স্টিভ জবস যখন প্রথম আইফোনের ঘোষণা দিয়েছিলেন, মোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে তখন স্মার্টফোন বিপ্লব শুরু হয়েছিল। আইফোনের বিকল্প ডিভাইসগুলোর জন্যে গুগল তখন অ্যান্ড্রয়েড ডেভেলপের দিকে ঝুঁকেছিল। প্রযুক্তি দুনিয়ার একটা বিশাল পরিবর্তন আসছে, সবাই তা দেখতে পাচ্ছিল। কিন্তু অল্প কিছু মানুষই শুধু অনুমান করতে পেরেছিল, কত দ্রুত এবং সম্পূর্ণভাবে স্মার্টফোন তাদের পথে সমস্ত পুরনো মোবাইল ইন্ডাস্ট্রিকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। নতুন ফর্ম ফ্যাক্টর, সাথে গ্রাহকের নতুন ধরনের চাহিদা, সাপ্লাই চেইন এবং নতুন ব্যবসা মডেল একসময়ের প্রচণ্ড সফল কোম্পানিগুলোকে নতিস্বীকার করতে বাধ্য করে।
২০০৯ সালে মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি যেখানে ছিল, আজকের গাড়ি ইন্ডাস্ট্রি তেমন এক জায়গায় রয়েছে। এই ইন্ডাস্ট্রিতে এখন ইলেকট্রিক গাড়ির বিপ্লব চলছে। এই বিপ্লব ইতোমধ্যে তাদের ‘আইফোন’ ধাপ পার করেছে এবং এখন তার ‘এন্ড্রয়েড’ মূহুর্ত চলছে। স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রির প্রথমদিকের সময়ের মতো অনেক সাদৃশ্য এখানে খুঁজে পাওয়া যাবে, যদি ঠিকমতো মনোযোগ দেওয়া যায়। এটা কোনো কাকতাল নয় যে, বড় স্মার্টফোন কোম্পানি যেমন শাওমি, হুয়াওয়ে, এলজি, সনির মতো কোম্পানিরা গাড়ির ব্যবসায় প্রবেশ করছে। স্মার্টফোন বিপ্লবের সময়টাকে বিশ্লেষণ করলে বর্তমানের ইলেকট্রিক গাড়ি বিপ্লব এবং এর ভবিষ্যৎ বুঝতে সহজ হবে।
ইলেকট্রিক গাড়ির প্রধান ট্রেন্ডগুলো হচ্ছে, গাড়িকে বৈদ্যুতীকরণ, স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং এবং স্ক্রিন ও সফটওয়্যার ব্যবহার বৃদ্ধি। এগুলোর মধ্যে প্রধানত দুইটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। একটি হচ্ছে, মৌলিকভাবে এই ট্রেন্ডগুলো গাড়ি উৎপাদন ও বিক্রির ব্যবসাটি পরিবর্তন করে ফেলছে। অন্যটি হলো, পুরোনো ধাঁচের গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর প্রধান শক্তি যে জায়গায়, এই ট্রেন্ডগুলো সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ, দশকের পর দশক ধরে এই কোম্পানিগুলো যে প্রযুক্তি নির্মাণ করেছে, সেগুলোর অনেকগুলো থেকেই এই ট্রেন্ডগুলো ইন্ডাস্ট্রিকে সরিয়ে নিয়ে আসছে।
ইন্ডাস্ট্রি যে বিদ্যুতায়নের দিকে সরে আসছে, এর কিছু নমুনা দেখা যায়। যেমন: বিএমডব্লিউ তাদের ইঞ্জিনের সিলিন্ডারাকৃতির আইকনিক ভবনটিকে কিছু বছর আগে এমনভাবে সাজিয়েছে, যেন এটিকে ব্যাটারির মতো দেখা যায়। অতীতের গাড়িগুলোর সাথে ভবিষ্যতের গাড়িগুলোর অনেক সাদৃশ্য থাকবে। গাড়ির দৃশ্যমান মূল ব্যাপারগুলো হচ্ছে, চাকা, সিট, উইন্ডশিল্ড ইত্যাদি। কিন্তু আগের ফিচার ফোনের সাথে স্মার্টফোনের সাদৃশ্যগুলো নোকিয়া এবং এরিকসনের মতো ইন্ডাস্ট্রি জায়ান্টকে পতন থেকে বাঁচানোর জন্যে যথেষ্ট ছিল না। ধাতব প্লেট বাঁকানো কিংবা ব্লিংকার ডিজাইন করতে দক্ষ হলেও, বিএমডব্লিউ কিংবা টয়োটার মতো কোম্পানি অনেকগুলো নতুন প্রতিযোগীর আক্রমণ থেকে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না।
