
ধরুন, অনলাইনে কয়েকটি বই কিনবেন আপনি। স্বভাবতই অনলাইন বুকস্টোরের বিশাল ক্যাটালগ থেকে পছন্দসই বই খুঁজে বের করা খুবই কষ্টসাধ্য কাজ। তবে অবচেতন মনে আপনি জানেন, কোন বইগুলো খুঁজছেন। কারণ, ফেসবুকে আপনি একজন খুবই পড়ুয়া ব্যক্তিকে অনুসরণ করেন, যিনি নিয়মিতই বিভিন্ন বই নিয়ে দুর্দান্ত সব রিভিউ পোস্ট করে থাকেন, এবং কিছু বই সম্পর্কে তার করা রিভিউ আপনার খুবই ভালো লেগেছে।
কিংবা আবার ধরা যাক, ইনস্টাগ্রামে আপনি কয়েকজন মডেলকে অনুসরণ করে থাকেন। তাদের ফ্যাশন স্টাইল আপনাকে আকৃষ্ট করে। নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে যখন তাদের ছবি আপনি দেখেন, তাদের জায়গায় নিজেকেই কল্পনা করতে আপনার ভালো লাগে। তাই আপনি যখন কোনো ক্লদিং স্টোরে গেলেন নতুন পোশাক কিনতে, আপনার মনে পড়ে গেল ওই মডেলদের পরা পোশাকের ডিজাইন। আপনি ভাবলেন, এখনকার দিনে এমন পোশাকই তো ট্রেন্ড। তাই আপনি নিজেও অমন পোশাক কিনেই বাড়ি ফিরলেন।
এখানে যে বিষয়টি ঘটছে তা হলো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুসৃত ব্যক্তিদের দ্বারা আপনি প্রভাবিত হচ্ছেন। এবং তারপর সচেতনভাবেই, কিংবা একদমই নিজের অজান্তে, আপনি তাদের পড়া বই, তাদের পরিহিত পোশাক ইত্যাদি কিনছেন। শুধু বই বা পোশাকই কেন, একটু খেয়াল করলে হয়তো দেখা যাবে, আপনি দৈনন্দিন জীবনে যেসব জিনিস ব্যবহার করছেন, সেগুলোর অধিকাংশই ব্যবহারের প্রাথমিক প্রণোদনা হয়তো আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকেই পেয়েছেন।
কিংবা এমনটিও হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার করা পোস্টগুলোই হয়তো আপনার বন্ধুতালিকায় থাকা বা আপনাকে অনুসরণ করা অন্য কারো বই, পোশাক, চশমা, ব্যাগ, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট অথবা অন্য যেকোনো কিছু ক্রয়ের প্রাথমিক প্রণোদনার উৎস।

তাহলে দেখতেই পাচ্ছেন, আমাদের রুচিবোধকে পরিচালনা করতে কিংবা আমাদের পছন্দ-অপছন্দকে নিয়ন্ত্রণ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঠিক কতটা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে। এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা ক্রমশ বেড়েই চলেছে, কেননা দিন দিন এর ব্যবহারকারীর সংখ্যাও যে বাড়ছে।
উই আর সোশ্যালের গ্লোবাল ডিজিটাল রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৩.০২৮ বিলিয়ন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এসে সে সংখ্যা ৩.৫ বিলিয়ন অতিক্রম করে ফেলেছে। অর্থাৎ এই মুহূর্তে মোট বিশ্ব জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশই অনলাইনে কোনো না কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে যুক্ত।
এই বিপুল সংখ্যক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীর মধ্যে মাত্র অল্প কিছু মানুষের দ্বারা সিংহভাগ সাধারণ ব্যবহারকারী প্রভাবিত হচ্ছে। ওই মুষ্টিমেয় মানুষগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ট্রেন্ড সেট করছে, এবং তাদের দেখে বাকিরা স্রোতের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন, ওই মুষ্টিমেয় মানুষগুলোর কী ভীষণ ক্ষমতা! তাই তাদের জন্য একটি গালভরা নামও বেছে নেয়া হয়েছে: সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার।
সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার কী?
একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হলো সেই ব্যক্তিবিশেষ, যার রয়েছে নিজের ভাবমূর্তি, জ্ঞান, উপস্থাপনা, কর্তৃত্ব, অবস্থান ও অনুসরণকারীদের সাথে নিজের সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে, তাদের ক্রয়-সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এ ধরনের ইনফ্লুয়েন্সার হলো সেই ব্যক্তি, যে নিজে তার ব্যক্তিগত পছন্দ ও ভালোলাগা অনুযায়ী কোনো পণ্য ব্যবহার করতে শুরু করে ওই পণ্যের ট্রেন্ড সেট করে দেয়, এবং পরবর্তী সময়ে তাকে দেখে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনগোষ্ঠী ওই একই পণ্যের ভোক্তা বনে যায়।
সাধারণত এ ধরনের ইনফ্লুয়েন্সাররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজের পরিচিতি গড়ে তোলে। যেমন কেউ হয়তো খাবার বিশেষজ্ঞ; তার বেশিরভাগ পোস্টের বিষয়বস্তুই হলো বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের খাবার। এবং তার ওইসব পোস্ট দেখে অনেক মানুষ সিদ্ধান্ত নেয় তারা কোনো একটি রেস্টুরেন্টে খেতে যাবে কি না। আবার কেউ হয়তো নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে একজন চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে। যেকোনো নতুন চলচ্চিত্রের সমালোচনা করে সে, ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ কোনো চলচ্চিত্রের ভালো-খারাপ সম্পর্কে জানতে তার রিভিউয়ের অপেক্ষা করতে থাকে। এবং সেই রিভিউ অনুযায়ীই তারা ঠিক করে চলচ্চিত্রটি দেখতে হলে যাওয়া উচিত হবে কি না।

স্পন্সরড ইনফ্লুয়েন্সার
মজার ব্যাপার হলো, কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে একজন ব্যক্তির পরিচিতি গড়ে উঠলে, বিভিন্ন ব্র্যান্ডও উঠেপড়ে লাগে তাকে নিজের করে নিতে। যেহেতু, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ব্যক্তির মতামতের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তাই ব্র্যান্ডগুলো চায় ব্যক্তিটি যেন তাদের হয়ে কাজ করে, এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ব্র্যান্ডের ব্যাপারে ইতিবাচক কথা বলে। এভাবে অনেক ইনফ্লুয়েন্সারই এক পর্যায়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ড কর্তৃক বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। তখন ইনফ্লুয়েন্সার পরিচয়ের আড়ালে তাদের আরেকটি পরিচয় তৈরি হয়: তারা কোনো নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের প্রোমোটার বা প্রচারক।
উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক কবির একজন ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ। ইনস্টাগ্রাম ও এই জাতীয় অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে নিত্য-নতুন সব পোশাকের ছবি দেয়, এবং সেগুলোর ভালো-মন্দ তুলে ধরে। এভাবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আগ্রহী মানুষদের কাছে সে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, প্রচুর মানুষ তাকে অনুসরণ করতে শুরু করেছে, এবং তার পোস্ট দ্বারা প্রভাবিত হয়েই তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কোন ব্র্যান্ডের পোশাক পরা উচিত, আর কোন ব্র্যান্ডকে এড়িয়ে চলা উচিত। এভাবে কাজ করতে করতে এক পর্যায়ে সে কোনো বড় একটি ব্র্যান্ডের নজরে পড়ে গেল।
ব্র্যান্ডটি তাকে প্রস্তাব দিল, তাকে তাদের তৈরী পোশাকের ব্যাপারে কিছু ইতিবাচক পোস্ট দিতে হবে, বিনিময়ে তাকে লোভনীয় অংকের টাকা দেয়া হবে। কবিরও এতে রাজি হয়ে গেল। কেননা কাজটি এমন কঠিন কিছু নয়। সে আগের মতোই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক নিয়ে পোস্ট দিতে থাকবে। পাশাপাশি তাকে নিয়োগ দেয়া ওই বিশেষ ব্র্যান্ডটির পোশাক নিয়েও মাঝেমধ্যে পোস্ট দেবে, যেখানে ইতিবাচক কথাবার্তারই প্রাধান্য থাকবে।

