১৯৫৪ সালের ৩১শে জানুয়ারি। নিউইয়র্কে তখন রাত নেমে এসেছে। এডুইন এইচ আর্মস্ট্রং ধীরে সুস্থে উঠে দাঁড়ালেন। ওয়্যারড্রোব থেকে বাছাই করলেন নিজের সেরা স্যুটটি। শান্ত মাথায় তিনি সেটি পরলেন। এরপর ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন জানালার কাছে। জানালার সামনে থেকে সরিয়ে রাখলেন এয়ার কন্ডিশনারটি। এরপর তেরো তলার জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়লেন নিচে। পরেরদিন পাশের তিন তলার ছাদে পাওয়া যায় তার লাশ।
পেশায় একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন তিনি। তার অসাধারণ সব উদ্ভাবনের মধ্যে অন্তত একটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত, সেটি হলো এফ.এম রেডিও। এফ. এম বা ফ্রিকোয়েন্সি মডুলেশন তিনি উদ্ভাবন করেছিলেন ১৯৩৪ সালে। আজ এত বছর পরেও তার এ উদ্ভাবন রেডিওর বাজারের শীর্ষে অবস্থান করছে। এছাড়া পৃথিবীর প্রথম পোর্টেবল রেডিও তৈরি করেছিলেন তিনি। রিজেনারেটিভ সার্কিট, সুপার হেট্রোডাইন রিসিভারের মতো তার অন্যান্য উদ্ভাবনের ফলেই রেডিওর বিকাশ সম্ভব হয়েছিল।
এমন মেধাবী ও সফল একজন ব্যক্তি কেন আত্মহত্যা করলেন? সফলতার সুস্বাদু ফল ভোগ করে যার জীবনের বাকিটা কাটার কথা ছিল, কেন তাকে এমন করুণ পরিণতি ভোগ করতে হলো? প্রশ্নগুলোর উত্তর জানাতে গেলে চোখে পড়বে তৎকালীন বিশাল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর কুটিল ষড়যন্ত্র। নিজেদের স্বার্থে কীভাবে তারা দমিয়ে দিতে চেয়েছিল একজন মেধাবী উদ্ভাবককে, পৃথিবীকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিল তার উন্নত প্রযুক্তির সুবিধা থেকে। এডুইন এইচ আর্মস্ট্রং ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী সেসব বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর গল্প নিয়েই আজকের লেখাটি।
আর্মস্ট্রং জন্মেছিলেন ১৮৯০ সালে, নিউইয়র্কে। একজন ভবিষ্যৎ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের জন্য সময় ও স্থানকে একদম যথাযথ বলা যায়। কারণ সেসময় চারদিকে বিদ্যুৎ ও বিদ্যুৎ সম্পর্কিত প্রযুক্তির জয়জয়কার। তিনি বেড়ে উঠেছেন ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফির জয়রথ দেখতে দেখতে। ভ্যাকুয়াম ডায়োড, ট্রায়োডের আবিষ্কার প্রত্যক্ষ করেছেন। জানতেন ফেসেন্ডেনের তারবিহীনভাবে মানুষের কণ্ঠস্বর পাঠানোর গল্প ও ঐ প্রযুক্তির দুর্বলতার কথাও।
রিজেনারেটিভ সার্কিট ও সুপারহেট্রোডাইন রিসিভার
আর্মস্ট্রং ১৭ বছর বয়সে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। সেখানে পড়ারত অবস্থায় ভ্যাকুয়াম ট্রায়োড নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ট্রায়োড অ্যামপ্লিফায়ার হিসেবে কাজ করতে সক্ষম এটি সবাই জানতেন। ট্রায়োড নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আর্মস্ট্রং আরো অসাধারণ একটি বিষয় আবিষ্কার করেন। তিনি লক্ষ করেন, যদি ট্রায়োডের আউটপুটের একটি অংশকে পুনরায় ইনপুটে দেয়া হয়, তবে এ অ্যামপ্লিফিকেশনের মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায় অর্থাৎ আরো শক্তিশালী আউটপুট পাওয়া যায়।
