উনিশ শতকের প্রথম দিকের কথা, জন ডাল্টন ততদিনে পরমাণুবাদকে বেশ শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছেন। এ পরমাণুবাদের একটি স্বীকার্য ছিল, “সকল পদার্থ পরমাণু নামক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবিভাজ্য কণা দ্বারা গঠিত।” এখানে ‘অবিভাজ্য’ শব্দটির দিকে একটু বিশেষভাবে লক্ষ্য করা উচিৎ। জন ডাল্টনের পরমানুবাদ পদার্থের গঠন ব্যাখ্যা করতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও পরমাণুর অবিভাজ্যতা বিষয়ে তার এ ধারণাটি সঠিক ছিল না।
অবশ্য তখন সঠিক ধারণা দেয়ার কোনো উপায়ও ছিল না। কে জানতো এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরমাণুর অভ্যন্তরে ইলেকট্রন, প্রোটন ইত্যাদি মিলে ভিন্ন এক জগত গড়ে তুলেছে। আর এ অজানা জগতের মাঝেই লুকিয়ে আছে মানবসভ্যতার এক নতুন যুগের চাবিকাঠি? মানুষ অবশ্য ‘ইলেকট্রন’ নামক সেই চাবিকাঠির সন্ধান পেয়েছিল, তবে তার জন্য আরো প্রায় এক শতক অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ইলেকট্রন আবিষ্কারের সেই সফরের গল্পই বলবো আজকের লেখায়।
বলা হয়ে থাকে, ‘প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক’। তো হঠাৎ করে ইলেকট্রন আবিষ্কারের প্রয়োজন হয়ে পড়লো কেন? আসলে সমস্যা সৃষ্টি করছিলো বিদ্যুতের ধারণাটি। বিদ্যুৎ প্রবাহ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা ততদিনে বেশ ভালোভাবেই জানতেন। বিদ্যুৎ প্রয়োগ করে বেশ অসাধারণ কিছু কাজও করেছেন অনেকে। তবে পদার্থের একদম মৌলিক পর্যায়ে বিদ্যুৎ কীভাবে কাজ করে তা স্পষ্ট ছিলো না কারো কাছে। পদার্থের কোন অংশটি বৈদ্যুতিক আদান ধারণ করে? তার আচরণই বা কী রকম? এসব বিষয়ে ভাসা ভাসা অনুমানের ওপর ভর করে বিজ্ঞানীরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন সেটা চিন্তা করাও তো অপরাধ।
তারা বসে থাকেননি। সেই ষোড়শ শতকে উইলিয়াম গিলবার্ট থেকে শুরু করে যতজন বিজ্ঞানী এ নিয়ে কাজ করেছেন সবাই বিদ্যুতের মূল উৎসের সন্ধান করেছেন, যদিও সম্পূর্ণ সফল হননি কেউই। এ আবিষ্কারের যাত্রাপথের শুরুটা হয় হামফ্রে ডেভির করা একটি পরীক্ষার মাধ্যমে। ১৮০৭ সালের দিকে তিনি এ পরীক্ষাটি করেন। আপাতদৃষ্টিতে এটি অবশ্য বেশ সাধারণ গোছেরই ছিল।
তিনি চোখা মাথার দুটি কার্বন রডকে খুব কাছাকাছি বসিয়ে এদের মাঝে উচ্চমাত্রার ভোল্টেজ প্রয়োগ করেন, সাথে সাথে উজ্জ্বল সাদা আলোর ঝলকানি সহ বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গ খেলে যায় দুটি রডের মাঝে। এ পরীক্ষায় বিদ্যুৎ থেকে আলো তৈরির সম্ভাবনা ছাড়াও আরো বোঝা যায় যে, বিদ্যুৎ প্রবাহ শূন্যে ঝাঁপ দিতেও সক্ষম। কিন্তু এ বিদ্যুৎ প্রবাহ কীভাবে সম্ভব? একটি রড থেকে আরেকটি রডে বিদ্যুৎ নিয়ে যাচ্ছেটা কে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এ নিয়ে ডেভি আরো কাজ করতে লাগলেন। কিন্তু একটি ঝামেলা দেখা দেয়, কিছুক্ষণ বিদ্যুতের ঝলকানির পরই কার্বন রডের চোখা মাথাগুলো জারিত হয়ে ক্ষয়ে যেতে শুরু করে।
