বৈশ্বিক মহামারির ফলে পৃথিবীজুড়ে অনেকগুলো ইন্ডাস্ট্রি বেশ আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে। হলিউডও তার ব্যতিক্রম নয়। মার্চ মাস থেকেই নির্মাণাধীন চলচ্চিত্রগুলোর শ্যুটিং আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এর ফলে, চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা অনেক কর্মীই বেকার হয়ে পড়েছে। গত আগস্ট মাসে কিছু কিছু জায়গায় প্রোডাকশনের অনুমতি দেওয়া হলেও বেশিরভাগ প্রযোজকই নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে শ্যুটিং বন্ধ রেখেছেন। তাই সিনেমা ও টিভি শো’গুলোর প্রোডাকশন কবে আবার তাদের পূর্ণ সামর্থ্যে ফিরে যাবে তা এখনো অনিশ্চিত।
এ রকম ক্রান্তিকালীন সময়ে প্রোডাকশন যদি চালিয়ে যেতেই হয়, তাহলে ভার্চুয়াল পদ্ধতি ছাড়া উপায় নেই। সেক্ষেত্রে ভিডিও গেমে ব্যবহৃত প্রযুক্তির বেশ সম্ভাবনা রয়েছে। এটি হয়তো হলিউডকে আবার নিজের পূর্ণ সামর্থ্যে ফেরত নিয়ে যেতে পারবে। মহামারির আগেই অবশ্য বেশ কিছু সিনেমাতে এরকম ভার্চুয়াল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দ্যা জাঙ্গল বুক (২০১৬) ও দ্যা লায়ন কিং (২০১৯)। সে সময়েই অনেকে এই প্রযুক্তির সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরেছিল।
স্টার ওয়ার্সের টিভি শো ‘দ্যা ম্যান্ডালরিয়্যান’ ও ডিজনির লায়ন কিং রিমেকে ভার্চুয়াল প্রোডাকশন একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। এর ফলে, শ্যুটিংয়ের সময় সেটে কর্মীদের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল। এরকম সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল প্রোডাকশন হলিউডে আসতে হয়তো কিছুটা দেরি হতো, কিন্তু মহামারির প্রভাবে সবাই বিকল্প হিসেবে এরকম প্রোডাকশনের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছে। এর ফলে বর্তমান সময়ে প্রযুক্তিটি খুব দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। অনেকেই একমত পোষণ করছেন যে, ভবিষ্যতে সিনেমা নির্মাণে এটাই মূলধারার পদ্ধতি হয়ে উঠবে। তিনবারের অস্কারজয়ী ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস সুপারভাইজর রবার্ট লিগ্যাটো বলেছেন,
আমার মনে হয় নিকট ভবিষ্যতে এটাই সিনেমা নির্মাণের একটি আদর্শ পদ্ধতি হয়ে উঠবে।
ভার্চুয়াল প্রোডাকশন অনেকটা লাইভ-অ্যাকশন চিত্রধারণের মতো। অনেকগুলো টুলের সমন্বিত ব্যবহার নির্মাতাদেরকে সিনেম্যাটোগ্রাফি, সেট ও লোকেশন স্কাউটের মতো কাজগুলো সহজ করে দেয়। পরিচালক ভিআর হেডসেটের মাধ্যমে শ্যুটিংয়ের আগেই সিনেমার জগৎটি নির্মাণের পরে কেমন হবে সে ব্যাপারে একটি ধারণা পেয়ে যান। দ্যা লায়ন কিংয়ের পরিচালক জন ফ্যাভ্রো বলেছেন,
