Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কম্পিউটারের বিবর্তন, হ্যাকারদের বিবর্তন: শুরুর কথা

হ্যাকিং নিয়ে আগ্রহ নেই এরকম মানুষ খুব বেশী খুঁজে পাওয়া যাবে না। কম্পিউটার সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই, তারাও থাকবেন এই দলে। কম্পিউটার বিজ্ঞানের অন্যতম সৃজনশীল এই বিষয়টিকে সাধারণ মানুষের জন্য বিনোদন হিসেবে উপস্থাপন করার পিছনে হলিউডের অনেক অবদান। হ্যাকার বলতে তাই চোখে ভেসে ওঠে বড় সাইজের টি-শার্ট, মাথায় উস্কোখুস্কো বড় চুল আর চোখে চশমা পড়া কেউ একজন। কী-বোর্ডে দ্রুতগতিতে কিছু টাইপ করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সে ধ্বসিয়ে দিয়েছে শত্রুপক্ষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
যদিও বাস্তবের হ্যাকিং এত সহজে হয় না, এত কম সময়ে হয় না, এত কম চেষ্টাতেও হয় না। আমাদের আলোচনার বিষয়ও রুপালী পর্দার হ্যাকিং নয়, সত্যিকারের হ্যাকিংয়ের ইতিহাস। আমি বলতে চেষ্টা করবো কীভাবে শুরু হয়েছিলো কম্পিউটারের নিরাপত্তা ভেঙে তার ভিতরে ঢুকে পড়ার এই সর্বনাশা খেলা। সময়ের সাথে সাথে কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে কম্পিউটার, কম্পিউটারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং হ্যাকিংয়ের কলাকৌশল।

হলিউডের হ্যাকিং আর বাস্তব জগতের হ্যাকিংয়ের একটি তুলনামুলক মজার চিত্র

হ্যাকিং এবং সিস্টেম ক্র্যাকিং শুরু হয়েছিল প্রথম ইলেক্ট্রনিক কম্পিউটার উদ্ভাবনের পর থেকেই। আমরা যাদের কম্পিউটার বলি সেগুলোই শুধু কম্পিউটার নয়। যেগুলো কম্পিউট বা গণনা করতে পারে, সেসব কিছুই আসলে কম্পিউটার। ক্যালকুলেটর, ফোন থেকে শুরু করে গুগলের বিশাল বিশাল সাইজের সার্ভার সবই আসলে কম্পিউটার। সুতরাং হ্যাকিংয়ের শুরু যে আধুনিক কম্পিউটার থেকে হয়নি, হয়েছে তার অনেক আগে থেকে সেটা বোঝাই যায়।

সবচেয়ে পুরাতন কার্যক্ষম ডিজিটাল কম্পিউটার। একে সব ডিজিটাল কম্পিউটারের দাদু ভাই বলা যায়। একটি সংখ্যাকে আরেকটি সংখ্যা দিয়ে ভাগ করার জন্য উনি ১০ সেকেন্ড সময় নিতেন।

হ্যাকিং বলতে যা বোঝায় তার শুরু হয়েছিলো উনবিংশ শতাব্দীর দিকেই। ১৮৭০ সালের দিকেই যুক্তরাষ্ট্রে অল্পবয়সী কিছু ছেলেমেয়ে সেই দেশে সদ্য স্থাপিত ফোন সিস্টেমকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার কৌশল বের করেছিলো। হ্যাকিংয়ের ইতিহাস ঘাটলে আমরা হয়তো এর পিছনে আর যেতে পারবো না।

তখন বেল টেলিফোন কোম্পানীর সুইচবোর্ড অপারেটররা টেলিফোনের কলগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন। অনেক সময় তারা ইচ্ছা করেই কলগুলো কেটে দিতেন বা কলগুলোর গন্তব্য পরিবর্তন করে দিতেন। বলা যায় এখান থেকেই শুরু হয়েছিলো হ্যাকারদের যাত্রা।

১৮৭৯ সালের বেল টেলিফোন কোম্পানী বিল্ডিং

এখন যার কথা বলবো তাকেও ধরা হয় একেবারে প্রথম দিককার হ্যাকারদের একজন। তার হ্যাকিংয়ের ঘটনাটি যথেষ্টই চমকপ্রদ। এটিও এক শতকের বেশী আগের ঘটনা।

