সামনেই আসছে পূজার ছুটি। নাগরিক যান্ত্রিকতা ছেড়ে কয়েকটা দিনে জন্য নিশ্চয়ই ভ্রমণে বের হবেন। প্রকৃতির অনন্য সুধা পান করে আবার ফিরবেন কর্মস্থলে। কিন্তু ভাবছেন কোথায় যাওয়া যায়? কিভাবে যাবেন? পরিবার নিয়ে গেলে কোথায় থাকবেন? সব চিন্তার অবসান ঘটিয়ে আমরাই আপনাকে জানাচ্ছি কোথায় যেতে পারেন, কিভাবে যাবেন এবং কোথায় থাকবেন।
বান্দরবান
প্রথমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান নিয়ে কথা বলা যাক। ঝর্ণা, পাহাড় আর গুহার রাণী বলা যায় এই বান্দরবানকে। প্রকৃতি অকৃপণ হাতে ঢেলে সাজিয়েছে এই বান্দরবানকে।
নীলাচল
নীলাচল এমন একটি জায়গা যা দেখে প্রথমেই আপনার মনে হবে আকাশের নীল আচল ছড়িয়ে দিয়েছে সবুজের জমিনে। যেখানে হাত বাড়ালেই মেঘ ছুঁয়ে যায়। বান্দরবান শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্পট হল নীলাচল। বান্দরবান জেলা পরিষদ ভ্রমণপিপাসু মানুষের স্বার্থে একটি রিসোর্ট তৈরি করেছে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি বেছে নিতে পারেন ডলফিন, এস.আলম, সৌদিয়া, বিআরটিসি, সেন্ট মার্টিন ব্লু, ইউনিক, শ্যামলী পরিবহনের যে কোনটি। এসব পরিবহনের ভাড়া জনপ্রতি ৮৫০-৯০০ (এসি), ৬০০-৬৫০ (নন এসি)।
বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়া এলাকা। সেখানেই আপনি দেখতে পাবেন নীলাচল পর্যটক কমপ্লেক্স। শহর ছেড়ে চট্টগ্রামের পথে প্রায় তিন কিলোমিটার চলার পরেই হাতের বাঁ দিকে ছোট একটি সড়ক পাবেন যা এঁকেবেঁকে চলে গেছে নীলাচলে। এ পথে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ পাহাড় বেয়ে পৌঁছুতে হয়।
নীলগিরি
নীলগিরিতে যাওয়ার অসাধারণ সময় হল বর্ষাকাল। বর্ষাকালে সাদা মেঘের রাশি আপনাকে নিয়ে যাবে এক অনন্য সুখের দেশে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রটি পাহাড় এবং আকাশের মিতালীর এক অপূর্ব নিদর্শন। যারা একই সাথে পাহাড় ও সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখতে চান তাদের জন্য নীলগিরিই আদর্শ স্থান।
কিভাবে যাবেন
নীলগিরি যেতে হলে আগে থেকে ল্যান্ড ক্রুজার জিপ ভাড়া করে রাখতে হবে। আসা যাওয়া সাড়ে ৪ ঘন্টার বেশি লাগবে না। ভাড়া সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্ধারিত আসা-যাওয়া-ছোট জীপ- ৫সিট-২৩০০ টাকা এবং বড় জীপ-৮সিট- ২৮০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
হোটেল থ্রী স্টার
এটি বান্দরবান বাস স্টপের পাশে অবস্থিত। নীলগিরির গাড়ী এই হোটেলের সামনে থেকে ছাড়া হয়। এটি ৮/১০ জন থাকতে পারে ৪ বেডের এমন একটি ফ্ল্যাট। প্রতি নন এসি ফ্ল্যাট-২৫০০ টাকা, এসি-৩০০০ টাকা।
বুকিং ফোন – ০১৫৫৩৪২১০৮৯।
বগালেক
পাহাড়ের চূড়ায় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বগালেক ভ্রমণের আদর্শ সময় হল শীতকাল। বর্ষায় জায়গাটা কিছুটা দুর্গম হয়ে যাওয়ায় এ সময় না যাওয়াই ভালো। বগালেকের পেছনে কিছু কল্প কাহিনী জড়িত থাকায় স্থানীয়রা একে ‘দেবতার লেক ’ বলে থাকে।