তিনি বুঝতে পারলেন, এটি ঘটছে বাতাসে উপস্থিত অক্সিজেনের কারণে। এটি প্রতিরোধ করতে, কার্বন রডের চোখা মাথাগুলোকে বায়ুশূন্য স্থানে আবদ্ধ করে রাখার ফন্দি আঁটলেন ডেভি। তিনি একটি গ্লাস টিউবের মধ্যে রডের মাথাগুলো আবদ্ধ করে সেখান থেকে সব বাতাস বের করে নেয়ার চেষ্টা করলেন। বায়ুশূন্য স্থানে বিদ্যুতের কারসাজি দেখার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু রডের ক্ষয়ে যাওয়া আটকাতে পারেননি তিনি। মূল কারণ ছিল তখনকার ভ্যাকুয়াম প্রযুক্তির দুর্বলতা, তিনি টিউবকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বায়ুশূন্য করতে সক্ষম হননি।
ডেভি ব্যর্থ হলেও তার এ পরীক্ষার ধারণাটি অসাধারণ ছিল। সেজন্যই তার পঞ্চাশ বছর পর যখন জার্মানির হাইনরিখ গেইজলার উন্নত ভ্যাকুয়াম টিউব তৈরি করতে সক্ষম হলেন, তখন তিনি ও তার সহকর্মী গবেষক জুলিয়াস প্লাকার মিলে ডেভির পরীক্ষাটি পুনরায় করলেন। তাদের এটি করতে আরো সুবিধা হয়েছিল, কারণ ঠিক একই সময়ে ড্যানিয়েল রুহমকর্ফ নামে একজন জার্মান ইঞ্জিনিয়ার বৈদ্যুতিক আবেশ ব্যবহার করে বেশ উচ্চমাত্রার ভোল্টেজ তৈরি করার কৌশল উদ্ভাবন করেন।
তারা সফলভাবে ভ্যাকুয়াম টিউবের মাঝে বিদ্যুৎ প্রবাহ ও আলো তৈরি করতে সক্ষম হলেন। তবে তারা দেখলেন যে, এই ভ্যাকুয়াম বেশ উচ্চমাত্রার হলে অর্থাৎ বায়ুর পরিমাণ যদি একদম কমিয়ে আনা হয় তবে আলো আর দেখা যায় না। এছাড়া গেইজলার যখন টিউবের মধ্যে বায়ুর পরিবর্তে অন্যান্য গ্যাস প্রবেশ করালেন, আরো মজার একটি জিনিস লক্ষ্য করলেন তিনি। দেখলেন, একেক গ্যাসের জন্য টিউবে একেক রকম আলো সৃষ্টি হয়। হাইড্রোজেন গ্যাস দিলে সাদা আলোর পরিবর্তে লাল আলো দেখা যায়, সোডিয়াম বাষ্পের ফলে তৈরি হয় হলুদ আলো। আজকে আমরা রাস্তায় বা সাইনবোর্ডে নিয়ন আলো দেখি তা এ নীতির ওপর ভিত্তি করেই তৈরি করা।
হয়তো ভাবছেন ইলেকট্রন আবিষ্কারের গল্প বলতে গিয়ে নিয়ন আলোর কথা বলছি কেন? আসলে গেইজলারের এ নিয়ন আলোর পরীক্ষাই বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিদ্যুতের মূল কারণ খুঁজতে নতুন করে আগ্রহের জন্ম দিয়েছিল। বিশেষ করে ব্রিটেন ও জার্মানিতে বেশ কয়েকজন গবেষক এরপর এ নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। তাদের মূল প্রশ্নগুলো ছিল, শূন্যস্থানে দুটি তড়িৎদ্বারের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে কীভাবে? কোনো চার্জিত কণা কি ছুটে যাচ্ছে একটি থেকে অন্যটিতে? নাকি এতে প্রবেশ করানো গ্যাসের আয়নগুলো বিদ্যুৎ প্রবাহিত করছে? অথবা এটি কি তড়িৎচুম্বক তরঙ্গের মতো কোনো তরঙ্গের মাধ্যমে ঘটছে? কিংবা কে জানে হয়তো এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু!