১৯০৩ সালের জুন মাসের কোনো এক বিকেলে বিখ্যাত পদার্থবিদ জন ফ্লেমিং লন্ডনের রয়্যাল ইনস্টিটিউশনে একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার জনসম্মুখে প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে এই আবিষ্কারটি ছিল তার শিক্ষক আরেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী মার্কনীর, যাকে আমরা রেডিওর উদ্ভাবক হিসেবে চিনি।

ওইসময় তিনি বেশি দূরত্বে কোনো রকম তারের সাহায্য ছাড়া কীভাবে মোর্স কোড বার্তা পাঠানো যায় তা নিয়ে কাজ করছিলেন। তিনি ইংল্যান্ডের কর্নওয়ালের ক্লিফটপ স্টেশন থেকে প্রায় ৩০০ মাইল দূরে লন্ডনে ফ্লেমিংয়ের কাছে সংকেত পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

ঠিক এই সময়ে লন্ডন থিয়েটারে স্থাপিত প্রাপক যন্ত্রটি কিছু অদ্ভুত বার্তা গ্রহণ করতে লাগলো, যেগুলো আসলে মার্কনী পাঠাননি। প্রথমে বার্তা হিসেবে শুধু একই শব্দ বারবার শোনা যাচ্ছিলো। পরে তা হয় কবিতা, যা আসলে মার্কনীকে সবার সামনে ব্যঙ্গ করার জন্য পাঠানো হয়েছিলো। তখন পরিস্কারভাবেই বোঝা গিয়েছিলো যে তাদের সব আয়োজন মোটামুটি পন্ড হতে চলেছে, কারণ কেউ একজন তাদের সিস্টেম হ্যাক করে সেখানে বার্তা পাঠাচ্ছে।

কিন্তু কে সে? আর কেন এবং কীভাবেই বা এই হ্যকিংয়ের ঘটনা ঘটলো? আবারও মনে করিয়ে দেই এটি এক শতকেরও বেশী আগের ঘটনা। তখন ইন্টারনেটের ধারণাটুকুও তেমন ছিলো না। তাহলে এই মার্কনীর প্রাপক যন্ত্রে এই অনাকাঙ্খিত বার্তাগুলো কোথা থেকে এলো?

কে ছিলেন এই হ্যাকার তা জানার জন্য অবশ্য বেশী সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। চার দিন পর The Times of London এর কাছে একটি চিঠি আসে এই হ্যাকিংয়ের ঘটনা স্বীকার করে। প্রেরক ছিলেন নেভিল ম্যাস্কেলাইন নামের ৩৯ বছর বয়সী একজন ব্রিটিশ ম্যাজিশিয়ান, আমাদের কাঙ্খিত হ্যাকার। তবে সাধারণ মানুষের ভালোর জন্যই মার্কনীর যন্ত্রের নিরাপত্তার খুতটুকু প্রকাশ করে দেওয়া প্রয়োজন ছিলো বলে তিনি দাবি করেন।

ম্যাস্কেলাইন, মার্কনী এবং ফ্লেমিং (বামদিক থেকে ডানে)

কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ম্যাস্কেলাইন আসলে মোর্স কোড ব্যবহার করতেন ম্যাজিক দেখানোর কাজে। ১৯০০ সালের দিকেই তিনি ভূমি থেকে ১০ মাইল উপরে একটি বেলুনে তারবিহীন বার্তা পাঠানোর প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে মার্কনী এই আবিষ্কারের পেটেন্ট করে ফেলায় ম্যাস্কেলাইন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাই মার্কনীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার এরকম একটি মোক্ষম সুযোগ তিনি হাতছাড়া করেননি।

এই আয়োজনের কয়েক মাস আগে মার্কনী লন্ডনের একটি পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাতকারে দাবি করেছিলেন তার সিস্টেম একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যে গোপন বার্তা প্রেরণ করতে পারবে কোনো রকম নিরাপত্তা ঝুঁকি ছাড়াই। কিন্তু বার্তাটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই ম্যাস্কেলাইন ২৫ ফুট লম্বা একটি এন্টেনা দিয়ে ধরে ফেলেন এবং তার বদলে ভিন্ন একটি বার্তা পাঠাতে সক্ষম হন যার কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে ।

জনসমক্ষে এই ঘটনা ঘটার কারণে মার্কনীর আবিষ্কারের উপর অনেকেই আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন। এমনকি তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানীগুলোও অর্থ সাহায্য বন্ধ করে দেয়। বলা যায় এই হ্যাকিংয়ের ঘটনা মার্কনী এবং ফ্লেমিংকে যথেষ্টই বিপদে ফেলে দিয়েছিলো।

