রবিঠাকুরের সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ
জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, রুপের যে তার নাইকো শেষ।
বাংলা সাহিত্যের সেরা ৩ কবি বঙ্গমাতাকে তাদের চোখ দিয়ে দেখেছেন এবং আমাদের সাহিত্যকে করেছেন মহিমাময়। কেমন দ্বিজেন্দ্রলালের সকল দেশের রাণী, আমাদের এই দেশটা? সেটা ভালো করে বুঝতে হলে চষে বেড়াতে হবে, এই বাংলা মায়ের বুকে।
হ্যাঁ, পাঠক, আজ আমরা বাংলাদেশের সেরা পাচটি জায়গার কথা বলব, যেখানে বাঙ্গালী হিসেবে, পরিব্রাজক হিসেবে জীবনে একবার হলেও যাওয়া উচিত। এই সেরা ৫ টি জায়গা হলো- সিলেটের রাতাগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমি সুন্দরবন, চর কুকরী- মুকরী। তাহলে ঘুরে আসি একবার সপ্নের সেই জায়গাগুলোতে।
রাতাগুল সোয়াম্প ফরেস্ট
এটি জলামগ্ন একটি বন। বর্ষাকালে এই বনে অথৈ জল থাকে চার মাস। তারপর ছোট ছোট খালগুলো হয়ে যায় পায়ে-চলা পথ। আর তখন পানির আশ্রয় হয় বন বিভাগের খোঁড়া বিলগুলোতে। সেখানেই আশ্রয় নেয় জলজ প্রাণীকুল। বুঝতেই পারছেন রাতাগুল ভ্রমণের সবচেয়ে আদর্শ সময় হল বর্ষাকাল। উত্তরে গোয়াইন নদী, দক্ষিণে বিশাল হাওর। মাঝখানে ‘জলার বন’ রাতারগুল। সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে এই জলার বনের অবস্থান। সিলেট নগরী থেকে দেশের একমাত্র এই সোয়াম্প ফরেস্টের দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার।
তবে রাতারগুলের গাছের মধ্যে করচই বেশি। হিজলে ফল ধরে আছে শয়ে শয়ে। বটও চোখে পড়বে মাঝেমধ্যে, মুর্তা গাছ কম। বড়ই অদ্ভুত এই জলের রাজ্য। কোনো গাছের হাঁটু পর্যন্ত ডুবে আছে পানিতে। একটু ছোট যেগুলো, সেগুলো আবার শরীরের অর্ধেকই ডুবিয়ে আছে জলে। কোথাও চোখে পড়বে মাছ ধরার জাল পেতেছে জেলেরা।
বর্ষায় পানি বাড়ায় সাপেরা ঠাঁই নেয় গাছের ওপর। হাওরের স্বচ্ছ পানির নিচে বনগুলো দৃশ্যমান থাকায় বর্ষাকালে অনেক পর্যটকের সমাগম ঘটে এখানে। আবার শীত মৌসুমে ভিন্নরূপ ধারণ করে এ বন। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে জেগে ওঠে মূর্তা ও জালি বেতের বাগান। সে সৌন্দর্য আবার আবার অন্য রকম!
যেভাবে যাবেনঃ রাতারগুল যাওয়া যায় বেশ কয়েকটি পথে। তবে যেভাবেই যান, যেতে হবে সিলেট থেকেই। সিলেট-জাফলংয়ের গাড়িতে উঠে নেমে যাবেন সারিঘাট। সেখান থেকে টেম্পোতে করে গোয়াইনঘাট বাজার। বাজারের পাশেই পড়বে নৌঘাট। এখান থেকে রাতারগুল যাওয়া-আসার জন্য নৌকা রিজার্ভ করতে হবে। তবে মনে রাখবেন, এই নৌকায় করে কিন্তু রাতারগুল বনের ভেতরে ঢোকা যাবে না। বনে ঢুকতে হবে ডিঙি নৌকায় চেপে।
সুন্দরবন
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের লীলাভুমি এই বিশ্বের ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) সুন্দরবন। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে সরাসরি খুলনা শহরে এসে হোটেলে অবস্থান করে পছন্দের ট্যুর অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সুন্দরবন যাত্রা করা যায়। আবার হোটেলে না উঠে সরাসরি ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও নির্ধারিত সময়ে জাহাজে চড়ে সুন্দরবন ভ্রমণ করা যায়।
সুন্দরবনের করমজল বন্য ও কুমির প্রজনন কেন্দ্র, হারবাড়িয়া ইকো সেন্টার, কটকা, শেখেরহাট টেম্পল, কলাগাছিয়া ইকো ট্যুরিজম সেন্টার, মান্দারবাড়িয়া অভয়ারণ্য নামের স্পটগুলো পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত। এইসব স্পটে কুমির প্রজনন, অসুস্থ হরিণের পরিচর্যাসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। ভাগ্য ভালো হলে হাঁটতে হাঁটতে বানর, হরিণ, গুইসাপ, কাঁকড়া অথবা কুমিরের ঘুরে বেড়ানো দৃশ্যও দেখতে পারেন।
যেভাবে যাবেনঃ অল্প সময়ে কম খরচে সুন্দরবন ভ্রমণের স্বাদ নিতে হলে করমজলই শ্রেষ্ঠ। মংলা বন্দর থেকে নৌপথে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট নৌকায় চড়ে এখানে যাওয়া যায়। এখানে কুমির প্রজনন কেন্দ্রে ছোট বড় অসংখ্য কুমির দেখতে পাবেন। সুন্দরবনের আরেকটি অভয়ারণ্য হিরণ পয়েন্ট, পুরো সুন্দরবন এলাকার অসাধারণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। চারদিকে নদীঘেরা। সেখানে হরিণের দল পানি খেতে আসে। আপনার ভাগ্য যদি ভালো হয় তবে বাঘের পানি পানের দৃশ্যও দেখা যেতে পারে। খুলনা শহরে বর্তমানে বিদেশি মানের হোটেলসহ মানসম্মত অনেকগুলো হোটেল আছে। এর মধ্যে অন্যতম অভিজাত হোটেল টাইগার গার্ডেন সিটি ইন, হোটেল ক্যাসল সালাম, হোটেল রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল। এসব হোটেলের ভাড়া একটু বেশি।