এভাবে আউটপুটকে পুনরায় ইনপুটে ব্যবহারের প্রক্রিয়াটিকে ফিডব্যাক বলা হয়। আর ফিডব্যাক ব্যবহারের ফলে ঘটে রিজেনারেটিভ অ্যামপ্লিফিকেশন। ট্রায়োডের এ বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে তিনি অসিলেটর তৈরি করেন, যা অত্যন্ত শক্তিশালী ও উচ্চ কম্পাঙ্কের তরঙ্গ উৎপন্ন করতে সক্ষম। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ছাত্র থাকা অবস্থায় তার এ উদ্ভাবনটি ফেসেন্ডেনের রেডিওর সবচেয়ে বড় দুর্বলতাটি দূর করতে সক্ষম হয়।
ফেসেন্ডেনের রেডিওর জন্য উচ্চ কম্পাঙ্কের ক্যারিয়ার ওয়েভ প্রয়োজন হতো। তা উৎপন্ন করার জন্য তিনি অল্টারনেটর নামক একধরনের জেনারেটর ব্যবহার করতেন। অল্টারনেটর একদিকে যেমন ছিল ব্যয়বহুল ও বিশালাকায় অন্য দিকে প্রয়োজনীয় তরঙ্গের চাহিদাও পুরোপুরি মেটাতে সক্ষম ছিল না। আর্মস্ট্রংয়ের উদ্ভাবনের ফলে এ বিশালাকায় যন্ত্রটি একটি ছোটখাটো সার্কিটের মাধ্যমেই প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়। অল্টারনেটরের তুলনায় এর দক্ষতাও ছিল বেশি।
১৯১৪ সালে তিনি এ ডিভাইসের পেটেন্ট করেন। আর এর সূত্র ধরেই রেডিওর বাণিজ্যিক বিকাশ শুরু হয়। এর আগে আবিষ্কৃত ফেসেন্ডেনের রেডিওর বাণিজ্যিক ব্যবহার অসম্ভব ছিল এর উচ্চব্যয় ও প্রযুক্তিগত দুর্বলতার কারণে। আর্মস্ট্রং যখন এ দুর্বলতা দূর করলেন, তখন বিশাল বিশাল প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব রেডিও তৈরি করতে শুরু করে।
শুধু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোই নয়, এসময় শখের বসে ইলেকট্রনিক্স নিয়ে কাজ করা অনেকেও অসিলেটর ব্যবহার করে নিজেদের রেডিও ডিজাইন করতে শুরু করে। এসব রেডিওগুলো ‘হ্যাম রেডিও’ নামে পরিচিত ছিল। প্রায়ই বিভিন্ন বাড়ির ছাদে চোখে পড়ত হ্যাম রেডিওর এন্টেনা। উৎসাহী লোকজন নিজেদের বন্ধুবান্ধবদের মাঝে রেডিওতে আলাপ চালাতে শুরু করেন। এর ফলে রেডিও পরিচালনা করতে দক্ষ অনেক ব্যক্তি তৈরি হয়। এসকল শখের রেডিও অপারেটররা পরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বেশ কাজে আসেন।
যুদ্ধের সময় আর্মস্ট্রংও যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি মিত্রবাহিনীর প্রযুক্তিবিদদের সাথে কাজ করতে শুরু করেন। তার পরিকল্পনা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী একটি রিসিভার তৈরি করা যাতে বিমানের ইঞ্জিন থেকে নির্গত হওয়া দুর্বল তরঙ্গগুলো চিহ্নিত করা যায়। এটি করতে পারলে ধেয়ে আসা বিমানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হতো। যদিও তার সে প্রকল্প সফল হয়নি কিন্তু এ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি আরেকটি অসাধারণ উদ্ভাবন করেন। সুপারহেট্রোডাইন রিসিভার নামে চমৎকার একটি ডিভাইস তৈরি করেন। তার উদ্ভাবিত এ ডিভাইসটি রিসিভার হিসেবে আজও বহুল ব্যবহৃত।
আর্মস্ট্রং বনাম লী ডি ফরেস্ট
লী ডি ফরেস্ট ভ্যাকুয়াম ট্রায়োডের উদ্ভাবক। আর্মস্ট্রং তার ট্রায়োড ব্যবহার করেই রিজেনারেটিভ সার্কিট তৈরি করেছিলেন। ফরেস্ট যখন তার ডিভাইসটি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন, তখন তিনি এর রিজেনারেটিভ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কিছু বলেননি। যা প্রমাণ করে এ বিষয়ে তিনি কিছু জানতেন না। আর্মস্ট্রংই প্রথম ট্রায়োড দিয়ে তৈরি রিজেনারেটিভ সার্কিট সবার সামনে তুলে ধরেন।
কিন্তু এরপরে ডি ফরেস্ট হঠাৎ করে বলতে শুরু করেন এটি তিনি আগেই লক্ষ্য করেছিলেন, এ কৃতিত্ব তার ইত্যাদি। এর কাছাকাছি একটি পেটেন্টেরও আবেদন করেন তিনি। ১৯২০ সালের দিকে রেডিও ইন্ডাস্ট্রি যখন পূর্ণমাত্রায় বিকশিত হতে শুরু করে তখন ফরেস্ট আর্মস্ট্রঙের নামে মামলা ঠুকে দেন পেটেন্ট লঙ্ঘনের দায়ে। ব্যবসায়িক বিষয়ে অসততা ফরেস্টেরর এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার অসততার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি।