গত বছর গাড়ি নির্মাণের ৪০ শতাংশ খরচ ইলেকট্রনিক্সের পেছনে ব্যয় হয়েছে। এক দশক আগে যা ছিল ২৭ শতাংশ এবং ২০০০ সালে এটা ছিল মাত্র ১৮ শতাংশ। খরচের দিক থেকে তাই এটা অনেকটা কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক আইটেম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে গাড়িচালকেরা সামনের রাস্তার তুলনায় তাদের সামনে থাকা ইন্টারনেট সংযুক্ত বিশাল স্ক্রিনের দিকে বেশি মনোযোগ দেবে। এর ফলে, এখান থেকে বিভিন্ন ধরনের উপার্জনও বের হবে। কিছু কোম্পানি ইতোমধ্যেই ব্যবহারকারীদেরকে স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং সফটওয়্যার আপগ্রেড করার সুযোগ দিচ্ছে। আবার, অর্থের বিনিময়েও সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে গাড়ির বিভিন্ন কম্পোনেন্টের আপগ্রেড কেনার সুযোগ রয়েছে। এই ট্রেন্ড ভবিষ্যতে ক্রমেই বৃদ্ধি পাবে। মোবাইল ইন্ডাস্ট্রিও প্রথমে প্রধানত হার্ডওয়্যার ব্যবসা ছিল। কিন্তু ইন্টারনেট ও আমাদের ওয়ালেটের সাথে যখন এটাকে সংযুক্ত করা হলো, বিভিন্ন ডেভেলপারের অ্যাপ ও সার্ভিসের মাধ্যমে এটি ইন্টারনেট ও সফটওয়্যার ভিত্তিক ব্যবসা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। পরে শুধু মোবাইল কেন্দ্রিক অনেক সফটওয়্যার কোম্পানিও তৈরি হয়েছিল।
স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং, অন্য ডিভাইসের সাথে সংযুক্তি, বিদ্যুতায়ন- এই উপাদানগুলোই প্রধানত গাড়ির মূল পরিবর্তনগুলোতে প্রভাব ফেলছে। ১৯৮০-র তুলনায় আমেরিকায় গড়ে গাড়ির ব্যবহার বিশ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বেইজিং কিংবা কায়রোর মতো শহরগুলোতে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটা বড় সময় গাড়ির ভেতরে কেটে যায়। এই সময়কে কাজে লাগাতে গাড়িকে শুধুমাত্রই বাহনের উপযোগিতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। গাড়িকে অন্য আরো প্রয়োজনীয় কাজের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। এখানেই সমাধান হিসেবে আসতে পারে সফটওয়্যারের ব্যবহার।
ভবিষ্যতে গাড়ি ব্যবসাকে ঘিরে গড়ে উঠবে বিশাল সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি, যেখানে ক্রেতারা এগুলো কিনবে, বিজ্ঞাপন দেখবে এমনকি এরকম প্রযুক্তির উপরে নির্ভর করে গাড়ি পছন্দ করবে। গাড়ির উৎপাদন খরচ ও উপার্জন উভয়ই ক্রমবর্ধমানভাবে এই অগ্রসরমান প্রযুক্তির সাথে একাত্ম হয়ে উঠবে। ব্যবসার এই মডেলটা অনেকটাই আজকের স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রির সাথে মিলে যায়।