এরপরের ঘটনাটি ১৯৩৭ সালের দিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে। সেই সময়ে গোপন বার্তা পাঠানো হতো সাংকেতিকভাবে। আর এজন্য ব্যবহার করা হতো এনিগমা মেশিন যার কোড কোনো একটি বার্তাকে এনক্রিপ্ট করতো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি জার্মান এনিগমা মেশিন

কিন্তু এই মেশিনটির কি স্পেস (Key space) অনেক কম থাকায় তিনজন পোলিশ ক্রিপট-অ্যানালিস্ট মিলে ব্রুট ফোর্স পদ্ধতি ব্যবহার করেই কোড ভেঙে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন। ব্রুট ফোর্স মানে হলো সবগুলো কম্বিনেশন চেষ্টা করে দেখা। এই পদ্ধতি সঠিক ফলাফল অবশ্যই দিবে, কিন্তু সার্চ স্পেস বড় হলে ব্রুট ফোর্স সম্ভব নয়।

ব্রুট ফোর্স অ্যাটাকের একটি উদাহরণ

পরবর্তীতে অ্যালান টুরিং আরও কার্যকরী একটি যন্ত্র তৈরী করেন এই কোড ভাঙার জন্য যার নাম Bombe। তার এই যন্ত্রটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানদের এনিগমা মেশিন ব্যবহার করে পাঠানো বার্তা উদ্ধারের কাজে ব্যবহার করা হতো। এই ঘটনা নিয়ে হলিউডের একটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র আছে যার নাম The Imitation Game। অভিনেতা Benedict Cumberbatch  যেখানে অ্যালান টুরিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন।

The Imitation Game চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত Bombe

অ্যালান টুরিংকে বলা হয় তত্ত্বীয় কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং কৃ্ত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক। তিনিই সর্বপ্রথম টুরিং মেশিন নামে একটি আধুনিক কম্পিউটারের ধারণা দেন। তার তৈরি Bombe মেশিনের কারণে তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হ্যাকারদের একজন।

অ্যালান টুরিং

সেই সময়ে ডাটা সংরক্ষণ এবং প্রসেস করার জন্য ব্যবহার করা হতো Punch card। এই কার্ডের কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে হয় একটি ছিদ্র থাকতো, নাহয় থাকতো না। যার মানে হলো শুন্য অথবা এক। বিংশ শতাব্দীর অধিকাংশ সময় জুড়ে ডিজিটাল কম্পিউটারগুলো ডাটা ইনপুট নিতো এবং আউটপুট দিতো এই ধরনের কার্ডের মাধমে।

কম্পিউটারে ব্যবহৃত হচ্ছে punch card

হিটলারের নাৎসি বাহিনী ইহুদীদের অবস্থান জানার জন্য এক ধরনের Punch card ব্যবহার করতো। আর তা হ্যাক করতে সক্ষম হন ফ্রান্সের একজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ।

এভাবেই ধীরে ধীরে শুরু হয়েছিলো হ্যাকিং সংস্কৃতির। এর সাথে জড়িয়ে আছে বেশ কিছু বিখ্যাত মানুষের নাম। আমরা শুরুর দিকের এইসব হ্যাকিংয়ের সাথে হয়তো এত পরিচিত নই। এর কারণ হয়তো কম্পিউটার সম্পর্কে আমাদের চিরাচরিত ধারণা। কিন্তু আমরা ধীরে ধীরে সামনে যত আগাবো তত পরিচিত মনে হবে সবকিছু।

কম্পিউটারের ধারণা বদলে যাওয়ার সাথে সাথে বদলে গেছেন হ্যাকাররাও। অনেক ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে ছিলেন সমসাময়িক অনেকদের থেকে, এখনও এগিয়ে আছেন। প্রচন্ড প্রতিভাবান এইসব হ্যাকারদের বাস্তব জগতও যে রুপালী পর্দার হ্যাকারদের মতোই চমকপ্রদ তাও আমরা বুঝতে পারবো সামনের পর্বগুলোতেই।

This article is in Bangla Language. Its about evolution of computer and hackers (first-part).
References:

1. en.wikipedia.org/wiki/Timeline_of_computer_security_hacker_history

2. newscientist.com/article/mg21228440-700-dot-dash-diss-the-gentleman-hackers-1903-lulz/

3. indie88.com/hacking-the-airwaves/

4. turing.org.uk/scrapbook/ww2.html

Featured Image: ©Henrik5000/iStockphoto

Related Articles