৫ রাত ৪ দিনের একটি সফর। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ রাতের বাসে সপরিবারে যাত্রা শুরুর পর থেকে ২৯ তারিখ সকালে বাসায় ঢোকা পর্যন্ত, দার্জিলিং এ আমার এই প্রথম ভ্রমণটি ‘ঘটনাবহুল‘ ছিল বললে কমই বলা হয়। দলে ছিলাম (১) আমরা পাঁচজন- মা, বোন, ভাই, খালা আর আমি, (২) চার জনের আরেকটি দল এবং (৩) আমাদের এই সফরের আয়োজক। মোট দশ জন। ২৪ তারিখে আমাদের সাথে আমাদের আয়োজক ভাইটিও বাংলাবান্ধার উদ্দেশ্যে একই বাসে উঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই জানতে পারলাম যে, আমাদের ভিসায় বন্দরের নাম ভুল হয়েছে; বাংলাবান্ধার স্থলে আমরা (মানে আমার পরিবারের ৫ জন) চ্যাংড়াবান্ধার জন্য ভিসা করেছি। আর অন্য পাঁচজনের ভিসায় ছিল বাংলাবান্ধা।
এই ভুলের কথা জানার পরে আমার মা-খালা-বোনের চেহারা দেখে মনে হলো যেন, ভ্রমণে গিয়ে তাদের কেনা নতুন পোশাকগুলো বোধ হয় সীমান্ত প্রহরীরা কেড়ে নিয়েছে। সমস্যা ধরা পরার পরে ঠিক হল যে, আমরা রংপুরে নেমে সেখান থেকে চ্যাংড়াবান্ধা পর্যন্ত যাওয়ার জন্য কোনো বাসে উঠে যাব। বুঝলাম, এত রাতে অচেনা জায়গায় কীভাবে বাসের যোগাড় হবে সেই চিন্তায় আমার পরিবারের সদস্যদের মনের অবস্থা এর মধ্যেই বেশ করুণ।
ভোর রাত ৩:৩০ টার দিকে রংপুরের মডার্ন মোড়ে বাস আমাদের নামিয়ে দিয়ে গেল। আমি যে চিন্তা একেবারেই করছিলাম না, তা নয়; কিন্তু আমার চিন্তা হচ্ছিল যথাসময়ে বন্দর পার হওয়া নিয়ে। এক কাপ চায়ের সাহায্যে শীত মোকাবিলার ব্যর্থ চেষ্টা আর একের পর এক বাসের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে সময় নিয়ে আমার দুশ্চিন্তা বাড়তে শুরু হয়। অবশেষে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পরে চ্যাংড়াবান্ধা যাওয়ার একটি বাস পেলাম। ২৫ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে চ্যাংড়াবান্ধা পৌঁছানোর পরেও আমার পরিবারের সদস্যদের মনের অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি।
বন্দরে পৌঁছে আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, দেরি হলেও বাড়তি টাকা খরচ করব না। কিন্তু এই দেরির জন্যই শেষ পর্যন্ত দার্জিলিং শহরের বড়দিন উদযাপন আর দেখা হয়নি; তবে শিলিগুড়ির সাজসজ্জাও যথেষ্টই মনোমুগ্ধকর ছিল। উল্লেখ্য, যে বাসে আমরা চ্যাংড়াবান্ধা পৌঁছেছিলাম, ঐ বাসের কর্তৃপক্ষই বন্দরের কাজে সহযোগিতা করেছিল। বন্দর পেরোতে প্রায় ৪ টা বেজে যায়। ভারতীয় বন্দর থেকেই একটি স্টেশন ওয়াগনে করে আমাদের পাঁচজনের শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়। সমতলের চা-বাগান আর গ্রাম্য দৃশ্য দেখতে দেখতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা নাগাদ আমরা শিলিগুড়িতে আমাদের দলের বাকি সদস্যদের (তারা দুপুরেই শিলিগুড়ি পৌঁছে যায়) সাথে মিলিত হলাম।
আমাদের জন্য দুপুরের খাবার প্যাকেট করে নিয়ে দুইটি গাড়িতে করে যাত্রা শুরু করলাম দার্জিলিং এর উদ্দেশ্যে। সাপের মত আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ দিয়ে রাতের বেলায় সেই যাত্রা ছিল এক কথায় অসাধারণ। যতই উপরে উঠতে থাকি, নিচের দিকে আলো-জ্বালা ঘরবাড়িগুলো দেখতে ছোট ছোট জোনাকি পোকার মত লাগছিল। সেই সময়ে আর কোনো গাড়ি না থাকায় বেশ দ্রুতই আমরা দার্জিলিং পৌঁছে যাই। তারপর রাত প্রায় ১০ টার দিকে আমরা হোটেলে পৌঁছলাম।
