ফিটনেস ট্রাকার এবং স্মার্ট ওয়াচ এখন আমাদের জীবনের একটি অংশ। প্রতিদিনের কাজগুলোর প্রতি নজর রাখতে কিংবা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয়গুলো দেখভাল করার জন্য হাতে পরিধানযোগ্য গ্যাজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দৈনন্দিন ওয়ার্ক আউট, সাঁতার কিংবা খেলাধুলার মাধ্যমে ক্যালোরি ক্ষয় করা, হার্টরেট নির্ণয় এবং সার্বক্ষণিক নজর রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর জন্য এখন এই ধরনের স্মার্ট গ্যাজেটের জুড়ি মেলা ভার।
আইডিসি ওয়ার্যাবল রিপোর্টের সাম্প্রতিক তথ্যমতে, স্মার্ট গ্যাজেট বিক্রিতে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে মূলত পাঁচটি কোম্পানি। এগুলো হচ্ছে অ্যাপল, শাওমি, ফিটবিট, হুয়াওয়ে, এবং স্যামসাং। এগুলোর মধ্যে প্রায় ২৭ শতাংশ বাজার দখল করে মোটামুটি একচ্ছত্রভাবে এগিয়ে আছে অ্যাপল। ঠিক এর পরের অবস্থানে আছে শাওমি, প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৩.৫ শতাংশ বাজার নিজেদের দখলে রেখেছে। পরের অবস্থানে রয়েছে ফিটবিট, হুয়াওয়ে এবং স্যামসাং।
স্মার্ট ওয়াচের তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্মার্ট ব্যান্ডের চাহিদা অনেক বেশি। স্মার্ট ওয়াচের থেকে অপেক্ষাকৃত সুলভ দামে স্মার্ট ব্যান্ড এবং ফিটনেস ট্র্যাকারগুলো কিনতে পাওয়া যায় বলে আজকাল অনেকেরই পছন্দের তালিকায় এগুলো রয়েছে। ব্যবহারকারীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং অ্যামাজন বেস্টসেলিং কয়েকটি স্মার্ট ব্যান্ড এবং ফিটনেস ট্র্যাকার নিয়ে আজকের লেখাটি সাজানো হয়েছে।
ফিটবিট চার্জ ৩
হাতে পরিধানযোগ্য গ্যাজেটের দুনিয়ায় ফিটবিট নামটি সবসময় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কেননা, ফিটবিট এক্ষেত্রে পথিকৃৎ, প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সালেের দিকে প্রথমে হাতে পরিধানযোগ্য ফিটনেস ট্র্যাকার বাজারে নিয়ে আসে। প্রথমসারির ফিটনেট গ্যাজেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ফিটনেস ট্র্যাকার রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ফিটবিট ভারসা, ফিটবিট ইন্সপায়ার, ফিটবিট চার্জ ২ এবং ফিটবিট চার্জ ৩ অন্যতম।
সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম সেরা ফিটনেস ট্র্যাকারটি হচ্ছে ফিটবিট চার্জ ৩। এই স্মার্ট ট্র্যাকারটিতে আগের সংস্করণের থেকে বেশ কয়েকটি নতুন ফিচার সংযুক্ত করা কয়েছে। ফিটবিট ২ থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ বড় পর্দা নিয়ে ফিটবিট ৩ বাজারে এসেছে। গ্যাজেটটির অন্যতম ফিচার হচ্ছে এটি সবসময়েই নির্ভুলভাবে হার্টরেট নির্ণয় এবং পর্যবেক্ষণ করতে পারে। ফিটবিট চার্জ ৩ ট্র্যাকারটি ৫০ মিটার পর্যন্ত পানিরোধী। এছাড়া গ্যাজেটটি প্রায় নির্ভুলভাবে ব্যবহারকারীর সব ধরনের এক্সারসাইজ (যেমন- দৌড়ানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি) স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ণয় করতে পারে। একবার পরিপূর্ণ চার্জে ট্র্যাকারটির ৭ দিনের মতো ব্যাটারি ব্যাকআপ রয়েছে।
