বছর দশেক আগেও বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এত বেশি ছিল না। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাত্রা এবং পরিমাণও ছিল নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধ। তাই তখনকার দিনে যারাই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে জানত, তাদেরকে সবাই খুব ‘স্মার্ট’ মনে করত।
কিন্তু সে দিন আজ ফুরিয়েছে। আমাদের সমাজের সর্বস্তরের মানুষই এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তবে প্রযুক্তি, বিশেষত অনলাইন বিষয়ক প্রাথমিক কোনো শিক্ষা ছাড়াই বেশিরভাগ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। তাই ইন্টারনেট ব্যবহার এখন আর কোনো স্মার্টনেস নয়। বরং ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন ভুল করে সহজেই নিজেদেরকে ‘আনস্মার্ট’ প্রমাণিত করা সম্ভব।
মজার ব্যাপার হলো, অনলাইনে এসব ভুল যে কেবল তথাকথিত অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত মানুষেরাই করে থাকে, এমনটা কিন্তু পুরোপুরি ভুল ধারণা। অনেক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত, তা-ও আবার উচ্চশিক্ষিত মানুষও, অনলাইন বিষয়ক পর্যাপ্ত জ্ঞানের ঘাটতির কারণে বিভিন্ন ভুল করে থাকতে পারে। এই লেখায় একে একে তুলে ধরব সেরকমই কিছু সাধারণ ভুল, যেগুলো আমরা প্রায় সকলেই করে থাকি।
ইন্টারনেট ভাগ্যে বিশ্বাস
ইন্টারনেটে ভুয়া লটারি জিতে কয়েক মিলিয়ন ডলার প্রাপ্তির মেইল পায়নি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। কিছুদিন পরপরই আমাদের ইনবক্সে এমন কিছু মেইল এসে জমা হয়, এবং সেগুলোকে সত্যি বলে মনে করে আমরা অনেকেই প্রচন্ড উৎফুল্ল হয়ে উঠি। বিপুল পরিমাণ অর্থপ্রাপ্তির আনন্দে আমরা এতটাই দিশেহারা হয়ে যাই যে, আমাদের হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়। আমাদের মাথায় এই সহজ ব্যাপারটিই আসে না যে, “আমি তো কোনো লটারিতে অংশই নিইনি, তাহলে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলাম কীভাবে!” আরো ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এ ধরনের মেইলে প্রবেশ করে স্বাচ্ছন্দ্যে আমাদের নিজেদের বিভিন্ন গোপন তথ্য, এমনকি ব্যাংক ডিটেইলসও, তাদেরকে জানিয়ে দিই। ফলে পরবর্তীতে আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
কিন্তু একটু সচেতন হলেই এ ধরনের অনলাইন প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। এজন্য আমাদের যা করতে হবে তা হলো, মেইলে প্রদত্ত লিংকে ক্লিক করার বদলে নতুন কোনো ব্রাউজার বা ট্যাব খুলতে হবে। এরপর যে কোম্পানির নামে মেইলটি এসেছে, সেই নামটি এবং সেইসাথে ‘scam বা ‘review’ শব্দটি লিখে সার্চ দিতে হবে। সম্ভাবনা খুবই প্রবল যে আমাদের আগেও অন্য কোনো ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ইতিমধ্যেই ওই কোম্পানির নামে অভিযোগ জানিয়ে কিছু লিখে ফেলেছে অনলাইনে। সুতরাং ওই ভুঁইফোঁড় কোম্পানির পাতা ফাঁদে পা দেয়ার আর কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