ফরেস্ট বনাম আর্মস্ট্রং এর এ মামলা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঘুরতে থাকে কোর্টে। অবশেষে ১৯৩৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ফরেস্ট জয়ী হন। তিনি কোর্টে জয়ী হলেও, প্রযুক্তিবিদদের প্রায় সকলেই আর্মস্ট্রংয়ের পাশে ছিলেন। এমনকি ১৯৩৪ সালে, যে বছর তিনি মামলায় হারেন সে বছরেই তিনি এডিসন মেডেল লাভ করেন। তিনি মূলত মামলায় হেরে গিয়েছিলেন, ‘এ টি এন্ড টি’ কোম্পানির অর্থ ও ক্ষমতার কাছে। লী ডি ফরেস্ট ‘এ টি এন্ড টি’র কাছে তার পেটেন্ট বিক্রি করেছিলেন বলেই তারা লেগেছিল আর্মস্ট্রংয়ের পেছনে।
তবে এ মামলায় হেরে গেলেও আর্মস্ট্রংয়ের রিজেনারেটিভ সার্কিটের পেটেন্ট বহাল ছিল। ‘আর সি এ’, ওয়েশিংটনহাউস সহ বিখ্যাত কোম্পানিগুলো থেকে বেশ উচ্চ রয়্যালিটি পেতেন তিনি। প্রযুক্তিবিদদের সাথে পাওয়ায় তার উদ্যমী স্পৃহাও কিছু মাত্রায় কমেনি। এ বছরেই তিনি তার সেরা উদ্ভাবনটি করেন- ফ্রিকুয়েন্সি মডুলেশন বা এফ এম রেডিও। তার এ শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবনটিই তার জীবনে এক করুণ অধ্যায়ের সূচনা করে।
এফ এম রেডিওর জন্ম
ইতোপূর্বে রেডিও সম্প্রচারের জন্য এমপ্লিচুড মডুলেশন (এ.এম) পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো। মডুলেশন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে নিম্ন কম্পাঙ্কের সিগন্যালকে (অডিও) একটি উচ্চ কম্পাঙ্কের ক্যারিয়ার সিগন্যালের সাথে যুক্ত করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় সাধারণত ক্যারিয়ার ওয়েভের একটি বৈশিষ্ট্য (এমপ্লিচুড, কম্পাঙ্ক, ফেজ) পরিবর্তন করা হয় অডিও সিগন্যাল অনুসারে। এ.এম এর ক্ষেত্রে অডিও সিগন্যাল অনুসারে ক্যারিয়ার সিগন্যালের এমপ্লিচুড পরিবর্তন করা হতো। আর ফ্রিকুয়েন্সি মডুলেশনের ক্ষেত্রে পরিবর্তন করা হয় ক্যারিয়ার সিগন্যালের ফ্রিকুয়েন্সি বা কম্পাঙ্ক।
ক্যারিয়ার ওয়েভের ফ্রিকুয়েন্সি পরিবর্তনের এ প্রক্রিয়াই উদ্ভাবন করেন এডুইন এইচ আর্মস্ট্রং। এফ.এম যেকোনো দিক থেকে আগের পদ্ধতিকে ছাড়িয়ে যাবে এ বিষয়ে তিনি সম্পূর্ণ নিশ্চিত ছিলেন, কারণ এফ.এম সিগন্যাল আবহাওয়া বা অন্যান্য ‘নয়েজ’ দ্বারা তেমন একটা প্রভাবিত হতো না, যা এ.এম এর ক্ষেত্রে হতো। এটি উদ্ভাবনের পর আর্মস্ট্রং প্রথমে রেডিও কর্পোরেশন অব আমেরিকাকে (আর.সি.এ) প্রস্তাব দেন তার পেটেন্ট ক্রয়ের জন্য।
রেডিও ব্যবসা তখন তার জনপ্রিয়তার শীর্ষে বলা যায়। আর বলাই বাহুল্য যে এসবই ছিল এ.এম রেডিও। আর.সি.এ ছিল রেডিও জগতের সবচেয়ে বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। আর.সি.এ’র প্রধান কর্তা ডেভিড সারনফ এফ.এম রেডিওর সুবিধা বুঝতে পারলেও এতে তেমন একটা আগ্রহ দেখাননি। তিনি বুঝতে পারেছিলেন এটি শুরু করলে তার তখনকার প্রতিষ্ঠিত এ.এম রেডিওর বাজারে ধ্বস নামতে পারে। তবে তিনি আর্মস্ট্রংকে সম্পূর্ণ মানাও করে দেননি। এদিকে সারনফের জবাবের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আর্মস্ট্রং বিরক্ত হয়ে উঠলেন। এক পর্যায়ে বিশাল একটা সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেললেন তিনি।