কোথায় থাকবেন
পর্যটকদের রাতযাপনের সুবিধার্থে বগালেকে জেলা পরিষদের রেস্ট হাউজ এবং স্থানীয়ভাবে কিছু গেস্ট হাউজ রয়েছে। স্থানীয় অধিবাসীরা পর্যটকদের খাবার ও আবাসন সুবিধা দিয়ে থাকে।
মেঘলা
মেঘলা নামটি শুনেই নিশ্চয়ই আপনার মনশ্চক্ষে মেঘের দেশের ছবি ভেসে উঠে। কিন্তু নাম মেঘলা হলেও মেঘের সাথে মেঘলা পর্যটন স্পটের কোন সর্ম্পক নেই। মেঘলায় উঁচু নিচু পাহাড় নিয়ে একটি লেক রয়েছে। ঘন সবুজ অরণ্য আর লেকের স্বচ্ছ পানি আপনাকে শিহরিত করবে। পানিতে যেমন রয়েছে হাঁসের প্যাডেল বোট, তেমনি ডাঙ্গায় রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা। আর আকাশে ঝুলে আছে রোপওয়ে কার।
কোথায় থাকবেন
অবকাশ যাপনের জন্য রয়েছে জেলা প্রশাসনের একটি সুন্দর রেস্ট হাউজ। রাত্রিযাপনের জন্য ৪টি কক্ষ রয়েছে। প্রতি কক্ষ দৈনিক ২০০০/- টাকা ভাড়ায় পাওয়া যাবে।
স্বর্ণমন্দির
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এই “বৌদ্ধ ধাতু জাদী” কে স্বর্ণমন্দির নামকরণ করা হয়। এটি বৌদ্ধ ধর্মাম্বলীদের একটি উল্লেখযোগ্য উপাশনালয়। মায়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ টেম্পল গুলোর আদলে তৈরি এই উপাশনালয়টি বান্দরবান শহর থেকে ৪ কি:মি: উত্তরে বালাঘাট নামক এলাকায় পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত।
রাঙ্গামাটি
ঝুলন্ত ব্রিজ
দুই পাহাড়ের মাঝে প্রায় ঝুলন্ত এই ব্রিজটি দেখতে প্রতি বছর হাজারো পর্যটকের আগমন ঘটে রাঙ্গামাটিতে। ব্রিজের এক পাড়ে রয়েছে শিশুদের জন্য খেলনা, দোলনা ইত্যাদির পার্ক। চাইলে যে কেউ নৌকায়ও ভ্রমণ করতে পারে। ঝুলন্ত ব্রিজে প্রবেশ ফি জনপ্রতি ১০ টাকা।শরের তবলছড়ি থেকে ঝুলন্ত ব্রিজে সিএনজি ভাড়া ৫০-৬০ টাকা, বনরূপা থেকে ১২০ টাকা।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার ফকিরাপুল মোড় /সায়দাবাদ জনপদের মাথায় রাঙ্গামাটিগামী অসংখ্য বাস কাউন্টারের অবস্থান। সকল বাসই সকাল ৮.০০ হতে ৯.০০ টা এবং রাত ৮.৩০ হতে ১১.০০ এর মধ্যে ঢাকা ছাড়ে। ভাড়াঃ ঢাকা-রাঙ্গামাটিঃ এসি ৮০০ টাকা, নন এসি- ৬২০ টাকা। বিআরটিসি এসি ৭০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
পর্যটন মোটেলঃ রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত ব্রিজের পাশেই অবস্থিত। ভাড়া নন এসি টুইন বেড- ১২০০ টাকা, এসি টিন বেড- ২০০০ টাকা। ফোন– ০৩৫১-৬৩১২৬
রাজবন বিহার
রাঙ্গামাটি গিয়েছেন ঝুলন্ত সেতুও দেখলেন অথচ রাজবন বিহার দেখতে যাবেন না তা কি করে হয়। এটি রাঙ্গামাটি জেলার চাকমাসহ অন্যান্য উপজাতীদের প্রধান বিহার। মূলত পাশ্চাত্য ধাচের নির্মাণ কৌশল ও স্থাপত্যের কারনে পর্যটকদের আকর্ষণ এই বিহারটি। বিহারে গেলে বনভান্তেরর (ধর্মগুরু) মমি দেখে আসবেন।
কিভাবে যাবেন