তবে অনেকসময় এমনও হতে পারে যে, যার কাছ থেকে মেইলটি এসেছে তাকে আমাদের কাছে আসল মনে হচ্ছে। কিংবা তার নামে গুগলের কাছেও কোনো অভিযোগ নেই। সেক্ষেত্রে আমরা লিংকডইনে প্রবেশ করে ওই ব্যক্তি বা তার কোম্পানির নাম লিখে সার্চ দিতে পারি। কোনো ব্যক্তির সম্পর্কে তথ্য খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে ফ্যামিলি ট্রি নাউ ওয়েবসাইটটিও যথেষ্ট সহায়ক।
নিরাপত্তাকে গুরুত্ব না দেয়া
অনলাইনে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারটিকে আমরা অনেকেই খুব একটা গুরুত্ব দিই না, এড়িয়ে যাই। যেমন: কোনো ওয়েবসাইটে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন থাকলেও, অনেকেই সেটি ব্যবহার করি না। এর পেছনে আমাদের যুক্তি হলো, এটি ব্যবহার করলে নতুন কোনো ডিভাইস বা ব্রাউজার দিয়ে ওই অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে গেলে আমাদেরকে বাড়তি কিছু ধাপ পেরিয়ে আসতে হবে, কিংবা নতুন করে পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে।
এ কথা সত্য যে বাড়তি কিছু ধাপ পেরোনো বা নতুন পাসওয়ার্ড সেট করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু বিশ্বাস করুন, একটু সময় লাগলেও এই ফিচারটির উপকারিতা অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি। এতে করে আমাদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার আশঙ্কা একেবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়।
মদ্যপ অবস্থায় অনলাইনে কেনাকাটা করা
শুনতে অদ্ভুত মনে হতে পারে, কিন্তু অ্যামাজনের মতো ই-কমার্স সাইট ‘ড্রাঙ্ক শপিং’-এর মাধ্যমেই মাসে অতিরিক্ত কয়েক বিলিয়ন ডলার আয় করে থাকে। বিষয়টি অনেকটা এমন যে, কোনো ব্যক্তি হয়তো প্রচুর পরিমাণে পান করে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলল, এবং সেই অবস্থাতেই অনলাইনে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে কোনো জিনিসের অর্ডার দিয়ে ফেলল। নেশা কেটে যাওয়ার পর যখন সে স্বাভাবিক হলো, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
তবে এ থেকে মুক্তিরও উপায় আছে। অধিকাংশ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ডেই অর্থ ব্যয়ের পরিমাণকে ‘লিমিট’ করে রাখা সম্ভব। এবং যখনই আপনি তার চেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ খরচ করতে যাবেন, আপনি একটি টেক্সট মেসেজ বা মেইল পাবেন। আপনি আসলেই ওই পরিমাণ অর্থ খরচ করতে চান, তা নিশ্চিত করার পরই কেবল আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে সেই অর্থ কেটে নেয়া হবে। এর আরেকটি সুবিধা হলো, অন্য কেউ আপনার ক্রেডিট কিংবা ব্যাংক কার্ড থেকে অর্থ খরচ করতে গেলেও আপনি তৎক্ষণাৎ জানতে পারবেন, এবং আপনার অনুমোদন ছাড়া সেই অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে না।
বিভিন্ন বিনোদনমূলক কুইজে অংশ নেয়া
“জেনে নিন পূর্বজন্মে আপনি কী ছিলেন” কিংবা “দেখুন আপনার ভবিষ্যৎ স্বামী/স্ত্রী দেখতে কেমন হবে” – এ জাতীয় কুইজ প্রায়ই আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিউজফিডে চলে আসে, এবং স্বাভাবিকভাবেই আমরা প্রলুব্ধ হই এসব কুইজে অংশ নিতে। আমরা খুব ভালো করেই জানি, এগুলো একদমই সত্যি নয়। কিন্তু তবু ক্ষণিকের বিনোদন লাভের উদ্দেশে আমরা এসব কুইজের লিংকে ক্লিক করি। ভাবি, “কী আর হবে এমন নিরীহ বিনোদনে!”