তবে হ্যাঁ, সব ইনফ্লুয়েন্সারই যে এভাবে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কাছে নিজেদেরকে বিকিয়ে দেয়, এমনটি কিন্তু নয়। টাকার বিনিময়ে ‘পেইড রিভিউ’ দেয়া ইনফ্লুয়েন্সার যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনই রয়েছে এমন অনেক ইনফ্লুয়েন্সারও, যারা সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বিভিন্ন পণ্যের সমালোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রকারভেদ
বর্তমানে যেহেতু প্রচুর পরিমাণ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে, তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই ইনফ্লুয়েন্সারদের তালিকায়ও ব্যাপক বৈচিত্র্য আসতে শুরু করেছে। তবে এখনো মোটা দাগে ইনফ্লুয়েন্সারদের চারটি ভাগে ভাগ করা সম্ভব।
- সেলেব্রিটি
- ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট
- ব্লগার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর
- মাইক্রো ইনফ্লুয়েন্সার
সেলিব্রিটি
আগে শুধু টেলিভিশন, পত্রিকা, রেডিও, বিলবোর্ড প্রভৃতির বিজ্ঞাপনের জন্য সেলেব্রিটি বা তারকারা ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে নিয়োজিত হতো। এখন তারা নিয়োগ পাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবেও। যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারকাদের প্রচুর ভক্ত-অনুরাগী (কিংবা অনুসারী) থাকে, এবং তারকারা অন্য যেকোনো মাধ্যমের চেয়ে এখানে ওইসব ভক্ত-অনুরাগীদের সাথে বেশি মিথস্ক্রিয়ায় জড়াতে পারে, তাই এই সুযোগটি বেশ ভালোভাবেই নিচ্ছে ব্র্যান্ডগুলো। তারা বিভিন্ন তারকাকে মোটা অংকের অর্থ প্রদান করছে, যেন তারকারা তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেজ কিংবা আইডিতে ওই ব্র্যান্ডের পণ্যের ব্যাপারে প্রচারণা চালায়।
এই প্রচারণা হতে পারে ওই ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহারের ছবি পোস্ট করে, কিংবা নিছকই পণ্যটির ব্যাপারে দু-চারটি ভালো কথা বলে। কিন্তু সমস্যা হলো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে তারকাদের গ্রহণযোগ্যতা সন্তোষজনক নয়। এর কারণ, সাধারণ মানুষ জেনে গেছে যে তারকারা টাকার বিনিময়ে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়, এবং ওইসব ব্র্যান্ডের পক্ষে ভালো ভালো কথা বলে। তাই আজকাল মানুষ আর তারকাদের মিষ্টি কথায় ভুলতে চায় না। কিন্তু তারপরও, পছন্দের তারকার মতো একই পণ্য ব্যবহারে করে ট্রেন্ডি হতে চাওয়া মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।

ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট
এক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট বলতে বোঝানো হচ্ছে কোনো একটি বিষয়ে সম্যক জ্ঞান ও ধারণা রয়েছে এমন বিশেষজ্ঞদের। যেমন সাংবাদিক, গবেষক, শিক্ষক, পেশাদার উপদেষ্টা ইত্যাদি। এ ধরনের বিশেষজ্ঞরা সাধারণত অর্থের বিনিময়ে কোনো ব্র্যান্ডের হয়ে প্রচারণা চালায় না। বরং তারা কোনো একটি পণ্য বা পরিষেবা সম্পর্কে নিজেরা গবেষণা চালায়, সেটির ভালো-মন্দ সকল দিক খতিয়ে দেখে, ওই পণ্যের গুণাগুণ ও কার্যকারিতা সবিস্তারে বিশ্লেষণ করে, এবং সে অনুযায়ী কোনো প্রতিবেদন তৈরি করে। তাদের এসব প্রতিবেদন অনলাইন-অফলাইন দুই মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়, ফলে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছায়।
তবে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছালেও যে এগুলোর কার্যকারিতা খুব বেশি হয়, এমনটি বলার উপায় নেই। কেননা, খুব কম মানুষই আছে যারা ওইসব প্রতিবেদনের পুরোটা পড়ার ধৈর্য রাখে। কিন্তু যারা পুরোটা পড়ে, তাদের মনোজগতে যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে, সে ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। এ ধরনের ইনফ্লুয়েন্সারদের ব্যাপারে বলা যায়, তারা মানুষকে যতটা না প্রভাবিত করে, তার থেকে সচেতন করে বেশি।