তিনি নিজেই নতুন একটি এফ.এম রেডিওর কোম্পানি শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। নিজের প্রায় সমস্ত পুঁজি ঢেলে দেন নতুন একটি এফ.এম ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে। আর্মস্ট্রং নিশ্চিতভাবেই জানতেন যে ‘এ.এম-এফ.এম’ দ্বন্দ্বের শিকার হবেন তিনি, অনেকটা এ.সি-ডি.সি কারেন্টের সেই দ্বন্দ্বের মতো। কিন্তু এফ.এম রেডিওর প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার প্রতি বিশ্বাস ছিল তার। উন্নত প্রযুক্তির বলে এ দ্বন্দ্বে তিনিই জিতবেন ভেবেছিলেন। সে বিশ্বাসেই তিনি তার সব সম্পদ ঢেলে দিয়ে এফ.এম রেডিও তৈরি করতে শুরু করেন।
কিন্তু ধুরন্ধর সারনফকে তিনি চিনতে পারেননি। সারনফ বুঝতে পেরেছিলেন আর্মস্ট্রঙের সাথে প্রযুক্তিগত দ্বন্দ্বে তিনি পেরে উঠবেন না। তাই তিনি অন্য পথ ধরলেন। তিনি নিরবে তার কোম্পানিতে এফ.এম প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে শুরু করেন, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশনে (এফ.সি.সি) লবিং চালিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিকেশন খাতের সব কিছুর নীতি নির্ধারক ছিল এফ.সি.সি। প্রযুক্তিগত বিষয় যেমন রেডিও কম্পাঙ্কের সীমা ও লাইসেন্সিং এসব বিষয়ও তারা নিয়ন্ত্রণ করতো।
১৯৪৫ সালের ২৭শে জুন, সারনফ তার রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে এফ.সি.সি থেকে নতুন একটি আইন পাশ করান। এফ.এম এর জন্য আগে যে কম্পাঙ্কের সীমা ঠিক করে রাখা হয়েছিল তা পরিবর্তন করে তারা একে আরো উচ্চ কম্পাঙ্কের সীমায় নিয়ে যায়, যেটি আমরা এখন ব্যবহার করি (৮৮-১০৮ মেগাহার্জ) এতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে তেমন বড় হেরফের হয়নি, কিন্তু আর্মস্ট্রঙের জন্য এটি ছিল মরণকামড়। আর্মস্ট্রং তার সকল রেডিও ও সিস্টেম তৈরি করেছিলেন এফ.সি.সি’র আগের কম্পাঙ্কের সীমা অনুসারে। নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে তার সকল রেডিও অকেজো হয়ে পড়ে।
বুঝতেই পারছেন আর.সি.এ গোপনে এফ.এম রেডিও তৈরির যে প্রকল্প শুরু করেছিল, সেগুলো তারা এ নতুন কম্পাঙ্কের সীমার জন্যেই তৈরি করেছিল। আর্মস্ট্রং এবার আর.সি.এ’র বিরুদ্ধে কোর্টে হাজির হলেন। এটি যে হবে সারনফ আগে থেকেই জানতেন। তার প্যাটেন্ট আইনজীবীর বাহিনী হাজির হলো আর্মস্ট্রংকে হেনস্থা করতে। মামলাটিকে তারা দীর্ঘায়িত করতে থাকে। আর আর্মস্ট্রং খোয়াতে থাকেন তার অবশিষ্ট সম্পদটুকুও। দীর্ঘদিনের আইনি লড়াই, আর্থিক সংকটের ফলে আর্মস্ট্রং প্রচণ্ড হতাশ হয়ে পড়েন। তার মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে, ঝামেলা শুরু হয় তার পরিবারেও।
এক পর্যায়ে আর নিতে না পেরেই তিনি নিজেকে মুক্তি দেন এ জীবন থেকে। তার মৃত্যুর পরও তার বিধবা স্ত্রী আইনি লড়াই চালিয়ে যান। তিনি প্রায় বিশটিরও বেশি প্যাটেন্ট লঙ্ঘনের মামলা করেন বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে। প্রায় সবগুলোই জিতেন তিনি। এমনকি জিতেছিলেন আর.সি.এ’র বিরুদ্ধেও। তিনি প্রায় দশ মিলিয়ন ডলার পরিমাণ ক্ষতিপূরণও পেয়েছিলেন। তার চেয়েও বড় কথা, এখন আমরা দেখি এফ.এম রেডিও সত্যিই এ.এম রেডিওকে ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এডুইন এইচ আর্মস্ট্রং তা দেখে যেতে পারেননি।
তথ্যসূত্র
Conquering the Electron by Derek Cheung, Eric Brach, page (130-140)
ফিচার ইমেজ– hackaday.com