প্রতিষ্ঠিত গাড়ি কোম্পানিগুলো হয়তো ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে তারা যে আইসবার্গের সাথে ধাক্কা খেতে চলেছে, তা দেখতে পাচ্ছে এবং তা এড়ানোর জন্যে প্রাণপণেই চেষ্টা করছে। তাই ইলেকট্রিক গাড়ি উৎপাদনে মনোযোগ দিচ্ছে, স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং সফটওয়্যারে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
আগের ফোন ইন্ডাস্ট্রির জায়ান্টরা যদি আমাদেরকে কিছু শিখিয়ে থাকে তা হচ্ছে, বড় জাহাজগুলো দিক পরিবর্তন করতে সময় নেয় অনেক, তাই আইসবার্গ দেখতে পেলেই যে তা এড়ানো সম্ভব হবে ব্যাপারটা সবসময়ই এমন নয়।
গাড়ি ইন্ডাস্ট্রির সাথে স্মার্টফোন বিপ্লবটি আরেক দিক থেকে সমান্তরাল। প্রথম আইফোন ঘোষণা করার পরে, ইন্ডাস্ট্রির অন্যেরা বুঝে গিয়েছিল যে, এই বিপ্লবে টিকে থাকতে হলে মডেলটির অনুকৃতি করতে হবে। এভাবে অনেকগুলো সাপ্লাইয়ারের একটা বিশাল জাল তৈরি হয়ে গিয়েছিল। গুগল থেকে শুরু করে কোয়ালকম, মিডিয়াটেক, কর্নিং এবং আরো অনেক নির্মাতা কোম্পানি একত্রে কাজ করে অনেক দ্রুত সময়ে এন্ড্রয়েড বিপ্লবটি এনেছিল।
এই কোম্পানিগুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য ছিল, স্মার্টফোনকে ‘কম্পোনেন্টেইজিং ও স্ট্যান্ডার্ডাইজিং’ করতে পারা। ‘কম্পোনেন্টেইজিং ও স্ট্যান্ডার্ডাইজিং’ অর্থ, ফোনের কম্পোনেন্টগুলোর একক কোনো নির্মাতা থাকলো না। প্রসেসর, অপারেটিং সিস্টেম, ক্যামেরা সেন্সর ইত্যাদি সবগুলো কম্পোনেন্টই আলাদা আলাদা কোম্পানি থেকে কিনে এনে সবাই তা জোড়া দেয়। এর ফলে, স্মার্টফোন হয়ে উঠলো লিগো ব্লকসের মতো। শাওমির মতো নতুন কোম্পানিও নিজেদের ফোনে জায়ান্ট কোম্পানিগুলোর মতো একই অপারেটিং সিস্টেম, প্রসেসর ও ক্যামেরা সেন্সরের ব্যবহার করতে পারছিল। এমনকি তারা ফক্সকনের মতো কন্ট্রাক্ট ম্যানুফাকচারের মাধ্যমে ফোনগুলো এসেম্বলও করিয়ে নিতে পারছিল। ফলে, তারা শুধুমাত্র স্মার্টফোন ডিজাইন ও বিক্রির দিকেই মনোনিবেশ করতে পারছিল। এ রকম কম্পোনেন্টেইজিংয়ের ফলে ব্যবসাক্ষেত্রটি একটি সমান প্রতিযোগিতার মাঠে পরিণত হয়েছে।
