়ে এসেছে।
শাওমি এ২ স্মার্টফোনটিতে ১৮:৯ অনুপাতের ৫.৯৯ ইঞ্চির আইপিএস স্ক্রিন ব্যবহার করা হয়েছে। প্রসেসর হিসেবে থাকছে কোয়ালকম স্নাপড্রাগন ৬৬০ সিরিজের অক্টাকোর প্রসেসর এবং জিপিউ হিসেবে আড্রিনো ৫১২। স্মার্টফোনটিতে ৩০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি সংযুক্ত করা হয়েছে। পেছনের ক্যামেরায় ১২ ও ২০ মেগাপিক্সেলের দুটি মাইক্রন পিক্সেলযুক্ত সেন্সর এবং সেলফি ক্যামেরাতেও ২০ মেগাপিক্সেলের মাইক্রনপিক্সেল সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। তিনটি ক্যামেরা সেন্সরেই আলট্রা পিক্সেলের সমন্বয় থাকার কারণে দিনের পাশাপাশি রাতেও ফোনটি চমৎকার ছবি ধারণে সক্ষম। টাইপ-সি ইউএসবি ব্যবহৃত এই স্মার্টফোনটিতে থাকছে না কোনো ইয়ারফোন জ্যাক।
চলতি আগস্ট মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশের বাজারে স্মার্টফোনটির ৬৪ গিগাবাইট স্টোরেজ এবং ৪ গিগাবাইট র্যাম সংস্করণটি প্রায় ২৪,০০০ হাজার টাকার অফিসিয়াল ওয়ারেন্টিসহ বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে বেশ কয়েকটি দোকানে এর চেয়ে বেশ কম দামেই ফোনটি পাওয়া যাচ্ছে।
অন্যদিকে, শাওমি এ২ লাইট স্মার্টফোনটিতে ১৯:৯ অনুপাতের ৫.৮৪ ইঞ্চির আইপিএস নচ পর্দা ব্যবহার করা হয়েছে। প্রসেসর হিসেবে স্নাপড্রাগন ৬২৫ সিরিজ এবং গ্রাফিক্স ইউনিট হিসেবে আড্রিনো ৫০৬ ব্যবহার করা হয়েছে। এ২ স্মার্টফোনটিতে বাড়তি মেমোরি কার্ড ব্যবহারের সুযোগ না থাকলেও এই লাইট সংস্করণে বাড়তি ধারণক্ষমতার জন্য নির্দিষ্ট মেমোরি কার্ড স্লটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ব্যাটারির ক্ষমতা ৪০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার।
শাওমি এ২’র মতোই এই স্মার্টফোনে দুটি রিয়ার ক্যামেরা ব্যবহার করা হলেও এগুলো যথাক্রমে ১২ এবং ৫ মেগাপিক্সেলের। উভয় ক্যামেরা সেন্সরে থাকছে মাইক্রন পিক্সেল। এছাড়া সেলফি ক্যামেরা হিসেবে থাকছে একটি ৫ মেগাপিক্সেল সেন্সর। ডেপথ সেন্সর থাকার কারণে এই স্মার্টফোনটিও বেশ ভালো মানের ব্লার ইফেক্টযুক্ত ছবি তুলতে সক্ষম। ৩ গিগাবাইট এবং ৪ গিগাবাইট র্যামের সংস্করণভেদে স্মার্টফোনটি বাংলাদেশের বাজারে অফিসিয়াল ওয়ারেন্টিতে প্রায় ১৬ এবং ১৯ হাজার টাকার আশেপাশে বিক্রি শুরু হয়েছে।
শাওমি এ১
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে শাওমির প্রথম অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান স্মার্টফোন শাওমি এ১ বাজারে ছাড়া হয়। মধ্য বাজেটের এই ফোনটি ভারত এবং বাংলাদেশের বাজারে প্রচুর বিক্রি হয়েছে। ২ গিগাহার্জের শক্তিশালী অক্টাকোর স্ন্যাপড্রাগন ৬২৫ চিপসেটের সাথে আড্রিনো ৫০৬ জিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছে এতে। ভালো গেমিং পারফর্মেন্সের পাশাপাশি ফোনটির অন্যতম আকর্ষণ ছিল এর ক্যামেরা।
শাওমি এ১ এর রিয়ার ক্যামেরা হিসেবে আছে ১২ মেগাপিক্সেলের দুটি অমনিভিশনের পিওরসেল ক্যামেরা। একটি মূল সেন্সরের পাশাপাশি অন্যটি টেলিফটো সেন্সর। ক্যামেরা দুটি মাইক্রনপিক্সেল সমৃদ্ধ বিধায় দিনের পাশাপাশি রাতেও বেশ ভালো মানের ছবি ধারণে সক্ষম। সেলফি ক্যামেরা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে একটি ৫ মেগাপিক্সেল সেন্সর। ৫.৫ ইঞ্চি আকারের স্ক্রিনের এই ফোনটি দিয়ে সর্বোচ্চ ১০৮০ পিক্সেলে ভিডিও ধারণ করা সম্ভব। ৩০৮০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারির এই ফোনটি ৩২ জিবি এবং ৬৪ জিবির দুটি আলাদা ধারণক্ষমতায় পাওয়া যায়। দারুণ এই ফোনটি বাংলাদেশের বাজারে প্রথমদিকে মোটামুটি ২২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২৪ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হলেও এখন বেশ কম দামেই পাওয়া যাচ্ছে।