কিন্তু না। বিষয়টি মোটেই নিরীহ নয়। বরং এর মাধ্যমে আমরা আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অনেক গোপন তথ্যই এসব তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ্লিকেশনকে দিয়ে দিই, যা তারা আবার চড়া দামে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতার কাছে বিক্রি করে। বিষয়টি খুবই সহজ। আমরা যখন এসব কুইজে অংশ নিচ্ছি, তারা আমাদের কাছে জিজ্ঞেস করেই নিচ্ছে যে তারা আমাদের ফেসবুক প্রোফাইলে থাকা তথ্যগুলো গ্রহণ করবে কি না। আমরা তাতে সম্মতি দিচ্ছি, ফলে তারা সেসব তথ্যের মাধ্যমে তাদের অ্যাপে আমাদের একটি নতুন প্রোফাইল তৈরি করছে। সুতরাং, আমাদের গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ায় ফেসবুকের যতটা না দায়, তার চেয়ে অনেক বেশি দায় আমাদের নিজেদেরই।
সহজ কিংবা অনুমেয় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা
আমাদের প্রায় সকলেরই একটি সাধারণ সমস্যা হলো, আমরা আমাদের পাসওয়ার্ড মনে রাখতে পারি না। আসলে অনলাইনে আমাদেরকে প্রায় সময়ই নতুন নতুন ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়, এবং স্বাভাবিকভাবেই সকল পাসওয়ার্ড মনে রাখা সম্ভব নয়। তাই আমরা করি কী, একদম সহজ কোনো পাসওয়ার্ড যেমন ‘123456’, ‘abcd1234’, ‘password’ প্রভৃতি পাসওয়ার্ড হিসেবে সেট করে রাখি। অনেকে আবার সকল ওয়েবসাইটে একই পাসওয়ার্ডও দিই। এর ফলে আমাদের যেকোনো একটি অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হলেই, হ্যাকারের পক্ষে বাকি সব অ্যাকাউন্টও হ্যাক করা সহজ হয়ে যায়।
এমন সমস্যা থেকে মুক্তিলাভের দুটি উপায় রয়েছে। প্রথমত, আমরা অনলাইনে কোনো ফ্রি পাসওয়ার্ড জেনারেটর ব্যবহার করতে পারি। সেখানে হয়তো আমাদের পাসওয়ার্ড হিসেবে বলা হলো ‘p6Us9temWz#B’, যা কোনোভাবেই অন্য কোনো ব্যক্তির পক্ষে অনুমান করা সম্ভব হবে না। আর দ্বিতীয়ত, এমন পাসওয়ার্ড যেহেতু আমরা নিজেরাও মনে রাখত পারব না, তাই আমরা একটি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে পারি, যেখানে আমাদের সকল অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড নিরাপদে গচ্ছিত থাকবে।
যেখানে সেখানে পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করা
মুফতে ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারলে কে-ই বা সে সুযোগ হারাবে! তাই যেখানেই আমরা ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের সুযোগ পাই, সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করি। কিন্তু এভাবে পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের গোপনীয়তা ভঙ্গের আশঙ্কা থাকে, ব্যবহৃত ডিভাইসটিতে আক্রমণও হতে পারে।
এ থেকে পরিত্রাণের সহজ উপায় হলো কোনো প্রিমিয়াম ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) ব্যবহার করা। ভিপিএন প্রত্যেক ব্যবহারকারীর জন্য একটি নিরাপদ সার্ভারের মাধ্যমে এনক্রিপ্টেড কানেকশন তৈরি করে দেয়, যা দিয়ে নিজেকে আড়াল করেও ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। বড় বড় ব্যবসায়ে অনেকদিন ধরেই ভিপিএন ব্যবহৃত হয়ে আসছে, এবং এখন নিরাপত্তা একটি বড় প্রশ্ন হওয়ায় ব্যক্তিগত কাজেও ভিপিএন ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অনলাইনে কারো সাথে লড়াই