শহরের বনরূপা থেকে রাজবন বিহারের সিএনজি ভাড়া ৫০ টাকা, তবলছড়ি থেকে ১২০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
হোটেল গ্রিন ক্যাসেল
রিজার্ভ বাজারে অবস্থিত। ভাড়া নন এসিঃ সিঙ্গেল বেড- ৮০০ টাকা, কাপল বেড- ১০০০ টাকা, ট্রিপল বেড ১২০০ টাকা। এসি- কাপল বেড-১৬০০, ট্রিপল বেড ২০০০ টাকা। যোগাযোগঃ ০৩৫১-৬১২০
সুবলং ঝর্ণা
রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার এই ঝর্ণাটি পর্যটকদের নিকট খুব আকর্ষণীয় বিষয়। ভরা বর্ষায় ঝর্নার পানি প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ে এবং অপূর্ব সুরের মূর্ছনায় পর্যটকদের মুগ্ধ করে। রাঙ্গামাটি সদর হতে সুবলং প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। সুবলং দেখে আপনি যতটা না আনন্দ পাবেন তার চেয়ে বেশি আনন্দ পাবেন সুবলং ভ্রমণের পথটুকুতে। জলপথে যেতে যেতে পার্বত্য রাঙ্গামাটির যে অপরূপ সৌন্দর্য চোখে পড়বে তা আপনি কোনদিন ভুলতে পারবেন না।
কিভাবে যাবেন
রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজার, পর্যটন ঘাট ও রাংগামাটি শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে স্পীড বোট ও নৌ-যানে করে সহজেই সুবলং যাওয়া যায়। যার ভাড়ার পরিমাণ ঘন্টা প্রতি স্পীড বোট ঘন্টায় ১২০০-১৫০০/- এবং দেশীয় নৌযান ৫০০-৮০০/- টাকা।
সাজেক ভ্যালী
মেঘের দেশ সাজেক। শুধু তাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন সাজেক। সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও যাতায়াতে সুবিধার কারণে পর্যটকরা খাগড়াছড়ি জেলা দিয়েই সাজেকে আসা যাওয়া করে। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। মূলত খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে সাজেক সবচেয়ে কাছে। ২-৩ দিনের প্ল্যান করে বের হলে পুরো সাজেক দেখে আসতে পারবেন। ফেরার সময় হাজাছড়া ঝর্ণা, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার দেখে আসতে পারেন । তবে একদিনে এই সবগুলো স্থান দেখতে হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেড়িয়ে পড়বেন।
কিভাবে যাবেন
এ ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো খাগড়াছড়ি শহর থেকে জীপগাড়ি (লোকাল নাম চাঁন্দের গাড়ি) রিজার্ভ নিয়ে ঘুরে আসা । ভাড়া নিবে ৪৫০০-৫৫০০ টাকা।
বাসে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা জন প্রতি ৪৫ টাকা নিবে । দীঘিনালা থেকে ১০০০-১২০০ টাকায় মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিয়েও সাজেক ঘুরে আসতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
রুন্ময়
এটি সাজেকেই অবস্থিত। রুম প্রতি ভাড়া ৪৪৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে ২ জন থাকতে পারবেন। চারটি তাবু আছে প্রতি তাবুতে ২৮৫০ টাকা দিয়ে চার জন থাকতে পারবেন। যোগাযোগ : ০১৮৬২০১১৮৫২।