নকিয়া ৭ প্লাস
বর্তমানে নকিয়ার পক্ষে এইচএমডি গ্লোবাল যাবতীয় অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন প্রস্তুত করছে। চলতি বছরের মার্চে এইচএমডি গ্লোবাল তাদের এই অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান স্মার্টফোনটি বাজারে নিয়ে আসে। ফোনটিতে অক্টাকোরের কোয়ালকম স্নাপড্রাগন ৬৬০ সিরিজের প্রসেসর এবং জিপিইউ হিসেবে অ্যাড্রিনো ৫১২ ব্যবহার করা হয়েছে।
নকিয়া ৭ প্লাসের রিয়ার ক্যামেরায় ১২ এবং ১৩ মেগাপিক্সেলের দুটি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া সেলফি ক্যামেরা হিসেবে রয়েছে একটি ১৬ মেগাপিক্সেলের সেন্সর। তিনটি সেন্সরেই মাইক্রনপিক্সেল থাকার কারণে স্মার্টফোনটি দারুন ছবি তুলতে সক্ষম। ফোনটি দিয়ে সর্বোচ্চ ৪কে ভিডিও ধারণ করা যাবে। ১৮:৯ অনুপাতের ৬ ইঞ্চির এই ফোনে ৩৮০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি দেওয়া হয়েছে।
৬৪ গিগাবাইট ধারণ ক্ষমতা ও ৪ গিগাবাইট র্যামের এই অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান স্মার্টফোনটি দেশের বাজারে ৪০ হাজার টাকায় অফিসিয়াল ওয়ারেন্টিসহ বিক্রি হচ্ছে ।
নকিয়া ৬.১/ নকিয়া ৬ (২০১৮ সংস্করণ)
চলতি বছরের এপ্রিলে এইচএমডি গ্লোবালের পক্ষ থেকে নকিয়া ৬ এর উত্তরসূরি হিসেবে এই অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান স্মার্টফোনটি বাজারে ছাড়া হয়। ১৬:৯ অনুপাতের এই ফোনটিতে ৫.৫ ইঞ্চির ১০৮০ পিক্সেল পর্দা এবং ৩০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি রয়েছে। স্মার্টফোনটিতে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৩০ সিরিজের অক্টাকোর প্রসেসর এবং অ্যাড্রিনো ৫০৮ জিপিইউ ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই স্মার্টফোনের রিয়ার ক্যামেরায় ১৬ মেগাপিক্সেলের মাইক্রনপিক্সেলযুক্ত ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া সেলফির জন্য রয়েছে একটি ৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা। এই ফোনটি দিয়েও সর্বোচ্চ ৪কে ভিডিও ধারণ করা যাবে। র্যাম এবং রমের বেশ কয়েকটি সংস্করণের এই ফোনটি অফিসিয়াল ওয়ারেন্টিসহ বাংলাদেশের বাজারে প্রায় ২৯ হাজার টাকা প্রান্তিক মূল্যে কিনতে পাওয়া যায়।
মটোরোলা মটো এক্স৪
২০১৭ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের স্মার্টফোন ব্র্যান্ড মটোরোলা থেকে বাজারে আনা হয় মটো এক্স৪ নামের এই অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান স্মার্টফোন। এতে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৩০ চিপসেট এবং আড্রিনো ৫০৮ জিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছে। ৫.২ ইঞ্চির ১৬:৯ অনুপাতের এই স্মার্টফোনে ১০৮০ পিক্সেল পর্দা এবং ৩০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে।
স্মার্টফোনটির রিয়ার ক্যামেরায় ১২ এবং ৮ মেগাপিক্সেলের দুটি মাইক্রনপিক্সেলযুক্ত সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া ফোনটিতে ১৬ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরাতেও মাইক্রনপিক্সেলের সমন্বয় থাকার কারণে বেশ ভালো মানের ছবি ধারণ করতে পারে। স্মার্টফোনটি ৩২ গিগাবাইট স্টোরেজে ৩ গিগাবাইট র্যাম এবং ৬৪ গিগাবাইট স্টোরেজে ৩ অথবা ৪ গিগাবাইট র্যাম- এই তিনটি সংস্করণে বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। প্রথমদিকে অ্যান্ড্রয়েড ৭ দেয়া থাকলেও পরবর্তীতে স্মার্টফোনটি অরিও আপডেট পেয়েছে। বাংলাদেশের বাজারে স্মার্টফোনটির প্রান্তিক মূল্য ৩৫ হাজার টাকার কাছাকাছি।
ফিচার ইমেজ: android.com