Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্লুটুথ হেডফোন নিয়ে যত বিতর্ক

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে অ্যাপল নিয়ে আসে আইফোনের জন্য ব্লুটুথ হেডফোন। একে বলা হয় ‘এয়ারপড’। এর ফলে তারযুক্ত হেডফোনের পোর্ট আইফোন থেকে ওঠে যায়, যদিও এডাপ্টরের মাধ্যমে এয়ারপডকেও যুক্ত করে শব্দ শোনা যায়। এয়ারপড বাজারে আসার পরপরই এটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। ২০১৭ সালে বিক্রি হয় ১৬ মিলিয়ন জোড়া। গত বছরও ২৮ মিলিয়ন জোড়া বিক্রি হয়

সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে কিছুদিন আগে এসেছে এর নতুন সংস্করণ ‘এয়ারপড ২’। এয়ারপড ছাড়া অন্যান্য ব্লুটুথ হেডফোনও বহির্বিশ্বে খুব জনপ্রিয়। তবে এয়ারপড ২ মুক্তি পাবার পরপরই ইন্টারনেটে শুরু হয়েছে ব্লুটুথ হেডফোন নিয়ে বিতর্ক। কেউ বলছেন, ব্লুটুথ হেডফোন থেকে যে বিকিরণ হয়, তাতে ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে। অন্যদিকে এর বিপক্ষেও আছেন অনেকে। এই বিতর্ক অবশ্য নতুন নয়। আমরা এখানে দুই পক্ষের যুক্তি নিয়েই আলোচনা করব। একইসাথে সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিয়েও কথা বলব।

এয়ারপড © Michael Desjardin/USA Today

ইউনিভার্সিটি অভ কলোরাডোর প্রাণরসায়ন বিভাগের অধ্যাপক জেরি ফিলিপস তারবিহীন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণার পর একে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি বলে সন্দেহ করছেন। তিনি এয়ারপড নিয়ে বলেন, এয়ারপড কানের ভেতর যে স্থানে রাখা হয় তাতে মস্তিষ্কের টিস্যুগুলো এটি থেকে নির্গত তুলনামূলক উচ্চ মাত্রার বিকিরণের সম্মুখীন হয়। তিনি আরো বলেন, এই বিকিরণগুলো আমাদের ডিএনএকেও ধ্বংস করে দিতে পারে।

এই দলে ফিলিপস একা নন। ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে ৪২টি দেশের ২৪৭ জন গবেষক একটি অনলাইন পিটিশন করেন। তাতে বিজ্ঞানীদের পক্ষে বলা হয়, তারবিহীন প্রযুক্তি থেকে যে তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ নির্গত হয়, তা দীর্ঘদিন নির্গত হলে শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তারা এতে বিভিন্ন সময়ে গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল থেকে ক্যান্সার, জেনেটিক ত্রুটি, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, স্নায়ুতন্ত্র ও প্রজনন তন্ত্রের টিস্যুর সমস্যাসহ সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তারা তারবিহীন প্রযুক্তির স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা জানিয়ে জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে কঠোর আইন প্রয়োগের উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান।

জোয়েল মস্কোয়িটজ; Image Source: sph.berkeley.edu

পিটিশনের অন্যতম উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ফ্যামিলি এন্ড কমিউনিটি হেলথের পরিচালক জোয়েল মস্কোয়িটজ। তিনি জানান, ব্লুটুথ হেডফোন থেকে যে বিকিরণ নির্গত হয় তা আমাদের রক্ত ও মস্তিষ্কের মাঝের প্রতিবন্ধক ভেদ করে যেতে পারে। এই প্রতিবন্ধক বা ব্লাড-ব্রেন ব্যারিয়ার আমাদের শরীরের ক্ষতিকারক বর্জ্য ও জীবাণুদের মস্তিষ্কে প্রবেশে বাধা দেয়। এই প্রতিবন্ধকের যদি ক্ষতি হয়, তবে অটিজম, ডিমেনশিয়া, মস্তিষ্কের ক্যান্সার ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এই প্রসঙ্গে অ্যাপলের পক্ষ থেকে বলা হয়, আপলের পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে সবসময়ই নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে নকশা ও পরীক্ষা করে দেখা হয়। অ্যাপলের এয়ারপড ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশনস বা এফসিসি এর দেয়া স্পেসিফিক অ্যাবসর্পশন রেটের মানের আওতার মধ্যেই আছে। তবে মস্কোয়িটজের মতে, এই মানের মধ্যে গলদ রয়েছে।