হারতে আমরা কেউই পছন্দ করি না। হোক তা অফলাইনে কিংবা অনলাইনে। যখনই কেউ আমাদের বিরুদ্ধে চলে যায়, আমরা চাই সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে তাকে পরাস্ত করতে। কিন্তু অনলাইনে যখন কোনো অপরিচিত ব্যক্তির সাথে লড়াই শুরু হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটি আর স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতায় সীমাবদ্ধ থাকে না। একসময় সেটি ব্যক্তিগত পর্যায়ে পৌঁছে যায়, এবং সেই লড়াইয়ের ফলে নিজেদের প্রচুর মূল্যবান সময়ের অপচয় হয়, যাবতীয় মনোযোগও সেই লড়াইয়ে খরচ হয়ে যায়।
কিন্তু অনলাইনে কারো সাথে এমন যুদ্ধ করে আসলে কি কোনো লাভ আছে, কেবল মানসিক প্রশান্তি লাভ ছাড়া? অথচ একপর্যায়ে সেই যুদ্ধও এমন নোংরামির পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, সেখানে জেতার পরও কোনো শান্তি পাওয়া যায় না, বরং মনের মধ্যে সার্বক্ষণিক অশান্তি বিরাজ করতে থাকে। তাই আমাদের কখনোই উচিত নয় অনলাইনের এসব লড়াইকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়া। অনলাইনে কারো সাথে লড়াই করে আমরা তার মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারব, তেমন সম্ভাবনা খুবই কম। তাহলে কী লাভ অযথা এর মাধ্যমে নিজেদের ব্যক্তিজীবনের শান্তি জলাঞ্জলি দিয়ে?
প্রতি মুহূর্তের ছবি আপলোড দেয়া
আমরা অনেকেই নিজেদের বাস্তবজীবনের প্রতিটি মুহূর্তের ছবি তৎক্ষণাৎ অনলাইনে আপলোড করতে পছন্দ করি। কিন্তু কখনো কখনো আমরা একটু বেশিই বোকামি করে ফেলি। নিজেদের এমন সব গোপনীয় ও সংবেদনশীল মুহূর্তের ছবি অনলাইনে দিয়ে দিই, যা পরবর্তীতে আমাদের বিপদের কারণ হতে পারে।
যেমন ধরুন, একজন ব্যক্তি বারে বসে নিজের মদ্যপানের সময় তোলা ছবি ফেসবুকে আপলোড দিল। তার কাছে মনে হলো, এতে কী আর এমন ক্ষতি আছে। কিন্তু না, ক্ষতি আছে। পরবর্তীতে হয়তো কোনো একসময় আদালতে তার ডিভোর্সের মামলা উঠল, আর তখন তার ওই মদ্যপ অবস্থার ছবি দেখিয়েই মামলাটিকে পুরোপুরি তার বিপক্ষে নিয়ে যাওয়া হলো। ফলে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ দিতে হলো।
এছাড়া আরেকটি চিন্তার বিষয় হলো, বাবা-মা যখন সন্তানের সম্মতি ছাড়াই তাদের ছবি অনলাইনে দিয়ে দেন। হয়তো সন্তানের বয়স এখন সাত বছর, তাই সে সম্মতি দেয়ার মতো পরিণত হয়ে ওঠেনি। কিন্তু ২০ বছর পর, যখন তার বয়স হবে ২৭, তখন যদি তার কাছে অনলাইনে থাকা নিজের সাত বছর বয়সের কোনো ছবিকে লজ্জাজনক মনে হয়? এবং তখন যদি সে এর জন্য তার বাবা-মাকে দায়ী করে? তাই প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত অনলাইনে সন্তানের ছবি আপলোডের সময় খেয়াল রাখা, “এটি ভবিষ্যতে আমাদের সন্তানদেরকে অস্বস্তিতে ফেলবে না তো?”