পরদিন সকালে অন্যদের দেরি দেখে, তাদের জন্য অপেক্ষা না করে, ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পরি নিজের মত করে শহরটা ঘুরে দেখতে। স্থানীয় মানুষদের সকালের জীবনধারা ঘুরে দেখলাম, আর ক্যামেরাবন্দী করলাম। নাস্তা সেরে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শুরু হলো ‘সাইট সিয়িং‘।
প্রথম গন্তব্য ১৯৯২ সাল থেকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া ‘জাপানিজ টেম্পল ও পিস প্যাগোডা‘। নিচিদাসসু ফুজি নামক একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর তত্ত্বাবধানে এই বৌদ্ধ মন্দিরটির নকশা করা হয়। ধবধবে সাদা রঙের এই মন্দিরটি যে কোনো পরিদর্শকের মন ভাল করে দিতে পারে। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল কেবল কার রাইড। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম যে, কেবল কারে চড়ার জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পর্যটকের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে, সন্ধ্যার আগে তখনই অপেক্ষমাণ সেই লাইনের সকলের রাইড শেষ হবে না।
আমরা সেখানে আর অপেক্ষা না করে, চলে যাই তেনজিং রক দেখতে। জলপাহাড় নামক এলাকায় এক জোড়া পাথর আর পর্বতারোহীদের মত বেয়ে উপরে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় দড়ি ছাড়া এখানে আসলে আর কিছুই নেই। তাই হয়তো, দর্শকদের ‘সময় নষ্ট‘ যেন না হয়, সেই কারণে একই স্থানে ছোট একটা বাজার গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে আদিবাসীদের তৈরি পোশাক, শীতবস্ত্র, গয়নাগাটি, চা সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ক্রয়-বিক্রয় চলছে। যে জায়গায় দশ মিনিটই যথেষ্ট, সেখানে প্রায় ঘণ্টাখানেক কাটালাম; মা-খালা শেষ পর্যন্ত মন ভাল করার মত কিছু পেলেন। আর আমি ছবি তোলা শেষে এক প্লেট পাপড়ি চাট পেটে পুরে দিলাম।
পরবর্তী গন্তব্য ছিল দার্জিলিং শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তরে, সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২১০০ মিটার উচ্চতায়, ১৭৭ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, ১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত দার্জিলিং এর দ্বিতীয় পুরনো চা-বাগান, যার নাম হ্যাপি ভ্যালী টি-এস্টেট। আগে থেকে অনুমতি না নেওয়ায় আমরা ফ্যাক্টরিতে যেতে পারিনি, পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত অংশটিই ঘুরে দেখি। খুব সুন্দর করে সাজানো এবং অপরূপ সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যে ঘেরা এই চা-বাগানের প্রবেশ মুখেই, সারি বেঁধে অবস্থিত বেশ কিছু দোকানে, বিনামূল্যে, প্রিমিয়াম কোয়ালিটির অর্গানিক চা-এর স্বাদগ্রহণ ও চা বিক্রয় করা হয়। যাত্রীসহ আসা একেক গাড়ী একেক স্টলের সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকে, সেটা বুঝলাম যখন পার্ক করার সাথে সাথেই ১৩ নং দোকানের প্রতিনিধি এসে আমাদের জানালো যে, শুধুমাত্র ঐ স্টলটিতেই আমরা চা খেতে ও কিনতে পারব। প্রথম দিনের সাইট সিয়িং এর এখানেই ইতি ছিল। আমরা তারপরেও চলার পথে দুই একটা জায়গায় গাড়ি থামিয়ে ছবি তুলি।
এরপরে চলে আসি শহরের প্রাণকেন্দ্রে। প্রায় ৪৫ মিনিট যাবত লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে তবেই প্রসিদ্ধ ‘কুঙ্গা‘ রেস্তোরাঁতে দুপুরের খাবারের জন্য টেবিল পাই। উল্লেখ্য, প্রতিদিন সকাল ১০:৩০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬:৩০ টা পর্যন্তই এই রেস্তোরাঁটি খোলা থাকে। তবে খাবার শেষ হয়ে গেলে আগেও বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর এরকম লম্বা লাইন প্রতিদিনই হয়। মোমো, চাওমিন আর ফ্রাইড রাইস দিয়ে আমরা দুপুরের খাবার সারলাম। এরপরে শুরু হলো আমার মা-খালার ইচ্ছামত শপিং করা। এ রাতে আমরা একটু তাড়াতাড়িই ঘুমাতে চলে যাই।