অ্যাপলের এয়ারপড পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা; Image Source: Getty Images

আমাদের শরীরে কী পরিমাণ বিকিরিত রশ্মি এসে পড়ছে শুধু সেটাই গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের শরীর এই রশ্মিগুলো কী পরিমাণ শোষণ করে নিচ্ছে তা-ও গুরুত্বপূর্ণ। এই শোষিত বিকিরণের পরিমাণ নির্ণয়ের প্রক্রিয়াটিই হচ্ছে স্পেসিফিক অ্যাবসর্পশন রেট বা SAR। এফসিসি এর পক্ষ থেকে অনুমোদিত তারবিহীন ডিভাইসের জন্য SAR এর মান হতে হবে প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১.৬ ওয়াট। এই আইন করা হয়েছিল নব্বইয়ের দশকে গ্রাহকদের স্বল্পমেয়াদী ক্ষতির সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে। অ্যাপলের এয়ারপডের এই মান প্রতি কেজিতে ০.৪৬৬ ওয়াট। অ্যাপল এই মানের মধ্যে থাকলেও মস্কোয়িটজসহ অনেক বিজ্ঞানী মনে করছেন এই নিয়মের সংস্কার করা দরকার

এয়ারপডের বিকিরণ শোষণের পরিমাণ অল্প। কিন্তু অল্প পরিমাণ শোষিত হলেও ডিভাইস যদি দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার করা হয়, তবে তা শরীরের ক্ষতি করার সম্ভাবনা রয়েছে। মস্কোয়িটজ এদিকেই গুরুত্ব আরোপ করেছেন। গবেষকরা মনে করছেন, স্বল্প মাত্রার বিকিরণের তারবিহীন যন্ত্র দীর্ঘসময় ব্যবহার করলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে।

ব্লুটুথ হেডফোনের ঝুঁকির ব্যাপারে সবাই একমত নন; Image Source: Getty Images

সবাই যে এ ব্যাপারে একমত তা নয়। তাদের একজন ইউনিভার্সিটি অভ পেনসিলভানিয়ার জৈব প্রকৌশলের অধ্যাপক কেনেথ ফস্টার। তিনি বলেন, অনেক গবেষণা করে কোথাও ব্লাড-ব্রেন ব্যারিয়ারে বিকিরণের প্রভাব পাওয়া যায়নি। এমনকি ব্লুটুথ হেডফোনের চেয়ে উচ্চমাত্রার বিকিরণ নির্গত করেও কোনো সমস্যা পাননি দাবি করেছেন তিনি। তার মতে, কেউ বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে চাইলে করতেই পারে; কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে তিনি কোনো সমস্যা দেখছেন না।

মোবাইল ফোন থেকে আমাদের শরীরে যে পরিমাণ বিকিরণ নির্গত হয়, ব্লুটুথ হেডফোনে তার দশ ভাগের এক ভাগেরও কম নির্গত হয়। মোবাইল ফোন আমাদের প্রতিদিন কান আর মাথার কাছে এনে অনেক ব্যবহার করতে হয়। ফস্টার তাই ব্লুটুথ ডিভাইস নিয়ে চিন্তার কিছু দেখছেন না। বরং ব্লুটুথে কথা বলার সময় মোবাইল ফোন কান থেকে দূরে থাকবে বলে আরো উপকারই হবে বলে মনে করেন তিনি।  