এর মধ্যে একটি প্রশ্নের উত্তর মেলে ১৮৭৮ সালে এসে, যখন প্রযুক্তি আরো উন্নত হলো। ব্রিটিশ পদার্থবিদ উইলিয়াম ক্রুক দেখালেন, উচ্চমাত্রার ভ্যাকুয়ামে যদিও আলো আর দেখা যায় না, তবুও টিউবের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহ চালু থাকে। এ বিদ্যুত প্রবাহের পরিমাণ দেখে বোঝা গেল যে, এটি গ্যাসীয় আয়নের কারণে ঘটা সম্ভব না। ক্রুকের এ আবিষ্কারের ফলে গবেষকদের তালিকা থেকে একটি প্রশ্ন বাদ গেল। জানা গেলো, ভ্যাকুয়াম টিউবে গ্যাসীয় আয়নের ফলে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় না। তবে আসল কারণ কোনটি?
ক্রুক হাইপোথিসিস দিলেন, এ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় একধরনের ক্ষুদ্র, চার্জিত কণার সমন্বয়ে গঠিত রশ্মির মাধ্যমে, যা এক তড়িৎদ্বার থেকে অন্য তড়িৎদ্বারে সরলরেখা বরাবর ছুটে যায়। যে তড়িৎদ্বার থেকে এ কণাগুলোর উৎপত্তি হয় সে তড়িৎদ্বারের নাম দেয়া হয় ক্যাথোড এবং অন্যটির নাম অ্যানোড। আর ক্যাথোড থেকে অ্যানোডে ছুটে যাওয়া এ রশ্নির নাম ‘ক্যাথোড রশ্নি’ দেন তিনি। ক্রুক তার এ হাইপোথিসিস প্রমাণের জন্য বেশ চমৎকার একটি পরীক্ষার ডিজাইন করেন।
একটি টিউবের এক প্রান্তের দেয়ালে তিনি ফসফোরেসেন্ট পদার্থের প্রলেপ দেন, যাতে ক্যাথোড রশ্নি পড়লে তা উজ্বল হয়ে উঠবে। এর সামনে তিনি ক্রস আকৃতির একটি ধাতু স্থাপন করেন। এরপর তিনি যখন টিউবে ভোল্টেজ প্রয়োগ করলেন, দেখা গেল পেছনের দেয়ালটি উজ্বল হয়ে উঠছে কেবল ক্রসের বরাবর জায়গাটিতে ছায়া দেখা যাচ্ছে। এতে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, আসলেই ক্যাথোড থেকে অ্যানোডে কোনো কণা ছুটে যাচ্ছে যা টিউবের দেয়ালকে আলোকিত করছে, আর ক্রসের কারণে কণার প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে ঐ অংশে ছায়া দেখা যাচ্ছে।
এ পরীক্ষাটি বেশ স্পষ্টভাবেই ক্রুকের হাইপোথিসিসকে সমর্থন করে। প্রমাণ করে যে, ক্যাথোড রশ্নি মূলত চার্জিত কণার প্রবাহ। এ সময় ব্রিটিশ গবেষকদের একটা বড় অংশ তার এ তত্ত্ব মেনে নেন। ক্রুক এ নিয়ে আরো কাজ করতে গিয়ে লক্ষ্য করলেন, বাহির থেকে চুম্বকক্ষেত্র প্রয়োগ করলে এ রশ্নির গতিপথ বিচ্যুত হয়। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এ রশ্নিতে তড়িৎক্ষেত্রের কোনো প্রভাব তিনি খুঁজে পাননি। কিন্তু ক্যাথোড রশ্নি যদি চার্জিত কণার প্রবাহই হয়ে থাকে, তবে তো টিউবের বাহিরে থেকে শক্তিশালী তড়িৎক্ষেত্র প্রয়োগ করলে এটিতে প্রভাব পড়ার কথা, এ রশ্নির গতিপথ বিচ্যুত হওয়ার কথা। তা না হওয়ায় তার হাইপোথিসিসটি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে।