আমাদের সেটগুলো ভার্চুয়ালি তৈরি করে তা ভিআরে আপলোড করা হয়। এরপরে, এই ভিআরের মধ্যে আমরা তা স্কাউট করতে পারি। এভাবে লাইভ অ্যাকশন শ্যুটের মতো আমরা লোকেশন সম্পর্কে ধারণা পাই এবং ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল ও লেন্স নির্বাচন করে শ্যুটিং শুরু করি, মনে হয় যেন আমরা সত্যিকারের সিংহের সামনে রয়েছি।
এরকম মহামারির সময়ে সিনেমা নির্মাণের সমস্যাটি সমাধান করা অবশ্য ভার্চুয়াল প্রোডাকশনের মূল লক্ষ্য নয়। কম্পিউটার গ্রাফিক্সের বিভিন্ন টুল ব্যবহার করে সিনেমার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি কীভাবে সহজ করে দেওয়া যায়, এরকম একটি ধারণাকে সামনে রেখেই এই প্রযুক্তি অগ্রসর হচ্ছে। প্রোডাকশনের বিভিন্ন ধাপ যেমন প্রিভিজ্যুয়ালাইজেশন, স্টোরিবোর্ড তৈরি এমনকি সত্যিকার সেটেও এর ব্যবহার রয়েছে। ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস বা কম্পিউটারে তৈরি দৃশ্যগুলো কীভাবে শ্যুট করা হবে সে ব্যাপারে অবশ্য অনেক আগে থেকেই এটি সাহায্য করে আসছে। সিনেমা নির্মাণের সময়ে সেটের মধ্যে যে সৃজনশীল সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয় সে ব্যাপারে ভার্চুয়াল পদ্ধতি একটি বড় সহায়ক হয়ে উঠছে। এরকমই একটি উদাহরণ ছিল দ্যা ম্যান্ডালরিয়্যান টিভি সিরিজ। বিশালাকারের সেট নির্মাণ বা বিভিন্ন লোকেশনে শ্যুট করা ছাড়াই এমন অনেক দৃশ্য তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল যেটা দেখে মনে হবে, এর পেছনে বিশালাকারের কোনো প্রোডাকশন রয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ শ্যুটিংই হয়েছে একটি সাউন্ডস্টেজে।
প্রোডাকশনের আগেই, পরিকল্পনার সময়ে নির্মাতারা একত্রে ভার্চুয়াল সেটে কাজ করে বিভিন্ন ধরনের চিত্রগ্রহণ, লাইটিং সেটআপ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারে। এভাবে স্যান্ডবক্সের মতো পরিবেশ তৈরি হয়ে যায় যেখানে প্রোডাকশনের আগেই সবকিছু ভার্চুয়ালি একবার টেস্ট করে নেওয়া সম্ভব হয়। প্রোডাকশনের সময়ে এরকম টেস্ট করাটা অনেক ব্যয়বহুল হয়ে উঠে, তাই সবাই এভাবে পরীক্ষা করতে পারে না। ভিআরের মধ্যে এভাবে সিনেমার একটি ভার্চুয়াল সংস্করণ তৈরি হয়। শ্যুটিংয়ে যাওয়ার আগেই তখন সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি নিয়ে বেশ ভালো ধারণা তৈরি হয়। এভাবে কাজ করার সুবিধা হচ্ছে, কোনো আইডিয়া যদি কাজ না করে তা সাথে সাথেই বুঝা যায় এবং নতুন এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে তা পরিবর্তন করা যায়।
সিনেমা নির্মাণের আগেই তার এরকম একটি ভার্চুয়াল সংস্করণ তৈরির ব্যাপারটি সম্পূর্ণ নতুন। এর মাধ্যমে, সেটে যাওয়ার আগেই পরিচালক কীভাবে কাজ করতে চান সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারবেন। কারণ, তার পছন্দের সবগুলো আইডিয়াই তিনি ইতোমধ্যে পরীক্ষা করে ফেলেছেন। ফলে সেটে খুব কম সময় ব্যয় হয়, সৃজনশীল দিক থেকে যা খুবই কার্যকর এবং অর্থও খরচ হয় তুলনামূলক কম।
