Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

২০৭০ সালের মধ্যে ফেসবুক পরিণত হবে ডিজিটাল গোরস্তানে!

জন্মিলে মরিতে হবে,
অমর কে কোথা কবে…

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের এই চরণগুলো কেবল জীবজগতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। একই কথা বলা যেতে পারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোফাইলগুলোর ক্ষেত্রেও। বিশেষত, ফেসবুক প্রোফাইলগুলোর ক্ষেত্রে এই কথা খুবই খাটে, যেগুলোর পেছনে আমরা আমাদের প্রতিদিনের বড় একটা সময় ব্যয় করছি।

নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইলকে আমরা ভরিয়ে তুলছি যেকোনো বিষয়ে আমাদের বিভিন্ন মতামত দিয়ে, রাঙিয়ে তুলছি আমাদের বর্ণিল সব ছবি দিয়ে। ফেসবুক প্রোফাইল হয়ে উঠেছে আমাদের বাস্তব জীবনেরই একটি ভার্চুয়াল প্রতিফলন। যেসব মানুষ আমাদেরকে একদমই চেনে না, তারাও কিছুক্ষণ আমাদের ফেসবুক প্রোফাইলগুলো ঘেঁটে আমাদের ব্যাপারে অনেক অজানা তথ্যই জেনে নিতে পারছে। ফলে ফেসবুক প্রোফাইলগুলো বর্তমানে হয়ে উঠেছে অন্যের কাছে আমাদের পরিচিত তুলে ধরার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যমে।

কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি, আমাদের মৃত্যুর পর এই ফেসবুক প্রোফাইলগুলোর কী হবে?

প্রত্যেকের ব্যক্তিজীবনের ভার্চুয়াল প্রতিফলন তার ফেসবুক প্রোফাইল; Image Source: Getty Images

যার যার ফেসবুক প্রোফাইল তার একেবারে নিজস্ব সম্পত্তি। এমনকি অনেকে আছে যে তার পরম বিশ্বস্ত সঙ্গীকেও নিজের ফেসবুক প্রোফাইলের পাসওয়ার্ড জানতে দেয় না। বলাই বাহুল্য, এমন মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।

তার মানে দাঁড়াচ্ছে, এই মানুষগুলো যখন মারা যাবে, একইসাথে বন্ধ হয়ে যাবে তাদের ফেসবুক প্রোফাইলের যাবতীয় কার্যকলাপও। ওই প্রোফাইল থেকে নতুন কোনো পোস্ট আসবে না, যোগ হবে না কোনো ছবি। কোনো পেজে লাইক পড়বে না, কোনো ইভেন্টে গোয়িং বা ইন্টারেস্টেড দেয়া হবে না, এবং অন্যের পোস্টে রিয়েকশন বা কমেন্টও করা হবে না। এদিকে মেসেঞ্জারেও তাদের কনট্যাক্ট থেকে অন্য কারো কাছে মেসেজ কিংবা অডিও বা ভিডিও কল যাবে না।

কিন্তু তাই বলে প্রোফাইলগুলো কিন্তু উধাও হয়েও যাবে না। ফেসবুকে খোঁজ করলে সেই প্রোফাইলগুলোর সন্ধান ঠিকই মিলবে। অর্থাৎ একজন মানুষ মারা গেলে যেমন সে আর নিঃশ্বাস নিতে পারে না, কিছু দেখতে বা শুনতে পায় না, কিংবা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নড়াচড়া করতে পারে না, কিন্তু তার মৃতদেহটি ঠিকই রয়ে যায়, ঠিক তেমনই হবে মৃত ব্যক্তির ফেসবুক প্রোফাইলের ক্ষেত্রেও। সেগুলোতে নতুন করে কোনো আপডেট হবে না বটে, কিন্তু প্রোফাইলগুলোর অস্তিত্ব বিলীনও হবে না। একসময়কার সচল প্রোফাইলগুলো অচল-অচেতন হয়েও ঠিকই টিকে থাকবে ফেসবুকের নীল-সাদা জগতে।

ফেসবুক প্রোফাইলগুলো পরিণত হবে আমাদের আমাদের ডিজিটাল ঐতিহ্যে; Image Source: Getty Images