ফিটবিট চার্জ ২ থেকে নতুন ট্র্যাকারটি বেশ কয়েকটি দিক থেকে এগিয়ে আছে। এই ফিটনেস ট্র্যাকারে পানিরোধী নকশা, সাঁতারের ক্ষেত্রে নতুন মোড, অপেক্ষাকৃত বড় পর্দা, ডিপ স্লিপ মোডসহ আরও বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় ফিচার রয়েছে। এছাড়া নতুন ফিটবিট অ্যাপ নারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বিশেষ ফিচার সমর্থন করে। ১৫০ ডলার বাজেটে সেরা এই ফিটনেস ট্র্যাকারটি অ্যামাজনে এখন ১৩৫ ডলারে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।
এমআই ব্যান্ড ৪
এমআই ব্যান্ড মূলত চীনের জনপ্রিয় ইলেকট্রনিক্স প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান শাওমির পক্ষ থেকে বাজারে আনা ফিটনেট ট্রাকার/ব্যান্ড। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রথম ফোন বাজারে ছাড়লেও প্রথম ব্যান্ডটি মূলত ২০১৪ সালের জুলাই মাসে বাজারে নিয়ে আসে। এরপর থেকেই এই ব্যান্ড লাইন-আপটি বাজারে প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা লাভ করে। আইডিসি ওয়ার্যাবল রিপোর্ট অনুসারে, হাতে পরিধানযোগ্য স্মার্ট গ্যাজেট বিক্রির ক্ষেত্রে এখন অ্যাপলের পরেই শাওমির অবস্থান। বিল্ড কোয়ালিটি, ভাল ব্যাটারি লাইফ এবং অপেক্ষাকৃত সুলভ দাম বিবেচনায় শাওমি এমআই ব্যান্ড ৩ এবং এমআই ব্যান্ড ৪ ভোক্তাপর্যায়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় দুটি স্মার্ট ব্যান্ড।
নতুন এই ব্যান্ডটিতে ১২০x২৪০ রেজ্যুলেশনের রঙিন পর্দা ব্যবহার করা হয়েছে। আগের সংস্করণ থেকে এই পর্দা প্রায় ৪০ শতাংশ বড়। ব্যান্ডটির অন্যতম ফিচার হচ্ছে এটি বেশ ভালোভাবেই হার্টরেট ট্র্যাক করতে পারে। স্মার্ট ব্যান্ডটিতে ৬টি ভিন্ন ভিন্ন ওয়ার্ক আউট মোড দেওয়া রয়েছে। একবার পরিপূর্ণ চার্জে ট্রাকারটি ২০ দিনের বেশি ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে পারে। এই ট্রাকারটিও ৫০ মিটার পর্যন্ত পানিরোধী।
এমআই ব্যান্ড ৪ এখন অ্যামাজনে ৫০ ডলারেের কাছাকাছি দামে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। ব্যান্ডটির একটি এনএফসি সংস্করণও কিনতে পাওয়া যায়। এই সংস্করণ দিয়ে চীনে অনলাইন পেমেন্ট, বাস টিকেট, সাবওয়ে এবং আরও বেশ কয়েকটি সুবিধা উপভোগ সম্ভব।
এমআই ব্যান্ড ৩
শাওমির ৩য় প্রজন্মের এই ফিটনেস ব্যান্ডটির বর্তমান বাজারমূল্য এমআই ব্যান্ড ৪ থেকে প্রায় ২০ ডলার কম। কাজেই কম বাজেটে ব্যবহারকারীদের জন্য আদর্শ পছন্দ হতে পারে ব্যান্ড ৩। ব্যান্ড ৪ থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামের হলেও নতুন ব্যান্ডটির প্রায় সকল বৈশিষ্ট্যই এমআই ব্যান্ড ৩ সমর্থন করে।
এমআই ব্যান্ড ৩ এ বেশ বড়সড় একটি টাচযুক্ত পর্দা রয়েছে। ব্যান্ডটির নিয়মিত ফিচারগুলোর মধ্যে হার্ট রেট ট্র্যাকিং, স্লিপিং রেকর্ড, কল এবং অন্যান্য অ্যাপের যাবতীয় নোটিফিকেশন পাওয়া সম্ভব। এছাড়া এই ব্যান্ডটিতেও বেশ কয়েক ধরনের ওয়ার্ক আউট মোড রয়েছে। এমআই ব্যান্ড ৪ থেকে অপেক্ষাকৃত কম রেজ্যুলেশন হবার কারণে এই ব্যান্ডের ব্যাটারি ব্যাকআপ আরো ভালো। একবার পরিপূর্ণ চার্জে ব্যান্ডটি কম করে ২২ দিনে ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে পারে। এই ফিটনেস ট্র্যাকারটিও ৫০ মিটার পর্যন্ত পানিরোধী। কাজেই এটি হাতে বেঁধে নিশ্চিন্তে সাঁতার কাটা যাবে।