এই প্রক্রিয়াটি সম্ভব হয়েছে রিয়েল টাইম গেম ইঞ্জিন প্রযুক্তির ফলে। এপিক গেমস ও ইউনিটি টেকনোলজির মতো কোম্পানি এই গেম ইঞ্জিনগুলো তৈরি করে। এপিক গেমস আবার ফোর্টনাইটের মতো অনেকগুলো বিখ্যাত গেমও মুক্তি দিয়েছে। অন্যদিকে, তাদের আনরিয়েল গেম ইঞ্জিন বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহৃত হয়। সহজ ভাষায় বললে, গেম ইঞ্জিন একটি সফটওয়্যার যা প্রধানত ভিডিও গেম নির্মাণের সময় প্রয়োজনীয় অনেকগুলো টুলের সমষ্টি। গেমের ভেতরের দুনিয়াটি তৈরি করে তাতে বাস্তব পৃথিবীর মতো পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মগুলো প্রতিষ্ঠা করার কাজটি অনেক সহজ করে দেয়। আবার, লাইটিং ফিচার দিয়ে বিভিন্নরকম পরীক্ষা নিরীক্ষাও করা যায়। এভাবে, সত্যিকারের পৃথিবীর মতো পরিবেশ তৈরি করার সবগুলো উপাদান এখানে একত্রিত করা হয়েছে। তাই গেম নির্মাণের এই প্রযুক্তি সিনেমার ক্ষেত্রেও বেশ প্রাসঙ্গিক। এরকম গেম ইঞ্জিন এখন সিনেমা নির্মাণে ব্যবহার করার জন্যে উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। এপিক গেমসের একজন প্রতিনিধির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের পর থেকে ১২০টির বেশি ফিল্মে তাদের আনরিয়েল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে।
নির্মাতাদের চাহিদা মেটানোর জন্যে ইঞ্জিনগুলো খুব দ্রুত হালনাগাদ করা হচ্ছে। আনরিয়েল ইঞ্জিনে এখন ফটোরিয়েলিস্টিক গ্রাফিক্স তৈরি করা যায়। নির্মাতাদের পছন্দ অনুযায়ী একটি দৃশ্যে সবধরনের কাজও করা যাচ্ছে। তাই শ্যুটের আগেই সিনেমাটি দেখতে কেমন হবে সে ব্যাপারে একটি ভালো ধারণা পাওয়া যায়। কয়েকটি প্রজেক্টে এলইডি দেয়াল ও প্রজেক্টরে রিয়েল-টাইম রেন্ডারিং যুক্ত করে ভার্চুয়াল সেট তৈরি করা হয়েছে যেখানে আগে গ্রিন স্ক্রিন ব্যবহার করা হতো।
গ্রিন স্ক্রিন ব্যবহার করলে পোস্ট-প্রোডাকশনে তা অপসারণ করে সিজিআই যুক্ত করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। তাই নির্মাতাকে বড় সময় অপেক্ষা করতে হয়, তার কল্পনাটি ঠিক কতটুকু ফুটে উঠেছে তা বুঝার জন্যে। ভার্চুয়াল প্রোডাকশনে পরিচালক নির্মাণের পূর্বেই সেই কাল্পনিক পৃথিবীটি দেখতে পাচ্ছেন। এই ব্যাপারটি একটি বড় ধরনের সৃজনশীল স্বাধীনতা দেয়। এলইডির খরচ সময়ের সাথে সাথে কমে যাচ্ছে। তাই ভার্চুয়াল সেট নির্মাণে পর্যাপ্ত রেজ্যুলেশনের দেয়াল ব্যবহার খুব বেশি ব্যয়বহুল নয়। ভার্চুয়াল সেট মূলত এলইডি দিয়ে নির্মিত একটি ত্রিমাত্রিক পরিবেশ যেখানে এলইডিগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন দৃশ্য দেখানো হয়।