প্রতি মুহূর্তের কথা স্ট্যাটাস দিয়ে জানানো
আমাদের আরেকটি বদভ্যাস, যেটি আমাদেরকে ভবিষ্যতে বিপদে ফেলতে পারে, তা হলো: আমরা কখন কী করছি, কোথায় যাচ্ছি এই সব কিছুই স্ট্যাটাস দিয়ে সবাইকে জানানো। হ্যাঁ, আমরা নিজেদেরকে ভালোবাসি, এবং নিজেদের আনন্দের কথা পৃথিবীকে জানাতে চাই। কিন্তু এর মাধ্যমে আমরা নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছি না তো?
ধরুন, আপনি কোথাও ট্যুরে যাওয়ার সময় সে খবর লোকেশনসহ স্ট্যাটাস দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিলেন। ওদিকে আপনাকে দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করছে এমন কোনো চোর এর মাধ্যমে জেনে গেল আপনার বাড়িতে এখন কেউ নেই। তাই সে অনায়াসে আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার খালি বাড়িটাকে আরো খালি করে দিল।
উপরের উদাহরণটি অনেকের কাছেই অতিকল্পনা মনে হতে পারে। কিন্তু সকলের প্রতি পরামর্শ থাকবে, তাৎক্ষণিকভাবে ব্যক্তিজীবনের কোনো তথ্য সবাইকে জানানোর বদলে, একটু রয়ে-সয়ে, সবকিছু শেষ হওয়ার পর জানান। এতে করে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাই এড়ানো সম্ভব হবে।
অনলাইন থেকে তথ্য নিয়ে নিজেই নিজের ডাক্তারি করা
ধরি, আমার বিগত আট মাস ধরে কাশি হচ্ছে। এটি কোন রোগের লক্ষণ তা জানার জন্য আমি অনলাইনে সার্চ দিলাম, এবং আবিষ্কার করলাম আমি একাধারে নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ, অ্যাসিডিটি এবং ব্রংকাইটিস রোগে আক্রান্ত। কেননা সবগুলো রোগের উপসর্গই যে আমার মাঝে বিদ্যমান। আর তাই আমি প্রচন্ড আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম।
না, এটি কোনো কৌতুক নয়। অনলাইনে বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে জেনে, সেগুলোর সাথে নিজেদের মিল খুঁজে পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ার স্বভাবটা আমাদের অনেকের মধ্যেই আছে। আবার এর উল্টো চিত্রও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়। কেউ হয়তো আসলেই অসুস্থ, কিন্তু অনলাইন ঘেঁটে সে দেখল কোনো রোগের উপসর্গের সাথে তার সমস্যাগুলো মেলে না। তাই সে নিশ্চিন্ত হয়ে বাসায় বসে থাকল।
এই দুটি জিনিসই কিন্তু খুব ক্ষতিকর। অনলাইনে বিভিন্ন রোগ ও চিকিৎসা বিষয়ক আর্টিকেল লেখা হয় আমাদেরকে সচেতন করতে। এবং সেগুলোতে এ কথাও উল্লেখ করা থাকে যে, “আপনার মাঝে অনুরূপ কোনো সমস্যা থাকলে অতিসত্বর একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।” অর্থাৎ সেসব আর্টিকেল কখনোই নিজেদেরকে শতভাগ নিখুঁত বলে জাহির করে না। তাই আমাদেরও কখনোই উচিত না কেবল অনলাইনে প্রাপ্ত আর্টিকেলগুলোর উপরই নির্ভর করে থাকা। স্রেফ কিছু আর্টিকেল পড়েই যদি ডাক্তারির ডিগ্রি নেয়া যেত, তাহলে কোনো মেডিকেল শিক্ষার্থী মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, বছরের পর বছর চেষ্টা করে এমবিবিএস পাস করতে চাইতেন না। সুতরাং অনলাইন আর্টিকেল পড়ে সচেতন হওয়া পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু তারপরও যেকোনো শারীরিক সমস্যায় অবশ্যই আমাদেরকে প্রকৃত চিকিৎসকের দ্বারস্থই হতে হবে।
চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/