অ্যামাজনে স্মার্ট ব্যান্ডটি বর্তমানে ২৯ ডলারের আশেপাশে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।
লেটসকম ফিটনেস ট্র্যাকার এইচআর
ফিটনেস ট্র্যাকারটির নাম অনেকের কাছেই নতুন মনে হলেও চিন্তার খুব একটা কারণ নেই। যে কেউ নিশ্চিন্ত মনে এই ফিটনেস ট্র্যাকারটি কিনতে পারেন, কেননা অ্যামাজনের বেস্টসেলিং ফিটনেস ব্যান্ডের তালিকায় লেটসকম ফিটনেস ট্র্যাকার এইচআর অন্যতম।
ট্র্যাকারটিতে .৯৬ ইঞ্চির ওএলইডি পর্দা ব্যবহৃত হয়েছে। অন্যতম ফিচারের মধ্যে রয়েছে সার্বক্ষণিক হার্ট রেট ট্র্যাকিং সুবিধা। এছাড়া ব্যান্ডটিতে ১৪ রকমের ভিন্ন ভিন্ন ওয়ার্ক আউট মোড দেওয়া রয়েছে। এছাড়া শাওমি এমআই ব্যান্ডের মতো এতেও স্লিপিং রেকর্ড, কল, অ্যালার্ম এবং অন্যান্য অ্যাপের যাবতীয় নোটিফিকেশন পাওয়া সম্ভব। ব্যান্ডটি আইপি৬৭ ঘরানার পানিরোধী হলেও এটা হাতে নিয়ে সাঁতার না কাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ব্যান্ডটির ব্যতিক্রমী একটি ফিচার হচ্ছে ‘রিমোট ক্যামেরা শুটিং’। অর্থাৎ ব্যান্ডটি যে কেউ ছবি তোলার ক্ষেত্রে ‘শাটার’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস সমর্থিত এই ব্যান্ডটির ৭ দিনের ব্যাটারি লাইফ রয়েছে। দামের ক্ষেত্রে এই ব্যান্ডটি এমআই ব্যান্ড ৩’ এর মতোই। অ্যামাজন বেস্টসেলিং ব্যান্ডটি এখন ৩০ ডলারে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।
হুয়াওয়ে অনর ব্যান্ড ৪
হুয়াওয়ের অন্যতম সাব-ব্রান্ড হিসেবে ‘অনর’ সিরিজ বেশ সুবিদিত। স্মার্টফোনের পাশাপাশি স্মার্ট ব্যান্ডের ক্ষেত্রেও সাব ব্রান্ডটি সাম্প্রতিক সময়ে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে। এই সিরিজে চতুর্থ প্রজন্মের স্মার্ট ব্যান্ডটিতে বেশ কিছু আকর্ষণীয় ফিচার রয়েছে।
ব্যান্ডটিতে .৫ ইঞ্চির রঙিন পিএমওএলইডি টাচযুক্ত পর্দা ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যতম ফিচার হিসেবে নির্ভুল হার্টরেট নির্ণয় এবং মনিটর করার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া নিয়মিত ফিচারগুলোর মধ্যে স্লিপিং রেকর্ড, কল এবং যাবতীয় নোটিফিকেশন পাওয়া সম্ভব। বিশেষ ফিচার হিসেবে ব্যান্ডটি ৮ ধরনের স্লিপিং মোড এবং ৬ ধরনের ঘুমজনিত সমস্যা নির্ণয় করতে পারে। এছাড়া ব্যান্ডটিতে ২০ ধরনের ভিন্ন ভিন্ন ওয়ার্ক আউট মোড এবং সংশ্লিষ্ট ফিচার রয়েছে। অনর ব্যান্ড ৪ সেটিংস ভিন্নতায় ১২ থেকে ২০ দিনের মতো ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে পারে। ফিটনেস ট্র্যাকারটি ৫০ মিটার পর্যন্ত পানিরোধী। এটি হাতে বেঁধে নিশ্চিন্ত মনে সাঁতার কাটা যাবে এবং এক্ষেত্রে স্ট্রোক গণনার বিশেষ একটি সুবিধা দেওয়া রয়েছে।
অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস সমর্থিত এই ব্যান্ডটি অ্যামাজনে বর্তমানে ৪৫ ডলারের আশেপাশে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।