গাড়ি ইন্ডাস্ট্রিতে ঠিক একইরকম একটি বিপ্লব দেখা যাচ্ছে। তুলনা করলে, এখানের আইফোন নির্মাতা হচ্ছে টেসলা। প্রয়োজনীয় পালিশ, বৈদ্যুতীকরণ, স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিংয়ের পরে তারা এপলের ব্যবসা মডেলটিকে অনুকরণ করছে। এপলের মতো টেসলারও নিজস্ব উৎপাদন ইকোসিস্টেম রয়েছে। এপলের মতোই টেসলা নিজের সফটওয়্যার তৈরি করে। নিজেদের চিপও তারা ডিজাইন করে। নিজেদের স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং এলগোরিদমও তারা ডেভেলপ করে। সাম্প্রতি নিজেদের ব্যাটারিও তারা তৈরি করা শুরু করেছে। বিভিন্ন শহরজুড়ে তারা টেসলার ফাস্ট চার্জারের একটি জাল বিস্তার করে রেখেছে। আবার, আন্ডারগ্রাউন্ডে টেসলা গাড়ি চলাচলের জন্যে একটি স্বতন্ত্র সিস্টেমও তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ, এপলের মতোই তারা নিজেদের সাপ্লাই, পরিবেশক, কম্পোনেন্ট সব নিয়ন্ত্রণ করে।
টেসলা এই নতুন ফর্ম ফ্যাক্টরের প্রতিটি উপাদান আলাদাভাবে চিহ্নিত করেছে এবং একইসাথে এগুলোর জন্যে কনজ্যুমার চাহিদা তৈরি করেছে। টেসলা কয়েক বছরের মধ্যেই পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান গাড়ি কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে, ইন্ডাস্ট্রির অন্য কোম্পানিগুলো তাদের সাথে প্রতিযোগিতার জন্যে উঠেপড়ে লেগেছে। ইন্ডাস্ট্রির বাকিরা ভবিষ্যৎ ইন্ডাস্ট্রি কেমন হবে সে ব্যাপারে ধারণা পেয়েছে, এবং তারা এই মডেলটি অনুকরণ করতে চাইছে। অর্থাৎ, গাড়ি কোম্পানি এখন তাদের এন্ড্রয়েড মুহূর্ত পার করছে।
কয়েক সপ্তাহ আগে এনভিডিয়া ওরেন এবং এটলান নামে গাড়ির জন্যে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের চিপের ঘোষণা দিয়েছে। তারা হাইপেরিয়ন নামের একটি রেফারেন্স কিটের কথাও ঘোষণা দিয়েছে যেখানে প্রয়োজনীয় সব সেন্সর ও সফটওয়্যার রয়েছে। এগুলো গাড়ি নির্মাতাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং সংযুক্ত করার সুযোগ দিবে। এর কয়েক মাস আগে এলজি ও কন্ট্রাক্ট ম্যানুফ্যাকচারার ম্যাগনা ঘোষণা দিয়েছে, তারা ইলেকট্রিক পায়ারট্রেইনের উপর কাজ করবে যেখানে মোটর ইনভার্টার এবং অনবোর্ড চার্জার থাকবে। এগুলো গাড়ি নির্মাতারা সহজেই তাদের গাড়িতে সংযুক্ত করতে পারবে। গুজব ছিল যে, এপল কার তাদের প্রথম গ্রাহক হতে চলেছে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির সবাইকেই অবাক করে দিয়ে ভক্সওয়াগন তাদের প্রথম মেব ইলেকট্রিক প্ল্যাটফর্ম লাইসেন্সের আয়ত্তাধীন করেছে। এর মধ্যে মোটর, ব্যাটারি ও পাওয়ারট্রেইন রয়েছে। ফোর্ড এরমধ্যেই এটা ব্যবহার করে গাড়ি নির্মাণের জন্যে ঘোষণা দিয়েছে।
এআই মোটিভের মতো স্টার্টআপ রয়েছে যারা ক্লায়েন্টের জন্যে স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং ডেভেলপ করে। কন্ট্রাক্ট উৎপাদনকারী ফক্সকন গাড়ি এসেম্বলির ব্যবসায় প্রবেশ করছে। আবার, অনেকগুলো কোম্পানি একত্রে চার্জিং নেটওয়ার্কও তৈরি করছে, যেন টেসলার সুপারচার্জারের সাথে প্রতিযোগিতা করা যায়।