এই বিষয়টি নিয়ে আরো সবিস্তারে জানতে চেয়েছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক। তাদের গবেষণার মূল জিজ্ঞাস্য বিষয় ছিল, মৃতরাই কি দখল করে নিচ্ছে ফেসবুক? এবং গবেষণা শেষে তারা যে উত্তরটি পেয়েছেন, তা রীতিমতো চমকে ওঠার মতোই একটি বিষয়। উত্তরটি হলো: আসলেই ফেসবুকে বেড়ে চলেছে জীবিতের চেয়ে মৃতের সংখ্যা, এবং একটা সময় আসবে, যখন ফেসবুক পরিণত হবে একটি ডিজিটাল গোরস্তানে।

অনেকেই বলতে পারেন, এ তথ্যে আর চমকাবার মতো কী আছে, যেকোনো বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের পক্ষেই এমন ভবিষ্যতের ব্যাপারে আগে থেকেই ধারণা করে নেয়া সম্ভব। হ্যাঁ, সে কথা ঠিক বটে। কিন্তু মূল বিস্ময়ের জায়গাটি অন্য। ফেসবুকে একদিন জীবিতের চেয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়বে এ কথা আমরা সকলেই আন্দাজ করেছিলাম বটে, তবে ঘটনাটি যে এত শীঘ্রই ঘটে যাবে, সে সম্পর্কে অবশ্যই কারো কোনো ধারণা ছিল না।

অক্সফোর্ডের গবেষকরা বিশ্লেষণ করে জানাচ্ছেন, ২১০০ সালের মধ্যেই ফেসবুকের অন্তত ১.৪ বিলিয়ন সদস্য মারা যাবে। এমন প্রেক্ষাপটে, ২০৭০ সালের মধ্যেই ফেসবুকে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে জীবিত ব্যবহারকারীর সংখ্যাকে। এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির ব্যবহারকারী যদি বর্তমান হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাহলে এই শতক শেষ হওয়ার আগেই মৃত ব্যবহারকারীর সংখ্যা এমনকি ৪.৯ বিলিয়নও হতে পারে।

ফেসবুকে বর্তমানে মৃত ব্যক্তিকে স্মরণের জন্য আছে রিমেম্বারিং ফিচারটি; Image Source: Getty Images

এই গবেষণার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য দুটি দৃশ্যপট চিন্তা করা হয়েছে, এবং গবেষক দলটির বিশ্বাস, প্রকৃত ভবিষ্যৎ বাস্তবতা এই দুইয়ের মাঝামাঝি কিছু হতে পারে।

  • প্রথম সম্ভাব্য দৃশ্যপটের ক্ষেত্রে ধরে নেয়া হয়েছে যে, ২০১৮ সালের শেষ পর্যন্ত ফেসবুকে যে পরিমাণ ব্যবহারকারী ছিল, পরবর্তীতে তার অধিক আর কোনো নতুন ব্যবহারকারী যোগ হবে না। সেক্ষেত্রে এই শতাব্দীর শেষ হওয়া পর্যন্ত ফেসবুকের মৃত প্রোফাইলের ৪৪ শতাংশই আসবে এশিয়া থেকে। এবং এসব মৃত প্রোফাইলের প্রায় অর্ধেকই আবার আসবে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। ২১০০ সাল নাগাদ এই দুই দেশ থেকেই ফেসবুকে সৃষ্টি হবে ২৭৯ মিলিয়নের মতো মৃত প্রোফাইল।
  • দ্বিতীয় সম্ভাব্য দৃশ্যপটে ধরে নেয়া হচ্ছে যে, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ফেসবুকের ব্যবহারকারী বৃদ্ধির হার যেমন ১৩ শতাংশ, প্রতিটি বাজার পরিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত এ হারই বিদ্যমান থাকবে। সেক্ষেত্রে মৃত প্রোফাইলের সংখ্যায় আফ্রিকাও পেছন থেকে এসে এশিয়াকে ধরে ফেলবে। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন ঘটবে নাইজেরিয়ার ক্ষেত্রে। ২১০০ সাল নাগাদ মোট মৃত প্রোফাইলের ৬ শতাংশেরই ঠিকানা হবে আফ্রিকার এই দেশটি। অপরদিকে, ফেসবুকে পশ্চিমা বিশ্বের মৃত প্রোফাইলের প্রতিনিধিত্বকারী সংখ্যাটি এশিয়া ও আফ্রিকার তুলনায় হবে খুবই নগন্য। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই থাকবে সর্বোচ্চ মৃত প্রোফাইলের আবাসস্থলের তালিকায় সেরা দশে।