এর ফলে অনেকে এ ধারণা পোষণ করতে শুরু করেন যে, এ বিদ্যুৎ আসলে চার্জিত কণার প্রবাহ নয়, বরং বৈদ্যুতিক তরঙ্গ। হাঙ্গেরিয়ান বিজ্ঞানি ফিলিপ লেনার্ডের একটি পরীক্ষা এর পক্ষে শক্ত যুক্তি তুলে ধরে। তিনি প্রমাণ করে দেখান, ক্যাথোড রশ্মি বেশ পাতলা অ্যালুমিনিয়ামের পাত ভেদ (Tunnel) করে এগিয়ে যেতে পারে। লেনার্ডের এ পর্যবেক্ষণ এর তরঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনাকেই সমর্থন করে। এ সময় অধিকাংশ জার্মান বিজ্ঞানীরাও ক্যাথোড রশ্মির তরঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনাকেই সমর্থন করতে শুরু করেন। সময়ের সাথে ক্যাথোড রশ্মি নিয়ে বিতর্ক বাড়তেই থাকে।
আরো অনেক গবেষক এ নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। একের পর এক আরো পরস্পরবিরোধী পর্যবেক্ষণ আসতে শুরু করে। এই তর্ক বিতর্কের আড়ালে বিজ্ঞানের এই মৌলিক নীতির প্রশ্নটি যেন অনেকটা চাপা পড়ে গিয়েছিল। যেন তার চেয়েও বড় হয়ে উঠেছিল ইংরেজ ও জার্মানদের জাতিগত অহংবোধের দ্বৈরথ। একদল বলছেন কণা, আরেকদল তরঙ্গ।
অবশেষে ব্রিটিশ পদার্থবিদ জে. জে থমসন এ বিতর্কের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নেন। থমসন তখন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভেন্ডিশ প্রফেসর, এ পদটি স্বয়ং জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন। আর এ পদের ফলে থমসনকে তখনকার ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের সর্বোচ্চ কর্তা বললেও অত্যুক্তি হবে না। তিনি তাই সকল বিতর্কের অবসান ঘটাতে ক্যাথোড রশ্মি নিয়ে সব ধরনের পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করলেন। বলাই বাহুল্য, তার নিজের অবস্থানের কারণে তিনি সেসময়ের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
প্রথম ধাপের পরীক্ষায় তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হলেন যে, ক্যাথোড রশ্মি ঋণাত্বক আধান ধারণ করে। দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় তিনি বিতর্কের সূত্রপাত করা উইলিয়াম ক্রুকের পরীক্ষাটিকে ভুল প্রমাণ করলেন। তিনি দেখাতে সক্ষম হলেন, তড়িৎক্ষেত্র প্রয়োগ করলে ক্যাথোড রশ্মির দিক বিচ্যুত হয়। আর এ বিচ্যুতির দিকও এর ঋণাত্বক আধান ধারণ করার বিষয়টিকে সমর্থন করে। এরপর তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় তিনি ক্যাথোড রশ্মিতে চুম্বকক্ষেত্রের প্রভাব নিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন।
এ পরীক্ষাগুলো থেকে প্রাপ্ত উপাত্তে ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎচুম্বকতার সূত্র ব্যবহার করে তিনি ঋণাত্বক চার্জ ধারণ করা সেই মৌলিক কণার ভর ও চার্জের অনুপাতও পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অবশেষে ৩০ এপ্রিল,১৮৯৭ সালে থমসন তার গবেষণার ফলাফল পৃথিবীর জন্য উন্মুক্ত করলেন। এ বিষয়ে বক্তৃতা দিতে রয়্যাল ইনস্টিটিউশনে হাজির হন তিনি। হামফ্রে ডেভি, মাইকেল ফ্যারাডের স্মৃতিধন্য সেই ডেস্কে দাঁড়িয়ে তিনি পৃথিবীকে জানান ইলেকট্রনের কথা।