এলইডি প্রযুক্তি এখন এতই উন্নত হয়েছে যে ক্যামেরায় ধারণ করা দৃশ্যে বুঝাই যায় না যে পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ডটি আসলে এলইডি স্ক্রিন। বিশালাকারের সেট নির্মাণ বা কোনো লোকেশনে যাওয়া ছাড়াই ব্যাকগ্রাউন্ডে সেখানকার পরিবেশ তৈরির এটি একটি চমৎকার উপায়। এই প্রযুক্তির প্রথমদিকের সংস্করণ অবলিভিয়ন (২০১৩) ও সলো: অ্যা স্টার ওয়ার্স স্টোরি সিনেমায় (২০১৮) ব্যবহার করা হয়েছিল।
গাড়ির দৃশ্য শ্যুট করার জন্যেও এরকম এলইডি প্যানেল ব্যবহার করা হয়। মার্টিন স্করসেজির গত বছরের সিনেমা আইরিশম্যান এরকম একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ। শ্যুটিংয়ের সময়ে, সাউন্ডস্টেজে গাড়ি রেখে তার চারপাশে এলইডি প্যানেল সাজানো হয়েছিল। এই প্যানেলগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্নরকম দৃশ্য প্লে করে শ্যুট করা হয়েছিল। এভাবে ডিজিটাল এনভায়রনমেন্ট ও সত্যিকার সেটের সম্মেলন অভিনেতাকে দৃশ্যের মধ্যে নিমজ্জিত হতে আর ক্রুদেরকে ফটোরিয়েলিস্টিক দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করতে সাহায্য করে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপারটি হচ্ছে, এলইডি স্ক্রিনের পরিবেশটি ক্যামেরার মোশনের সাথে বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়।
ডিজনির টিভি সিরিজ দ্যা ম্যান্ডালরিয়্যানে এই প্রযুক্তির সর্বশেষ সংস্করণটি ব্যবহৃত হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি সাউন্ডস্টেজে ভার্চুয়াল সেট বানিয়ে সেখানে আনরিয়েল ইঞ্জিনে তৈরি করা এনভায়রনমেন্টে শ্যুট করতে পেরেছে।
সূর্যাস্তের সময়ের জাদুকরী পরিবেশটি মাত্র ১০-১৫ মিনিট স্থায়ী হয়। কিন্তু এরকম কোনো স্টেজে এটা ২৮ ঘণ্টা, ৪৮ ঘণ্টা, আমি যতক্ষণ চাইব ততক্ষণই স্থায়ী হবে।
এরকম ভার্চুয়াল পরিবেশে দাঁড়িয়ে যে কেউ বোকা বনে যেতে পারে যে, এমনকি সেটটি তৈরিতে যদি সে কাজ করেও থাকে। ম্যান্ড্যালরিয়্যানের অর্ধেকেরও বেশি দৃশ্য এরকম ভার্চুয়াল সেটে শ্যুট করা হয়েছিল। সিরিজটির নির্মাতা জন ফ্যাভ্রো তার আগের দুইটি ছবি দ্যা লায়ন কিংয়ের রিমেক ও দ্যা জাঙ্গল বুকেও ভার্চুয়াল প্রোডাকশন প্রযুক্তির সাথে কাজ করেছিলেন। তিনি তার অভিজ্ঞতা এভাবে বর্ণনা করেছেন, এটা যেন সম্পূর্ণ কল্পনাটি চোখের সামনে দেখতে পাওয়া।
এলইডি সেট ক্রুদেরকে অনেক দ্রুত কাজ করতে সাহায্য করে। অনেক সময়েই কোনো সেট হয়তো শুধুমাত্র একদিনের শ্যুটের জন্যে দরকার হয় কিন্তু তা নির্মাণ করতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় প্রয়োজন হয়। এভাবে সময় এবং অর্থ উভয়ই খরচ হয়। ভার্চুয়াল সেটে একইরকম কাজ অনেক দ্রুত করা যায়। রবার্ট লিগ্যাটোর মতে,
বাধ্য করার মতো কোনো কারণ ছাড়া আমি আবার কেন পুরনো পদ্ধতিতে ফেরত যাব?