গবেষক দলটি এই সম্ভাব্য দুই ভবিষ্যদ্বাণীর ক্ষেত্রে প্রধানত ব্যবহার করেছে জাতিসংঘ প্রণীত তথ্য, যারা প্রতিটি দেশের বয়সভেদে মোট জনসংখ্যা ও সম্ভাব্য মৃতের পরিমাণ প্রকাশ করে থাকে। এছাড়া গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে ফেসবুকের অডিয়েন্স ইনসাইটস ফিচারও, যা থেকে জানা যায় প্রতিটি দেশ ও বয়সভেদে নতুন ব্যবহারকারী বৃদ্ধি সম্পর্কে।

ফেসবুক সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় এশিয়ায়; Image Source: Website Hosting Rating

এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, এই যে গবেষণাটি করা হলো এবং এর মাধ্যমে ২১০০ সাল নাগাদ ফেসবুকের সম্ভাব্য মৃত প্রোফাইলের সংখ্যা সম্পর্কে একটি আন্দাজ পাওয়া গেল, এর মূল তাৎপর্য কী? অর্থাৎ, এই গবেষণার তথ্য আদতে কী কাজে লাগবে? সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন গবেষণাপত্রটির প্রধান রচয়িতা, কার্ল ওহম্যান।

এই পরিসংখ্যানগুলো জন্ম দেয় নতুন এবং কঠিন কিছু প্রশ্নের। তা হলো, মৃত প্রোফাইলগুলোতে থাকা ডেটা ব্যবহারের অধিকার কার হাতে থাকবে, এবং তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে মৃতের পরিবার ও বন্ধুদের স্বার্থের কথা আমলে নেয়া হবে কি না। এছাড়া আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, ভবিষ্যৎ ইতিহাসবিদরা অতীতকে জানার ও বোঝার ক্ষেত্রে এসব ডেটা কতটুকু কাজে লাগাতে পারবেন।

সামাজিক ধাপ থেকে আমরা কেবলই এই প্রশ্নগুলো করতে শুরু করেছি, এবং এখনো আমাদের অনেকদূর পথ অতিক্রম করা বাকি। আমাদের ডিজিটাল দেহাবশেষের ব্যবস্থাপনার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে সংযুক্ত রয়েছে এমন প্রতিটি ব্যক্তিকেই প্রভাবিত করবে। কেননা একদিন আমরা সকলেই মারা যাব, কিন্তু ফেসবুকে আমাদের ডেটাগুলো থেকে যাবে। তাছাড়া সামগ্রিকভাবে ফেসবুকের মৃত প্রোফাইলের সংখ্যাটি আরো বড় কিছুরও ইঙ্গিত দেয়। কেননা, আর কিছু না হোক, এগুলো অন্তত আমাদের বৈশ্বিক ডিজিটাল ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে তো পরিণত হবেই।

ফেসবুক পরিণত হবে ডিজিটাল গোরস্তানে; Image Source: Digital Remains

গবেষণাপত্রটির সহযোগী রচয়িতা ডেভিড ওয়াটসনও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যোগ করেন:

মানব ইতিহাসে এমনটি আগে আর কখনোই ঘটেনি যে মানুষের আচরণ ও সংস্কৃতির এত বিশাল একটি আর্কাইভ কেবল একটি জায়গাতেই মজুদ অবস্থায় রয়েছে। তাই, এই আর্কাইভগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, এক অর্থে, আমাদের ইতিহাসকেই নিয়ন্ত্রণ করা। তাই এখন আমাদের জন্য এই বিষয়টি নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের এসব ঐতিহাসিক ডেটা ব্যবহারের বা সংরক্ষণের অধিকার যেন কেবল একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের কাছেই সীমাবদ্ধ থাকে। এছাড়া আমাদেরকে এটিও নিশ্চিত করতে হবে যেন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অতীত ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের ডিজিটাল ঐতিহ্যগুলো ব্যবহারের সুযোগ পায়।

চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

This article is in Bengali language. It is about facebook's dead profiles at the end of the current century. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © Mirror

Related Articles