ব্লগার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর
আজকাল অনলাইনে, বিশেষত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিপুল সংখ্যক ব্লগার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর দেখা যাচ্ছে। তারাও সাধারণ মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে তাদের ক্রয়-সিদ্ধান্তকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বটে, কিন্তু তাদের ধরন কিছুটা ভিন্ন। তারা তারকাদের মতো শুধু ছবি বা দুই লাইনের পোস্টই দেয় না। আবার বিশেষজ্ঞদের মতো মহাভারতও রচনা করে না। বরং তারা মোটামুটি মাঝারি আকারের ব্লগ রচনা করে, কিংবা ভিডিও-অডিও কনটেন্ট তৈরি করে। এসব ব্লগ বা কনটেন্টকেই তারা তাদের অভিমত প্রচারের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
এসব ব্লগের পাঠক বা কনটেন্টের কার্যকারিতাও সাধারণত মাঝারি মানের হয়ে থাকে। অর্থাৎ তারকাদের পোস্টের চেয়ে কম, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদনের চেয়ে বেশি। অবশ্য আজকাল অনেক ব্লগার বা কনটেন্ট ক্রিয়েটরই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাই বিভিন্ন ব্র্যান্ড তাদেরও পৃষ্ঠপোষকতা করছে। ফলে এসব ব্লগার বা কনটেন্ট ক্রিয়েটরেরা অনেকসময় অর্থের বিনিময়ে কোনো ব্র্যান্ডের হয়ে ইতিবাচক বার্তা প্রচার করছে।

মাইক্রো ইনফ্লুয়েন্সার
মাইক্রো বা ক্ষুদ্র ইনফ্লুয়েন্সার হলো একদমই সাধারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা। এরা তারকাও নয়, বিশেষজ্ঞও নয়, আবার ব্লগার বা কনটেন্ট ক্রিয়েটরও নয়। এরা নিছকই সাধারণ মানুষ, কোনো পণ্যের প্রচারণা চালানো যাদের মূল লক্ষ্য নয়। এ ধরনের মানুষেরা কেবলই নিজেদের মনের আনন্দে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের ব্যাপারে আলোচনা করে থাকে।
তবে কেউ যেন না ভাবেন যে কোনো পণ্যের ব্যাপারে পোস্ট দিলেই ইনফ্লুয়েন্সার হয়ে যাওয়া যাবে। নানা সময়ে নানা পণ্য সম্পর্কে পোস্ট তো কমবেশি সকলেই দেয়। কিন্তু যখন কারো পোস্ট অনেক বেশি মানুষের মনোজগতে নাড়া দিয়ে যায়, এবং তাদের ক্রয়-ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে শুরু করে, তখনই কেবল ওই পোস্টদাতা হয়ে ওঠে একজন ইনফ্লুয়েন্সার।
এই ধরনের ইনফ্লুয়েন্সারদের গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেননা এরা নিজের বা অন্য কারো স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য পোস্ট করে না। তাই তাদের করা পোস্টের বক্তব্য সত্য হওয়ার সম্ভাবনা অন্য যে কারো চেয়ে বেশি। তাছাড়া সাধারণ মানুষ ব্যক্তিজীবনে এমন মানুষদেরকেই অনুসরণ করে অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, যেসব মানুষের সাথে তারা নিজেদের মিল খুঁজে পায়। তাই দেখা যায়, তারকা ইনফ্লুয়েন্সার বাদে বর্তমান সময়ে অনলাইনের অন্যান্য অধিকাংশ ইনফ্লুয়েন্সারই একদম সাধারণ মানুষ, যারা কোনো ব্র্যান্ডের সাথে জড়িত নয়, কিংবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞও নয়। এই ধরনের ইনফ্লুয়েন্সারদের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা সবচেয়ে বেশি।
তবে হ্যাঁ, কোনো সাধারণ ব্যক্তি যদি হঠাৎ করে অনেক বড় ইনফ্লুয়েন্সার হয়ে ওঠে, তখন সে-ও কিন্তু রক্ষা পায় না নামি ব্র্যান্ডগুলোর নজর থেকে। ওইসব ব্র্যান্ডগুলো অর্থের বিনিময়ে তাদেরও হাত করার চেষ্টা করে। কোনো ইনফ্লুয়েন্সার এতে রাজি হয়, আবার কোনো ইনফ্লুয়েন্সার স্বাধীনভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়াকেই শ্রেয় মনে করে।
প্রযুক্তি জগতের চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কেঃ roar.media/contribute/