পরদিন ঠিক ভোর ৪ টার সময়, শূণ্যের নিচের তাপমাত্রায় টিকে থাকার জন্য চার স্তরে পোশাক পরে তৈরি হয়ে, রওনা দেই টাইগার হিলের উদ্দেশ্যে। দার্জিলিং শহর থেকে আরও ২০০০ ফুটেরও বেশি উচ্চতায়, তথা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২৫০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় অবস্থিত এই টাইগার হিলে প্রতিদিন ভোরে ১০,০০০ এরও বেশি দর্শক একত্রিত হয়, কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যোদয় প্রত্যক্ষ করার উদ্দেশ্যে। আর সেই দৃশ্যকে অন্য জগতের ভাবলেও দোষের কিছু নেই! সূর্যের আলোর প্রথম ছোঁয়া লাগার সাথে সাথেই কাঞ্চনজঙ্ঘার গায়ে উজ্জ্বল, হালকা গোলাপি রঙের আভা তৈরি হয়, যা একটু পরেই সোনালি হতে শুরু করে।
গরম কফির কাপ হাতে নিয়েও সেই ঠাণ্ডার সাথে লড়াইয়ে হেরে যাচ্ছিলাম। একটু পরে আশেপাশে তাকাতেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হলো। আমরা এখানে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা আগেই এই মৌসুমের প্রথম তুষারপাত ঘটে, যার চিহ্ন হিসেবে আশেপাশের গাছপালার গায়ে কয়েক সেন্টিমিটার পুরু বরফের আবরণ দেখতে পাই। এখানে উঠে আসার সময়েই দেখেছিলাম অসংখ্য তিব্বতি প্রার্থনা পতাকা টাঙ্গানো রয়েছে। নামার সময়ে বেশ খানিকটা সময় ব্যয় করলাম এই পতাকাগুলোর সৌন্দর্য ক্যামেরাবন্দী করতে।
টাইগার হিল থেকে আমরা চলে যাই ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত, সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৭০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত পদ্মজা নাইড়ু জুয়োলোজিক্যাল পার্ক এবং হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট-এ। সেখানেই রাস্তার পাশে অবস্থিত একটি রেস্তোরাঁতে মোমো, এগ বান, সবজি পরোটা দিয়ে সকালের নাস্তা সেরে নিই। এখানে ঘুরে চলে যাই বাতাসিয়া লুপ দেখতে। ১৯১৯ সালে পাহাড়ের উচ্চতায় ট্রেনের যাত্রাপথ সহজ করার জন্য এই লুপটি তৈরি করা হয়। ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার শহীদদের স্মৃতিতে এখানে একটি মিনারও তৈরি করে রাখা আছে। আরও আছে মাত্র ৫০ রুপি খরচ করে কিছুক্ষণের জন্য আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী সাজ-পোশাক পরার ব্যবস্থা। এরপরে আমরা চলে যাই ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত, বৌদ্ধদের প্রসিদ্ধ ‘ঘুম মনাস্ট্রি‘ দেখতে। তবে এখানে আমরা মিনিট দশেকের বেশি সময় দিতে পারিনি।
দুপুরের খাবারের পরে চলে যাই মহাকাল মন্দির দর্শনে। ১৭৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরটি মহাদেব শিবকে উৎসর্গ করে তৈরি করা হয়। অসংখ্য প্রার্থনা পতাকায় ঘেরা এই মন্দিরটিতে যেকোনো সময়ে এলেই মনে হবে যেন কোনো উৎসবে যোগ দিতে এসেছি। এই স্থানটি আমাদের আইটিনারিতে ছিল না। এখানে আমি নিজ উদ্যোগে যাই। এরকম আরও কয়েকটা স্পট আমরা নিজ উদ্যোগেই ঘুরে দেখি। দার্জিলিং এর বিখ্যাত ম্যাল-ও এই সুযোগে দেখা হয়ে যায়। আর গাড়ি দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার সময়ও শহরের বেশ খানিকটা দেখা হয়ে যায়। শীতকালে পর্যটকদের যথেষ্ট ভিড় থাকলেও শহরের সৌন্দর্য উপভোগের পথে তা কোনো অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি , বরং দেশ-বিদেশের বিচিত্র ধরনের মানুষের সমাগমে সফরটা যেন আরও উপভোগ্য হয়েছিল।