এয়ারপড প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন তিনি। এয়ারপডের যে এন্টেনা বেতার তরঙ্গ আদান-প্রদান করে, তা থাকে কানের বাইরের দিকের অংশে। এটি কানের ছিদ্রের ভেতরের দিকে থাকে না বলে মস্তিষ্কের সাথে বিকিরিত রশ্মির সংস্পর্শের সুযোগ নেই বলছেন তিনি। তাছাড়া পিটিশনে এয়ারপডের নাম উল্লেখ করা যে নেই সেটাও বলেন। তিনি বরং রাস্তাঘাটে হেডফোন ব্যবহারের সময় দুর্ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার ব্যাপারে সচেতনতা অবলম্বনে জোর দিয়েছেন। তার মতে ক্যান্সারের চেয়ে এই ঝুঁকিই বেশি।

একই কথা বলেছেন উইসকনসিন মেডিকেল কলেজের রেডিও অনকলজির শিক্ষক জন মোল্ডার। উল্লেখ্য, মোল্ডার ও ফস্টার দুজন একসাথে যে গবেষণা করেছিলেন, তাতে ফান্ড দিয়েছিল মোবাইল প্রস্তুতকারকদের ফোরাম, যাতে অ্যাপলও ছিল। তাই তাদের ওপর পক্ষপাতের অভিযোগ আসাই স্বাভাবিক। তবে তারা দাবি করেছেন, কেউ তাদের ওপর প্রভাব খাটাননি। আবার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন বা এফডিএর পক্ষ থেকেও ব্লুটুথ হেডফোনে ক্ষতির সম্ভাবনা কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়েছে।

তারবিহীন প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে উভয়পক্ষই সতর্ক থাকতে বলেছেন; Image Source: digitalmusicnews.com

ব্লুটুথ হেডফোন নিয়ে দুই পক্ষেই রয়েছে অনেক যুক্তি-তর্ক। কে সঠিক আর কে ভুল তা এখনই বলা মুশকিল। কারণ, ব্লুটুথের বিপক্ষে জোয়েল মস্কোয়িটিজ বলেছেন, এখনো এটি নিয়ে তাদের অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। অন্যদিকে ব্লুটুথের পক্ষের কেনেথ ফস্টারও স্বীকার করেছেন, দীর্ঘ সময় ব্যবহার করলে এতে ক্ষতি হতে পারে। তবে যে পক্ষই সঠিক থাকুক না কেন আমাদের উচিত হবে এ নিয়ে আগেই সতর্ক থাকা। কীভাবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেবেন জেনে নেয়া যাক।

  • বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনার যদি লম্বা সময় ফোনে কথা বলার প্রয়োজন পড়ে, সেক্ষেত্রে ফোনের স্পিকার অপশনটি ব্যবহার করতে পারেন অথবা তারযুক্ত হেডফোন ব্যবহার করতে পারেন। একই কথা প্রযোজ্য গান বা পডকাস্ট শোনার ক্ষেত্রেও।
  • বাচ্চাদের জন্য এক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাচ্চাদের মাথা থাকে ছোট এবং খুলিও থাকে পাতলা। তাই তাদের মস্তিষ্কে ক্ষতিকারক বিকিরিত রশ্মির সংস্পর্শের ঝুঁকিও বেশি।
  • মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় একে মুখ থেকে দশ ইঞ্চি দূরে রাখবেন।
  • নেটওয়ার্ক ভালো থাকলেই ফোনে কথা বলবেন। কারণ বাজে নেটওয়ার্কে বিকিরণ বেশি নির্গত হয়।  

তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে ক্ষতিকর বিকিরিত রশ্মি থেকে আমাদের পুরোপুরি মুক্ত থাকা সম্ভব নয়। তবে একটু সচেতন হলেই এই রশ্মিগুলোর সাথে আমাদের সংযোগ কমিয়ে আনতে পারি।  

This is an article written in Bengali language. It contains the debate about bluetooth headphones on potential harm to the human body. All the references are hyperlinked in the article. 

Featured Image: independent.co.uk

Related Articles