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য কুয়াকাটার প্রতিদ্বন্দ্বী আর কেউ নেই। কুয়াকাটার মূল ব্যাপারই হলো সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সৌন্দর্য। নৈসর্গিক সৌন্দর্য অপরূপ। প্রকৃতির উপহার দীর্ঘ সাগর সৈকত সত্যিই বিস্ময়কর। বিশ্বের আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকতগুলোর মধ্যে কুয়াকাটা অন্যতম। কুয়াকাটার এই মনোরম সাগর সৈকতে গেলেই সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের মতো বিরল, বর্ণিল দৃশ্য সহজেই অবলোকন করা যায় তাও একই স্থানে দাঁড়িয়ে।
যেভাবে যাবেনঃ গাবতলী বাসস্ট্যান্ড অথবা সায়েদাবাদ টার্মিনালে থেকে টিকিট নিয়ে সকাল-বিকাল-রাত যে কোনো সময় বাসে যাত্রার ৮ ঘণ্টায় পৌঁছানো যাবে। যেতে পারবেন নদীপথে ডবল ডেকার লঞ্চযোগে। ঢাকা থেকে লঞ্চ ছাড়ার নির্দিষ্ট সময় প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। ১৪ ঘন্টার মাঝেই পৌছে যাবেন। তারপর সকাল সকাল পটুয়াখালী জেলা শহরে পৌঁছে রিকশা, অটোরিকশায় চেপে বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রীবাহী বাসে কুয়াকাটা দুই ঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন।
কুয়াকাটা পৌঁছে আপনার বুকিং করা হোটেল-মোটেল বা গেস্ট হাউসে উঠতে পারবেন। রয়েছে সরকারি ভিআইপি ডাকবাংলো, ব্যক্তিমালিকানাধীন হোটেল-মোটেল, গেস্ট ও রেস্ট হাউস। খাবার হোটেল রয়েছে কুয়াকাটায় পর্যাপ্ত। কম মূল্যে আপনি পরিবারসহ পছন্দসই তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করতে পারবেন।
কক্সবাজার
সারি সারি ঝাউবন, বালুর নরম বিছানা, সামনে বিশাল সমুদ্র। হ্যাঁ পাঠক, আমরা কক্সবাজারের কথাই বলছি। ছুটিতে বেড়িয়ে আসার জন্য পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের তুলনাই হয় না। রয়েছে নীল জলরাশির গর্জন। মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরী, সেন্টমার্টিন কক্সবাজারকে করেছে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয়। এখানে গিয়ে বেড়াতে পারেন হিমছড়ি ও ইনানী বিচেও। কক্সবাজারের ১২ থেকে ২২ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে রয়েছে এ দুটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান।
যেভাবে যাবেনঃ যারা ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যেতে চান তারা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার অথবা সরাসরি বাসে কক্সবাজারে যেতে পারেন। সাধারণ বাস সরাসরি পরিবহনের ভাড়া পড়বে ৩৯০-৭৩০ টাকা পর্যন্ত। কক্সবাজারে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের বেশকটি হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট। সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাত হাজার টাকায় কক্সবাজারে রাতযাপন করা যায়।
চর কুকরী- মুকরী
ভয়াল সৌন্দরযের চর, চর কুকরী- মুকরীতে যারা একবার গিয়েছেন তারা বার বার ছুটে যেতে চান সেখানে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি এই চর কুকরী-মুকরীকে দ্বীপকন্যাও বলা হয়ে থাকে। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, বন্যপ্রাণী আর সমুদ্রসৈকতকে ঘিরে সৌন্দর্যের এক বর্ণিল উপস্থিতি যা প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ বছর পুরনো এ চরে আজও সভ্যতার ছোঁয়া লাগেনি। কথিত আছে এর পত্তনের পর প্রথমদিকে এ চরে কুকুর আর ইঁদুরের প্রভাব ছিল খুব বেশি। ইঁদুরের আর এক নাম মেকুর, আর তা থেকে এ চরের নামকরণ করা হয় ‘চর কুকরী-মুকরী’।
যেভাবে যাবেনঃ ভোলা সদর থেকে গাড়ি যোগে ১০০ কি.মি. পাড়ি দিয়ে কচ্ছপিয়া পৌঁছে সেখান থেকে পুনরায় ৩০ কি.মি. নৌকা-ট্রলার বা স্পিডবোটে মেঘনা নদী অতিক্রম করে এ দ্বীপে পৌঁছাতে হয়।