এখন পর্যন্ত ভার্চুয়াল প্রোডাকশনের ব্যাপারটি তুলনামূলক নতুন কিন্তু এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। প্ল্যানেট অব দ্যা এইপসের নতুন ছবি, অ্যামাজনের লর্ড অব দ্যা রিংস টিভিসিরিজ, অ্যাভাটারের সিক্যুয়েল এইসবগুলো প্রজেক্টেই প্রযুক্তিটি আরো ব্যবহৃত হবে এবং আরো পরিণত হবে।
মহামারির ফলে প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে সবাই ভার্চুয়াল প্রোডাকশনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সিনেমা নির্মাণ করতে হলে এর বিকল্প নেই। ভার্চুয়াল প্রোডাকশনের ফলেই কিছু কিছু সিনেমা এখনই কাজ শুরু করতে পেরেছে। এক্ষেত্রে, ভিডিও গেম নির্মাতারা চলচ্চিত্র নির্মাতাদেরকে সাহায্য করছেন। তারা এই প্রযুক্তি ব্যবহারে তুলনামূলক বেশি অভ্যস্ত। এভাবে, প্রিভিজ্যুয়ালাইজেশন তৈরি করে বাসায় বসেই সবধরনের সৃজনশীল সিদ্ধান্ত ঠিকঠাক করে দ্রুত শ্যুট করে ফেলা হচ্ছে। ফলে, রিস্ক কমে যাচ্ছে এবং দ্রুত ফিডব্যাকও পাওয়া যাচ্ছে।
লোকেশন স্কাউটিংয়ের ব্যাপারটিও ভার্চুয়াল উপায়ে করা হচ্ছে এখন। ছোট টিম বা স্থানীয় কোনো গ্রুপকে দায়িত্ব দেওয়া হয় লোকেশনের ছবি তুলে পাঠানোর জন্যে। ছবিগুলোর উপর নির্ভর করে সেই পরিবেশটি গেম ইঞ্জিনে ভার্চুয়ালভাবে তৈরি করা হয়। এই পরিবেশটি ভিআরে আপলোড করে নির্মাতাদের কাছে পাঠানো হয়। এভাবে তারা লোকেশন সম্পর্কে ভালো ধারণা পেয়ে যান। এই উপায়ে যাতায়াত থেকে শুরু করে হোটেল খরচ এবং বিশাল পরিমাণ অর্থ বেঁচে যাচ্ছে। মহামারির পরের সময়ে এই পদ্ধতিতে শ্যুট করাই হয়তো স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। কারণ শ্যুটিংয়ের সময়ে সম্পূর্ণ টিমের একস্থান থেকে আরেকস্থানে যাওয়া এবং থাকা মিলিয়ে বেশ ব্যয়বহুল হয়ে উঠে। অন্যদিকে, ব্যাপারটি প্রোডাকশনকে ধীর করে ফেলে।
ভবিষ্যতে, আফ্রিকার কোনো একটি সুন্দর দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার জন্যে আর সেখানে যেতে হবে না। এরকম পরিবেশ কম্পিউটারে তৈরি করে লাইভ-অ্যাকশন স্টেজে শ্যুট করা হবে। তখন হয়তো সবগুলো স্টুডিওরই একটি-দুইটি ভার্চুয়াল স্টেজ থাকবে। জুরাসিক পার্ক সিনেমাতে সিজিআই ডায়নোসর যেমন হলিউডে একটি নতুনত্ব তৈরি করেছিল, পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে যার বিশাল প্রভাব পড়েছিল, ম্যান্ডালরিয়্যানের পর থেকে সেরকম নতুন একটি বিপ্লব দেখা দিয়েছে যা এখনো মাত্র শুরুর ধাপে রয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যে সিনেমা তৈরির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াই এর মাধ্যমে পাল্টে যাবে।