‘কম্পোনেন্টেইজিং ও স্ট্যান্ডার্ডাইজিং’য়ের ফলে কম্পিউটার ও স্মার্টফোনের জন্যে একটি প্রধান অপারেটিং সিস্টেম তৈরি হয়েছে। গাড়ির ক্ষেত্রেও তা হতে যাচ্ছে। গাড়ির স্ক্রিনে অগোছালো ও অপ্রয়োজনীয় অনেকগুলো কাস্টম ইউজার ইন্টারফেস নির্মাতাদেরকে সনি ও হুয়াওয়ে সহ অনেক কোম্পানি ধীরে ধীরে সরিয়ে দিচ্ছে। পোলস্টারের মতো নতুন কোম্পানি ঘোষণা দিয়েছে, তারা গুগলের সফটওয়্যার ব্যবহার করে গাড়িতে সেবা দেবে। একবার যখন নতুন নির্মাতাগুলো বড় কোম্পানিগুলোর মতো নিজেদের গাড়িতে একইধরনের ইঞ্জিন, ব্যাটারি, সেলফ ড্রাইভিং ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারবে, এই ইন্ডাস্ট্রিও তখন সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে পরিণত হবে।
ভোক্তাদের মানসিকতাও ধীরে ধীরে পরিবর্তন হবে। কয়েক দশক ধরে মার্সিডিজ, অডির মতো কোম্পানিগুলো ব্র্যান্ড তৈরি ও বিজ্ঞাপনের যে অনুশীলন করেছে তা ধীরে ধীরে কমে যাবে। নতুন কোম্পানিগুলো যখন একইধরনের কম্পোনেন্ট ব্যবহার করবে, ক্রেতারা জানবে যে, এই ব্র্যান্ডগুলোর গাড়ি অন্যদের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে কেনা যৌক্তিক না। এরকম কম্পোনেন্টেইজড মডেল ব্যবহার করে সনি ‘ভিশন এস’ নামের নতুন গাড়ি নির্মাণ করছে। সম্প্রতি সেটার রোড টেস্টিংও শুরু করেছে।
হেনরি ফোর্ডের ভাবনা অনুসরণ করে মোটরগাড়ি আজকের পরিবহনের একটি বড় উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯২০-য়ের দশক থেকে শুরু করে ৫০ এবং ৬০-এর দশকেও এই গাড়ি ইন্ডাস্ট্রির প্রধান উদ্ভাবন ছিল গতি ও যাত্রীর আরামপ্রদতা। ১৯৮০-র দশকে এসে এই ইন্ডাস্ট্রি যখন প্রচণ্ড লাভজনক হয়ে উঠলো, তখনও তাদের পণ্যটি মৌলিকভাবে সেই আগের দশকের মতোই রয়ে গেল। ফলে, কোম্পানিগুলোর বিকাশ একজায়গায়ই স্থির হয়ে রইলো। দরকার হলো নতুনত্বের, উদ্ভাবনের। কোম্পানিগুলো মৌলিকভাবে সেই একই গাড়িকে বিভিন্নভাবে ব্র্যান্ডিং করা শুরু করেছিল। এসইউভি এরকমই একটি ব্র্যান্ডিং ছিল, প্রায় প্রত্যেকটা গাড়ি কোম্পানি এ ধরনের গাড়ি নির্মাণ ও তার বিজ্ঞাপন শুরু করেছিল। ইউরোপে, এরকমই একধরনের নতুন ব্র্যান্ডিং পেল এমপিভি গাড়িগুলো। কিন্তু, মৌলিক উদ্ভাবনের দিক থেকে চিন্তা করলে এগুলোতে বিশেষ কিছুই যোগ হয়নি।
টেসলার উদ্ভাবন এ মুহূর্তে সবাইকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। সম্ভবত, গাড়ি উদ্ভাবনের পরে এই ইন্ডাট্রিতে এটাই প্রথম কোনো মৌলিক পরিবর্তন। গাড়ি কোম্পানিগুলোর জন্যে এরকম নতুনের পেছনে ছোটার মতো পরিস্থিতি এর আগে কখনোই আসেনি। এই পরিবর্তনকে চিহ্নিত করতে না পারলে, সে অনুযায়ী নতুন ব্যবসা মডেল দাঁড়া করাতে না পারলে হোঁচট খাওয়া অনিবার্য। কোনো কোম্পানিই ইতিহাসের পাতায় দ্বিতীয় নোকিয়া হিসেবে নাম লেখাতে চাইবে না।