সত্যজিৎ রায়-এর বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদা‘র যাত্রা শুরু হয় এই দার্জিলিং থেকেই। সেখান থেকেই জানতে পারি ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রসিদ্ধ রেস্তোরাঁ ‘কেভেন্টার্স‘ এর কথা। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে, এখান থেকে শুধু একটা কোণ আইসক্রিম খেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। আরও একটি বিখ্যাত রেস্তোরাঁ গ্লেনারিজ এও অল্প সময়ের জন্য ঢুঁ মারি ঐ একইদিনে। মা-খালাদের শপিং কোনোভাবেই বন্ধ ছিল না। দুই দফা চা কেনার পরে এবারে এক্সপোর্ট প্যাকেজের ব্র্যাণ্ডেড চা-ও কেনা হয়। রাস্তার কাজ চলার জন্য আমাদের রক গার্ডেন যাওয়া হয়নি। সময় স্বল্পতার কারণে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ খ্যাত, দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে এর প্রসিদ্ধ ‘টয় ট্রেন‘-এও চড়া হয়নি। শুধু গাড়িতে বসে ট্রেনকে চলতে দেখেছি।
পরদিন সকাল ৯ টায় শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে আমাদের ফিরতি যাত্রা শুরু করি। রাজনৈতিক মিছিলের কারণে সাধারণ পথে না যেয়ে মিরিকে যাওয়ার রাস্তা ধরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কিছুদূর চলার পরে সে রাস্তাও বাতিল করতে হয়। এই তৃতীয় রাস্তাটি ছিল কালিম্পং এর রাস্তা, মানে এই রাস্তা ধরেই গ্যাংটক যাওয়া হয়ে থাকে। এই রাস্তায় না আসলে জানতেই পারতাম না যে পাহাড়ি রাস্তায় লং ড্রাইভের অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা বাস্তবে কেমন লাগে! দার্জিলিং এর ‘আইকন‘ হিসেবে খ্যাত ‘রয়েল এনফিল্ড‘ নামক মোটর বাইকটির কথা জানে এবং জীবনে একবারের জন্য হলেও চালানোর সাধ জাগেনি- এমন ভ্রমণকারী পাওয়া সম্ভব নয়। যে সময়টুকু দার্জিলিং ছিলাম, যতবার এই এনফিল্ড সামনে দিয়ে গেছে, লোভনীয় খাবারের মতই চেয়ে থেকেছি। এই রাস্তায় এসে সেই বাইকটি চালানোর ইচ্ছেটা আরও জোরালো হয়ে যায়।
এই রাস্তা ধরে আসতে গিয়ে বোনাস হিসেবে আরও দেখা মিলল পান্নার মত সবুজ রঙের পানির তিস্তা নদীর। পাহাড়ের ভিতর দিয়ে বয়ে চলা এই নদীটি দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোনো পাশ্চাত্য দেশের ছবি দিয়ে তৈরি ক্যালেন্ডারের পাতার দিকে চেয়ে রয়েছি। ১৯৪১ সালে তৈরি ৩১ নং মহাসড়ক ধরে বিস্তৃত, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলাকে সংযোগকারী ‘করোনেশন ব্রিজ‘ টিও দেখা হয়ে যায় এই পথে আসতে গিয়ে। উল্লেখ্য, এই সেতুটি ধরেই সড়কপথে ভুটান যাওয়া হয়।
শিলিগুড়ি হয়ে চ্যাংড়াবান্ধা বন্দর পার করে, দেশে প্রবেশের পরে, মাইক্রো বাসে করে লালমনিরহাট থেকে চলে যাই দিনাজপুর রেলস্টেশনে। পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে আসা একতা এক্সপ্রেস-এ করেই আমাদের ফিরতি পথের শেষ যাত্রাটুকু নির্ধারিত ছিল। সৈয়দপুরের একটু আগে নীলফামারীর মহাসড়কের একটি অংশে, তেল পরিবহনকারী গাড়ি উল্টে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদেরকে ঘুরপথ ধরতে হয়। সেই সাথে বেশ খানিকটা সময়ও নষ্ট হয়। তবে এরপরে সময়মত ট্রেন ধরার জন্য আমাদের ড্রাইভার যে গতিতে গাড়ি চালিয়েছিল, তাতে ফর্মুলা ওয়ানের পরোক্ষ অভিজ্ঞতা হয়েছে বৈকি। তবে, এটাই ছিল আমাদের এই যাত্রার শেষ অ্যাডভেঞ্চার। রাত ১১ টায় যথাসময়ে ট্রেনে চড়ার পরে, মোটামুটি ঘটনাহীনভাবেই পরদিন সকালে ঢাকা পৌঁছাই।
দার্জিলিং সম্পর্কে আরও জানতে পড়তে পারেন “দার্জিলিং ভ্রমণ” বইটি।