তিনি জানান, ক্যাথোড রশ্মি ঋণাত্বক চার্জ ধারণ করা কণার সমন্বয়ে গঠিত। যে ধরনের পদার্থ কিংবা তড়িৎ উৎসই ব্যবহার করা হোক না কেন এ কণার বৈশিষ্ট্য একই। এ বিষয়টি অসাধারণ না! একবার ভাবুন, উৎস হিসেবে জেনারেটর ব্যবহার করা হোক বা ব্যাটারি, ক্যাথোড হিসেবে কার্বন ব্যবহার করা হোক কিংবা অন্য কোনো ধাতু, এ কণার প্রকৃতি সবসময়ই একই থাকে। তিনি বলেন, এ কণার ভর একটি হাইড্রোজেন আয়নের মাত্র ১৮৩৭ ভাগের ১ ভাগ। তবে এ সর্বশেষ তথ্যটি পদার্থ বিজ্ঞানের জগতে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তোলে।
কারণ তখন পর্যন্ত জানা সবচেয়ে কম ভরের কণা এটি। পরমাণুরও ক্ষুদ্র ভগ্নাংশের সমান এর ভর। তখন পর্যন্ত মনে করা হতো, মহাবিশ্বে পরমাণুই সবচেয়ে ক্ষুদ্র ও অবিভাজ্য কণা। তবে কি পরমাণুর চেয়েও ক্ষুদ্র কিছু হতে পারে? জে. জে থমসন বলেছেন, হ্যাঁ, পারে। তবে একটি ব্যাখ্যা থমসনও দিতে পারেননি। সেটা হলো, ইলেকট্রণ কণা হলে এটি অ্যালুমিনিয়ামের পাতের মধ্য দিয়ে টানেল করে কীভাবে? এটি তো তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য।
এ প্রশ্নের উত্তর জানা গিয়েছিল আরো বিশ বছর পর, যখন ‘ওয়েভ-পার্টিকেল ডুয়্যালিটির’ বিষয়টি জানতে পারেন বিজ্ঞানীরা। যা-ই হোক সে কথা অন্য কখনো হবে, সকল বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে ইলেকট্রনকে খুঁজে বের করায় থমসনের ভূমিকা ছিল অসাধারণ। যার জন্য ১৯০৬ সালে তিনি নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। তার ইলেকট্রন আবিষ্কার স্রেফ পরমাণুবাদকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেনি, এছাড়াও এর ফলে সূচনা হয়েছে এক নতুন দিগন্তের।
বিদ্যুৎ নামক যে নতুন শক্তির সন্ধান পেয়েছিল মানুষ, তার মূল রহস্য উদ্ধার করেছে এ আবিষ্কার। ইলেকট্রন আবিষ্কারের এ সফরের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় ভ্যাকুয়াম ইলেকট্রনিক্সের। মানুষ চেষ্টা শুরু করে ইলেকট্রনকে নিয়ন্ত্রণ করার, আর তা সম্ভব হওয়ার ফলেই আজকের ইলেকট্রনিক যুগ পেয়েছি আমরা।
উদাহরণ দিতে খুব বেশি দূরে যেতে হবে না। এই যে আপনি যে মোবাইল বা কম্পিউটারে এ লেখাটি পড়ছেন, এটি সম্ভব হয়েছে কীভাবে? আসলে আপনার প্রতিটি ক্লিকের সাথে বিলিয়ন বিলিয়ন ইলেকট্রন ছুটে যাচ্ছে জটিল সব সার্কিটের ভেতর দিয়ে। তারা আপনার কম্পিউটারের পর্দায় হাজির করছে আপনি যা চাচ্ছেন তা। আধুনিক প্রযুক্তির অধিকাংশই এ ইলেকট্রনিক যুগের ফসল, যা আমরা উপভোগ করছি প্রতিনিয়ত; আর এর পেছনে আছে থমসন, ক্রুকসহ এমন অনেক বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারদের অবদান।
তথ্যসূত্র
Conquering the Electron by Derek Cheung, Eric Brach, page (106-113)
ফিচার ইমেজ: alphacoders.com